অতঃপর নাবী (ﷺ) হজ্জের মৌসুমে মিনার ‘আকাবায়’ (গিরি পথে) মদ্বীনার আনসার গোত্রের ছয় জন লোকের সাথে মিলিত হলেন। তাদের সকলেই ছিলেন খাযরাজ গোত্রের। তারা হচ্ছেন আসআদ বিন যুরারা, জাবের বিন আব্দুল্লাহ্, আওফ বিন হারিছ, রাফে বিন মালিক, কুতবা বিন আমের এবং উকবা বিন আমের। তিনি তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিলে তারা ইসলাম কবুল করল। অতঃপর মদ্বীনায় ফেরত গিয়ে তারাও ইসলামের দাওয়াত দেয়ার কাজে আত্মনিয়োগ করল। মদ্বীনায় ইসলাম ছড়িয়ে পড়ল এবং প্রতিটি ঘরেই ইসলাম প্রবেশ করল। পরের বছর মদ্বীনা থেকে ১২ জন লোক আসল। জাবের (রাঃ) ব্যতীত আগের বছরের সকলেই এই দলের অন্তর্ভুক্ত ছিল। তাদের সাথে আওফের ভাই মুআয বিন হারিছ, যাকওয়ান বিন আবদে কাইসও ছিল। যাকওয়ান মদ্বীনায় হিজরতের পূর্ব পর্যন্ত মক্কাতেই ছিল। এই জন্যই তাকে একই সাথে আনসারী মুহাজেরী বলা হয়। তাদের মধ্যে আরও ছিল উবাদা বিন সামিত, ইয়াযিদ বিন ছা’লাবাহ, আবুল হাইছাম ইবনুত তাইহান এবং উয়াইমির বিন সায়েদাহ।

জাবের (রাঃ) হতে বর্ণনা করে আবুয যুবাইর বলেন- মক্কায় অবস্থানকালে নাবী (ﷺ) নবুওয়াতের প্রথম তিন বছর গোপনে দাওয়াত দেয়ার পর একটানা দশ বছর পর্যন্ত হজ্জের মৌসুমে হাজীদের তাঁবুতে গিয়ে দ্বীনের দাওয়াত দিতেন। এমনিভাবে তিনি মাজিন্নাহ ও উকায মেলায় গিয়ে বলতেন- এমন কেউ আছে কি যে আমাকে আশ্রয় দিবে? এমন কেউ আছে কি, যে আমাকে আল্লাহর রিসালাত পৌঁছিয়ে দিতে সাহায্য করবে? বিনিময় স্বরূপ সে জান্নাত লাভ করবে। কিন্তু তিনি কোন সাহায্যকারী বা আশ্রয় দানকারী পান নি। পরিস্থিতি এই পর্যন্ত গিয়ে গড়াল যে, লোকেরা মিশর ও ইয়ামান থেকে মক্কায় তাদের আত্মীয়-স্বজনের কাছে আসত। কুরাইশরা এই নবাগত লোকদের কাছে গিয়ে বলতঃ আমাদের এই যুবক লোকটি (মুহাম্মাদ) থেকে সাবধান! সে যেন তোমাদেরকে ফিতনায় না ফেলে। তারপরও তিনি তাদের কাছে যেতেন এবং আল্লাহর দিকে আহবান জানাতেন। কুরাইশরা রসূল (ﷺ) এর দিকে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে লোকদেরকে দেখিয়ে দিত এবং তাঁর দাওয়াত থেকে বিরত রাখত। অতঃপর আল্লাহ্ তা‘আলা ইয়াছরিব (মদ্বীনা) হতে আমাদেরকে তাঁর নিকট প্রেরণ করলেন। আমাদের কেউ তাঁর কাছে গিয়ে ঈমান আনয়ন করত। তিনি কুরআন পড়ে শুনাতেন। সে তার পরিবারের লোকদের নিকট (মদ্বীনায়) ফেরত আসত। তার পরিবারের লোকেরাও তার মতই মুসলমান হয়ে যেত। এক পর্যায়ে অবস্থা এ রকম হল যে, আনসারদের সব ঘরেই ইসলাম প্রবেশ করল। তারা প্রকাশ্যে ইসলামের ঘোষণা দিল।

জাবের (রাঃ) বলেন- অতঃপর আমরা একত্রিত হয়ে বললামঃ আর কত দিন এভাবে আল্লাহর রসূলকে মক্কায় ফেলে রাখব? তিনি মক্কার পাহাড়ি ভূমিতে নির্যাতিত হবেন এবং ভীত-সন্ত্রস্ত থাকবেন! সুতরাং আমরা হজ্জের মৌসুমে মক্কায় গিয়ে তাঁর কাছে পৌঁছলাম। তিনি আমাদের সাথে আকাবায় মিলিত হওয়ার ওয়াদা করলেন।