নাবী (ﷺ) এর যুগে যখন সূর্যগ্রহণ লাগলো তখন তিনি ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় চাদর টানতে টানতে দ্রুত মসজিদের দিকে বের হয়ে গেলেন। দিবসের প্রথম ভাগে যখন সূর্য উদিত হওয়ার পর দুই বা তিন বর্শা পরিমাণ উঁচু হলো তখন সূর্যগ্রহণটি লেগেছিল। তিনি অগ্রসর হয়ে দুই রাকআত সলাত পড়লেন। প্রথম রাকআতে সূরা ফাতিহার পর সশব্দে লম্বা একটি সূরা পাঠ করলেন। কিরাআত শেষে তিনি দীর্ঘ রুকু করলেন। রুকু হতে উঠে তিনি দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন। তবে এই দাঁড়ানো প্রথমবারের দাঁড়ানোর চেয়ে সংক্ষিপ্ত ছিল। রুকু থেকে মাথা উঠানোর সময় তিনি এই দু’আ পাঠ করলেন-
سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ
অতঃপর তিনি সিজদায় না গিয়ে পুনরায় কিরাআত পাঠ করতে লাগলেন। কিরাআত পাঠ শেষে তিনি পুনরায় দীর্ঘ রুকু করলেন। তবে প্রথম রুকুর তুলনায় দ্বিতীয়বারের রুকু সংক্ষিপ্ত ছিল। তারপর তিনি দীর্ঘ সিজদাহ করলেন।
এরপর তিনি প্রথম রাকআতের মত করে দ্বিতীয় রাকআত পূর্ণ করলেন। সুতরাং দেখা যাচ্ছে তিনি চারটি রুকু ও চারটি সিজদার মাধ্যমে দুই রাকআত সলাত সমাধা করলেন।
তিনি সেই সলাতে দাঁড়ানো অবস্থায় জান্নাত ও জাহান্নাম দেখেছেন। সাহাবীদেরকে দেখানোর জন্য তিনি জান্নাতের এক গুচ্ছ আঙ্গুর ছেড়ার ইচ্ছা পোষণও করেছেন। তিনি জাহান্নাম ও জাহান্নামীদেরকে দেখেছেন। আরও দেখেছেন একজন মহিলাকে একটি বিড়াল খামছিয়ে আহত করছে। বিড়ালটিকে সে বেঁধে রেখেছিল। ফলে সেটি ক্ষুধায় ও পিপাসায় কাতর হয়ে মারা গিয়েছিল। তিনি জাহান্নামে আমর বিন মালেক লুহাইকে দেখলেন যে, সে স্বীয় নাড়ী-ভূড়ি টেনে নিচ্ছে। কারণ সেই প্রথম ইবরাহীম (আঃ) এর দ্বীনকে পরিবর্তন করেছিল। জাহান্নামে হাজীদের সম্পদ চুরী করার শাস্তিও তিনি দেখেছেন।
অতঃপর সলাত শেষে তিনি জ্ঞানপূর্ণ উচ্চাঙ্গের এক ভাষণ প্রদান করলেন। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রহঃ) বলেন- সালাম ফিরিয়ে তিনি আল্লাহর প্রশংসা ও গুণাগুণ বর্ণনা করলেন এবং সাক্ষ্য দিলেন যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন সত্য উপাস্য নেই। আরও সাক্ষ্য দিলেন যে, মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহর বান্দা ও রসূল। অতঃপর তিনি বললেন- হে লোক সকল! আমি তোমাদেরকে আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, তোমরা যদি মনে কর আমার প্রভুর রেসালাতের কোন বিষয় তোমাদের কাছে পৌঁছাতে ত্রুটি করেছি, তাহলে তোমরা এখনও সে বিষয়টি আমাকে অবগত করোনি। তখন কিছু লোক দাঁড়িয়ে বলল- আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আপনার প্রভুর পয়গাম পৌঁছিয়ে দিয়েছেন, আপনার উম্মতকে উপদেশ দিয়েছেন এবং আপনার উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছেন।
অতঃপর তিনি বললেন- ‘‘আম্মা বাদ’’। কিছু লোক ধারণা করে যে, এই সূর্য আলোকহীন হওয়া, এই চন্দ্রের আলো মিটে যাওয়া (চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণ) এবং এই নক্ষত্রগুলো উদয়াস্তাচল থেকে সরে যাওয়া পৃথিবীর মহৎ ব্যক্তিদের মৃত্যু বরণের কারণেই হয়ে থাকে। যারা এমনটি মনে করে থাকে তারা নিঃসন্দেহে মিথ্যাবাদী। বরং এগুলো হচ্ছে আল্লাহ্ তা‘আলার নিদর্শন সমূহের অন্যতম। এগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর বান্দাদেরকে ভয় দেখান এবং উপদেশ ও শিক্ষা দিয়ে থাকেন এবং তিনি দেখতে চান তাদের মধ্য হতে কে তাঁর নিকট তাওবা করে। আল্লাহর কসম! দুনিয়া ও আখিরাতে তোমরা যা কিছু দেখতে পাবে তার সবকিছুই আমি এখানে দাঁড়িয়ে দেখতে পেয়েছি। আল্লাহর শপথ! ত্রিশজন মিথ্যুকের আগমণ না হওয়া পর্যন্ত কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবেনা। তাদের মধ্যে সর্বশেষ আগমণকারী মিথ্যুকের নাম হবে কানা দাজ্জাল। তার বাম চোঁখ অন্ধ হবে। সে বের হয়ে নিজেকে আল্লাহ্ বলে দাবী করবে। যে তার প্রতি ঈমান আনবে, তাকে সত্যায়ন করবে এবং তার আনুগত্য করবে ঐ ব্যক্তির কোন সৎ আমলই উপকারে আসবেনা। আর যেই ব্যক্তি তাকে আল্লাহ্ হিসাবে বিশ্বাস করতে অস্বীকার করবে এবং তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে তার অসৎ আমলের কারণে কোন শাস্তি দেয়া হবে না। আর সে মক্কা, মদ্বীনা ও বাইতুল মাকদিস ব্যতীত পৃথিবীর সকল স্থানেই প্রবেশ করবে। সে মুসলিমদেরকে বাইতুল মাকদিসে অবরুদ্ধ করে রাখবে। এ সময় মুসলিমগণ কঠিন বিপদাপদের সম্মুখীন হবেন। পরিশেষে আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে এবং তার বাহিনীকে (ইহুদীদেরকে) ধ্বংস করে দিবেন। এমনকি প্রাচীরের ভিত্তি এবং গাছের শিকড়ও বলে দিবে যে, হে মুসলিম! এই তো ইহুদী-কাফের! এদিকে এসো এবং তাকে হত্যা করো। তিনি আরও বলেন- উহা ততক্ষণ পর্যন্ত হবেনা যতক্ষণ না তোমরা এমন ভয়াবহ বিষয়সমূহ প্রত্যক্ষ করবে, সেগুলোকে তোমরা খুব ভয়ানক ও বিপদজনক মনে করবে এবং তোমরা পরস্পর জিজ্ঞেস করবে তোমাদের নাবী কি তোমাদের জন্য এ সম্পর্কে কিছু উল্লেখ করেছেন? এরপর পাহাড়সমূহ স্বীয় স্থান থেকে সরে যাবে। তারপর সব কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে’’।
নাবী (ﷺ) থেকে আরও বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি প্রত্যেক রাকআতে তিনটি অথবা চারটি করে রুকু করেছেন। প্রত্যেক রাকআতে একটি করে রুকু করার কথাও বর্ণিত হয়েছে। তবে বিজ্ঞ আলেমগণ এই বর্ণনাগুলোকে সহীহ বলেন নি। তারা বলেন- এই বর্ণনাগুলোতে রাবীগণ ভুল করেছেন।
মোট কথা, সূর্যগ্রহণের সময় আল্লাহর যিকির, সলাত আদায়, দু’আ, ইসেত্মগফার, সাদকাহ ও দাসমুক্ত করার আদেশ দিয়েছেন।