রমাযান মাস প্রবেশ হওয়া প্রমাণ হবে দুয়ের মধ্যে একভাবেঃ-

১। রমাযানের চাঁদ দেখে। যেহেতু মহান আল্লাহ বলেন,

(فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ)

অর্থাৎ, তোমাদের মধ্যে যে কেউ এ মাস পাবে সে যেন এ মাসে রোযা রাখে। (কুরআনুল কারীম ২/১৮৫)

আর মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘তোমরা চাঁদ দেখে রোযা রাখ এবং চাঁদ দেখে ঈদ কর। কিন্তু যদি আকাশে মেঘ থাকে, তাহলে গণনায় ৩০ পুরা করে নাও।’’[1]

তিনি আরো বলেন, ‘‘তোমরা চাঁদ দেখে রোযা রাখ এবং চাঁদ দেখে ঈদ কর। কিন্তু যদি আকাশে মেঘ থাকে, তাহলে শা’বানের গুনতি ৩০ পূর্ণ করে নাও।’’

বলা বাহুল্য, হাদীসে এ বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে যে, রমাযানের রোযা ফরয হওয়া তথা তা শুরু করার ব্যাপারটা চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল। আর এর মানেই হল, চাঁদ না দেখা পর্যন্ত রোযা রাখা নিষিদ্ধ।

সাক্ষ্য দ্বারা মাস প্রমাণঃ

মহান আল্লাহ বলেন,

(يَسْئَلُوْنَكَ عَنِ الأَهِلَّةِ، قُلْ هِيَ مَوَاقِيْتُ لِلنَّاسِ وَالْحَجِّ)

অর্থাৎ, ওরা আপনাকে নতুন চাঁদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বল, তা হল মানুষ ও হজ্জের জন্য সময় নির্দেশক। (কুরআনুল কারীম ২/১৮৯)

মহান আল্লাহ চাঁদকে মানুষের জন্য সময়-নির্দেশক হিসাবে সৃষ্টি করেছেন। এর দ্বারা মানুষ নিজেদের ইবাদত ও পার্থিব জীবনের সময় ও তারীখ নির্ধারণ করতে পারে। সুতরাং বান্দার প্রতি তাঁর খাস রহমত এই যে, তিনি ফরয রোযা শুরু হওয়ার বিষয়টা একটি এমন স্পষ্ট জিনিস ও প্রকট চিহ্নের উপর নির্ভরশীল করেছেন, যা সকল মানুষই জানে।

অবশ্য রোযা ওয়াজেব হওয়ার জন্য এ শর্ত নয় যে, প্রত্যেক মুসলিমকেই চাঁদ দেখতে হবে। বরং কিছু সংখ্যক লোক দেখলে, বরং - সঠিক মতে- একজন দেখলেই; যদি সে নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত ব্যক্তি হয়, তাহলে তার দেখা মতে সকলের জন্য রোযা রাখা জরুরী হয়ে যাবে। অবশ্য তাদের সকলের চন্দ্রের উদয়-স্থল এক হয় তবে।[2]

ইবনে উমার (রাঃ) বলেন, একদা লোকেরা নতুন চাঁদ দেখতে জমায়েত হল। আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-কে খবর দিলাম যে, আমি চাঁদ দেখেছি। তিনি আমার এ খবরে রোযা রাখলেন এবং লোকেদেরকে রোযা রাখতে আদেশ করলেন।[3]

২। রমাযান প্রবেশ হওয়ার কথা প্রমাণ করার দ্বিতীয় উপায় হল, (চাঁদ দেখা না গেলে) শা’বান মাসকে ৩০ দিন পূর্ণ করে নেওয়া। (অবশ্য এর জন্য শর্ত হল শা’বান মাসের শুরুর হিসাব রাখা।) এ ব্যাপারে পূর্বে উল্লেখিত দুটি হাদীস আমাদেরকে পথনির্দেশ করে। যাতে বলা হয়েছে, ‘‘যদি আকাশে মেঘ থাকে, তাহলে শা’বানের গুনতি ৩০ পূর্ণ করে নাও।’’


জ্যোতিষ-গণনার উপর নির্ভর করা যাবে নাঃ

উপর্যুক্ত দুটি উপায় ছাড়া অন্য উপায়ে মাস প্রবেশ হওয়ার কথা প্রমাণ করা যাবে না। সুতরাং জ্যোতিষ-গণনা বা পঞ্জিকা মতে রমাযান মাস ধরে নিয়ে রোযা ফরয হবে না। বলা বাহুল্য, যদি জ্যোতিষীদের হিসাব মতে আজকের রাত রমাযানের প্রথম তারীখ হয়, কিন্তু সন্ধ্যায় কেউই চাঁদ না দেখে থাকে, তাহলে রোযা রাখা যাবে না। যেহেতু শরীয়ত রোযা রাখার বিধানকে একটি বাহ্যিকভাবে উপলব্ধ জিনিসের উপর নির্ভরশীল করে দিয়েছে। আর তা হল চাঁদ দেখা।[4] তা ছাড়া পঞ্জিকার হিসাব নির্ভুল নয়। এক এলাকায় সচল হলেও অন্য এলাকায় অচল। অতএব তার উপর ভরসা করে চোখ বুজে রোযা রাখা বৈধ নয়।

পঞ্জিকার হিসাবের উপর নির্ভর করার কথা শরীয়ত ও বিবেকে স্বীকৃত নয়। কেননা, মুসলিম উম্মাহ মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর নবুঅত কাল থেকে নিয়ে আজও পর্যন্ত চাঁদ দেখার উপরই নির্ভর করে; হিসাবের উপর ভরসা না করে, কেবল মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর অনুসরণে রোযা রেখে আসছে। যে সম্মানিত নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘আমরা হলাম নিরক্ষর জাতি। আমরা লিখাপড়া জানি না এবং হিসাবও জানি না। মাস কখনো এই রকম হয়, কখনো এই রকম হয়। অর্থাৎ, কখনো ২৯ দিনে হয় এবং কখনো ৩০ দিনে।’’[5]

হাফেয ইবনে হাজার উক্ত হাদীসের টীকায় বলেন, এখানে ‘হিসাব’ বলতে ‘জ্যোতিষী হিসাব’কে বুঝানো হয়েছে। আর তখন এ হিসাব খুবই কম সংখ্যক লোক ছাড়া কেউই জানত না। তাই রোযা রাখা এবং অন্যান্য ব্যাপার চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল করে দেওয়া হয়েছে। যাতে এ বিষয়ে লোকেরা অসুবিধা তথা জ্যেতিষী গণনার কষ্ট থেকে রেহাই পায়।

পরবর্তীকালে কিছু লোক এ হিসাব শিখলেও রোযা রাখা-না রাখার বিষয়টা এইভাবেই চলতে থাকল। বরং হাদীসের প্রকাশ্য উক্তি মূলতঃ হিসাবের উপর নির্ভর না করতেই ইঙ্গিত করে। আর এ কথা আরো স্পষ্ট করে দেয় পূর্বোক্ত হাদীস। যাতে বলা হয়েছে, ‘‘যদি আকাশে মেঘ থাকে, তাহলে শা’বানের গুনতি ৩০ পূর্ণ করে নাও।’’ এখানে এ কথা বলা হয়নি যে, যদি আকাশে মেঘ থাকে, তাহলে জ্যোতিষীদেরকে জিজ্ঞাসা করে নাও।’’

এই বিধানের পশ্চাতে যুক্তি এই যে, আকাশ অপরিষ্কার থাকার সময় সংখ্যা পূরণ করে নিলে তাতে সকল আজ্ঞাপ্রাপ্ত মুসলিম সমান হয়ে যাবে এবং এর ফলে তাদের মধ্যে কোন প্রকার মতভেদ ও ঝগড়া অবশিষ্ট থাকবে না।[6]

চাঁদ দেখার জন্য দুরবীন ব্যবহারঃ

চাঁদ দেখার জন্য দূরের জিনিস কাছের করে দেখার যন্ত্র দূরবীন ব্যবহার করা দোষাবহ নয়। অবশ্য দূরবীন ব্যবহার করা বা চাঁদ দেখার জন্য তা ক্রয় করা ওয়াজেব নয়। কারণ, বাহ্যিকভাবে সুন্নাহ এ কথাই নির্দেশ করে যে, এর জন্য স্বাভাবিক দর্শনের উপর নির্ভর হবে, অস্বাভাবিক কোন দর্শনের উপর নয়। তবুও যদি কোন বিশ্বস্ত ব্যক্তি ঐ যন্ত্রের মাধ্যমে চাঁদ দেখে থাকে, তাহলে তার ঐ দেখার উপর আমল করা যাবে। বহু পূর্ব যুগেও লোকেরা ২৯শে শা’বান বা ২৯শে রমাযান উঁচু উঁচু মিনারে চড়ে ঐ শ্রেণীর যন্ত্রের মাধ্যমে চাঁদ দেখত। যাই বা হোক, যে কোন মাধ্যম ও উপায়ে, যে কোন প্রকারে চাঁদ দেখা গেলে সেই দেখার উপর আমল করা জরুরী হবে। কেননা, মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর বাণী এ ব্যাপারে সাধারণ। তিনি বলেন, ‘‘তোমরা চাঁদ দেখে রোযা রাখ এবং চাঁদ দেখে ঈদ কর।’’[7]

উদয়স্থলের বিভিন্নতাঃ

অভিজ্ঞদের ঐক্যমতে চাঁদের উদয়স্থল ভিন্ন ভিন্ন এবং উদয়কালও অনুরূপ। আর এই ভিন্ন উদয়কালের ফলেই কোথাও চাঁদ দেখা যায়, কোথাও যায় না। সুতরাং উদয়-স্থল ভিন্ন হলে প্রত্যেক এলাকার জন্য পৃথক দর্শন জরুরী। পক্ষান্তরে উদয়স্থল বা উদয়কাল একই হলে একই এলাকাভুক্ত লোকেদের জন্য ২/১ জনের দর্শন অনুযায়ী আমল করা ওয়াজেব হবে। যেহেতু মহান আল্লাহ বলেন, ‘‘অতএব তোমাদের মধ্যে যে কেউ এ মাস পাবে সে যেন এ মাসে রোযা রাখে।’’ (কুরআনুল কারীম ২/১৮৫)

আর যাদের উদয়স্থল ওদের মত নয়, তাদের জন্য বলা যাবে না যে, ওরা চাঁদ দেখেছে; না প্রকৃতপক্ষে, আর না-ই আপাতদৃষ্টে। অথচ মহান আল্লাহ তাদের জন্য রোযা ফরয করেছেন, যারা চাঁদ দেখেছে। মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘তোমরা চাঁদ দেখে রোযা রাখ এবং চাঁদ দেখে ঈদ কর।’’ এই আজ্ঞায় রোযা রাখার আদেশকে চাঁদ দেখার শর্ত-সাপেক্ষ করা হয়েছে। বলা বাহুল্য, যে ব্যক্তি এমন জায়গায় বাস করে, যে জায়গার উদয়স্থল যে চাঁদ দেখেছে তার উদয়স্থলের অনুরূপ নয়, সে ব্যক্তি (যেহেতু তার নিজের এলাকায় কেউ চাঁদ দেখেনি সেহেতু) আসলে চাঁদ দেখেনি; না প্রকৃতপক্ষে, আর না-ই আপাতদৃষ্টে।

পরন্তু মাসিক সময়কাল প্রাত্যহিক সময়কালের মতই। সুতরাং যেমন প্রত্যেক দেশ প্রাত্যহিক সেহরীর ও ইফতারের ব্যাপারে ভিন্ন ভিন্ন সময় ব্যবহার করে থাকে, ঠিক তেমনিই মাসিক রোযা শুরু ও শেষ হওয়ার সময় ভিন্ন ভিন্ন হওয়া জরুরী। আর এ কথা বিদিত যে, মুসলিমদের ঐক্যমতে দৈনিক সময়ের স্বতন্ত্র প্রভাব আছে। তাই যারা প্রাচ্যে বাস করে তারা তাদের আগে সেহরী খাওয়া বন্ধ করবে; যারা প্রতীচ্যে বাস করে। অনুরূপ প্রাচ্যের লোক প্রতীচ্যের লোকদের পূর্বে ইফতার করবে।

সুতরাং যখন দৈনিক সময়ে সূর্যের উদয়াস্ত কালের ভিন্নতা মেনে নিতে বাধ্য, তখন তারই সম্পূর্ণ অনুরূপ মাসের ব্যাপারেও চন্দ্রের উদয়কালের ভিন্নতাকে মেনে নিতে আমরা বাধ্য।

আর এ কথা বলা কারো জন্য যুক্তি সঙ্গত হবে না যে, যেহেতু মহান আল্লাহ বলেন,

(وَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الْأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الْأَسْوَدِ مِنَ الْفَجْرِ)

‘‘আর তোমরা পানাহার কর, যতক্ষণ পর্যন্ত না (রাতের) কালো অন্ধকার থেকে ফজরের সাদা রেখা তোমাদের নিকট স্পষ্ট হয়েছে।’’(কুরআনুল কারীম ২/১৮৭)

এবং মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘রাত যখন এদিক (পূর্ব গগণ) থেকে আগত হবে, দিন যখন এদিক (পশ্চিম গগণ) থেকে বিদায় নেবে এবং সূর্য যখন অস্ত যাবে, তখন রোযাদার ইফতার করবে।’’[8]

আর এ কথা কেউ বলতে পারে না যে, উক্ত নির্দেশ সারা বিশ্বের সকল দেশের মুসলিমদের জন্য ব্যাপক।

কুরাইব বলেন, একদা উম্মুল ফায্ল বিন্তুল হারেষ আমাকে শাম দেশে মুআবিয়ার নিকট পাঠালেন। আমি শাম (সিরিয়া) পৌঁছে তাঁর প্রয়োজন পূর্ণ করলাম। অতঃপর আমার শামে থাকা কালেই রমাযান শুরু হল। (বৃহস্পতিবার দিবাগত) জুমআর রাত্রে চাঁদ দেখলাম। অতঃপর মাসের শেষ দিকে মদ্বীনায় এলাম। আব্দুল্লাহ বিন আববাস (রাঃ) আমাকে চাঁদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমরা কবে চাঁদ দেখেছ?’ আমি বললাম, ‘আমরা জুমআর রাত্রে দেখেছি।’ তিনি বললেন, ‘তুমি নিজে দেখেছ?’ আমি বললাম, ‘জী হ্যাঁ। আর লোকেরাও দেখে রোযা রেখেছে এবং মুআবিয়াও রোযা রেখেছেন।’ ইবনে আববাস (রাঃ) বললেন, ‘কিন্তু আমরা তো (শুক্রবার দিবাগত) শনিবার রাত্রে চাঁদ দেখেছি। অতএব আমরা ৩০ পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত অথবা নতুন চাঁদ না দেখা পর্যন্ত রোযা রাখতে থাকব।’ আমি বললাম, ‘মুআবিয়ার দর্শন ও তাঁর রোযার খবর কি আপনার জন্য যথেষ্ট নয়?’ তিনি বললেন, ‘না। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) আমাদেরকে এ রকমই আদেশ দিয়েছেন।’[9]

শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রঃ) এই কথাকেই বেশী প্রাধান্য দিয়েছেন যে, যে দেশের লোক চাঁদ দেখেছে তাদের এবং তাদের সামনের (পশ্চিম) দেশের লোকেদের জন্য রোযা রাখা ওয়াজেব। আর এ কথা গবেষণা করে প্রমাণ করেছেন যে, যখনই কোন দেশে চাঁদ দেখা যাবে, তখনই তার পরবর্তী (পশ্চিমী) দেশে চাঁদ অবশ্য অবশ্যই দেখা যাবে। কেননা, সে দেশের সূর্য দেরীতে অস্ত যায়। এইভাবে যত দেরীতে সূর্য ডুববে, চাঁদ সূর্য থেকে তত দূর হবে এবং তত উজ্জ্বল ও স্পষ্ট হবে। উদাহরণস্বরূপ যদি বাহরাইনে চাঁদ দেখা যায়, তাহলে তার পশ্চাতের দেশ নজ্দ (রিয়ায), হিজায (মক্কা-মদ্বীনা), মিসর ও মরক্কোতেও রোযা ওয়াজেব হবে। পক্ষান্তরে তার পূর্ব দিকের দেশ হিন্দ্, সিন্দ্ ও মা অরাআন নাহার (ইরান, পাকিস্তান ও ভারতের) লোকদের জন্য রোযা রাখা ওয়াজেব হবে না।[10]

তদনুরূপই বাংলাদেশে চাঁদ হয়েছে বলে পাকা খবর পাওয়া গেলে পশ্চিমবাংলার লোকেদের জন্য রোযা রাখা ওয়াজেব হবে; যদিও মেঘের কারণে সেখানে (পশ্চিম বাংলায়) চাঁদ না দেখা যায়।

[1] (বুখারী ১৯০০, মুসলিম ১০৮০নং)

[2] (ফাইযুর রাহীমির রাহমান, ফী আহকামি অমাওয়াইযি রামাযান ২৮পৃঃ)

[3] (আবূ দাঊদ ২৩৪২, দারেমী, সুনান ২/৪, ইবনে হিববান, সহীহ ৮৭১নং, হাকেম, মুস্তাদ্রাক ১/৪২৩, দারাকুত্বনী, সুনান, বাইহাকী ৪/২১২, ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৪/১৬)

[4] (আশ্শারহুল মুমতে’ ৬/৩১৪)

[5] (বুখারীঃ ১৯১৩নং)

[6] (ফাতহুল বারী ৪/১৫১)

[7] (সুআলান ফিস্-সিয়ামঃ ৩১পৃঃ)

[8] (বুখারী ১৯৪১, মুসলিম ১১০০, ১১০১, আবূ দাঊদ ২৩৫১, ২৩৫২, তিরমিযী, দারেমী, সুনান)

[9] (মুসলিম ১০৭৮ নং)

[10] (আশ্শারহুল মুমতে’ ৬/৩২১-৩২২, ইবনে উসাইমীন, ফাসিঃ মুসনিদ ১৫পৃঃ, ইবনে জিবরীন, ফাসিঃ জিরাইসী ১০পৃঃ)

যে ব্যক্তি কোন দূরবর্তী জায়গায় থেকে একাকী চাঁদ দেখে; দেখাতে তার কোন সাথী না থাকে অথবা সে ছাড়া অন্য কেউ না দেখে এবং এ দেখার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়, তাহলে তার জন্য রোযা রাখা ওয়াজেব। কারণ, এ ব্যাপারে মহান আল্লাহর সাধারণ বাণী হল,

(فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ)

অর্থাৎ, অতএব তোমাদের মধ্যে যে কেউ এ মাস পাবে সে যেন এ মাসে রোযা রাখে। (কুরআনুল কারীম ২/১৮৫)

আর মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘তোমরা চাঁদ দেখে রোযা রাখ।’’

কিন্তু সে যদি শহর বা গ্রামে থাকে এবং শরয়ী আদালত বা হিলাল-কমিটির সামনে তার সাক্ষ্য পেশ করে এবং তার সে সাক্ষ্য রদ্দ্ করে দেওয়া হয়, তাহলে এ অবস্থায় সে গোপনে রোযা রাখবে। যাতে প্রকাশ্যে সমাজের বিরোধিতা প্রকাশ না হয়।[1]

[1] (আশ্শারহুল মুমতে’ ৬/৩২৯, সামানিয়া ওয়া আরবাঊন সুআলান ফিস্-সিয়াম ৩৬পৃঃ, আহকামুস সাওমি অল-ই’তিকাফ, আবূ সারী মঃ আব্দুল হাদী ৪১-৪২পৃঃ)

যে মুসলিমরা কাফের দেশে বাস করে, যেখানে তাদের চাঁদ দেখার শরয়ী ব্যবস্থা নেই, সেখানে তারা নিজেরা চাঁদ দেখা শরয়ীভাবে প্রমাণ করতে পারে। তারা নিজেরাই চাঁদ দেখার দায়িত্ব বহন করবে। কিছু উলামা ও গণ্যমান্য লোক মিলে হিলাল-কমিটি গঠন করবে। অতঃপর তাঁদের কাছে চাঁদ দেখা প্রমাণ হলে প্রচার-মাধ্যমে প্রচার করবে অথবা টেলিফোনের মাধ্যমে এক এক এলাকার নেতৃস্থানীয় লোক বা ইমামদেরকে জানিয়ে দেবে।

পক্ষান্তরে এ কাজ তাদের দ্বারা সম্ভব না হলে; সে দেশে নিজে নিজে চাঁদ দেখা সম্ভব না হলে, নিকটবর্তী মুসলিম দেশের খবর অনুযায়ী রোযা-ঈদ করবে।[1] বিশেষ করে ঐ দেশ পূর্বে অবস্থিত হলে এবং শরয়ীভাবে চাঁদ দেখার কথা স্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হলে তা গ্রহণযোগ্য। এ ক্ষেত্রে আগামী কাল রোযা বা ঈদ বললে, সে খবরে আস্থা রাখা বা চাঁদ দেখা প্রমাণ হওয়ার কথা ধরা যায় না। অতএব তখন মাস ৩০ পূর্ণ করেই রোযা-ঈদ করা জরুরী হবে।

[1] (সামানিয়া ওয়া আরবাঊন সুআলান ফিস্-সিয়াম ৩৫পৃঃ, সাওমু রামাযান ১৮পৃঃ)
সঊদিয়ার চাঁদ অনুসারে রোযা-ঈদ চলবে না

পূর্বেই আলোচিত হয়েছে যে, মুসলিম যে দেশে বাস করবে, সেই দেশেরই চাঁদ দেখা অনুযায়ী রোযা-ঈদ করবে। কেননা, মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘যেদিন তোমরা রোযা রাখ, সেদিন রোযার দিন, যেদিন তোমরা ঈদ কর, সেদিন ঈদের দিন এবং যেদিন তোমরা কুরবানী কর সেদিন কুরবানীর দিন।’’[1] সুতরাং সঊদী আরবে চাঁদ দেখার কথা প্রমাণ ও ঘোষণা করা হলে এবং যে দেশে ঐ মুসলিম বাস করে সে দেশ পূর্বে হলে ও সেখানে চাঁদ দেখার কথা প্রমাণ ও ঘোষণা না হলে সে সঊদিয়ার ঘোষণা মতে রোযা-ঈদ করতে পারে না। যেমন সঊদিয়ার ইফতারীর সময় অনুসারে অন্য দেশের কেউ ইফতারী করতে পারে না।[2]

[1] (তিরমিযী, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ২২৪নং)

[2] (ফাসিঃ, মুসনিদ ২০পৃঃ)

যে ব্যক্তি রমাযান মাস প্রবেশ (চাঁদ) হওয়ার কথা ফজরের পর দিনের কোন অংশে জানতে পারে তার উচিৎ, (আগে কিছু খেয়ে থাকলেও) বাকী দিন পানাহার ইত্যাদি থেকে বিরত থাকা। কারণ, সে দিন হল রমাযানের পহেলা তারীখ। আর রমাযানের কোন দিনে কোন গৃহবাসী (অমুসাফির) সুস্থ মানুষের জন্য রোযা ভঙ্গকারী কোন জিনিস ব্যবহার করা বৈধ নয়।

কিন্তু তাকে কি ঐ দিনটি কাযা করতে হবে? এ ব্যাপারে উলামাদের মাঝে মতভেদ আছে। অধিকাংশ উলামা মনে করেন যে, তাকে ঐ দিনটি কাযা করতে হবে। কারণ, সে (পানাহার করেছে, তা না করলেও) (ফজরের আগে রাত্রি বা) দিনের শুরু থেকে রোযার নিয়ত করেনি। বরং দিনের কিছু অংশ তার বিনা নিয়তে অতিবাহিত হয়ে গেছে। আর নিয়ত ছাড়া কিছু শুদ্ধ হয় না। যেহেতু মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘সকল আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল এবং প্রত্যেক মানুষের তাই প্রাপ্য হয়, যার সে নিয়ত করে থাকে।’’[1]

তিনি আরো বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি ফজরের পূর্বে রাত্রি থেকে নিয়ত না করে থাকে, তার রোযা হয় না।’’[2]

বলা বাহুল্য, এখানে রোযা বলতে ফরয রোযাকে বুঝানো হয়েছে। কারণ, নফল রোযার নিয়ত দিনের বেলায় করলেও হয়ে যায়। তবে শর্ত হল, ইতিপূর্বে সে যেন রোযা নষ্টকারী কোন জিনিস ব্যবহার না করে থাকে। (এ কথা নফল রোযার অধ্যায়ে বলা হবে ইন শাআল্লাহ।)

পক্ষান্তরে কিছু উলামা মনে করেন যে, ঐ দিন কাযা করা জরুরী নয়। কারণ, (যদি সে কোন রোযা নষ্টকারী জিনিস ব্যবহার করেই ফেলেছে, তাহলে) সে তো না জেনেই করেছে। আর যে না জেনে কিছু করে, তার না জানাটা একটা গ্রহণযোগ্য ওজর।[3]

তবুও বলা যায় যে, কাযা করে নেওয়াটাই পূর্ব সতর্কতামূলক পদক্ষেপ এবং দায়মুক্ত হওয়ার শ্রেষ্ঠ পথ। যেহেতু মানুষের একটি দিন কাযা করে নেওয়া এবং নিঃসন্দেহে নিজের দায়িত্ব পালন করে নেওয়া সন্দেহে পড়া থেকে উত্তম। আর মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) তো বলেছেনই, ‘‘যে জিনিস তোমাকে সন্দেহে ফেলে সে জিনিসকে বর্জন করে তুমি সেই জিনিস গ্রহণ কর, যা তোমাকে সন্দেহে ফেলে না।’’[4] একটাই তো দিন; যা কাযা করা অতি সহজ এবং কোন কষ্ট নেই তাতে। বিশেষ করে তাতে রয়েছে সন্দেহের নিরসন, মনের শান্তি এবং হৃদয়ের সান্ত্বনা।[5]

[1] (বুখারী ১, মুসলিম ১৯০৭নং)

[2] (নাসাঈ, দারাকুত্বনী, সুনান, বাইহাকী, ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৯১৪, সহীহুল জামেইস সাগীর, আলবানী ৬৫৩৪, ৬৫৩৫নং)

[3] (যামাঃ ২/৭৪, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ৬/২৫১)

[4] (আহমাদ, মুসনাদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে হিববান, সহীহ, ত্বাবারানী, মু’জাম, সহীহুল জামেইস সাগীর, আলবানী ৩৩৭৭-৩৩৭৮নং)

[5] (আশ্শারহুল মুমতে’ ৬/৩৪৩, সামানিয়া ওয়া আরবাঊন সুআলান ফিস্-সিয়াম ৩৭পৃঃ, ইবনে বায, ফাসিঃ মুসনিদ ১৯পৃঃ, মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ ৩০/১১৬)
আমরা রমাযান মাসকে কি দিয়ে স্বাগত জানাব?

রমাযান এমন একটি মাস, যার রয়েছে এত এত বৈশিষ্ট্য, এত এত মাহাত্ম্য। এই মাসকে আমরা কি দিয়ে বরণ করব? কোন্ জিনিস দিয়ে তাকে ‘খোশ আমদেদ‘ জানাব?

এই পবিত্র মাসকে স্বাগত জানাতে দুই রকম দুই শ্রেণীর মানুষ রয়েছে;

প্রথম প্রকার মানুষ হল তারা; যারা এ মাস নিয়ে খুশী হয়, এর আগমনে আনন্দবোধ করে। তার কারণ, তারা এ মাসে রোযা রাখতে অভ্যাসী। এ মাসের সকল কষ্ট বরণ করতে প্রয়াসী। কারণ, তারা জানে যে, ইহকালের সুখ-সম্ভোগ বর্জন করলে, তা পরকালে পাওয়া যায়। কারণ, তারা উপলব্ধি করে যে, এ মাস হল আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্যের এবং তাঁর নৈকট্যদাতা আমলে প্রতিযোগিতা করার বিশাল মৌসম। তারা জানে যে, আল্লাহ আযযা অজাল্ল্ এ মাসে যে সওয়াব বান্দাকে প্রদান করবেন, তা আর অন্য কোন মাসে করবেন না। সুতরাং প্রিয় যেমন তার প্রবাসী প্রিয়তম বা তদপেক্ষা প্রিয়তর কিছুর আগমনে আনন্দ পায়, ঠিক তারই মত রমাযানের আগমনে তাদের আনন্দিত হওয়াতে আশ্চর্যের কিছু নয়। এই হল প্রথম শ্রেণীর মানুষ।

দ্বিতীয় শ্রেণীর মানুষ হল তারা, যারা এই পবিত্র মাসকে ভারী মনে করে, রোযার কষ্টকে বড় মনে করে। সুতরাং যখনই এ মাসের আগমন ঘটে, তখনই সে মনে করে তার ঘরে যেন এক অবাঞ্ছিত মেহেমান এল। ফলে শুরু থেকেই সে তার ঘণ্টা, দিন ও রাত গুনতে থাকে। অধৈর্য হয়ে তার বিদায় মুহূর্তের অপেক্ষা করতে থাকে। এক একটা দিন পার হতেই তার আনন্দ হয়। পরিশেষে যখন ঈদ আসার সময় হয়, তখন এই মাস অতিবাহিত হওয়া নিকটবর্তী জেনে ব্যাক্তি খুশী হয়!

এই শ্রেণীর মানুষরা এই মহতিপূর্ণ মাসকে এই জন্য ভারী মনে করে এবং তাড়াতাড়ি অতিবাহিত হওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে যে, তারা তাদের অবৈধ ভোগ-বিলাসে মত্ত হওয়া ছাড়াও পানাহার ও যৌনাচার ইত্যাদি সুখ-সম্ভোগে অধিকাধিক অভ্যাসী থাকে। আর সেই ভোগ-বিলাস ব্যবহার করার পথে এই মাস তাদের জন্য বাধা ও অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। এ মাস তাদের সুখ-উপভোগের প্রতিবন্ধক হিসাবে আগমন করে। যার ফলে তারা এই মাসকে প্রচন্ড ভারী বোধ করে থাকে।

আরো একটা কারণ এই যে, তারা এমন এক সম্প্রদায়, যারা আল্লাহর আনুগত্যের ব্যাপারে বড় অমনোযোগী। এমন কি তাদের মধ্যে অনেকে ফরয ও ওয়াজেব আমলেও ঔদাস্য প্রদর্শন করে থাকে; যেমন তারা নামায পড়ে না। অতঃপর এই মাস প্রবেশ করলে কোন কোন আমল তারা করতে শুরু করে দেয়। কিন্তু আসলে তারা ঐ আমলে অভ্যাসী নয়। যার ফলে রমাযান মাসটিকেই ভারী মনে করে থাকে।[1]

বলা বাহুল্য, আল্লাহর নেক বান্দার জন্য উচিৎ, এই পবিত্র মাসকে সত্য ও খাঁটি তওবা দিয়ে; পাপ বর্জন করে এবং পুনরায় সে পাপ না করার পাক্কা সংকল্প নিয়ে খোশ-আমদেদ জানানো।

এই মাসকে আমরা স্বাগত জানাব, সর্বপ্রকার মন্দ কাজ থেকে বিরত হয়ে; মিথ্যাবাদিতা, গীবত, অশ্লীলতা, গান-বাজনা প্রভৃতি বর্জন করে।

এই মাসকে আমরা স্বাগত জানাব, কুরআন তেলাঅত, দুআ ও যিকরের মাধ্যমে। আর কোন গাফলতির মাধ্যমে তাকে স্বাগত জানাব না।

একজন নেককার বলেছেন, ‘আয়ু তো স্বল্প। সুতরাং গাফলতি দিয়ে তাকে আরো অল্প করে দিও না।’[2]

এই মাসকে আমরা স্বাগত জানাব, অকৃত্রিম ও সুদৃঢ় সংকল্প, সুউচ্চ হিম্মত ও মনোবল দ্বারা, তার দিনগুলিকে সুবর্ণ সুযোগরূপে নেক কাজে ব্যবহার করার মাধ্যমে এবং তার পবিত্র সময়গুলিকে অযথা ব্যয় না করার মাধ্যমে।

এই মাসকে আমরা স্বাগত জানাব, আগ্রহ, স্ফূর্তি, উৎসাহ ও উদ্দীপনার সাথে, নির্মল হৃদয়ে সুসংবাদ গ্রহণের সাথে এবং বেশী বেশী করে আমল ও ইবাদত করার প্রস্ত্ততি নিয়ে। সকল প্রকার আলস্য কাটিয়ে, অতিনিদ্রার অতি পরিহার করে এবং তার আগমনে বিরক্তিবোধ প্রদর্শন না করে।

আর এই মাসকে আমরা স্বাগত জানাব না, খেল-তামাশার মাধ্যমে; পার্ক, ময়দান বা রাস্তার ধারে বসে হাওয়া খেয়ে রাত্রি জাগরণ করে, অথবা তাস, কেরাম বা অন্য কোন খেলা খেলে, অথবা টিভি, সিডি, ভিডিও, রেডিও বা অন্য কোন যন্ত্রের মাধ্যমে নোংরা ছবি দেখে ও গান-বাজনা শুনে, অথবা গাড়ি নিয়ে ফূর্তিবাজি করে, নাটক-যাত্রা বা ফিল্ম দেখে।

ভাই মুসলিম! এই পবিত্র মাসকে; এর দিন ও রাত্রির প্রতিটি মুহূর্তকে আপনার এক একটি সুবর্ণ সুযোগরূপে জ্ঞান করা উচিৎ। সুতরাং পরকালের পাথেয় সংগ্রহ করতে, কল্যাণের ভান্ডার পরিপূর্ণ করতে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে কোন প্রকারের অবজ্ঞা প্রদর্শন করা উচিৎ নয়। অভিজ্ঞ ও জ্ঞানী মানুষ কল্যাণের মৌসুমসমূহকে হেলায় হারাতে চায় না। বরং সুযোগের সদ্ব্যবহার করে এবং মহান প্রতিপালকের করুণা লাভের সকল কাজ করার চেষ্টায় থাকে। বিদায় দিনের জন্য পথের সম্বল সাথে করে নেয়। আর কে জানে ভাইজান! হয়তো বা এই বছরের মৃত মানুষদের রেজিষ্টারে আপনার নামটিও লিখা আছে! সুতরাং জলদি করুন, শীঘ্র করুন। এখনও সময় আছে, রক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা আছে, আমল শুরু করে দিন।[3]

প্রকাশ থাকে যে, রমাযান মাস আগত হওয়ার সময় এক অপরকে মোবারকবাদ জানানো দোষাবহ নয়। যেহেতু মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) সাহাবাগণকে রমাযান মাস আগমনের সুসংবাদ দিতেন এবং তার প্রতি যত্ন নিতে অনুপ্রাণিত করতেন।[4]

[1] (দুরুসু রামাযান অকাফাত লিস্-সায়েমীন, সালমান বিন ফাহদ আল-আওদাহ ৬-৮পৃঃ)
[2] (তাওজীহাতুন অফাওয়াএদ লিসসা-য়েমীনা অসসায়েমাত ৬৫পৃঃ)
[3] (দুরুসু রামাযান অকাফাত লিস্-সায়েমীন ১০৮পৃঃ)
[4] (সাবঊনা মাসআলাহ ফিস্-সিয়াম ১১নং)
শা’বানের শেষ দুই বা একদিন রোযা রেখে রমাযান বরণ করা

পূর্বসতর্কতামূলকভাবে রমাযানের এক দিন আগে থেকে রোযা রাখা বৈধ নয়। কারণ, রমাযানের রোযা চাঁদ দেখার সাপেক্ষে। সুতরাং এ ব্যাপারে নিজেকে ভারগ্রস্ত করা উচিৎ নয়।

আবূ হুরাইরা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘তোমাদের কেউ যেন রমাযানের আগে আগে একটি বা দুটি রোযা না রাখে। অবশ্য এমন ব্যক্তির কথা ভিন্ন, যে সেই দিনের রোযা রাখায় অভ্যাসী। তার উচিৎ, সেদিনে রোযা রাখা।’’[1]

[1] (আহমাদ, মুসনাদ, বুখারী ১৯১৪, মুসলিম ১০৮২, সুনানে আরবাআহ; আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ)
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৭ পর্যন্ত, সর্বমোট ৭ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে