সাঈ অর্থ দৌড়ানো। কাবার অতি নিকটেই দু’টো ছোট্ট পাহাড় আছে যার একটি ‘সাফা’ ও অপরটির নাম ‘মারওয়া’। এ দু’ পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে মা হাজেরা শিশুপুত্র ইসমাঈল -এর পানির জন্য ছোটাছুটি করেছিলেন। ঠিক এ জায়গাতেই হজ্জ ও উমরা পালনকারীদেরকে দৌড়াতে হয়। শাব্দিক অর্থে দৌড়ানো হলেও পারিভাষিক অর্থে স্বাভাবিক গতিতে চলা। শুধুমাত্র দুই সবুজ পিলার দ্বারা চিহ্নিত মধ্যবর্তী স্থানে সামান্য একটু দৌড়ের গতিতে চলতে হয়। তবে মেয়েরা দৌড়াবে না।
সাঈর কাজটি ওয়াজিব। তবে কেউ কেউ এটা রুকন অর্থাৎ ফরয বলেছেন।
(১) প্রথমে তাওয়াফ এবং পরে সাঈ করা।
(২) ‘সাফা’ থেকে শুরু করা এবং ‘মারওয়া’য় গিয়ে শেষ করা।
(৩) ‘সাফা’ ও ‘মারওয়া’র মধ্যবর্তী পূর্ণ দূরত্ব অতিক্রম করা। একটু কম হলে চলবে না।
(৪) সাত চক্র পূর্ণ করা।
(৫) সাঈ করার স্থানেই সাঈ করতে হবে। এর পাশ দিয়ে করলে চলবে না।
(ক) অযু অবস্থায় সাঈ করা ও সতর ঢাকা।
(খ) তাওয়াফ শেষে লম্বা সময় ব্যয় না করে সঙ্গে সঙ্গে সাঈ শুরু করা।
(গ) সাঈর এক চক্র শেষ হলে লম্বা সময় না থেমে পরবর্তী চক্র শুরু করা।
(ঘ) দু’টি সবুজ বাতির মধ্যবর্তী স্থানে পুরুষদের একটু দৌড়ানো।
(ঙ) প্রতি চক্রেই সাফা ও মারওয়া পাহাড় দু’টিতে আরোহণ করা।
(চ) সাফা ও মারওয়া পাহাড় এবং এর মধ্যবর্তী স্থানে যিক্র ও দোয়া করা।
(ছ) সক্ষম ব্যক্তির পায়ে হেঁটে সাঈ করা।
(১) তাওয়াফ শেষ করেই ‘সাফা’ পাহাড়ের দিকে রওয়ানা দেবেন। সাফাতে উঠার সময় নীচের দোয়াটি পড়বেনঃ
إن الصفا والمروة من شعائر الله (أَبْدَأُ بِمَا بَدَأَ اللهُ بِه)
অর্থঃ ‘‘অবশ্যই ‘সাফা’ এবং ‘মারওয়া’ হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শনসমূহের অন্যতম।’’ আল্লাহ যেভাবে শুরু করেছেন আমিও সেভাবে শুরু করছি।
এ দোয়াটি এখানে ছাড়া আর কোথাও পড়বেন না। সাঈর প্রথম চক্রের শুরুতেই শুধুমাত্র পড়বেন। প্রতি চক্রে বারবার এটা পুনরাবৃত্তি করবেন না।
(২) এরপর যতটুকু সম্ভব সাফা পাহাড়ে উঠুন। একেবারে চূড়ায় আরোহণ করা জরুরী নয়। তারপর কাবার দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে হাত তুলে নীচের দোয়াটি পড়ুনঃ
اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَه لاَ شَرِيكَ لَه لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِي وَيُمِيتُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَه لاَ شَرِيكَ لَـه، أَنْجَزَ وَعْدَه، وَنَصَرَ عَبْدَه، وَهَزَمَ الأَحْزَابَ وَحْدَه.
অর্থঃ আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার। আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই। তিনি এক ও একক, তাঁর কোন শরীক নেই। আসমান যমীনের সার্বভৌম আধিপত্য একমাত্র তাঁরই। সকল প্রশংসা শুধু তাঁরই প্রাপ্য। তিনিই প্রাণ দেন এবং তিনিই আবার মৃত্যুবরণ করান। সবকিছুর উপরই তিনি অপ্রতিহত ক্ষমতার অধিকারী। তিনি ছাড়া কোন মাবুদ নেই। তিনি এক ও একক। তাঁর কোন শরীক নেই। যত ওয়াদা তাঁর আছে তা সবই তিনি পূরণ করেছেন। স্বীয় বান্দাকে তিনি সাহায্য করেছেন এবং একাই শত্রুদলকে পরাস্ত করেছেন। (আবূ দাউদঃ ১৯০৫)
এ দোয়াটি তিনবার পড়ার পর দু’হাত উঠিয়ে যত পারেন দোয়া করুন, আরবীতে বা নিজের ভাষায় দুনিয়া ও আখেরাতের অসংখ্যকল্যাণ চাইতে থাকুন ।
(৩) অতঃপর ‘সাফা’ থেকে নেমে ‘মারওয়া’র দিকে হাঁটতে থাকুন। আর আল্লাহর যিকর ও দোয়া করতে থাকুন নিজের জন্য, পরিবার-পরিজনের জন্য এবং মুসলিম মিল্লাতের সবার জন্য। যখন সবুজ চিহ্নিত স্থানে পৌঁছবেন সেখান থেকে পরবর্তী সবুজ চিহ্নিত স্থান পর্যন্ত পুরুষেরা যথাসাধ্য দৌড়াতে চেষ্টা করবেন। তবে কাউকে কষ্ট দেবেন না। দ্বিতীয় সবুজ চিহ্নিত স্থানটি অতিক্রম করার পর আবার সাধারণভাবে হাঁটা শুরু করবেন। এভাবে হেঁটে মারওয়া পাহাড়ে পৌঁছে এর উঁচুতে আরোহণ করবেন। অতঃপর কিবলামুখী হয়ে ‘সাফা’ পাহাড়ে যা যা করেছিলেন সেগুলো এখানেও করবেন। অর্থাৎ الله أكبر থেকে শুরু করে وَهَزَمَ الأَحْزَابَ وَحْدَهُ পর্যন্ত পুরাটা পড়া তিনবার পড়া, অতঃপর দো‘আ করা। ‘সাফা’ থেকে ‘মারওয়া’য় আসার পর আপনার এক চক্র শেষ হল।
(৪) এবার আপনি ‘মারওয়া’ থেকে নেমে আবার ‘সাফা’র দিকে চলতে থাকুন। সবুজ চিহ্নিত দুই বাতির মধ্যবর্তী স্থানে সাধ্যমত আবার দৌড়াতে থাকুন। যখনি সবুজ চিহ্নিত স্থান অতিক্রম করে ফেলবেন তখনি আবার সাধারণ গতিতে হাঁটতে থাকবেন। ‘সাফা’ পাহাড়ে পৌঁছে প্রথমবার যা যা পড়েছিলেন ও করেছিলেন এবারও তা এখানে পড়বেন ও করবেন। আবার মারওয়ায় গিয়েও তাই করবেন। এভাবে প্রত্যেক চক্রেই এ নিয়ম পালন করে যাবেন। সাফা থেকে মারওয়ায় গেলে হয় এক চক্র, আবার মারওয়া থেকে সাফায় ফিরে এলে হয় আরেক চক্র। এভাবে ৭ চক্র পূর্ণ করবেন।
(৫) ‘মারওয়া’য় গিয়ে যখন ৭ চক্র পূর্ণ হবে তখন চুল কেটে আপনি হালাল হয়ে যাবেন। পুরুষেরা মাথা মুন্ডন করবে অথবা সমগ্র মাথা থেকে চুল কেটে ছোট করে নেবে। আর মহিলারা আঙ্গুলের উপরের গিরার সমপরিমাণ চুল কাটবে। চুল কাটার আরো বিস্তারিত নিয়ম দেখুন পরবর্তী অধ্যায়ে। চুল কাটা শেষে আপনি হালাল হয়ে গেলেন। ইহরামের কাপড় খুলে অন্য কাপড় পরবেন। ইহরাম অবস্থায় যেসব কাজ আপনার জন্য নিষিদ্ধ ছিল এগুলো এখন বৈধ হয়ে গেল।
হাঁ। পারবেন।
সঙ্গে সঙ্গে জামা‘আতে শরীক হয়ে যাবেন। সালাত শেষে বাকী চক্র পূর্ণ করবেন।
তখন সাঈ বন্ধ না করে বাকী চক্র পূর্ণ করবেন। সাঈ শুদ্ধ হবে। এমনকি তাওয়াফ শেষ করার পরও যদি কোন মহিলার হায়েয শুরু হয়ে যায় তাহলে এ অবস্থায়ও সাঈ করে ফেলবে। এটা জায়েয আছে। কারণ সাঈর জন্য পবিত্রতা মুস্তাহাব, কিন্তু শর্ত নয়।
হ্যাঁ, আছে। সে দু‘আটি হলঃ
رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ إِنَّكَ أَنْتَ الأَعَزُّ الأَكْرَمُ
হ্যাঁ, করা যায়। তবে না করাই উত্তম।