রমাযানের রোযা প্রত্যেক সাবালক, জ্ঞানসম্পন্ন, সামর্থ্যবান, গৃহবাসী (অমুসাফির), সুস্থ ও সকল বাধা থেকে মুক্ত মুসলিম নরনারীর উপর ফরয। এই কথাকে ভিত্তি করে রমাযানের রোযায় পৃথিবীর সকল মানুষ কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। আর প্রত্যেক ভাগের রয়েছে পৃথক পৃথক আহকাম ও মাসায়েল। আগামী পরিচ্ছেদগুলিতে আমরা সেই সব কথাই আলোচনা করব - ইন শাআল্লাহ।
কাফের বা অমুসলিমের জন্য রোযা এ দুনিয়ায় আদায়যোগ্য ওয়াজেব নয়। কেননা, সে রোযা রাখলেও তা শুদ্ধ হবে না এবং আল্লাহর দরবারে কবুলও হবে না। যেহেতু রোযা (অনুরূপ যে কোন ইবাদত) শুদ্ধ হওয়ার অন্যতম প্রধান শর্ত হল ইসলাম। (যেমন শর্ত হল ইখলাস ও মুহাম্মাদী তরীকা।) মহান আল্লাহ বলেন,
(وَمَا مَنَعَهُمْ أَنْ تُقْبَلَ مِنْهُمْ نَفَقَاتُهُمْ إِلاَّ أَنَّهُمْ كَفَرُوْا بِاللهِ وَبِرَسُوْلِهِ وَلاَ يَأْتُوْنَ الصَّلاَةَ إِلاَّ وَهُمْ كُسَالَى وَلاَ يُنْفِقُوْنَ إِلاَّ وَهُمْ كَارِهُوْنَ)
অর্থাৎ, ওদের অর্থ সাহায্য গ্রহণে বাধা কেবল এই ছিল যে, ওরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে অস্বীকার করে, নামাযে শৈথিল্যের সাথে হাজির হয় এবং একান্ত অনিচ্ছাকৃতভাবেই দান করে। (কুরআনুল কারীম ৯/৫৪)
বলা বাহুল্য, দানের মত জিনিস; যার উপকার অপরের উপর বর্তে -তা যদি কবুল না হয়, তাহলে অন্যান্য ইবাদত বেশী কবুল না হওয়ার কথা।
কোন কাফের যদি রমাযানের দিনে ইসলাম গ্রহণ করে, তাহলে দিনের অবশিষ্টাংশ রোযা নষ্টকারী জিনিস হতে তাকে বিরত থাকতে হবে। কেননা, মুসলিম হওয়ার সাথে সাথে রোযা তারও উপর ওয়াজেব হয়ে যায়। অবশ্য ইসলাম কবুল করার পূর্বে যে রোযা অতিবাহিত হয়ে গেছে তা আর কাযা করতে হবে না। কারণ, সে সময় তার উপর রোযা ওয়াজেব ছিল না। মহান আল্লাহ বলেন,
(قُلْ لِلَّذِيْنَ كَفَرُوْا إِنِ انْتَهَوْا يُغْفَرْ لَهُمْ مَا قَدْ سَلَفَ)
অর্থাৎ, কাফেরদেরকে বল, যদি তারা (কুফরী থেকে) বিরত হয়, তাহলে তাদের অতীতের পাপ মাফ করে দেওয়া হবে। (কুরআনুল কারীম ৮/৩৮)
আর যেহেতু লোকেরা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর যুগে মুসলমান হত, অথচ তিনি তাঁদেরকে তাদের (ইসলামের পূর্বে) ছুটে যাওয়া নামায, যাকাত বা রোযা কাযা করতে আদেশ করতেন না।
কিন্তু মহান আল্লাহ কাল কিয়ামতে তা ত্যাগ করার জন্য এবং অনুরূপ দ্বীনের সকল ওয়াজেব কর্ম ত্যাগ করার জন্য কাফেরদেরকেও শাস্তি দেবেন। সেদিন মুমিনরা কাফেরদেরকে দোযখে যাওয়ার কারণ প্রসঙ্গে যে প্রশ্ন করবে, সেই কথা মহান আল্লাহ কুরআন মাজীদে উল্লেখ করে বলেন,
(مَا سَلَكَكُمْ فِيْ سَقَر؟ قَالُوْا لَمْ نَكُ مِنَ الْمُصَلِّيْنَ، وَلَمْ نَكُ نُطْعِمُ الْمِسْكِيْنَ، وَكُنَّا نَخُوْضُ مَعَ الْخَائِضِيْنَ، وَكُنَّا نُكَذِّبُ بِيَوْمِ الدِّيْنَ)
অর্থাৎ, কিসে তোমাদেরকে সাকার (জাহান্নামে) নিক্ষেপ করেছে? তারা বলবে, আমরা নামাযী ছিলাম না, মিসকীনকে আহার্য দান করতাম না, অন্যায় আলোচনাকারীদের সাথে আলোচনায় যোগ দিতাম এবং কিয়ামতের দিনকে মিথ্যা মনে করতাম। (কুরআনুল কারীম ৭৪/৪২-৪৬)[1]
মুসলিম রোযাদারদের সামনে অমুসলিমদের রমাযানের দিনে পানাহার করায় কোন ক্ষতি নেই। কেননা, তাতে রোযাদার মুসলিম আল্লাহ আযযা অজাল্লার প্রশংসা করবে যে, তিনি তাকে ইসলামের প্রতি পথপ্রদর্শন করেছেন; যে ইসলামে রয়েছে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক সুখ। (তাদেরকে দেখে) আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করবে যে, তিনি তাদের ঐ (ভ্রষ্টতার) আপদ থেকে মুক্তি দিয়েছেন; যারা তাঁর হেদায়াতের আলো গ্রহণ করেনি। আর বিদিত যে, মুসলিমের জন্য যদিও এ দুনিয়াতে রমাযানের দিনে শরীয়তের আইন অনুযায়ী পানাহার করা নিষিদ্ধ, কিন্তু কিয়ামতের দিন সে তার উপযুক্ত বিনিময় প্রাপ্ত হবে। সেদিন তাকে বলা হবে,
(كُلُوْا وَاشْرَبُوْا هَنِيْئاً بِمَا أَسْلَفْتُمْ فِيْ الأَيَّامِ الْخَالِيَة)
অর্থাৎ, তোমরা পার্থিব জীবনে ভালো কাজ করেছিলে তারই কারণে (আজ) তৃপ্তির সাথে পানাহার কর। (কুরআনুল কারীম ৬৯/২৪)
অবশ্য সাধারণ স্থানে অমুসলিমদেরকে প্রকাশ্যভাবে পানাহার করতে বারণ করতে হবে। কারণ, তা ইসলামী রাষ্টেºর পরিবেশের প্রতিকূল।[2]
[2] (সুআলান ফিস্-সিয়াম ৫০-৫১পৃঃ)
যে ব্যক্তি নামায ফরয হওয়ার কথা অস্বীকার করে এবং ইচ্ছাকৃত তা ত্যাগ করে সে ব্যক্তি উলামাদের সর্বসম্মতভাবে কাফের। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি অবহেলায় অলসতার দরুন নামায ত্যাগ করে, সে ব্যক্তিও উলামাদের শুদ্ধ মতানুসারে কাফের। মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘মানুষ এবং কুফর ও শির্কের মাঝে (অন্তরাল) নামায ত্যাগ।’’[1] তিনি আরো বলেন, ‘‘আমাদের মাঝে ও ওদের মাঝে চুক্তিই হল নামায। যে ব্যক্তি তা পরিত্যাগ করে সে কাফের।’’[2]
এখানে কাফের বা কুফর বলতে সেই কুফরকে বুঝানো হয়েছে, যা মানুষকে ইসলাম থেকে খারিজ করে দেয়। যেহেতু মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) নামাযকে মুমিন ও কাফেরদের মাঝে অন্তরাল বলে চিহিÁত করেছেন। আর এ কথা বিদিত যে, কুফরীর মিল্লত ইসলামী মিল্লাত থেকে ভিন্নতর। সুতরাং যে ব্যক্তি ঐ চুক্তি পালন না করবে সে কাফেরদের একজন।[3]
আব্দুল্লাহ বিন শাক্বীক্ব উকাইলী বলেন, ‘নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) -এর সাহাবাবৃন্দ নামায ছাড়া অন্য কোন আমল ত্যাগ করাকে কুফরী মনে করতেন না।’[4]
বলা বাহুল্য, যে ব্যক্তি কাফের প্রতীয়মান হবে সে ব্যক্তির রোযা ও সকল প্রকার ইবাদত পন্ড হয়ে যাবে। কারণ, মহান আল্লাহ বলেন,
(وَلَوْ أَشْرَكُوْا لَحَبِطَ عَنْهُمْ مَّا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ)
অর্থাৎ, তারা যদি শির্ক করত, তাহলে তাদের কৃতকর্ম পন্ড হয়ে যেত। (কুরআনুল কারীম ৬/৮৮)
তদনুরূপ সেই সকল রোযাদার যারা কেবল রমাযান মাসে নামায পড়ে এবং বাকী ১১ মাস নামায পড়ে না, তারা আসলে আল্লাহকে ধোকা দেয়। কত নিকৃষ্ট সেই জাতি, যে জাতি নিজ পালনকর্তা আল্লাহকে কেবল রমাযান মাসেই চিনে; অন্য মাসে চিনে না। এই শ্রেণীর লোকেদের অরমাযানে নামায না পড়ার কারণেই রোযাও শুদ্ধ হবে না।
তবে তারা রোযা ছাড়তে আদিষ্ট বা উপদিষ্ট নয়। কেননা, রোযা রাখলে তাদের জন্য মঙ্গলেরই আশা করা যায়। এতে তারা দ্বীনের নৈকট্য পেতে প্রয়াস পাবে। তাদের হৃদয়ে যে আল্লাহভীতিটুকু আছে তার মাঝেই আশা করা যায় যে, তারা তওবা করে ১২ মাস নামায পড়াও ধরবে।[5]
[2] (আহমাদ, মুসনাদ, তিরমিযী ২৬২১, ইবনে মাজাহ ১০৭৯নং, হাকেম, মুস্তাদ্রাক, ইবনে হিববান, সহীহ, সহীহ তারগীব, আলবানী ৫৬১নং)
[3] (ইবনে উষাইমীন, হুকমু তারিকিস সক্ষলাহ, ইবনে উষাইমীন ৯পৃঃ)
[4] (তিরমিযী ২৬২২, হাকেম, মুস্তাদ্রাক, সহীহ তারগীব, আলবানী ৫৬২নং)
[5] (স্থায়ী উলামা কমিটি, ফাসিঃ মুসনিদ ২৮-২৯পৃঃ)
নাবালক ছোট শিশুর জন্য রোযা ফরয নয়। মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘তিন ব্যক্তি নিকট থেকে (পাপ লিখার) কলম তুলে নেওয়া হয়েছে; জ্ঞানশূন্য পাগলের নিকট থেকে; যতক্ষণ না সে সুস্থ হয়েছে। ঘুমন্ত ব্যক্তির নিকট থেকে; যতক্ষণ না সে জাগ্রত হয়েছে। আর শিশুর নিকট থেকে; যতক্ষণ না সে সাবালক হয়েছে।’’[1]
অবশ্য জ্ঞানবান শিশু রোযা রাখলে শুদ্ধ হবে এবং সওয়াবও পাবে। আর তার পিতা-মাতার জন্যও রয়েছে তরবিয়ত ও ভালো কাজের নির্দেশ দেওয়ার সওয়াব।
সুতরাং অভিভাবকদের উচিৎ, রোযা রাখতে সক্ষম ছোট শিশুদেরকে রোযা রাখতে আদেশ করা, উৎসাহ দিয়ে তাদেরকে এই বিরাট ইবাদতে অভ্যাসী করা এবং তার জন্য উদ্বুদ্ধকারী পুরস্কার ও উপহার নির্ধারিত করা। মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর সাহাবাগণ নিজ নিজ ছোট বাচ্চাদেরকে রোযা রাখতে আদেশ দিতেন। রুবাইয়ে’ বিন্তে মুআওবিয (রাঃ) বলেন, আশূরার সকালে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) মদ্বীনার উপকণ্ঠে অবস্থিত আনসারদের মহল্লায় বলে পাঠালেন যে, ‘‘যে ব্যক্তি ফজরের আগে থেকেই রোযা রেখেছে, সে যেন তার রোযা পূরণ করে। আর যে ব্যক্তির রোযা না রেখে ফজর হয়েছে, সেও যেন বাকী দিন রোযা রাখে।’’ সুতরাং আমরা তার পর থেকে রোযা রাখতাম। আমাদের ছোট শিশুদেরকে -আল্লাহর ইচ্ছায়- রোযা রাখাতাম এবং তাদেরকে নিয়ে মসজিদে যেতাম। তাদের জন্য তুলো দ্বারা পুতুল গড়তাম। তাদের কেউ খাবারের জন্য কাঁদতে লাগলে তাকে ঐ পুতুল দিতাম। আর এইভাবে ইফতারের সময় হয়ে যেত। অন্য এক বর্ণনায় আছে, আমরা তাদেরকে ঐ খেলনা দিতাম, যাতে তারা ভুলে থাকে এবং খেলার ঘোরে তাদের রোযা পূর্ণ করতে পারে।[2]
শিশু (স্বপ্নদোষ হয়ে) দিনের ভিতরে সাবালক হলে দিনের বাকী অংশ রোযা নষ্টকারী জিনিস থেকে বিরত হবে। কারণ, এক্ষণে তার জন্য রোযা ফরয। অবশ্য এর পূর্বের রোযাগুলো কাযা রাখতে হবে না। কেননা, পূর্বে তার উপর রোযা ফরয ছিল না।[3]
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, তিনটির মধ্যে একটি লক্ষণ দেখে সাবালক চেনা যায়; স্বপ্নদোষ বা অন্য প্রকারে সকাম বীর্যপাত হওয়া, নাভির নীচে মোটা লোম গজানো, অথবা ১৫ বছর বয়স হওয়া।
আর বালিকাদের ক্ষেত্রে একটি অধিক লক্ষণ হল, মাসিক শুরু হওয়া। বলা বাহুল্য, বালিকার মাসিকের খুন আসতে শুরু হলেই সে সাবালিকা; যদিও তার বয়স ১০ বছর হয়।[4]
[2] (মুসলিম ১১৩৫নং)
[3] (মাসআলাহ ফিস্-সিয়ামঃ ১২নং)
[4] (আশ্শারহুল মুমতে’ ৬/৩৩৩, ফাইযুর রাহীমির রাহমান, ফী আহকামি অমাওয়াইযি রামাযান ৮৭পৃঃ, ফুসূলুন ফিস্-সিয়ামি অত্-তারাবীহি অয্-যাকাহ ৫পৃঃ)
পাগলের উপর রোযা ফরয নয়। কারণ, তার উপর থেকে কলম তুলে নেওয়া হয়েছে; যেমন পূর্বোক্ত হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে। অনুরূপ আধ-পাগলা, যার ভালো-মন্দের তমীয নেই এবং অনুরূপ স্থবির বৃদ্ধ, যার তমীয-জ্ঞান নষ্ট হয়ে গেছে। এ সকল জ্ঞানহীন মানুষদের তরফ থেকে খাদ্যদানও ওয়াজেব নয়।[1]
পাগল দিনের ভিতরে সুস্থ হলে তার জন্য দিনের বাকী অংশ রোযা নষ্টকারী জিনিস থেকে বিরত হওয়া জরুরী। কারণ, এক্ষণে তার জন্য রোযা ফরয। অবশ্য এর পূর্বের রোযাগুলো কাযা রাখতে হবে না। কেননা, পূর্বে তার উপর রোযা ফরয ছিল না।
পাগলের উপর থেকে (পাপের) কলম তুলে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু পাগল যদি এমন হয় যে, ক্ষণে পাগল ক্ষণে ভালো, তাহলে এমন ব্যক্তির জন্য ভালো থাকা অবস্থায় রোযা নষ্টকারী জিনিস থেকে বিরত থাকা জরুরী। আর পাগল থাকা অবস্থায় তা ধর্তব্য নয়। পক্ষান্তরে ভালো থাকা অবস্থায় রোযা রেখে দিনে হঠাৎ পাগল হয়ে গেলে তার রোযা বাতিল নয়। যেমন কেউ যদি কোন রোগ বা আঘাত ইত্যাদির কারণে বেহুঁশ বা অজ্ঞান হয়ে যায় তাহলে তার রোযাও নষ্ট হয় না। কেননা, সে জ্ঞান থাকা অবস্থায় রোযার নিয়ত করেছে, অতএব অজ্ঞান হলেও সে নিয়ত নষ্ট হবে না। এই বিধান মূর্ছা, হিষ্টিরিয়া বা জিন পাওয়া রোগীরও।
যদি কেউ রোযা রাখার ফলে (ক্ষুধার তাড়নায়) বেহুঁশ হয়ে যায়, তাহলে সে রোযা ভেঙ্গে কাযা করতে পারে। দিনের বেলায় কেউ বেহুঁশ হলে এবং সূর্য অস্ত যাওয়ার আগে কিংবা পরে হুঁশ ফিরে এলে তার রোযা শুদ্ধ। যেহেতু সে ভোরে ভালো অবস্থায় রোযা রেখেছে। অবশ্য যদি কেউ ফজর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত বেহুঁশ থাকে, তাহলে অধিকাংশ উলামার মতে তার রোযা শুদ্ধ নয়। কিন্তু অধিকাংশ উলামার মতে সে রোযার কাযা করতে হবে; তাতে বেহুঁশ থাকার সময় যতই বেশী হোক না কেন।[2]
কোন কোন আহলে ইল্মের ফতোয়া মতে যে ব্যক্তি বেহুঁশ হয়ে থাকে বা (হূদ্যন্ত্র বন্ধ হওয়ার ফলে) কিছুকাল নিস্পন্দ থাকে, অথবা নিজের কোন মঙ্গলের জন্য জ্ঞানশূন্যকারী ওষুধ ব্যবহার করে অচেতন থাকে এবং তা যদি ৩ দিনের কম হয় তাহলে সে ঐ বেহুঁশ বা অচেতন থাকার দিনগুলো কাযা করবে; যেমন কেউ ঘুমিয়ে থেকে নামায নষ্ট করলে তাকে কাযা করতে হয়। পক্ষান্তরে ৩ দিনের বেশী হলে কাযা করতে হবে না; যেমন পাগলকে কাযা করতে হয় না।[3]
ঘুমন্ত ব্যক্তি যদিও তার উপর থেকে কলম তুলে নেওয়া হয়ে থাকে, তবুও তার রোযা শুদ্ধ, তাকে আর কাযা করতে হবে না; যদিও সে সারাটি দিন ঘুমিয়ে থাকে। কারণ, ঘুম হল স্বাভাবিক কর্ম। আর তাতে সার্বিকভাবে অনুভূতি নষ্ট হয় না।[4]
[2] (সাবঊনা মাসআলাহ ফিস্-সিয়াম ২৬নং, আশ্শারহুল মুমতে’ ৬/৩৬৫)
[3] (মাসআলাহ ফিস্-সিয়াম ৭০ঃ ২৬নং)
[4] (আশ্শারহুল মুমতে’ ৬/৩৬৬, আসাইঃ ৬৩পৃঃ)
১। বৃদ্ধ ও স্থবির বা অথর্ব ব্যক্তি, যার শারীরিক ক্ষমতা নিঃশেষ হয়ে গেছে এবং দিনের দিন আরো খারাপের দিকে যেতে যেতে মরণের দিকে অগ্রসর হতে চলেছে, সে ব্যক্তির জন্য রোযা ফরয নয়। কষ্ট হলে সে রোযা রাখবে না। মহান আল্লাহ বলেন,
(وَعَلَى الَّذِيْنَ يُطِيْقُوْنَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِيْنٍ)
অর্থাৎ, যারা রোযা রাখার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও রোযা রাখতে চায় না, তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাদ্য দান করবে। (কুরআনুল কারীম ২/১৮৪)
ইবনে আববাস (রাঃ) বলতেন, এই আয়াত মনসূখ নয়। তারা হল অথর্ব বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, যারা রোযা রাখতে সক্ষম নয়। তারা প্রত্যেক দিনের বদলে একটি করে মিসকীনকে খাদ্য দান করবে।[1]
অবশ্য এমন বৃদ্ধ, যার কোন জ্ঞানই নেই, তার জন্য এবং তার পরিবারের জন্য কোন কিছু ফরয নয়। তার তরফ থেকে রোযা রাখতে বা কাযা করতেও হবে না এবং মিসকীনও খাওয়াতে হবে না। কারণ, শরীয়তের সকল ভার তার পক্ষে মাফ হয়ে গেছে। কিন্তু সে যদি এমন বৃদ্ধ হয়, যে কখনো কখনো ভালো-মন্দের তমীয করতে পারে, আবার কখনো কখনো আবোল-তাবোল বকে, তাহলে যে সময় সে ভালো থাকে সেই সময় তার জন্য রোযা বা খাদ্যদান ফরয এবং যে সময় তমীয-জ্ঞান থাকে না সে সময় ফরয নয়।[2]
২। এমন চিররোগা, যার রোগ ভালো হওয়ার কোন আশা নেই; যেমন ক্যা¦সারের রোগী (পেট খালি রাখলে পেটে যন্ত্রণা হয়) এমন রোগা ব্যক্তির জন্য রোযা ফরয নয়। কারণ, তার এমন কোন সময় নেই, যে সময়ে সে তা রাখতে পারে। অতএব তার তরফ থেকে একটি রোযার পরিবর্তে একটি করে মিসকীন খাওয়াতে হবে।[3]
- খাদ্যদানের নিয়মঃ
মিসকীনকে খাদ্যদানের ২টি নিয়ম আছেঃ-
প্রথম এই যে, এক দিন খাবার তৈরী করে রোযার সংখ্যা হিসাবে মিসকীন ডেকে খাইয়ে দেবে। (অথবা এক জন মিসকীনকেই ঐ পরিমাণ দিন খাইয়ে দেবে।) আনাস (রাঃ) বৃদ্ধ হয়ে গেলে তাই করতেন। তিনি এক অথবা দুই বছর রোযা রাখতে না পারলে প্রত্যহ মিসকীনকে মাংস-রুটী খাইয়েছেন।[4]
দ্বিতীয় নিয়ম এই যে, অপক্ক খাদ্য দান করবে। অর্থাৎ, দেশের প্রধান খাদ্য থেকে প্রত্যেক দিনের পরিবর্তে প্রত্যেক মিসকীনকে মোটামুটি সওয়া এক কিলো করে খাদ্য (চাল অথবা গম) দান করবে। যেহেতু কা’ব বিন উজরার ইহরাম অবস্থায় মাথায় উকুন হলে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) তাঁকে বলেন, ‘‘তোমার মাথা মুন্ডন করে ফেল এবং তিন দিন রোযা রাখ, কিংবা প্রত্যেক মিসকীনকে মাথাপিছু অর্ধ সা’ (মোটামুটি সওয়া এক কিলো) করে ছয়টি মিসকীনকে খাদ্য দান কর, কিংবা একটি ছাগ কুরবানী কর।’’[5]
অবশ্য সেই সাথে কিছু মাংস বা কোন তরকারীও মিসকীনকে দান করা উচিৎ। যাতে মহান আল্লাহর এই বাণীর পরিপূর্ণ আনুগত্য সম্ভব হয়;
(وَعَلَى الَّذِيْنَ يُطِيْقُوْنَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِيْنٍ)
অর্থাৎ, যারা রোযা রাখার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও রোযা রাখতে চায় না, তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাদ্য দান করবে। (কুরআনুল কারীম ২/১৮৪)
খাদ্য দান কখন করবে -সে ব্যাপারে এখতিয়ার আছে। যদি প্রত্যেক দিন একটা করে রোযার ফিদ্য়া দান করে, তাও চলবে। যদি মাসের শেষে সব দিনগুলি হিসাব করে একই দিনে তা দান করে, তাও চলবে। এ ব্যাপারে বাধ্য-বাধকতা কিছু নেই। তবে রোযার আগেই দেওয়া চলবে না। কারণ, তা আগে রোযা রাখার মত হয়ে যাবে। আর রমাযানের আগে শা’বানে কি ফরয রোযা রাখা চলবে?[6]
সমস্ত খাদ্যকে রোযার সংখ্যা পরিমাণ মিসকীনের মাঝে ব¦টন করা যাবে। যেমন সমস্ত খাদ্য কেবল উপযুক্ত একজন মিসকীন অথবা একটি মাত্র মিসকীন পরিবারকেও দেওয়া যাবে।[7]
৩। যে ব্যক্তির রোগ সাময়িক, যা সেরে যাওয়ার আশা আছে; যেমন জ্বর ইত্যাদি, এমন ব্যক্তির ৩ অবস্থা হতে পারেঃ
(ক) রোযা রাখলে তার কষ্ট হবে না বা রোযা তার কোন ক্ষতি করবে না। এমন অবস্থায় তার জন্য রোযা রাখা ওয়াজেব। কারণ, তার কোন ওজর নেই।
(খ) রোযা রাখলে তার কষ্ট হবে, কিন্তু রোযা তার কোন ক্ষতি করবে না। এমন অবস্থায় তার জন্য রোযা রাখা মকরূহ। কারণ, তাতে আল্লাহর দেওয়া অনুমতি ও তার আত্মার প্রতি দয়া প্রদর্শন করা থেকে ভিন্ন আচরণ হয়ে যায়। অথচ মহান আল্লাহ বলেন,
(فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ مَرِيْضاً أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَر)
অর্থাৎ, কিন্তু তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ বা মুসাফির হলে সে অপর কোন দিন গণনা করবে। (কুরআনুল কারীম ২/১৮৪)
(গ) রোযা রাখলে রোযা তার ক্ষতি করবে। (রোগ বৃদ্ধি করবে, অথবা কোন বড় রোগ আনয়ন করবে, অথবা তার অবস্থা মরণাপন্ন হয়ে যাবে।) এমতাবস্থায় তার জন্য রোযা রাখা হারাম। কেননা, নিজের উপর ক্ষতি ডেকে আনা বৈধ নয়। মহান আল্লাহ বলেন,
(وَلاَ تَقْتُلُوْا أَنْفُسَكُمْ، إِنَّ اللهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيْماً)
অর্থাৎ, তোমরা আত্মহত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়াশীল। (কুরআনুল কারীম ৪/২৯)
তিনি আরো বলেন,
(وَلاَ تُلْقُوْا بِأَيْدِيْكُمْ إِلَى التَّهْلُكَة)
অর্থাৎ, তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিও না। (কুরআনুল কারীম ২/১৯৫)
হাদীসে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘কেউ নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না এবং অপরেরও ক্ষতি করবে না।’’[8]
রোযা রোযাদারকে ক্ষতি করছে কি না তা জানা যাবে, রোযাদারের নিজে নিজে ক্ষতি অনুভব করার মাধ্যমে অথবা বিশ্বস্ত কোন ডাক্তারের ফায়সালা অনুযায়ী।
এই শ্রেণীর রোগী যে দিনের রোযা ত্যাগ করবে, সেই দিনের রোযা পরবর্তীতে সুস্থ হলে অবশ্যই কাযা করবে। আর এমন রোগীর তরফ থেকে মিসকীনকে খাদ্যদান যথেষ্ট নয়।[9]
শেষোক্ত প্রকার কোন রোগী যদি কষ্ট ও ক্ষতি স্বীকার করেও রোযা রাখে, তাহলেও তার রোযা শুদ্ধ ও যথেষ্ট হবে না। বরং তাকে সুস্থ অবস্থায় কাযা করতে হবে।[10] কারণ, ঐ সময় তার জন্য রোযা রাখা নিষিদ্ধ। যেমন তাশরীক ও ঈদের দিনগুলিতে রোযা রাখা নিষিদ্ধ; যা রাখা বৈধ নয় এবং রাখলে শুদ্ধও নয়।
এখান থেকে কিছু মুজতাহিদ রোগীদের ভ্রান্ত ফায়সালার কথা স্পষ্ট হয়ে ওঠে, যারা রোযা তাদের জন্য কষ্টকর ও ক্ষতিকর হওয়া সত্ত্বেও তা কাযা করতে চায় না। আমরা বলি যে, তারা ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে। তারা মহান আল্লাহর দান গ্রহণ করে না, তাঁর দেওয়া অনুমতি কবুল করে না এবং নিজেদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। অথচ তিনি বলেন, ‘‘তোমরা আত্মহত্যা করো না।’’[11]
পক্ষান্তরে রোগ হাল্কা হলে; যেমন সর্দি-কাশি, মাথা ধরা, গা ব্যথা ইত্যাদি হলে তার ফলে রোযা ভাঙ্গা জায়েয নয়। অবশ্য যদি কোন ডাক্তারের মাধ্যমে, অথবা নিজের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে, অথবা প্রবল ধারণা মতে জানতে পারে যে, রোযা রাখলে তার রোগ বৃদ্ধি পাবে, অথবা ভালো হতে দেরী হবে, অথবা অন্য রোগ আনয়ন করবে, তাহলে তার জন্য রোযা না রাখা এবং পরে কাযা করে নেওয়া বৈধ। বরং এ ক্ষেত্রে রোযা রাখা মকরূহ।
আর দিবারাত্র লাগাতার রোগ থাকলে রোগীর জন্য রাতে রোযার নিয়ত করা ওয়াজেব নয়; যদিও সকালে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যেহেতু সে ক্ষেত্রে বর্তমান পরিস্থিতিই বিচার্য।
[2] (মাসআলাহ ফিস্-সিয়াম, মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল-মুনাজ্জিদ৭০ঃ ৩০নং)
[3] (ইবনে উষাইমীন, ফুসিতাযাঃ ৯পৃঃ)
[4] (বুখারী ৯২৮-৯২৯নং)
[5] (বুখারী ১৮১৬, মুসলিম ১২০১নং)
[6] (আশ্শারহুল মুমতে’ ৬/৩৩৫)
[7] (ইবনে জিবরীন, ফাসিঃ জিরাইসী ৩২পৃঃ)
[8] (আহমাদ, মুসনাদ, ইবনে মাজাহ, হাকেম, মুস্তাদ্রাক, বাইহাকী, দারাকুত্বনী, সুনান, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ২৫০নং)
[9] (আশ্শারহুল মুমতে’ ৬/৩৩৬-৩৩৮, ফুসূলুন ফিস্-সিয়ামি অত্-তারাবীহি অয্-যাকাহ ৯-১০পৃঃ)
[10] (মুহাল্লা ইবনে হাযম ৬/২৫৮)
[11] (আশ্শারহুল মুমতে’ ৬/৩৫৩)
গর্ভবতী অথবা দুগ্ধদাত্রী মহিলা রোযা রাখার দরুন যদি নিজেদের কষ্ট হয় অথবা তাদের শিশুর ক্ষতির আশঙ্কা করে, তাহলে উভয়ের জন্য রোযা না রেখে যখন সহজ হবে অথবা ক্ষতির আশঙ্কা দূর হবে তখন রোযা কাযা করে নেওয়া বৈধ।[1]
বলা বাহুল্য, (কিছু উলামার নিকট) গর্ভবতী ও দুগ্ধদাত্রী মহিলাকে রোগীর উপর কিয়াস করাই সঠিক। সুতরাং রোগীর মত তাদের জন্য রোযা না রাখা বৈধ এবং তাদের জন্য সময় মত কাযা ছাড়া অন্য কিছু ওয়াজেব নয়। এতে তারা নিজেদের ক্ষতির আশঙ্কা করুক অথবা তাদের শিশুদের। যেহেতু মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘আল্লাহ মুসাফিরের উপর থেকে (যথাসময়ে) রোযা এবং অর্ধেক নামায, আর গর্ভবতী ও দুগ্ধদাত্রী মহিলার উপর থেকে (যথাসময়ে) রোযা লাঘব করেছেন।’’[2]
উপরোক্ত হাদীসের উদ্দেশ্য এই যে, তারা রমাযানে রোযা না রেখে সময় মত কাযা করতে পারে। রোযা একেবারেই মাফ নয়।[3]
পক্ষান্তরে যাঁরা তাদের জন্য কাযা করার সাথে সাথে মিসকীনকে খাদ্যদানেরও কথা বলে থাকেন, তাঁদের কথার উপর কিতাব ও সুন্নাহর কোন দলীল নেই। আর মূল হল দায়িত্বে কিছু না থাকা, যতক্ষণ না দায়িত্ব আসার সপক্ষে কোন দলীল কায়েম হয়েছে।[4]
কোন কোন আহলে ইল্ম এই মতকে প্রাধান্য দিয়েছেন যে, গর্ভবতী ও দুগ্ধদাত্রী মহিলার জন্য (চিররোগা ও অক্ষম বৃদ্ধের মত) কেবল খাদ্যদানই ওয়াজেব; কাযা ওয়াজেব নয়। এ মত পোষণ করেছেন ইবনে আববাস, ইবনে উমার ও সাঈদ বিন জুবাইর। ইবনে আববাস এ ব্যাপারে স্পষ্ট বলেন, ‘ওরা প্রত্যেক দিনের বিনিময়ে একটি করে মিসকীন খাওয়াবে; রোযা কাযা করবে না।’
অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, একদা তিনি তাঁর ক্রীতদাসী স্ত্রীকে গর্ভ বা দুধ দান করা অবস্থায় দেখে বললেন, ‘তুমি অক্ষম ব্যক্তির মত। তোমার জন্য প্রত্যেক রোযার বিনিময়ে একটি করে মিসকীন খাওয়ানো ওয়াজেব। তোমার জন্য কাযা ওয়াজেব নয়।’[5]
তিনিই মহান আল্লাহর এই বাণী ‘‘যারা রোযা রাখার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও রোযা রাখতে চায় না, তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাদ্য দান করবে। (কুরআনুল কারীম ২/১৮৪) এর তফসীরে বলেছেন, ‘আর গর্ভবতী ও দুগ্ধবতী মহিলা রোযা রাখতে ভয় করলে রোযা না রেখে প্রত্যেক দিনের পরিবর্তে একটি করে মিসকীন খাওয়াবে।’ সুতরাং স্পষ্ট উক্তির বর্তমানে কিয়াসের কোন প্রয়োজন নেই।
অবশ্য ইবনে আববাসের এই মত সেই মহিলার জন্য প্রযোজ্য, যে মহিলা প্রত্যেক দুই-আড়াই বছর পর পর সন্তান ধারণ করে। কারণ, এই শ্রেণীর মহিলা কাযা করার ফুরসতই পাবে না। যে কোন সময়ে হয় সে গর্ভবতী থাকবে, নচেৎ দুগ্ধদায়িনী। আর গর্ভ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তার রোযা রাখার সুযোগই হয়ে উঠবে না। অতএব সে মিসকীনকে খানা খাইয়ে দেবে এবং তার জন্য রোযা মাফ। আর আল্লাহই ভালো জানেন।
[2] (আহমাদ, মুসনাদ ৪/৩৪৭, আবূ দাঊদ ২৪০৮, তিরমিযী ৭১৫, নাসাঈ ২২৭৬, ইবনে মাজাহ ১৬৬৭, সহীহুল জামেইস সাগীর, আলবানী ১৮৩৫নং)
[3] (আশ্শারহুল মুমতে’ ৬/৩৬২)
[4] (ইবনে উষাইমীন, ফাসিঃ মুসনিদ ৬৬পৃঃ)
[5] (ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৪/১৭-২৫ দ্রঃ)
কোন মৃত্যু-কবলিত মানুষকে আগুন, পানি বা ধ্বংসস্ত্তপ থেকে বাঁচাতে যদি কোন রোযাদারকে রোযা ভাঙ্গতে হয় এবং সে ছাড়া অন্য কোন রোযাহীন লোক না পাওয়া যায়, তাহলে প্রাণ রক্ষার জন্য তার পক্ষে রোযা ভাঙ্গা ওয়াজেব। অবশ্য সে ঐ দিনটিকে পরে কাযা করতে বাধ্য।[1]
তবে এ ব্যাপারে প্রশস্ততা বৈধ নয়। বরং কেবল অতি প্রয়োজনীয় ও একান্ত নিরুপায়ের ক্ষেত্রে দরকার মোতাবেক এ অনুমোদন প্রয়োগ করা উচিৎ। বিশেষ করে যাঁরা ফায়ার ব্রিগেডে কাজ করেন, তাঁদের জন্য একান্ত কঠিন কষ্ট ও পরিশ্রম ছাড়া রোযা ভাঙ্গা বৈধ নয়। অন্যথা কোন আগুন নিভাতে যাওয়াই তাঁদের জন্য রোযা ভাঙ্গা বৈধ করতে পারে না।[2]
যে ব্যক্তি রোযা অবস্থায় প্রচন্ড ক্ষুধা অথবা পানি-পিপাসায় কাতর হয়ে প্রাণ যাওয়ার আশঙ্কা করে, অথবা ভুল ধারণায় নয়, বরং প্রবল ধারণায় বেহুশ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করে, সে ব্যক্তি রোযা ভেঙ্গে প্রয়োজন মত পানাহার করতে পারে। তবে সে রোযা তাকে পরে কাযা করতে হবে। কারণ, জান বাঁচানো ফরয। আর মহান আল্লাহ বলেন,
(وَلا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ)
‘‘তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিও না।’’ (কুরআনুল কারীম ২/১৯৫)
(وَلا تَقْتُلُوا أَنْفُسَكُمْ إِنَّ اللهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيماً)
‘‘তোমরা আত্মহত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়াশীল।’’ (কুরআনুল কারীম ৪/২৯)
কোন ধারণাপ্রসূত কষ্ট, ক½vন্তি অথবা রোগের আশঙ্কায় রোযা ভাঙ্গা বৈধ নয়।
যারা কঠিন পরিশ্রমের কাজ করে তাদের জন্যও রোযা ছাড়া বৈধ নয়। এ শ্রেণীর লোকেরা রাত্রে রোযার নিয়ত করে রোযা রাখবে। অতঃপর দিনের বেলায় কাজের সময় যদি নিশ্চিত হয় যে, কাজ ছাড়লে তাদের ক্ষতি এবং কাজ করলে তাদের প্রাণ যাওয়ার আশঙ্কা আছে, তাহলে তাদের জন্য রোযা ভেঙ্গে কেবল ততটুকু পানাহার বৈধ হবে, যতটুকু পানাহার করলে তাদের জান বেঁচে যাবে। অতঃপর সূর্যাস্ত পর্যন্ত আর পানাহার করবে না। অবশ্য রমাযান পরে তারা ঐ দিনটিকে কাযা করতে বাধ্য হবে। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহর সাধারণ বিধান হল,
(لاَ يُكَلِّفُ اللهُ نَفْساً إِلاَّ وُسْعَهَا)
অর্থাৎ, আল্লাহ কোন আত্মাকে তার সাধ্যের অতীত ভার অর্পণ করেন না। (কুরআনুল কারীম ২/২৮৬)
(مَا يُرِيْدُ اللهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُمْ مِّنْ حَرَجٍ) (وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِي الدِّيْنِ مِنْ حَرَجٍ)
অর্থাৎ, আল্লাহ দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের জন্য কোন সংকীর্ণতা রাখেন নি। (কুরআনুল কারীম ৫/৬, ২২/৭৮)
বলা বাহুল্য, উঁট বা ছাগল-ভেঁড়ার রাখাল রৌদ্রে বা পিপাসায় যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে যতটুকু পরিমাণ পানাহার করা দরকার ততটুকু করে বাকী দিনটুকু সূর্যাস্ত পর্যন্ত বিরত থাকবে। অতঃপর রমাযান বিদায় নিলে ঐ দিনটি কাযা করবে। আর এর জন্য কোন কাফ্ফারা নেই।[3]
অনুরূপ বিধান হল চাষী ও মজুরদের।[4]
পক্ষান্তরে যাদের প্রাত্যহিক ও চিরস্থায়ী পেশাই হল কঠিন কাজ; যেমন পাথর কাটা বা কয়লা ইত্যাদির খনিতে যারা কাজ করে এবং যারা আজীবন সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত, তারা রোযা রাখতে অপারগ হলে তথা অস্বাভাবিক কষ্ট অনুভব করলে রোযা না রাখতে পারে। তবে তাদের জন্য (তাদের পরিবার দ্বারা) ফিদ্য়া আদায় (একটি রোযার বদলে একটি মিসকীনকে খাদ্য দান) করা জরুরী। অবশ্য এ কাজ সম্ভব না হলে তাও তাদের জন্য মাফ।[5]
পরীক্ষার সময় মেহনতী ছাত্রদের জন্য রোযা কাযা করা বৈধ নয়। কারণ, এটা কোন এমন শরয়ী ওযর নয়, যার জন্য রোযা কাযা করা বৈধ হতে পারে।[6]
- দিন যেখানে অস্বাভাবিক লম্বাঃ
যে দেশে দিন অস্বাভাবিকভাবে ২০/২১ ঘ¦টা লম্বা হয়, সে দেশের লোকেদের জন্যও রোযা ত্যাগ করা অথবা সূর্যাস্তের পূর্বে ইফতার করা বৈধ নয়। তাদের যখন দিন-রাত হয়, তখন সেই অনুসারে তাদের জন্য আমল জরুরী; তাতে দিন লম্বা হোক অথবা ছোট। কেননা, ইসলামী শরীয়ত সকল দেশের সকল মানুষের জন্য ব্যাপক। আর মহান আল্লাহ ঘোষণা হল,
(وَكُلُوْا وَاشْرَبُوْا حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الأَسْوَدِ مِنَ الْفَجْرِ، ثُمَّ أَتِمُّوا الصِّيَامَ إِلَى اللَّيْلِ)
অর্থাৎ, আর তোমরা পানাহার কর, যতক্ষণ পর্যন্ত না (রাতের) কালো অন্ধকার থেকে ফজরের সাদা রেখা তোমাদের নিকট স্পষ্ট হয়েছে। অতঃপর তোমরা রাত পর্যন্ত রোযা পূর্ণ কর। (কুরআনুল কারীম ২/১৮৭)
কিন্তু যে ব্যক্তি দিন লম্বা হওয়ার কারণে, অথবা নিদর্শন দেখে, অভিজ্ঞতার ফলে, কোন বিশ্বস্ত ও অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ মতে, কিংবা নিজের প্রবল ধারণা মতে এই মনে করে যে, রোযা রাখাতে তার প্রাণ নাশ ঘটবে, অথবা বড় রোগ দেখা দেবে, অথবা রোগ বৃদ্ধি পাবে, অথবা আরোগ্য লাভে বিলম্ব হবে, সে ব্যক্তি ততটুকু পরিমাণ পানাহার করবে যতটুকু পরিমাণ করলে তার জান বেঁচে যাবে অথবা ক্ষতি দূর হয়ে যাবে। অতঃপর রমাযান বিদায় নিলে সুবিধা মত যে কোন মাসে ঐ দিনগুলো কাযা করে নেবে। যেহেতু মহান আল্লাহ বলেন,
(فَمَنْ شَهِدَ منْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ وَمَنْ كَانَ مَرِيْضاً أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَر، يُرِيْدُ اللهُ بِكُمُ اليُسْرَ وَلاَ يُرِيْدُ بِكُمُ الْعُسْرَ)
অর্থাৎ, তোমাদের মধ্যে যে কেউ এ মাস পাবে সে যেন এ মাসে রোযা রাখে। কিন্তু কেউ অসুস্থ বা মুসাফির হলে সে অপর কোন দিন গণনা করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ চান এবং তিনি তোমাদের জন্য কঠিন কিছু চান না। (কুরআনুল কারীম ২/১৮৫)
তিনি আরো বলেন,
(لاَ يُكَلِّفُ اللهُ نَفْساً إِلاَّ وُسْعَهَا)
অর্থাৎ, আল্লাহ কোন আত্মাকে তার সাধ্যের অতীত ভার অর্পণ করেন না। (কুরআনুল কারীম ২/২৮৬)
(وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِي الدِّيْنِ مِنْ حَرَجٍ)
অর্থাৎ, আল্লাহ দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের জন্য কোন সংকীর্ণতা রাখেন নি। (কুরআনুল কারীম ৫/৬, ২২/৭৮)
যে ব্যক্তি এমন দেশে বসবাস করে, যেখানে গ্রীষমকালে সূর্য অস্তই যায় না এবং শীতকালে উদয়ই হয় না, অথবা যেখানে ছয় মাস দিন ও ছয় মাস রাত্রি থাকে, সে ব্যক্তির উপরেও রমাযানের রোযা ফরয। সে ব্যক্তি নিকটবর্তী এমন কোন দেশের হিসাব অনুযায়ী রমাযান মাসের শুরু ও শেষ, প্রাত্যহিক সেহরীর শেষ তথা ফজর উদয় হওয়ার সময় ও ইফতার তথা সূর্যাস্তের সময় নির্ধারণ করবে, যে দেশে রাত দিনের পার্থক্য আছে। অতএব সেখানেও ২৪ ঘ¦টায় দিবারাত্রি নির্ণয় করতে হবে। মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) কর্তৃক এ কথা প্রমাণিত যে, একদা তিনি সাহাবাবর্গকে দাজ্জাল প্রসঙ্গে কিছু কথা বললেন। তাঁরা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘সে কতদিন পৃথিবীতে অবস্থান করবে?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘‘চল্লিশ দিন; এক দিন এক বছরের সমান, একদিন এক মাসের সমান এবং একদিন এক সপ্তাহের সমান। বাকী দিনগুলো তোমাদের স্বাভাবিক দিনের মত।’’ তাঁরা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! যে দিনটি এক বছরের মত হবে, সে দিনে কি এক দিনের (৫ অক্ত) নামায পড়লে যথেষ্ট হবে?’ তিনি বললেন, ‘‘না। বরং তোমরা বছর সমান ঐ দিনকে স্বাভাবিক দিনের মত নির্ধারণ করে নিও।’’[7]
বলা বাহুল্য, মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) ঐ এক বছর সমান দিনকে একটি স্বাভাবিক দিন গণ্য করেন নি; যাতে কেবল ৫ অক্ত নামায যথেষ্ট হবে। বরং তাতে প্রত্যেক ২৪ ঘ¦টায় ৫ অক্ত নামায পড়া ফরয বলে ঘোষণা করেন। আর তাদেরকে তাদের স্বাভাবিক দিনের সময়ের দূরত্ব ও পার্থক্য হিসাব করে ঐ বছর সমান দিনকে ভাগ করতে আদেশ করেন। সুতরাং যে সকল মুসলিম সেই দেশে বাস করেন, যেখানে ৬ মাস দিন ও ৬ মাস রাত লম্বা হয়, সেখানে তাঁরা তাঁদের নামাযের সময়ও নির্ধারণ করবেন। আর এ ব্যাপারে নির্ভর করবেন তাঁদের নিকটবর্তী এমন দেশের, যেখানে রাত-দিন স্বাভাবিকরূপে চেনা যায় এবং প্রত্যেক ২৪ ঘন্টায় শরয়ী চিহ্ন মতে ৫ অক্ত নামাযের সময় জানা যায়। আর তদনুরূপই রমাযানের রোযা নির্ধারণ করতে হবে। কারণ, এ দিক থেকে রোযা ও নামাযের মাঝে কোন পার্থক্য নেই।[8]
[2] (ফাইযুর রাহীমির রাহমান, ফী আহকামি অমাওয়াইযি রামাযান ১৮৯পৃঃ)
[3] (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ ২৪/৬৭, ১০০, ফাসিঃ মুসনিদ ১০১-১০২পৃঃ)
[4] (ফাসিঃ মুসনিদ ৬১পৃঃ)
[5] (আহকামুস সাওমি অল-ই’তিকাফ, আবূ সারী মঃ আব্দুল হাদী ১২২পৃঃ)
[6] (ইবনে বায, ফাসিঃ মুসনিদ ৮০পৃঃ, তাইঃ ৪৮পৃঃ)
[7] (মুসলিম ২৯৩৭নং)
[8] (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ ১৪/১২৬, ১৬/১১০, ২৫/১১, ২৯, ৩৪, ইবনে উষাইমীন ফাসিঃ মুসনিদ ৯৭-৯৮পৃঃ, ৪৮ঃ ৪৯পৃঃ)
মুসলিম উম্মাহর সর্বসম্মতিক্রমে মুসাফিরের জন্য রোযা কাযা করা বৈধ; চাহে সে মুসাফির রোযা রাখতে সক্ষম হোক অথবা অক্ষম, রোযা তার জন্য কষ্টদায়ক হোক অথবা না হোক, অর্থাৎ মুসাফির যদি ছায়া ও পানির সকল সুবিধা নিয়ে সফর করে এবং তার সাথে তার খাদেমও থাকে অথবা না থাকে, (সফর এরোপে½নে হোক অথবা পায়ে হেঁটে); যেমনই হোক তার জন্য রোযা কাযা করা ও নামায কসর করা বৈধ।[1] মহান আল্লাহ বলেন,
(فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ مَرِيْضاً أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَر)
অর্থাৎ, কিন্তু তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ বা মুসাফির হলে সে অপর কোন দিন গণনা করবে। (কুরআনুল কারীম ২/১৮৪)
অবশ্য সফরে রোযা কাযা করা বৈধ হওয়ার ব্যাপারে কয়েকটি শর্ত রয়েছেঃ-
১। সফর পরিমাণ মত দূরত্বের হতে হবে। অর্থাৎ এমন সফর হতে হবে, যাকে পরিভাষায় সফর বলা হয়। আর সঠিক মত এই যে, সফর চিহিÁত করার জন্য কোন নির্দিষ্ট মাপের দূরত্ব নেই। এ ব্যাপারে প্রচলিত অর্থ ও পরিভাষার সাহায্য নিতে হবে।[2] তদনুরূপ স্থায়ী বসবাসের উদ্দেশ্য না হলে নির্দিষ্ট দিন অবস্থান করার ব্যাপারে কোন সীমাবদ্ধতা নেই।[3] ইবনে উমার (রাঃ) আযারবাইজানে ৬ মাস থাকা কালে কসর করে নামায পড়েছেন।[4]
সুতরাং যে ব্যক্তি কোন স্থানে সফর করার পর কিছুকাল বাস করে, কিন্তু সে সেখানে স্থায়ী বসবাসের নিয়ত করে না; বরং যে উদ্দেশ্যে সফর করেছে সে উদ্দেশ্য সফল হলেই সবগৃহে ফিরে যাওয়ার সংকল্প পোষণ করে, সে ব্যক্তি মুসাফির। সে মুসাফিরের সকল সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করতে পারে।
পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি কোন স্থানে সফর করার পর সে সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে, সে ব্যক্তিকে মুসাফির বলা যাবে না। সে হল প্রবাসী এবং তার জন্য রোযা কাযা করা জায়েয নয়। বরং তার জন্য রোযা রাখা ওয়াজেব। বলা বাহুল্য, যে ছাত্ররা বিদেশে পড়াশোনা করার উদ্দেশ্যে সফর করে নির্দিষ্ট কয়েক মাস বা বছর ধরে স্থায়ীভাবে বসবাস করে, সে ছাত্ররা মুসাফির নয়। তাদের জন্য রোযা কাযা করা বৈধ নয়।
২। মুসাফির যেন নিজের গ্রাম বা শহরের ঘর-বাড়ি ত্যাগ করে গ্রাম বা শহরের বাইরে এসে রোযা ভাঙ্গে। আনাস (রাঃ) বলেন, ‘আমি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে (মক্কা যাওয়ার পথে) মদ্বীনায় যোহরের ৪ রাকআত এবং (মদ্বীনা থেকে ৬ মাইল দূরে) যুল-হুলাইফায় গিয়ে আসরের ২ রাকআত পড়তাম।’[5]
বলা বাহুল্য, সফর করতে শহর বা গ্রাম ত্যাগ করার পূর্ব থেকেই নামায কসর করা চলবে না। অনুরূপ রোযাও শহর বা গ্রাম সম্পূর্ণ ত্যাগ করার পূর্বে ভাঙ্গা চলবে না। কারণ, নিজ গ্রাম বা শহরের জনপদে থাকা অবস্থাকে সফর বলা যায় না এবং সফরকারীর জন্য মুসাফির নাম সার্থক হয় না।[6]
বুঝা গেল যে, মুসাফির যখন সফরের উদ্দেশ্যে নিজ গ্রাম বা শহরের আবাসিক এলাকা ত্যাগ করবে, তখনই তার জন্য রোযা ভাঙ্গা বৈধ হবে। তদনুরূপ এয়ারপোর্ট শহরের ভিতরে হলে এরোপে½ন শহর ছেড়ে আকাশে উড়ে গেলে রোযা ভাঙ্গা বৈধ হবে। অবশ্য এয়ারপোর্ট শহরের বাইরে হলে সেখানে রোযা ভাঙ্গা বৈধ। আর শহরের ভিতরে হলে অথবা শহরের লাগালাগি হলে সেখানে রোযা ভাঙ্গা বৈধ নয়। কারণ, তখনও সফরকারী নিজ শহরের ভিতরেই থাকে।
যারা রমাযান মাসে সফর করার ইচ্ছা করে এবং রোযা কাযা করতে চায় তাদের জন্য একটি সতর্কতার বিষয় এই যে, গ্রাম বা শহর ছেড়ে সফর করে না যাওয়া পর্যন্ত যেন তারা রোযা ভাঙ্গার নিয়ত না করে। কারণ, ভাঙ্গার নিয়ত করলে রোযা হবে না। আর নিয়তের পর যদি কোন প্রতিবন্ধকতা বা কারণবশতঃ সফর না করা হয়, তাহলে তার জন্য রোযা ভাঙ্গা বৈধ হবে না।[7]
৩। মুসাফিরের সফর যেন কোন অবৈধ কাজের জন্য না হয়। (অধিকাংশ উলামার মত এটাই।) কেননা পাপ-সফরে শরয়ী সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার অধিকার পাপী মুসাফিরের নেই। যেহেতু ঐ সুযোগ-সুবিধা হল ভারপ্রাপ্ত বান্দার উপর কিছু ভার সহজ ও হাল্কা করার নামান্তর। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর নাফরমানী করে হারাম কাজের জন্য সফর করে সে ব্যক্তি আল্লাহর দেওয়া ঐ সুযোগ-সুবিধা ভোগের অধিকার পেতে পারে না।[8]
৪। সফরের উদ্দেশ্য যেন রোযা না রাখার একটা বাহানা না হয়। কারণ, ছল-বাহানা করে আল্লাহর ফরয বাতিল হয় না।[9]
যে সফরে রোযা কাযা করার অনুমতি আছে সে সফর হজ্জ, উমরাহ, কোন আপনজনকে দেখা করার উদ্দেশ্যে কিংবা ব্যবসা করার উদ্দেশ্যে সাময়িক হোক, অথবা (ভাড়া গাড়ির ড্রাইভারের মত) সার্বক্ষণিক হোক, তাতে কোন পার্থক্য নেই। বলা বাহুল্য, যে সর্বক্ষণ সফরে থাকে, তার যদি ফিরে এসে আশ্রয় নেওয়ার মত বাসভূমি থাকে, অর্থাৎ, (উড়িয়া যাযাবরদের মত) তার পরিবার-পরিজন তার সাথে না থাকে, যেমন; পিওন, যে মুসলিমদের ডাক বহন করার উদ্দেশ্যে সফর করে। যেমন, ভাড়া গাড়ির ড্রাইভার, ট্রেন বা পে½নের পাইলট ও খালাসী-হোস্টেস ইত্যাদি - যদিও তাদের সফর প্রাত্যহিক হয়, তবুও তাদের জন্য রোযা কাযা করা বৈধ। অবশ্য এ রোযা তারা সময় মত পরিশোধ করতে বাধ্য হবে। তদনুরূপ পানি-জাহাজের মাল্লা, যার স্থলে বাসস্থান আছে (অর্থাৎ, জাহাজই তার স্থায়ী বাসস্থান নয়), সেও কাযা করতে পারে।
উপরে উল্লেখিত ব্যক্তি সকলের কাজ যেহেতু নিরবচ্ছিন্ন ও বিরতিহীন, সেহেতু তারা শীতকালে কাযা করে নিতে পারে। কারণ, শীতের দিন ছোট ও ঠান্ডা। সে সময় কাযা তুলতে কষ্ট হবে না। কিন্তু তারা যদি রমাযান মাসে সবগৃহে ফিরে আসে তাহলে সেখানে থাকা কালে তাদের জন্য রোযা রাখা জরুরী।
পক্ষান্তরে শহরের ভিতরে চলমান ট্রেন, বাস, ট্যাক্সি, অটো-রিক্সা প্রভৃতির ড্রাইভার মুসাফির নয়। কারণ, তারা সফরের দূরত্ব অতিক্রম করে না। তাই তাদের জন্য যথাসময়ে রোযা রাখা ওয়াজেব।[10]
শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধরত সৈনিক ও মুজাহেদ সফরের সেই পরিমাণ দূরত্ব সফর করলে রোযা কাযা করতে পারে, যে পরিমাণ সফর করলে নামায কসর করা বৈধ। অবশ্য তারাও রমাযান পরে কাযা তুলতে বাধ্য হবে। আর যদি তারা মুসাফির না হয়, বরং শত্রু তাদেরকে তাদের অবস্থান ক্ষেত্রে আক্রমণ করে, তাহলে যে জিহাদের সাথে রোযা রাখতে সক্ষম হবে তার জন্য রোযা রাখা ওয়াজেব। কিন্তু যে রোযা রাখার সাথে সাথে জিহাদের ‘ফর্যে আইন’ আদায় করতে সক্ষম নয়, তার জন্য কাযা করা বৈধ। তবে রমাযান শেষ হওয়ার পর ছুটে যাওয়া রোযা অবশ্যই সে রেখে নেবে।[11]
[2] (আশ্শারহুল মুমতে’ ৪/৪৯৭-৪৯৮)
[3] (ঐ ৪/৫৩২-৫৩৭ দ্রঃ)
[4] (বাইহাকী ৩/১৫২, ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৫৭৭, ৩/১৬, ইবনে উষাইমীন ফাসিঃ জিরাইসী ২৫পৃঃ)
[5] (বুখারী ১০৮৯নং, মুসলিম ৬৯০, আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ)
[6] (আশ্শারহুল মুমতে’ ৬/৩৫৮-৩৫৯)
[7] (সাবঊনা মাসআলাহ ফিস্-সিয়াম ১৮নং)
[8] (আশ্শারহুল মুমতে’ ৪/৪৯২)
[9] (ফুসূলুন ফিস্-সিয়ামি অত্-তারাবীহি অয্-যাকাহ, ইবনে উষাইমীন ১০পৃঃ)
[10] (আশ্শারহুল মুমতে’ ৪/৫৩৯-৫৪০, ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ ২/১৪৪, ইবনে উষাইমীন ফাসিঃ মুসনিদ ৭৪পৃঃ)
[11] (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ ২/১৪১, ফাসিঃ মুসনিদ ৭৫পৃঃ, ইতহাফু আহলিল ইসলাম বিআহকামিস সিয়াম ২৬পৃঃ)
সফরে মুসাফিরের ৩ অবস্থা হতে পারেঃ- ([1])
১। রোযা তার জন্য কষ্টকর নয়। এমন অবস্থায় রোযা রাখা বা কাযা করার মধ্যে যেটা তার জন্য সহজ ও সুবিধা হবে, সেটাই সে করবে। মহান আল্লাহ বলেন,
(يُرِيْدُ اللهُ بِكُمُ اليُسْرَ وَلاَ يُرِيْدُ بِكُمُ الْعُسْرَ)
অর্থাৎ, আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ চান এবং তিনি তোমাদের জন্য কঠিন কিছু চান না। (কুরআনুল কারীম ২/১৮৫)
হামযাহ বিন আম্র আসলামী মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-কে সফরে রোযা রাখা প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করলে উত্তরে তিনি বললেন, ‘‘তোমার ইচ্ছা হলে তুমি রোযা রাখ, আর ইচ্ছা না হলে রেখো না।’’[2]
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, ‘আমরা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে ১৭ই রমাযান এক যুদ্ধ-সফরে ছিলাম। আমাদের মধ্যে কারো রোযা ছিল, কারো ছিল না। কিন্তু যার রোযা ছিল সে তার নিন্দা করেনি যার রোযা ছিল না এবং যার রোযা ছিল না সেও তার নিন্দা করেনি যার রোযা ছিল।’ আর এক বর্ণনায় আছে, তাঁরা মনে করতেন যে, যার ক্ষমতা আছে, তার জন্য রোযা রাখা ভাল। আর যার দুর্বলতা আছে তার জন্য রোযা না রাখা ভাল।[3]
কিন্তু যদি উভয় এখতিয়ার সমান হয়; অর্থাৎ, রোযা রাখার উপর কাযা করাকে প্রাধান্য দেওয়ার মত কোন বৈশিষ্ট্য না থাকে এবং রোযা কাযা করার উপর রাখাকে প্রাধান্য দেওয়ার মত কোন বৈশিষ্ট্য না থাকে, তাহলে এমতাবস্থায় নিম্নে উল্লেখিত দলীলের ভিত্তিতে তার জন্য রোযা রাখাই উত্তমঃ-
(ক) এটি হল আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর আমল। আবূ দারদা (রাঃ) বলেন, ‘আমরা এক রমাযান মাসের কঠিন গরমের দিন (সফরে) ছিলাম। এমনকি আমাদের কেউ কেউ গরমের কারণে মাথায় হাত রেখেছিল। আর আমাদের মধ্যে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) এবং আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহাহ ছাড়া অন্য কারো রোযা ছিল না।’[4]
(খ) রোযা রাখাতে সত্বর দায়িত্ব পালন হয়। কারণ, পরে কাযা করাতে বিলম্ব হয়। আর রমাযানে রোযা রেখে নিলে আগে আগে ফরয আদায় হয়ে যায়।
(গ) মুসলিমের জন্য রমাযানে রোযা রাখাটাই সাধারণতঃ বেশী সহজ। কেননা, পরে একাকী নতুন করে রোযা রাখার চাইতে লোকেদের সাথে রোযা ও ঈদ করে নেওয়াটাই বেশী সহজ। যেমন এ কথা সকলের নিকট পরীক্ষিত ও বিদিত।
(ঘ) রোযা রাখলে মাহাত্ম্যপূর্ণ সময় পাওয়া যায়; আর তা হল রমাযান। পরন্তু রমাযান হল অন্যান্য মাসের তুলনায় শ্রেষ্ঠতর। যেহেতু সেটাই হল রোযা ওয়াজেব হওয়ার সময়।[5]
২। রোযা তার জন্য কষ্টকর, তবে বেশী নয়। বরং রোযা না রাখাটাই তার জন্য সুবিধা ও আরামদায়ক। এমন অবস্থায় মুসাফিরের রোযা রাখা মকরূহ এবং রোযা না রাখা উত্তম। কারণ, অনুমতি থাকা সত্ত্বেও কষ্ট স্বীকার করার অর্থ হল, মহান আল্লাহর অনুমতিকে উপেক্ষা করা।
আবার সফরে কখনো রোযা না রাখাটা উত্তম ও অধিক সওয়াব লাভের কারণ হতে পারে; যদি মুসাফির কোন কর্ম-দায়িত্ব পালন করে তাহলে। আনাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) (সাহাবা সহ) এক সফরে ছিলেন। তাঁদের কিছু লোক রোযা রাখল এবং কিছু রাখল না। যারা রোযা রাখেনি তারা বুদ্ধি করে রোযা ভাঙ্গল এবং কাজ করল। আর যারা রোযা রেখেছিল তারা কিছু কাজ করতে দুর্বল হয়ে পড়ল। তা দেখে তিনি বললেন, ‘‘আজ যারা রোযা রাখেনি তারাই সওয়াব কামিয়ে নিল।’’[6]
৩। অসহ্য গরম, খারাপ বা দূরবর্তী রাস্তা অথবা অবিশ্রাম পথ চলার কারণে রোযা তার জন্য অত্যন্ত কষ্টকর হয়। এ অবস্থায় তার জন্য রোযা রাখা হারাম। কারণ, মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) মক্কা-বিজয় অভিযানে রোযা রেখেছিলেন। কিন্তু তাঁর কাছে খবর এল যে, লোকেরাও রোযা রেখেছে, আর এর ফলে তারা কষ্ট ভুগছে এবং তিনি কি করছেন তা জানার অপেক্ষা করছে। সুতরাং আসরের পর তিনি এক পাত্র পানি আনিয়ে পান করলেন। লোকেরা এ দৃশ্য তাকিয়ে দেখতে লাগল। তাঁকে বলা হল, কিছু লোক রোযা অবস্থায় আছে। তিনি বললেন, ‘‘তারা নাফরমান, তারা অবাধ্য।’’[7]
জাবের (রাঃ) বলেন, একদা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) এক সফরে ছিলেন। তিনি দেখলেন লোকেরা একটি লোককে ঘিরে জমা হয়েছে এবং লোকটির উপর ছায়া করা হয়েছে। তিনি বললেন, ‘‘কি হয়েছে ওর?’’ লোকেরা বলল, ‘লোকটি রোযা রেখেছে।’ তিনি বললেন, ‘‘সফরে তোমাদের রোযা রাখা ভাল কাজ নয়।’’[8]
কখনো কোন ইমারজেন্সী কারণে রোযা ভাঙ্গা ওয়াজেবও হতে পারে। যেমন আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, আমরা রোযা রাখা অবস্থায় আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে মক্কা সফর করলাম। এক মঞ্জিলে নেমে তিনি বললেন, ‘‘তোমরা এখন শত্রুর সম্মুখীন হয়েছ, আর রোযা না রাখাতে তোমাদের শক্তি বেশী হবে।’’ এ কথার ফলে রোযা না রাখাতে অনুমতি হল। তখন আমাদের মধ্যে কেউ রোযা বাকী রাখল, কেউ ভেঙ্গে ফেলল। অতঃপর আমরা আর এক মঞ্জিলে অবতরণ করলাম। সেখানে তিনি বললেন, ‘‘সকালে তোমাদের শত্রুদের সাথে সাক্ষাৎ হবে। আর রোযা না রাখাতে তোমাদের ক্ষমতা বেশী থাকবে। অতএব তোমরা রোযা ভেঙ্গে দাও।’’ এক্ষণে তা বাধ্যতামূলক ছিল। ফলে আমরা সকলে রোযা ভেঙ্গে দিলাম।
আবূ সাঈদ (রাঃ) আরো বলেন, কিন্তু এর পরে আমরা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে সফরে রোযা রাখতাম।[9]
- মাসআলাঃ
রোযা রেখে স্বামী-স্ত্রী এক সাথে সফর করে সফরে দিনের বেলায় সঙ্গমে লিপ্ত হয়ে পড়লে কোন ক্ষতি নেই। কারণ, মুসাফিরের জন্য রোযা ভাঙ্গা বৈধ। অতএব সে কিছু খেয়ে, অথবা পান করে অথবা সঙ্গম করে রোযা ভাঙ্গতে পারে। এ সব কিছুই তার জন্য হালাল। বলা বাহুল্য, ঐ রোযা কাযা করা ছাড়া তার জন্য অন্য কিছু ওয়াজেব নয়।[10]
- মাসআলাঃ
দিন থাকতে মুসাফির ঘরে ফিরে এলে এবং অনুরূপ সেই সকল ওযর-ওয়ালা মানুষ যাদের যে ওযরের কারণে রোযা ভাঙ্গা বৈধ ছিল তাদের সেই ওযর দূর হলে দিনের বাকী অংশটা পানাহার ইত্যাদি থেকে বিরত থাকবে কি না - এ বিষয়ে উলামাদের মাঝে মতভেদ রয়েছে।
কিছু উলামা মনে করেন, ওয়াজেব হওয়ার কারণ নতুনভাবে দেখা দিলে রোযা ভঙ্গকারী জিনিস থেকে বিরত থাকা ওয়াজেব। আর সেই দিনের রোযা কাযা করা ওয়াজেব নয়। যেমন রোযার দিনে কোন কাফের মুসলিম হলে, নাবালক সাবালক হলে অথবা পাগল সুস্থ হলে, সে বাকী দিন পানাহার ইত্যাদি থেকে বিরত থাকবে এবং তাকে ঐ দিনটি কাযা করতে হবে না।
পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি কোন প্রতিবন্ধকতার ফলে রোযা রাখেনি তার সে প্রতিবন্ধকতা দিনের মধ্যে দূর হলে তাকে বাকী দিন পানাহার ইত্যাদি থেকে বিরত থাকা ওয়াজেব নয়; অবশ্য ঐ দিনের রোযা কাযা ওয়াজেব। যেমন দিন থাকতে নিফাস বা ঋতুমতী মহিলা পবিত্রা হলে, মুসাফির রোযা না রেখে ঘরে ফিরলে, রোগী সুস্থ হলে এবং নিরপরাধ প্রাণ উদ্ধারের উদ্দেশ্যে যে রোযা ভেঙ্গেছিল তার সে কাজ শেষ হলে বাকী দিন পানাহার ইত্যাদি থেকে বিরত থাকা ওয়াজেব নয়। কিন্তু ঐ দিনের কাযা অবশ্যই ওয়াজেব।[11]
আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দিনের প্রথম ভাগে রোযা রাখেনি, তার উচিৎ দিনের শেষভাগে রোযা না রাখা। (পানাহার ইত্যাদি থেকে বিরত না হওয়া।)’[12]
অন্য দিকে অপর কিছু উলামা মনে করেন, উপর্যুক্ত সকল প্রকার লোকের জন্য বাকী দিন পানাহার ইত্যাদি থেকে বিরত থাকা ওয়াজেব।[13] অবশ্য উত্তম ও পূর্বসতর্কতামূলক কাজ এই যে, ঐ শ্রেণীর সকল লোকই রমাযান মাসের মর্যাদার কথা খেয়াল রেখে এবং উক্ত মতভেদ থেকে দূরে থেকে বাকী দিনটি পানাহার ইত্যাদি থেকে বিরত থাকবে।[14]
[2] (বুখারী ১৯৪৩, মুসলিম ১১২১নং)
[3] (মুসলিম ১১১৬নং)
[4] (বুখারী ১৯৪৫, মুসলিম ১১২২নং)
[5] (আশ্শারহুল মুমতে’ ৬/৩৫৬)
[6] (বুখারী ২৮৯০, মুসলিম ১১১৯নং, আর হাদীসের শব্দাবলী তাঁরই, নাসাঈ)
[7] (মুসলিম ১১১৪নং)
[8] (বুখারী ১৯৪৬, মুসলিম ১১১৫নং এবং শব্দাবলী তাঁরই)
[9] (মুসলিম ১১২০নং)
[10] (আশ্শারহুল মুমতে’ ৬/৩৫৯, ইবনে জিবরীন ফাসিঃ জিরাইসী ১২পৃঃ)
[11] (আশ্শারহুল মুমতে’ ৪/৫৪০-৫৪১, ৬/৩৪৭, ৩৬৩, ৪২০)
[12] (ইবনে আবী শাইবাহ, মুসান্নাফ ৯৩৪৩নং)
[13] (ইবনে জিবরীন ফাসিঃ মুসনিদ ৭৪পৃঃ)
[14] (আহকামুস সাওমি অল-ই’তিকাফ, আবূ সারী মঃ আব্দুল হাদী ৬৪পৃঃ, সাবঊনা মাসআলাহ ফিস্-সিয়াম ২৩নং)