ব্যাংকের সুদ কি হালাল সূচি ও বিবরন শাইখ মুশ্তাক আহমাদ কারীমী ১ টি

ফিক্হবিদগণ إيداع ‘ঈদা’ শব্দের সংজ্ঞা এরূপ করেছেন,

تسليط الغير على حفظ ماله.

অর্থাৎ নিজের মাল হিফাযতে রাখার উদ্দেশ্যে অপরকে ভারার্পণ করা।

আর وديعة (আমানত) সেই মালকে বলা হয় যা আমানতদারের নিকট (গচ্ছিত) রাখা হয়। বর্তমান কালের ব্যাংকে ডিপোজিট্ রাখা টাকা শরয়ী অর্থে আমানত এই হিসাবে বলা হয় যে, ব্যাংকে টাকা জমাকর্তা এই উদ্দেশ্যে জমা করে, যাতে তার টাকা হিফাযতে থাকে এবং প্রয়োজন সময়ে তা চাইবা মাত্র ফিরে পাওয়া যায়।

কিন্তু তা আমানত বললেও ব্যাংক তা ব্যবহার করে এবং নিজের অন্যান্য টাকার সাথে মিলিয়ে মুনাফা অর্জন করে; যা এক প্রকার তাসার্রুফ। আর এই তাসার্রুফের কারণেই আমানত তার শরয়ী অর্থ থেকে বের হয়ে যায় এবং ঋণ বা ‘লোন্’এর পজিশনে অবস্থান্তরিত হয়। কারণ ঋণগ্রহীতার জন্য তার ঋণে গৃহীত অর্থে তাসার্রুফ করায় অধিকার আছে। যেমন সে অর্থ তার নিকট কোন প্রকারে নষ্ট হয়ে গেলেও সে তা আদায়ের জামিন থাকে।

সুতরাং বুঝা গেল যে, আমানতকে ঋণে পরিবর্তিত করা বৈধ। যেমন করতেন যুবাইর বিন আওয়াম (রাযিয়াল্লাহ আনহু)। তাঁর নিকট যখন কোন লোক নিজের মাল আমানত রাখতে আসত তখন তিনি বলতেন, ‘আমানত নয়, বরং ধার হিসাবে আমি রেখে নিচ্ছি। কারণ এ মাল নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করি।’[1]

সহীহুল বুখারী উক্ত ঘটনা থেকে বুঝা যায় যে, যুবাইর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) আমানতের অর্থকে ঋণে পরিবর্তন করে নিতেন। আর তাঁর এই কর্মের উপর কোন সাহাবীও কোন প্রকার আপত্তি উত্থাপন করেন নি। কারণ তিনি এ মালওয়ালার অনুমতিক্রমেই সেই মাল বিনিয়োগ করে বৃদ্ধি করতেন।

বলাই বাহুল্য যে, ব্যাংকও টাকা আমানতকারীদের পুঁজি নিয়ে এ একই ধরনের আচরণ করে থাকে।[2]

আল্লামা মুহাম্মদ আমীন শানক্বীত্বী বলেন, ‘ফিক্হ বিদ্গণের নিকট আমানত রাখার অর্থ হল, মাল হিফাযত ও রক্ষণা-বেক্ষণের জন্য কোন অপর ব্যক্তিকে প্রতিনিধি বানিয়ে (দায়িত্বভার) দেওয়া। এবারে মালওয়ালার তরফ থেকে যদি এ প্রতিনিধির জন্য তা ব্যবহার করার অনুমতি থাকে, তবে তার দুই অবস্থা হতে পারে;

প্রথমতঃ এই যে, ব্যবহারের ফলে এ মালের আসল (উপাদান) নষ্ট হয়ে যায়। এবং দ্বিতীয়তঃ এই যে, ব্যবহারের ফলে এ মালের আসল (উপাদান) নষ্ট হয়ে যায় না। সুতরাং ব্যবহারের ফলে যদি মালের আসল (উপাদান) নষ্ট না হয়, তবে তাকে عارية (বা সাময়িক ব্যবহার করতে) ধার বলে। পক্ষান্তরে যদি ব্যবহারের কারণে তার মূল (উপাদান) নষ্ট হয়ে যায়; যেমন টাকা পয়সা ইত্যাদি, তাহলে এই অবস্থায় প্রতিনিধির নিকট রাখা এ আমানতের মাল কর্জ বা ঋণে পরিবর্তিত হয়ে যায়।

অতএব ব্যাংকে জমা রাখা আমানত যে ঋণে দেওয়া টাকায় পরিণত হয়ে যায় তা পরিষ্কার হল। আর একথাও স্পষ্ট হল যে, আমানত ছাড়া যে অতিরিক্ত টাকা ব্যাংক জমাকর্তাকে দেয়, তা সূদ রূপে পরিগণিত।’[3]

এবারে আমরা পাঠকের খিদমতে এখানে ‘ঋণ’ কাকে বলে? ঋণের সংজ্ঞার্থ কি? এবং ঋণ কোন্ উদ্দেশ্যে নেওয়া-দেওয়া হয় তা পেশ করব। যাতে এ বিষয়ে সম্পূর্ণ জ্ঞান ও পরিচিতি লাভ সম্ভব হয়।

[1] (বুখারী, কিতাবু ফারযিল খুমুস, হাদীস নং ৩১২৯)

[2] (বুনূক তিজারিয়্যাহ বিদূনি রিবা ১৮৪-১৮৫ পৃঃ)

[3] (দিরাসাহ শারইয়্যাহ ২৭১-২৭২ পৃঃ)