এতে কোন সন্দেহ নেই যে, একজন প্রকৃত হাফেযই ইমামতির অধিক যোগ্যতা রাখেন, যিনি নামাযে কুরআন মুখস্থ পড়বেন। কিন্তু ইমামতির জন্য যদি হাফেয না থাকেন, ইমাম সাহেব হাফেয না হন, অথবা তাঁর হিফ্য অত্যন্ত দুর্বল হয় এবং কুরআন দেখে পড়া তাঁর নিজের তথা মুক্তাদীদের জন্য বেশী উপকারী হয়, তাহলে কুরআন দেখে ক্বিরাআত করায় কোন দোষ নেই। বিশেষ করে প্রত্যেক রাত্রে তারাবীহর নামাযে প্রথম রাকআতে কোন ছোট সূরা এবং দ্বিতীয় রাকআতে ‘ক্বুল হুওয়াল্লাহ’ পড়া অথবা ৮ রাকআতেই সূরা নাবা পড়া অপেক্ষা উক্ত আমল উত্তম।

যদিও উক্ত কাজে নামাযের ভিতর কিছু অতিরিক্ত কর্ম করতে হয়; যেমন কুরআন তোলা-রাখা, পৃষ্ঠা খোঁজা ইত্যাদি, তদনুরূপ যদিও তাতে কিছু সুন্নত; যেমন বুকে হাত রাখা, সিজদার স্থানে দৃষ্টি রাখা ইত্যাদি বাদ পড়ে, তবুও প্রয়োজনে তা বৈধ। যেহেতু কর্ম বেশী হলেও যদি তা কোন প্রয়োজন মোতাবেক হয় এবং একটানা একাধিকবার না হয়, তাহলে তাতে নামাযের কোন ক্ষতি হয় না। যেমন মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) নামায-রত অবস্থায় উমামাহ বিন্তে যায়নাবকে বহন করেছেন। সূর্যগ্রহণের নামাযে তিনি অগ্রসর ও পশ্চাদ্পদ হয়েছেন।

এতদ্ব্যতীত কিতাব ও সুন্নাহর যে ব্যাপক দলীল নামাযে ক্বিরাআত পড়তে নির্দেশ দেয় তা দেখে পড়া ও মুখস্থ পড়ার ব্যাপারে সাধারণ। অতএব মূলতঃ তা বৈধ। পরন্তু আয়েশা (রাঃ)-এর আমল এ কথার সমর্থন করে। তাঁর মুক্ত করা দাস যাকওয়ান রাত্রে মুসহাফ দেখে তাঁর ইমামতি করতেন।[1]

পক্ষান্তরে হাফেয ইমাম পাওয়া গেলে সেটাই উত্তম। কারণ, মুখস্থ পড়াতে হৃদয় হাযির থাকে এবং অতিরিক্ত কাজও করতে হয় না। মোট কথা, প্রয়োজনে কুরআন দেখে তারাবীহর ক্বিরাআত বৈধ। তবে (হাফেয ইমাম রেখে) বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণই সর্বোত্তম।[2]

[1] (বুখারী তা’লীকান ১৩৯পৃঃ, ইবনে আবী শাইবাহ, মুসান্নাফ ৭২১৬নং, আবদুর রাযযাক, মুসান্নাফ)

[2] (দ্রঃ সালাতুল-লাইলি অত্-তারাবীহ, ইবনে বায ১৭-১৮পৃঃ, ফাতহুল বারী ২/২১৭ টীকা, ফাসিঃ মুসনিদ ৮৬পৃঃ)