আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর নাবীর জন্য সফর ও ভয়ের সময় সলাতের রাকআত সংখ্যা ও রুকনের সংখ্যা কমিয়ে দিয়ে বিশেষ রহমত করেছেন। আর সফরে ভয় না থাকলে শুধু রাকআত সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছেন। নিজ দেশে বা বাড়ীতে অবস্থান করার সময় শত্রুর ভয় থাকলে রাকআত সংখ্যা ঠিক রেখে সলাতের কতিপয় রুকন কমিয়ে দিয়েছেন। এটিই ছিল তাঁর পবিত্র সুন্নাত। এর মাধ্যমেই শুধু সফর ও ভয়ের অবস্থায় কুরআনের আয়াতের মাধ্যমে কসরের বিধান সীমিত করার রহস্য জানা গেল। ভয়ের সলাতের একাধিক পদ্ধতি রয়েছে। তার মধ্যে-
১. শত্রুরা যদি নাবী (ﷺ) ও কিবলার মাঝখানে থাকতো তাহলে সমস্ত সাহাবী তাঁর পিছনে দুই কাতারে বিভক্ত হয়ে দাঁড়াতেন। তিনি সলাতে প্রবেশের তাকবীর বলতেন। সাহাবীরাও তাকবীর বলতেন। অতঃপর সকলেই রুকু করতেন এবং রুকু থেকে মাথা উঠাতেন।
এরপর শুধু তাঁর পিছনের প্রথম কাতারের লোকেরা সিজদায় যেত। আর পরের কাতারের লোকেরা শত্রুর দিকে লক্ষ্য রেখে দাঁড়িয়ে থাকত। তারা দ্বিতীয় রাকআতের জন্য দাঁড়ালে পিছনের সারির লোকেরা দুইটি সিজদাহ করত। অতঃপর তারা দাঁড়িয়ে সামনের কাতারে চলে যেত আর প্রথম কাতারের লোকেরা তাদের স্থলে চলে আসত। যাতে উভয় কাতারের লোকদের প্রথম কাতারের ছাওয়াব অর্জিত হয় এবং যাতে দ্বিতীয় লাইনের লোকেরাও রসূল (ﷺ) এর সাথে দ্বিতীয় রাকআতের দু’টি সিজদাহ করতে পারে। এটিই পরিপূর্ণ ইনসাফের পরিচয়। এবার যখন তিনি রুকু করতেন তখন প্রথমবারের ন্যায় সকলেই তাঁর সাথে রুকু করত। তিনি যখন তাশাহুদে বসতেন তখন পিছনের কাতারের লোকেরা দু’টি সিজদাহ করে রসূল (ﷺ) এর সাথে তাশাহুদে মিলিত হত। অতঃপর তিনি সকলকে নিয়ে সালাম ফেরাতেন।
২. আর শত্রুরা যদি কিবলার দিকে না থাকত তাহলে কখনও তিনি মুজাহিদদেরকে দুইভাগে বিভক্ত করতেন। এক দলকে শত্রুদের সামনে দাঁড় করিয়ে রাখতেন এবং অন্য দলকে সাথে নিয়ে এক রাকআত সলাত আদায় করতেন। এই দলটি এক রাকআত সলাত পড়ে দাঁড়ানো দলটির স্থলে চলে যেত আর দাঁড়ানো দলটি (যারা এখনও সলাত পড়েনি) এদের স্থলে চলে আসত এবং তাঁর সাথে দ্বিতীয় রাকআত পড়ত। অতঃপর নাবী (ﷺ) সালাম ফিরাতেন। সালামের পর প্রত্যেক দলের লোকেরা ইমামের সালামের পরে বাকী এক রাকআত সলাত পড়ে নিত।
৩. আবার কখনও তিনি দুই দলের এক দল লোক নিয়ে এক রাকআত সলাত আদায় করতেন। অতঃপর দ্বিতীয় রাকআতের জন্য দাঁড়াতেন। এ সময় তিনি দাঁড়িয়ে থাকতেন। ঐ দিকে লোকেরা বাকী এক রাকআত পূর্ণ করে নাবী (ﷺ) রুকুতে যাওয়ার পূর্বেই সালাম ফেরাত। এরপর তারা চলে গেলে যে দলটি এখনও সলাত পড়ে নি সেই দলটি চলে আসত এবং নাবী (ﷺ) এর সাথে দ্বিতীয় রাকআত সলাত পড়ত। তিনি যখন তাশাহুদে বসতেন তখন সেই দলটি দাঁড়িয়ে তাদের বাকী এক রাকআত সলাত পড়ে নিত। ঐ দিকে নাবী (ﷺ) তাদের জন্য তাশাহুদে বসে অপেক্ষা করতে থাকতেন। তাদেরও তাশাহুদ পড়া শেষ হলে তাদেরকে সাথে নিয়ে সালাম ফেরাতেন।
৪. আবার কখনও তিনি দুই দলের এক দলকে সাথে নিয়ে দুই রাকআত সলাত আদায় করে তাদেরকে সাথে নিয়ে সালাম ফেরাতেন। এরপর অন্য দলটি আসত। তাদেরকে নিয়েও আবার দুই রাকআত সলাত পড়ে তাদের সাথে সালাম ফেরাতেন। এতে করে তাদের হত দুই রাকআত করে আর তাঁর হত চার রাকআত।
৫. আবার কখনও এ রকম করতেন যে, তিনি দুই দলের এক দলকে নিয়ে এক রাকআত পড়তেন। অতঃপর তারা চলে যেত। তারা আর কোন সলাত আদায় করত না। এরপর অপর দলটি আসত। তাদেরকে নিয়ে তিনি আরেক রাকআত পড়তেন এবং সালাম ফেরাতেন। তারা আর কোন সলাত আদায় করত না। এভাবে রসূল (ﷺ) এর হতো মোট দুই রাকআত এবং উভয় দলের প্রত্যেকের হত এক রাকআত করে। এখানে দেখা যাচ্ছে প্রত্যেক দল ইমামের সাথে এক রাকআত করে সলাত পড়লে এবং আর কোন সলাত না পড়লে তাও জায়েয হবে। এটি জাবের, ইবনে আব্বাস, তাউস, মুজাহিদ, হাসান, কাতাদাহ, হাকাম এবং ইসহাক (রহঃ) এর মত। উপরোক্ত প্রত্যেক পদ্ধতিতেই ভয়ের সলাত পড়া জায়েয আছে।
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রহঃ) বলেন- ভয়ের সলাতের ক্ষেত্রে ছয়টি বা সাতটি পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়। প্রত্যেকটিই জায়েয।
ভয়ের সলাতের বিষয়টিতে আরও অনেক পদ্ধতি বর্ণিত হয়েছে। তবে সবগুলোই উপরোক্ত পদ্ধতিগুলোর কাছাকাছি। কেউ কেউ দশটি পদ্ধতি উল্লেখ করেছেন। ইবনে হাযম (রহঃ) পনেরটির মত পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন। তবে এ ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ হচ্ছে যা আমরা উল্লেখ করেছি। এ সমস্ত আলেম যখনই কোন ঘটনায় রাবীদের মতভেদ দেখেছেন তখনই সেই মতভেদকে নতুন একেকটি পদ্ধতি মনে করেছেন।