অতঃপর তিনি সে দিনই মিনায় ফেরত গিয়ে তথায় রাত্রি যাপন করলেন। পরের দিন সকাল হলে তিনি সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকলেন। সূর্য ঢলে যাওয়ার সাথে সাথে তিনি জামারাতের দিকে হেটে গেলেন। এই সময় তিনি বাহনে আরোহন করেন নি। প্রথমে তিনি মসজিদে খাইফের নিকটবর্তী জামারায়ে উলার (প্রথম জামারাতের) কাছে গেলেন এবং তাতে পরপর সাতটি পাথর নিক্ষেপ করলেন। প্রতিটি পাথর নিক্ষেপের সময় তিনি আল্লাহু আকবার বললেন। সাতটি পাথর নিক্ষেপ শেষে তিনি জামারাকে পিছনে রেখে সামনের দিকে অগ্রসর হলেন এবং কিবলামুখী হয়ে দু’আ শুরু করলেন। এই দু’আয় তিনি তাঁর উভয় হাত উঠালেন। তিনি দু’আ এত লম্বা করলেন যে, এতক্ষণে সূরা বাকারা পাঠ শেষ করা যেত। তারপর তিনি জামারায়ে উসতায় (মধ্যম জামারায়) আসলেন এবং তাতেও প্রথমটির ন্যায়ই সাতটি পাথর নিক্ষেপ করলেন।
এখানে পাথর নিক্ষেপ করার পর তিনি বাম দিকে সরে আসলেন এবং কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে উভয় হাত তুলে প্রথম বারের ন্যায়ই দু’আ করলেন। অতঃপর তিনি জামারায়ে কুবরায় (বড় জামাড়ায়) গেলেন এবং উপত্যকার মাঝখানে দাঁড়ালেন। এ সময় তিনি কাবাকে বামে রেখে সাতটি পাথর নিক্ষেপ করলেন। পাথর মারা শেষে তিনি সেখানে অবস্থান না করে সরসূরি পিছনে ফিরে আসলেন। এখানে দু’আ না করার কারণ সম্পর্কে আলেমগণ বিভিন্ন কথা বলেছেন। কেউ কেউ বলেছেন- জায়গা সংকীর্ণ হওয়ার কারণে এখানে দু’আ করেন নি। আবার কেউ কেউ বলেন- এই স্থানে দু’আ করা জামরাতসমূহে পাথর নিক্ষেপের (ইবাদতের) একটি অংশ। তাই বড় জামারায় পাথর নিক্ষেপের মাধ্যমে এই ইবাদতটির সমাপ্তি ঘটে বলেই এখানে তিনি দু’আ করেন নি। কারণ পাথর নিক্ষেপ শেষে দু’আ করা অনার্থক। আর সঠিক কথা হচ্ছে ইবাদতের মাঝখানে দু’আ করাই হচ্ছে উত্তম; শেষে নয়। ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রহঃ) বলেন- এ মতটিই অধিক বিশুদ্ধ। সলাতের মধ্যেও এটিই ছিল তাঁর পবিত্র সুন্নাত। তিনি সলাতের মাঝখানে দু’আ করতেন; শেষে নয়। সলাত শেষে দু’আ করার ব্যাপারে নাবী (ﷺ) থেকে কোন সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়নি।[1]
ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রহঃ) বলেন- আমার অন্তরে সর্বদা একটি খটকা রয়ে যাচ্ছে যে, আইয়্যামে তাশরীকের দিনগুলোতে তথা ১১, ১২, ও ১৩ তারিখে তিনি কি যোহরের পূর্বে পাথর নিক্ষেপ করেছেন? না যোহরের পরে? এ ব্যাপারে আমার প্রবল ধারণা হচ্ছে তিনি যোহরের পূর্বেই নিক্ষেপ করেছেন। কেননা জাবের এবং অন্যান্য সাহাবীগণ বলেছেন- নাবী (ﷺ) সূর্য ঢলে যাওয়ার সাথে সাথেই পাথর নিক্ষেপ করতেন।