যে ব্যক্তির রমাযানের রোযা পূর্ণ হয়ে যাবে, তার জন্য শওয়াল মাসের ৬টি রোযা রাখা মুস্তাহাব। আর এতে তার জন্য রয়েছে বৃহৎ সওয়াব। মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি রমাযানের রোযা রাখার পরে-পরেই শওয়াল মাসে ছয়টি রোযা পালন করে সে ব্যক্তির পূর্ণ বৎসরের রোযা রাখার সমতুল্য সওয়াব লাভ হয়।’’[1]

এই সওয়াব এই জন্য হবে যে, আল্লাহর অনুগ্রহে ১টি কাজের সওয়াব ১০টি করে পাওয়া যায়। অতএব সেই ভিত্তিতে ১ মাসের (৩০ দিনের) রোযা ১০ মাসের (৩০০ দিনের) সমান এবং ৬ দিনের রোযা ২ মাসের (৬০ দিনের) সমান; সর্বমোট ১২ মাস (৩৬০ দিন) বা এক বছরের সওয়াব লাভ হয়ে থাকে। আর এই ভাবে সেই রোযাদারের জীবনের প্রত্যেকটি দিন রোযা রাখা হয়! দয়াময় আল্লাহ বলেন,

(مَنْ جَاءَ بِالْحَسَنَةِ فَلَهُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا)

অর্থাৎ, কেউ কোন ভাল কাজ করলে, সে তার ১০ গুণ প্রতিদান পাবে। (কুরআনুল কারীম ৬/১৬০)

এই রোযা বিধিবদ্ধ হওয়ার কারণ -আর আল্লাহই ভাল জানেন - তা হল ফরয নামাযের পর সুন্নাতে মুআক্কাদার মত। যা ফরয নামাযের উপকারিতা ও তার অসম্পূর্ণতা সম্পূর্ণ করে। অনুরূপ এই ছয় রোযা রমাযানের ফরয রোযার অসম্পূর্ণতা সম্পূর্ণ করে এবং তাতে কোন ত্রুটি ঘটে থাকলে তা দূর করে থাকে। সে অসম্পূর্ণতা ও ত্রুটির কথা রোযাদার জানতে পারুক অথবা না পারুক।[2]

তা ছাড়া রমাযানের ফরয রোযা রাখার পর পুনরায় রোযা রাখা রমাযানের রোযা কবুল হওয়ার একটি লক্ষণ। যেহেতু মহান আল্লাহ যখন কোন বান্দার নেক আমল কবুল করেন, তখন তার পরেই তাকে আরো নেক আমল করার তওফীক দান করে থাকেন। যেমন উলামাগণ বলে থাকেন, ‘নেক কাজের সওয়াব হল, তার পরে পুনঃ নেক কাজ করা।’[3]

এই রোযার উত্তম সময় হল, ঈদের সরাসরি পরের ৬ দিন। কারণ, তাতেই রয়েছে নেক আমলের দিকে সত্বর ধাবমান হওয়ার দলীল। আর এ কথা মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর এই উক্তি ‘‘যে ব্যক্তি রমাযানের রোযা রাখার পরে-পরেই শওয়াল মাসে ছয়টি রোযা পালন করে---’’ থেকে বুঝা যায়।

তদনুরূপ উত্তম হল, উক্ত ছয় রোযাকে লাগাতার রাখা। কেননা, এমনটি করা রমাযানের অভ্যাস অনুযায়ী সহজসাধ্য। আর তাতে হবে বিধিবদ্ধ নেক আমল করার প্রতি সাগ্রহে ধাবমান হওয়ার পরিচয়।

অবশ্য তা লাগাতার না রেখে বিচ্ছিন্নভাবেও রাখা চলে। যেহেতু হাদীসের অর্থ ব্যাপক। কিন্তু শওয়াল মাস অতিবাহিত হয়ে গেলে তা কাযা করা বিধেয় নয়। যেহেতু তা সুন্নত এবং তার যথাসময় পার হয়ে গেছে। তাতে তা কোন ওযরের ফলে পার হোক অথবা বিনা ওযরে।[4]

রমাযানের রোযা কাযা না করে শওয়ালের রোযা রাখা বিধেয় নয়। যেমন কাফ্ফারার রোযা থাকলে তা না রেখে শওয়ালের রোযা রাখা চলে না। আর শওয়াল মাসে রমাযানের কাযা রাখলে তাই শওয়ালের রোযা বলে যথেষ্ট হবে না।[5]

[1] (মুসলিম ১১৬৪নং, সুনানে আরবাআহ; আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ)

[2] (ফাইযুর রাহীমির রাহমান, ফী আহকামি অমাওয়াইযি রামাযান ৭৬পৃঃ)

[3] (ইতহাফু আহলিল ইসলাম বিআহকামিস সিয়াম ৯২পৃঃ)

[4] (ইবনে বায : ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ ২/১৬৫-১৬৬)

[5] (ইবনে জিবরীন, ফাসিঃ ১০৭পৃঃ)