জানাযা সলাতের শুরুতে তিনি আল্লাহু আকবার বলতেন। অতঃপর আল্লাহর প্রশংসা ও তাঁর গুণাবলী বর্ণনা করতেন। একদা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) একটি জানাযার সলাত পড়লেন। এতে তিনি প্রথম তাকবীরের পর স্বরবে সূরা ফাতিহা পাঠ করলেন। আর বললেন- আমি এটি এ জন্য পাঠ করেছি, যাতে তোমরা জানতে পার যে, জানাযা সলাতে সূরা ফাতিহা পড়া সুন্নাত।
শাইখুল ইসলাম আল্লামা ইবনে তাইমীয়া (রহঃ) বলেন- জানাযা সলাতে সূরা ফাতিহা পাঠ করা ওয়াজিব নয়; বরং তা সুন্নাত।[1] আবু উমামা বিন সাহল একদল সাহাবী থেকে জানাযা সলাতে দুরূদ শরীফ পড়ার কথা বর্ণনা করেছেন।
ইয়াহইয়া বিন সাঈদ আনসারী সাঈদ মাকবুরী থেকে বর্ণনা করেন, আর সাঈদ বর্ণনা করেন আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে। আবু হুরায়রা (রাঃ) উবাদাহ বিন সামেত (রাঃ) কে জানাযা সলাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন- আমি তোমাদেরকে এ বিষয়ে সংবাদ দিব। প্রথমে তাকবীর বলবে। তারপর নাবী (ﷺ)-এর উপর দুরূদ শরীফ পাঠ করবে। অতঃপর এই দু’আ পাঠ করবে-
اللّٰهُمَّ إِنَّ عَبْدَكَ فُلاَنًا كَانَ لاَ يُشْرِكَ بِكَ شَيْئًا أَنْتَ أَعْلَمُ بِهِ إِنْ كَانَ مُحْسِنًا فَزِدْ فِى إِحْسَانِهِ وَإِنْ كَانَ مُسِيئًا فَتَجَاوَزْ عَنْهُ اللّٰهُمَّ لاَ تَحْرِمْنَا أَجْرَهُ وَلاَ تُضِلَّنَا بَعْدَهُ
‘‘হে আল্লাহ্! তোমার উমুক বান্দা তোমার সাথে কাউকে শরীক করে নি। তার প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে তুমিই অধিক অবগত আছ। সে যদি নেক আমল করে থাকে তাহলে তুমি তার নেক আমলে আরও বৃদ্ধি করে দাও। আর যদি খারাপ আমল করে থাকে তাহলে তাকে ক্ষমা করে দাও। হে আল্লাহ্! তুমি আমাদেরকে তার বিনিময় (তার জানাযার সলাতের ছাওয়াব) থেকে বঞ্চিত করোনা এবং তার পরে আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করোনা’’।
মৃত ব্যক্তির জানাযা সলাত পড়ার উদ্দেশ্য হল তার জন্য দু’আ করা। তাই নাবী (ﷺ) থেকে দু’আর ব্যাপারে যত হাদীস বর্ণিত হয়েছে সূরা ফাতিহা ও তাঁর উপর দুরূদ পাঠের ব্যাপারে তত হাদীস বর্ণিত হয় নি। নাবী (ﷺ) থেকে এই দু’আও বর্ণিত হয়েছে-
اللّٰهُمَّ إِنَّ فُلاَنَ بْنَ فُلاَنٍ فِى ذِمَّتِكَ وَحَبْلِ جِوَارِكَ فَقِهِ مِنْ فِتْنَةِ الْقَبْرِ وَعَذَابِ النَّارِ وَأَنْتَ أَهْلُ الْوَفَاءِ وَالْحَقِّ فَاغْفِرْ لَهُ وَارْحَمْهُ إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ
‘‘হে আল্লাহ্! উমুকের পুত্র উমুক তোমার আশ্রয়ে ও হেফাজতে চলে গেছে। তুমি তাকে কবরের ফিতনা থেকে বাঁচাও এবং জাহান্নামের আগুন হতে রক্ষা কর। তুমি ওয়াদা পূর্ণকারী ও সত্যবাদী। তাকে তুমি ক্ষমা কর এবং তার উপর রহম কর। নিশ্চয়ই তুমি ক্ষমাশীল ও দয়াময়’’। নীচের দু’আটি সহীহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে।[2]
اللّٰهُمَّ أَنْتَ رَبُّهَا وَأَنْتَ خَلَقْتَهَا وأَنْتَ رَزَقْتَهَا وَأَنْتَ هَدَيْتَهَا لِلإِسْلاَمِ وَأَنْتَ قَبَضْتَ رُوحَهَا وَأَنْتَ أَعْلَمُ بِسِرِّهَا وَعَلاَنِيَتِهَا جِئْنَا شُفَعَاءَ فَاغْفِرْ لَهَا
‘‘হে আল্লাহ! তুমিই এই মাইয়্যেতের প্রভু। তুমিই তাকে সৃষ্টি করেছ ও রিযিক দিয়েছ, তাকে ইসলাম কবুল করার তাওফীক দিয়েছ এবং তুমিই তার রূহ কবয করার হুকুম করেছ। তুমি তার প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সব কিছুই জান। আমরা তার জন্য শাফাআতকারী হিসাবে এখানে এসেছি। সুতরাং তুমি তাকে ক্ষমা করে দাও।’’[3] আর তিনি মাইয়্যেতের জন্য ইখলাসের সাথে দু’আ করার আদেশ দিতেন।
[2] . সুনান ইবনে মাজাহ, তাও. হা/১৪৯৯, আহকামুল জানায়েয ১২৫ পৃষ্ঠা।
[3]. মুসনাদে আহমাদ, ইমাম আলবানী এই হাদীছকে যঈফ বলেছেন। দেখুনঃ যঈফে আবু দাউদ, হা/ ৭০৩।