কোন কোন ইমাম দুআকে এত লম্বা করেন যে, তাতে মুক্তাদীদের অনেকের অথবা সকলের কষ্ট হয়। পক্ষান্তরে আর এক শ্রেণীর ইমাম আছেন, যাঁরা কুনূতের দুআকে কবিতা আবৃত্তির মত গড়গড় করে পড়ে ফেলেন। কিন্তু যখন মুনাজাত শুরু করেন, তখন একই দুআকে বারবার বলে বেশ দীর্ঘ সময় ব্যয় করেন। ফলে কেউ কেউ প্রায় আধ ঘ¦টা ধরে কুনূত পড়েন। আর কেউ তো আবার লিখিত দুআর কাগজ হাতে রেখে দেখে দেখে পড়তে থাকেন!
বলা বাহুল্য, দুআ করতে মধ্যবর্তী পন্থা অবলম্বন করা এবং দুআ শেষ করার পরেও মুক্তাদীদের মনে আরো দুআ করার আকাঙ্ক্ষা থেকে যাওয়াটা, তাদের মনে বিরক্তি ও বিতৃষ্ণা সৃষ্টি করা অপেক্ষা উত্তম।
আমাদের প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) আমাদেরকে দুআ-এ কুনূত শিখিয়ে গেছেন। অবশ্য তার পরে অন্য মুনাজাতের প্রমাণিত ও শুদ্ধ দুআ বেশী করে পড়া যদিও দূষণীয় নয়, তবুও খেয়াল রাখতে হবে, যাতে নামাযীদের যেন কষ্ট না হয় এবং তা দুআয় সীমালংঘন করার পর্যায়ভুক্ত না হয়ে পড়ে।
আসলে বিরাট লম্বা সময় ধরে দুআ করা দুআতে সীমালংঘন করারই পর্যায়ভুক্ত। আর মহান আল্লাহ বলেন,
(ادْعُوْا رَبَّكُمْ تَضَرُّعاً وَخُفْيَةً، إِنَّهُ لاَ يُحِبُّ الْمُعْتَدِيْنَ)
অর্থাৎ, তোমরা বিনীতভাবে ও গোপনে তোমাদের প্রতিপালককে ডাক, তিনি সীমালংঘনকারীদের পছন্দ করেন না। (সূরা আ’রাফ ৫৫ আয়াত)
একদা আব্দুল্লাহ বিন মুগাফ্ফাল (রাঃ) তাঁর ছেলেকে দুআ করতে শুনলেন; ছেলে বলছে, ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি যে, আমি যখন জান্নাতে প্রবেশ করব, তখন তার ডান দিকে সাদা মহল চাই।’ তিনি বললেন, ‘বেটা! আল্লাহর কাছে জান্নাত চাও এবং জাহান্নাম থেকে পানাহ চাও। কারণ, আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘‘এই উম্মতের একটি সম্প্রদায় হবে, যারা পবিত্রতায় এবং দুআতে সীমালংঘন করবে।’’[1]
পক্ষান্তরে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর আদর্শ ছিল, তিনি অল্প শব্দে বেশী অর্ধবোধক দুআ ব্যবহার করতেন এবং এ ছাড়া অন্যান্য (লম্বা) দুআ পরিহার করতেন। অতএব ইমাম সাহেবের উচিৎ, অনুরূপ অল্প শব্দে বেশী অর্থবোধক উপকারী দুআ নির্বাচন করে তার দ্বারা দুআ করা এবং তা অতিরিক্ত লম্বা করে লোকদেরকে বিরক্ত না করা।[2]
[2] (সালাতুল-লাইলি অত্-তারাবীহ, ইবনে বায ২৯পৃঃ, তাওজীহাতুন অফাওয়াএদ লিসসা-য়েমীনা অসসায়েমাত ৮৩পৃঃ, কাই নাস্তাফীদা মিন রামাযান ১৪-১৫পৃঃ)