আমরা নির্দিষ্ট সময়ে মিনার আকাবায় তাঁর সাথে মিলিত হলাম। সেখানে রসূল (ﷺ) এর চাচা আববাসও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বললেন- হে ভাতিজা! তোমার কাছে আগত এই লোকগুলো কারা? ইয়াছরিব তথা মদ্বীনাবাসীদের সাথে আমার পরিচয় রয়েছে। একজন দুইজন করে আমরা তাঁর নিকট উপস্থিত হলাম। এই সময় আববাস আমাদের চেহারার দিকে তাকিয়ে বললেন- এদেরকে তো আমি চিনি না। এরা সকলেই যুবক। আমরা বললামঃ হে আল্লাহর রসূল! আমরা কিসের উপর আপনার হাতে বাইআত করব? তিনি বললেন- খুশীতে অখুশীতে আমার কথা শুনবে ও মানবে, স্বচ্ছলতায় অস্বচ্ছলতায় আল্লাহর রাস্তায় খরচ করবে, সৎ কাজের আদেশ দিবে, অসৎ কাজের নিষেধ করবে, আল্লাহর হক আদায় করবে, এ ব্যাপারে কোন সমালোচকের সমালোচনায় ও নিন্দুকের নিন্দায় ভয় করবেনা, আমি তোমাদের কাছে চলে গেলে তোমরা আমাকে সাহায্য করবে এবং তোমরা যেভাবে নিজেদেরকে, স্ত্রী-সন্তানদেরকে হেফাজত কর, সেভাবেই তোমরা আমাকে হেফাজত করবে। এর বিনিময়ে তোমাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। আমরা বায়আত করার জন্য দাঁড়ালাম। তখন আসআদ বিন যুরারা তাঁর হাত ধরে বললেন- হে মদ্বীনাবাসী! একটু থাম। আমরা এ কথা জেনেই উটের উপর আরোহন করে তাঁর কাছেই এসেছি যে, তিনি আল্লাহর রসূল। তিনি আমাদের কাছে চলে আসার অর্থই হচ্ছে সমগ্র আরবের সাথে তাঁর বিচ্ছেদ, তোমাদের সম্মানী ব্যক্তিগণ অকাতরে নিহত হবে এবং তলোয়ার তোমাদেরকে কেটে টুকরো টুকরো করবে। সুতরাং তোমরা যদি তারপরও সবুর করতে পার, তাহলে তাঁকে তোমাদের কাছে নিয়ে চল। আল্লাহ্ তোমাদেরকে বিনিময় দিবেন। আর তোমরা যদি তোমাদের জানের ভয় কর তাহলে তাঁকে এখনই বর্জন কর। এতে তোমরা আল্লাহর কাছে দুর্বলতার ওযূহাত পেশ করতে পারবে। তারা বললেন- হে আসআদ! তোমার হাত সরাও। আল্লাহর শপথ! আমরা কখনই এই অঙ্গিকার ভঙ্গ করবনা এবং বায়আত ফেরতও দিবনা। সুতরাং আমরা একজন একজন করে তার দিকে এগিয়ে গেলাম। আল্লাহর রসূল আমাদের থেকে উপরোক্ত বিষয়ে বায়আত নিলেন এবং তার বিনিময়ে আমাদেরকে জান্নাতের সুসংবাদ দিতে থাকলেন।
অতঃপর লোকেরা মদ্বীনায় ফেরত গেল। আল্লাহর রসূল (ﷺ) তাদের সাথে আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম এবং মুসআব বিন উমাইরকে পাঠালেন। তারা মদ্বীনার লোকদেরকে কুরআন পড়াতে লাগলেন এবং আল্লাহর দ্বীনের দিকে মানুষকে আহবান করতে থাকলেন। তারা উভয়ে আসআদ বিন যুরারার নিকট অবতরণ করলেন। মুসআব সলাতে মুসলিমদের ইমামতি করতেন। তাদের সংখ্যা চল্লিশে পরিণত হলে তিনি তাদেরকে নিয়ে জুমআর সলাতও শুরু করলেন। মুসআব বিন উমায়ের ও আব্দুল্লাহ্ ইবনে উম্মে মাকতুমের দাওয়াতে উসাইরাম ব্যতীত বনী আব্দুল আশহাল গোত্রের সকলেই মুসলমান হয়ে গেল। তিনি বিলম্ব করে উহুদ যুদ্ধের দিন ইসলাম গ্রহণ করলেন। কালেমা পাঠ করেই তিনি যুদ্ধের ময়দানে ঝাপিয়ে পড়লেন এবং বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করে শাহাদাত বরণ করলেন। রসূল (ﷺ) তাঁর ব্যাপারেই বলেছেন- সে অল্প আমল করেছে এবং বিরাট পুরস্কার অর্জন করেছে।
মদ্বীনায় দ্রুত ইসলাম ছড়িয়ে পড়ল এবং ইসলামের বিজয়ের লক্ষণ পরিলক্ষিত হতে লাগল। অতঃপর মুসআব মক্কায় ফেরত গেলেন।
এই বৎসর হজ্জের মৌসুমে মুসলিম অমুসলিম মিলে মদ্বীনার আনসারদের থেকে প্রচুর সংখ্যক লোক মক্কায় আগমণ করল। তাদের দলনেতা ছিলেন বারা বিন মারুর।
তারা রাতের অন্ধকারে পূর্ব নির্ধারিত সময় মোতাবেক রসূল (ﷺ) এর সাথে গোপনে মিলিত হলেন। তারা সংখ্যায় ছিলেন ৭৩ জন পুরুষ ও ২ জন মহিলা। এবার আকাবার (দ্বিতীয়) বাইআত সংঘটিত হল। বারা বিন মা’রুর সর্বপ্রথম বাইআত করলেন। সুতরাং সর্বপ্রথম বাইআত করার ফযীলতটি তিনিই অর্জন করলেন। সেই রাত্রে নাবী (ﷺ) তাদের থেকে ১২ জন নকীব (অধিনায়ক) নিযুক্ত করলেন। বায়আত শেষে তারা তলোয়ার হাতে নিয়ে মিনায় বসবাসকারী মুশরিকদের উপর হামলা করার জন্য রসূল (ﷺ) এর কাছে অনুমতি প্রার্থনা করল। কিন্তু তিনি তাদেরকে সেই অনুমতি দেননি।