বাকী থাকল রমযান মাসে উমরা করার বিষয়টি। নাবী (ﷺ) থেকে সহীহ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে যে, রমযান মাসের উমরাহ ছাওয়াবের দিক দিয়ে হজ্জের সমান। রমযান মাসে উমরাহ করার এত গুরুত্ব থাকা সত্ত্বেও রসূল (ﷺ) তাতে উমরাহ না করার কারণ সম্পর্কে বলা হয় যে, তিনি রমযান মাসে উমরা করার চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতে মশগুল থাকতেন। তা ছাড়া তাতে উমরাহ করা ছেড়ে দিয়ে উম্মাতের উপর রহমত ও সহজ করেছেন। সুতরাং তিনি যদি রমযান মাসে উমরা করতেন তাহলে সমস্ত উম্মাত এই মাসে উমরাহ করার জন্য তৎপর হয়ে উঠত। ফলে একই সাথে উমরা করা ও সিয়াম রাখা তাদের উপর কষ্টকর হয়ে যেত। উম্মাতের উপর কষ্টকর হয়ে যাবে এই আশঙ্কায় তিনি অনেক পছন্দনীয় আমলও ছেড়ে দিতেন।
এক বছরের মধ্যে তিনি একটির বেশী উমরাহ করেছেন বলে প্রমাণিত নেই। এ ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই যে, তিনি হিজরতের পরে দশম হিজরীতে কেবল একবারই হাজ্জ করেছেন। যখন হাজ্জ ফরয হল তখন রসূল (ﷺ) বিলম্ব না করে হজ্জের জন্য তৈরী হয়ে গেলেন। কেননা নবম অথবা দশম হিজরী সালে হাজ্জ ফরজ হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
وَأَتِمُّوا الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ لِلهِ
তোমরা আল্লাহর জন্য হাজ্জ এবং উমরাহকে পরিপূর্ণ কর।[1] যদিও এই আয়াতটি হিজরী ৬ষ্ঠ সালে নাযিল হয়েছে, কিন্তু তাতে হাজ্জ ফরয হওয়ার কথা প্রমাণিত হয় না। তাতে শুধু হাজ্জ ও উমরাহ শুরু করার পর তা পূর্ণ করার আদেশ রয়েছে।
রসূল (ﷺ) যখন হজ্জের নিয়ত করলেন এবং মানুষকে তা জানিয়ে দিলেন তখন সকলেই তাঁর সাথে বের হওয়ার জন্য প্রস্ত্ততি গ্রহণ করতে লাগল। মদ্বীনার চার পাশের এলাকাগুলোতে যখন খবর পৌঁছে গেল তখন রসূল (ﷺ) এর সাথে হাজ্জ করার জন্য তারাও দলে দলে মদ্বীনায় আসতে লাগল। পথেও অগণিত লোক তাঁর কাফেলায় যোগ দিল। তাঁর সামনে, পিছনে, ডানে এবং বামে যতদূর চোখের দৃষ্টি যেত ততদূর শুধু মানুষই দেখা যাচ্ছিল। যুল-কাদ মাসের ছয় দিন বাকী থাকতে যোহরের সলাতের পর তিনি মদ্বীনা থেকে বের হলেন। বের হওয়ার আগে তিনি মদ্বীনাতে যোহরের চার রাকআত সলাত আদায় করেছেন। যাত্রার পূর্বে লোকদেরকে লক্ষ্য করে একটি ভাষণ দিয়েছেন। তাতে তিনি ইহরামের নিয়ম এবং তার ওয়াজিব ও সুন্নাত বিষয়গুলো শিক্ষা দিয়েছেন। অতঃপর তিনি শরীরে তেল মাখালেন এবং চুল-দাড়িতে চিরুনী ব্যবহার করলেন। অতঃপর লুঙ্গি ও চাদর পরিধান করে বের হয়ে গেলেন। অতঃপর তিনি যুল-হুলায়ফায় গিয়ে যাত্রা বিরতি করলেন। সেখানে গিয়ে তিনি আসরের সলাত কসর করে দুই রাকআত পড়লেন। অতঃপর তিনি যুল হুলায়ফায় সারা রাত অবস্থান করলেন।
এখানে তিনি আসর থেকে শুরু করে মাগরিব, এশা, ফজর এবং যোহর পর্যন্ত পাঁচ ওয়াক্ত সলাত আদায় করলেন। রসূল (ﷺ) এর পবিত্র স্ত্রীগণও এই সফরে তাঁর সাথে ছিলেন। এই রাত্রে এক এক করে তিনি সকলের কাছেই তাশরীফ নিয়েছেন। তিনি যখন ইহরাম বাঁধার ইচ্ছা পোষণ করলেন তখন ইহরামের জন্য দ্বিতীয়বার গোসল করলেন। অতঃপর আয়িশা (রাঃ) স্বীয় হাতে তাঁর শরীর ও মাথায় আতর-সুগন্ধি মাখিয়ে দিয়েছেন। তার দাড়ি এবং মাথায় সিঁথি করার স্থানে আতরের চমক দেখা যাচ্ছিল। অতঃপর তিনি সেই চিহ্ন থাকতে দিয়েছেন এবং তা তিনি ধৌত করেন নি। তারপর তিনি লুঙ্গি ও চাদর পরিধান করে যোহরের সলাত কসর করে দুই রাকআত আদায় করার পর মুসাল্লায় (সলাতের স্থানে) বসেই একসাথে হাজ্জ এবং উমরার ইহরাম বাঁধলেন এবং তাকবীর পাঠ করলেন। এ সময় রসূল (ﷺ) থেকে ইহরামের জন্য আলাদাভাবে দুই রাকআত সলাত পড়ার কথা বর্ণিত হয়নি।
ইহরামের পূর্বে নাবী (ﷺ) তার উটগুলোর গলায় কোরবানীর বিশেষ চিহ্ন হিসেবে মালা (হার) পরালেন এবং কুঁজের ডান পাশে জখম রক্ত প্রবাহিত করলেন। বিশটির অধিক সহীহ এবং সুস্পষ্ট হাদীস দ্বারা প্রমাণিত আছে যে, তিনি কিরান হজ্জের ইহরাম বেঁধেছিলেন।
রসূল (ﷺ) খেত্মী (এক ধরণের ঘাসের রস) বা এ ধরণের বস্ত্ত দ্বারা মাথার চুলকে জমাট করেছিলেন। যাতে করে সফর অবস্থায় মাথার চুলগুলো এলোমেলো না হয় এবং তাতে ময়লা-আবর্জনা ও ধুলোবালি প্রবেশ না করে । অতঃপর মুসাল্লায় বসেই তালবীয়া পড়লেন। উটনীর উপর আরোহন করে আবার তালবীয়া পাঠ করলেন। বায়দা নামক স্থানে যখন উটনী তাঁকে নিয়ে যাত্রা শুরু করল তখন পুনরায় তালবীয়া পড়লেন।
তিনি কখনও হাজ্জ ও উমরার তালবীয়া এক সাথে পাঠ করেছেন আবার কখনও শুধু হজ্জের তালবীয়া পাঠ করেছেন। কেননা উমরাহ হজ্জেরই অংশ। এ জন্যই আমরা বলি যে তিনি কিরান হাজ্জ করেছেন। কেউ বলেছেন- তিনি তামাত্তো হাজ্জ করেছেন। আবার কেউ বলেছেন- তিনি মুফরিদ (ইফরাদ হাজ্জকারী) ছিলেন।
ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রহঃ) বলেন- যোহরের সলাতের একটু পূর্বে ইহরাম বেঁধেছেন মর্মে ইবনে হায্ম (রহঃ) থেকে যে কথা বর্ণিত হয়েছে, তা কেবল তাঁর ধারণা প্রসূত। বিশুদ্ধ মতে তিনি যোহরের পর ইহরাম বেঁধেছেন। তিনি ছাড়া আর কেউ বলেন নি যে, রসূল (ﷺ) যোহরের পূর্বে ইহরাম বেঁধেছেন। জানি না তিনি কোথায় এ ধরণের কথা পেলেন?
অতঃপর তিনি নিম্নের বাক্যগুলোর মাধ্যমে উচ্চ স্বরে তালবীয়া পড়তে থাকলেনঃ
لَبَّيْكَ اللّٰهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ
‘‘হে আল্লাহ! আমি হাযির! হে আল্লাহ আমি উপস্থিত হয়েছি। তোমার কোন শরীক নেই। আমি হাযির। সকল প্রকার প্রশংসা এবং নিয়ামাত কেবল তোমার জন্যই। রাজত্ব কেবল তোমারই জন্য। তোমার কোন শরীক নেই’’।[2] তাঁর সাহাবীগণ তালবীয়া পাঠের আওয়াজ শুনেছেন। তিনি আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী সাহাবীদেরকে উঁচু আওয়াজে তালবীয়া পাঠ করার আদেশ দিলেন।
হজ্জের এই সফরে তিনি বাহনে আরোহন করেছেন। হাওদায় আরোহন করেন নি। অর্থাৎ তিনি হাওদা বিহীন উটে আরোহন করেছেন। ইহরাম অবস্থায় হাওদাজ (পালকী) বিশিষ্ট ও হাওদাজ (পালকী) বিহীন বাহনে আরোহন করার বিষয়ে আলেমদের মতভেদ রয়েছে।
এহরাম বাঁধার সময় তিনি তাঁর সাহাবীদেরকে ইফরাদ, তামাত্তো এবং কিরান এই তিন প্রকার হজ্জের যে কোন একটি করার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। অতঃপর যাদের সাথে কুরবানীর জানোয়ার ছিলনা মক্কার নিকটবর্তী হয়ে তাদেরকে উমরাহ করে ইহরাম খুলে ফেলার আহবান জানালেন এবং হজ্জে কিরানের ইহরাম বাতিল করতে উৎসাহ দিলেন। অতঃপর মারওয়ার নিকট এসে তিনি তাদের উপর তা আবশ্যক করে দিলেন।
এই সময় আবু বকর (রাঃ) এর স্ত্রী আসমা বিনতে উমাইস একটি পুত্র সন্তান প্রসব করেন। এই নব জাতক শিশু ছিলেন মুহাম্মাদ বিন আবু বকর (রাঃ) । রসূল (ﷺ) আসমা বিনতে উমাইসকে গোসল করে এক টুকরা কাপড় দিয়ে পট্টী বেঁধে ইহরাম ও সফর অব্যাহত রাখতে আদেশ করলেন। তিনি তাঁকে ইহরাম বাঁধতে এবং তালবীয়া পাঠ করার আদেশও প্রদান করলেন।
এই ঘটনাতে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, মুহরিম ব্যক্তি গোসল করতে পারে এবং হায়েয বিশিষ্ট মহিলাদের জন্য হায়েয চলাকালে গোসল করা জায়েয। এতে আরও প্রমাণ পাওয়া যায় যে, হায়েয অবস্থায় মহিলারা হাজ্জ ও উমরার ইহরাম বাঁধলে তা বিশুদ্ধ হবে।
অতঃপর রসূল (ﷺ) তালবীয়ার উপরোক্ত বাক্যসমূহ পাঠরত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকলেন। লোকেরাও তাঁর সাথে সেই বাক্যগুলোর উপর কিছু বৃদ্ধি করে কিংবা তা থেকে কিছু কমিয়ে পাঠ করছিল। তিনি তা শুনেও কোন প্রতিবাদ করেন নি।
কাফেলা যখন ‘রাওহা’ নামক স্থানে পৌঁছে গেল তখন তিনি একটি আহত বন্য গাধা দেখে সাহাবীদেরকে বললেন- এটিকে ছেড়ে দাও। কেননা সম্ভবতঃ অচিরেই তার মালিক এসে যাবে। ইতিমধ্যেই গাধাটির মালিক এসে বলল- গাধাটি আপনাদের জন্য ছেড়ে দিলাম। অতঃপর তিনি আবু বকরকে তা সাথীদের মধ্যে বণ্টন করে দিতে বললেন।
এতে দলীল পাওয়া যায় যে, মুহরিম ব্যক্তি অমুহরিম ব্যক্তির শিকার করা জন্তুর মাংস খেতে পারবে। তবে শর্ত হল যখন জানা যাবে যে সে মুহরিমদেরকে খাওয়ানোর জন্য শিকার করে নি। আরও জানা গেল যে শিকারকৃত জন্তুর মালিকানা উপযুক্ত প্রমাণ পেশকারীর জন্যই প্রতিষ্ঠিত হবে।
তিনি পুনরায় চলতে থাকলেন। ‘রাওছা’ এবং ‘আরজ’ নামক স্থানের মধ্যবর্তী জায়গায় গিয়ে একটি গাছের নীচে তীরের আঘাতে আহত একটি হরিণ দেখতে পেলেন। রসূল (ﷺ) হরিণটির পাশে একজন লোককে দাঁড় করিয়ে রাখলেন এবং তাকে আদেশ করলেন কেউ যেন এর কোন ক্ষতি না করে।
হরিণ এবং বনু গাধার ব্যাপারে আলাদা হুকুম দেয়ার কারণ হল গাধার ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পেরেছিলেন যে, তা অমুহরিম ব্যক্তি শিকার করেছে। আর হরিণের ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায় নি যে কে শিকার করেছে? মুহরিম না হালাল (ব্যক্তি)?
অতঃপর তিনি যখন ‘আরজ’ নামক জায়গায় উপনীত হলেন। আবু বকর (রাঃ) ও রসূল (ﷺ) এর বাহন একটিই ছিল। আর তা ছিল আবু বকরের চাকরের কাছে। এই সময় চাকর আগমণ করল। তার সাথে উটটি ছিল না। আবু বকর (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন- উট কোথায়? সে উত্তর দিল যে, আমি গত রাতে তাকে হারিয়ে ফেলেছি। আবু বকর (রাঃ) তখন বললেন- একটিই উট ছিল, তাও হারিয়ে ফেললে? এই বলে তাকে মারতে লাগলেন। রসূল (ﷺ) এই দৃশ্য দেখে মুচকি হেসে বলতে লাগলেনঃ দেখ! এই ব্যক্তি ইহরাম অবস্থায় কী করছে?
তিনি আবার চলতে লাগলেন। ‘আবওয়া’ নামক স্থানে এসে পৌঁছলে সা’ব বিন জাসামা তাঁকে বন্য গাধার একটি রান উপহার দিলেন। তিনি তা ফেরত দিয়ে বললেন- আমরা ইহরামের হালতে (অবস্থায়) আছি বলেই তোমার হাদীয়াকে ফেরত দিচ্ছি।
অতঃপর যখন উসফান নামক উপত্যকা দিয়ে অতিক্রম করলেন তখন তিনি বললেন- হে আবু বকর! এটি কোন্ উপত্যকা? আবু বকর (রাঃ) বললেন- এটি হচ্ছে উসফান নামক উপত্যকা। তিনি বললেন- এই উপত্যকা দিয়ে হুদ এবং সালেহ (আঃ) লাল রঙের দু’টি উটের উপর আরোহন করে পবিত্র ঘরের হজ্জের তালবীয়া পাঠরত অবস্থায় অতিক্রম করেছেন। তাদের পরনে ছিল লুঙ্গি। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রহঃ) এটি বর্ণনা করেছেন।
‘সারিফ’ নামক স্থানে পৌঁছলে আয়িশা (রাঃ) এর মাসিকের রক্তস্রাব শুরু হয়ে গেল। সেখানে নাবী (ﷺ) তাঁর সাহাবীগণকে বললেন- যার হাতে কুরবানীর জন্তু নেই, সে ইচ্ছা করলে এটিকে উমরার ইহরামে পরিণত করতে পারে। অর্থাৎ ইচ্ছা করলে উমরাহ করে ইহরাম খুলে ফেলতে পারে। আর যার সাথে কুরবানীর জন্তু আছে, তার জন্য এমন করার অনুমতি নেই। ইফরাদ, তামাত্তো এবং কিরানের যে কোন একটি গ্রহণের ক্ষেত্রে মীকাতে অবস্থানকালের পছন্দ ও নির্বাচনের চেয়ে এবারের নির্বাচন ছিল অন্য রকম। অতঃপর মক্কায় গিয়ে এই মর্মে অকাট্য আদেশ জারি করলেন। যার সাথে কুরবানীর জন্তু নেই সে যেন হজ্জের ইহরামকে উমরার ইহরামে পরিণত করে ফেলে এবং উমরার কাজ সমাধা করে যেন ইহরাম থেকে হালাল হয়ে যায়। আর যার সাথে কুরবানীর জন্তু রয়েছে সে যেন ইহরাম অবস্থাতেই থেকে যায়। হাজ্জকে উমরায় পরিণত করার এই হুকুম পরবর্তীতে কখনই রহিত হয়নি। বরং সুরাকা বিন মালেক এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলঃ হজ্জের ইহরামকে বদল করে উমরার ইহরামে পরিণত করার এই হুকুম কি শুধু এই বছরের জন্য? না সব সময়ের জন্য? উত্তরে নাবী (ﷺ) বললেন- বরং সব সময়ের জন্যই এই হুকুম চালু থাকবে।
অতঃপর তিনি চলতে লাগলেন। যু-তুয়া নামক জায়গায় গিয়ে থামলেন। এই স্থানটি ‘আবারে যাহের’ হিসাবে পরিচিত। তথায় তিনি যুল-হাজ্জ মাসের চার তারিখের দিবাগত রাত্রি যাপন করলেন। সেখানে ফজরের সলাত আদায় করলেন। অতঃপর তিনি গোসল করে মক্কার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলেন।
জাহুনের নিকট অবস্থিত মক্কার উঁচু স্থান ছানিয়াতুল উল-ইয়ার দিক থেকে তিনি দিনের বেলা মক্কায় প্রবেশ করেন। উমরাহ করার সময় তিনি মক্কার নীচু ভূমি দিয়ে প্রবেশ করতেন। সুতরাং তিনি চাশতের সময় মসজিদে ঢুকলেন। ইমাম তাবারীর বর্ণনায় এসেছে, বাবে বনী আব্দে মানাফ তথা আবদে মানাফের গেইট দিয়ে তিনি প্রবেশ করেন, যাকে বাবে বনী শায়বাও বলা হয়। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রহঃ) বলেন- তিনি যখন দারে ইয়ালার কোন স্থান দিয়ে প্রবেশ করতেন তখন আল্লাহর ঘরকে সামনে রেখে দু’আ করতেন।
ইমাম তাবারী (রহঃ) বলেন- তিনি যখন কাবা ঘরের দিকে তাকাতেন তখন এই দু’আ পড়তেন- اللّٰهُمَّ زِدْ هَذَا الْبَيْتَ تَشْرِيفًا وَتَعْظِيمًا وَتَكْرِيمًا وَمَهَابَةً
‘‘হে আল্লাহ্ তুমি এই ঘরের সম্মান, মর্যাদা ও প্রভাব আরও বৃদ্ধি কর’’।[3] অন্য বর্ণনায় আছে তিনি কাবা ঘর দেখার সময় উভয় হাত উঠাতেন, তাকবীর বলতেন এবং এই দু’আ পাঠ করতেনঃ
اللّٰهُمَّ أَنْتَ السَّلاَمُ وَمِنْكَ السَّلاَمُ حَيِّنَا رَبَّنَا بِالسَّلاَمِ اللّٰهُمَّ زِدْ هَذَا الْبَيْتَ تَشْرِيفًا وَتَعْظِيمًا وَتَكْرِيمًا وَمَهَابَةً وَزِدْ مَنْ شَرّفَهُ وَكَرّمَهُ مِمَّنْ حَجَّهُ وَاعْتَمَرَهُ تَشْرِيفًا وَتَكْرِيمًا وَتَعْظِيمًا وَبِرًّا
‘‘হে আল্লাহ্! তুমি শান্তির আধার, তোমার থেকেই শান্তি আসে। হে আমাদের প্রভু! তুমি আমাদেরকে শান্তির সাথে জীবিত রাখো। হে আল্লাহ্! তুমি এই ঘরের সম্মান, মর্যাদা ও প্রভাব আরও বৃদ্ধি করো। আর যে ব্যক্তি এই ঘরের হাজ্জ বা উমরাহ করবে, তুমি তারও সম্মান, মর্যাদা ও নেকী বৃদ্ধি করো’’। তবে এই বর্ণনাটি মুরসাল।
[2]. বুখারী , তাও. হা/১৫৪৯, আবু দাউদ, আলএ. হা/১৮১২, নাসায়ী, মাপ্র. হা/২৭৪৯,সহীহ আত-তিরমিযী, মাপ্র. হা/৮২৫, ইবনে মাজাহ, তাও. হা/২৯১৮,মিশকাত, হাএ. হা/২৫৪১
[3]. ইমাম বায়হাকী আরও বাড়িয়ে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ইমাম আলবানী রহঃ) এই হাদীছকে যঈফ ও মাউযু হিসেবে উল্লেখ করেছেন। দেখুনঃ دفاع عن الحديث النبوي , (১/৩৭)।