কাবা শরীফ গমনকারীদেরকে কাবা হতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ দূরত্বে থেকে ইহরাম বাঁধতে হয়, যে স্থানগুলো নবীজির হাদীস দ্বারা নির্ধারিত আছে। ঐ জায়গাগুলোকে মীকাত বলা হয়। হারাম শরীফের চর্তুদিকেই মীকাত রয়েছে।
২ প্রকারঃ
(ক) সময়ের মীকাত,
(খ) স্থানের মীকাত। হজ্জের জন্য সময়ের মীকাত হল শাওয়াল, যিলকদ এবং যিলহজ্জ মাস। অনেকের মতে শাওয়াল মাস থেকে যিলহজ্জের প্রথম ১০ দিন পর্যন্ত এ সময়গুলোকে হজ্জের মাস বলা হয়। অপরদিকে উমরার সময় হল বছরের যে কোন মাস, দিন ও রাত।
৫টি মীকাত।
১। মদ্বীনাবাসীদের জন্য যুল হুলাইফা ذو الحليفة
২। সিরিয়াবাসীদের জন্য আল-জুহফা الجحفة
৩। নজদবাসীদের জন্য কারনুল মানাযিল قرن المنازل
৪। ইয়ামানবাসীদের জন্য ইয়ালামলাম يلملم
৫। ইরাকবাসীদের জন্য যাতুইরক ذات عرق
উপরে বর্ণিত চতুর্থ মীকাত ‘ইয়ালামলাম’ নামক স্থান থেকে। আকাশ পথে বিমান যখন উক্ত মীকাতে পৌছে তখন ক্যাপ্টেনের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়, তখনই ইহরাম বাধবে অর্থাৎ নিয়ত করবে। ঢাকা থেকেও ইহরামের কাপড় পরে যাওয়া যায়। তবে নিয়ত করবেন ‘মীকাতে’ পৌঁছে বা এর পূর্বক্ষণে। মনে রাখতে হবে যে, ইহরাম বাঁধা ছাড়া মীকাত অতিক্রম করা যাবে না। ইহরাম বাঁধার অর্থ হল ইহরামের কাপড় পরে উমরা বা হজ্জের নিয়ত করা।
এস্থানটি এখন (أَبيَارِ عَلِيٍّ) ‘আবইয়ারে আলী’ নামে পরিচিত। এটি মসজিদে নববী থেকে ১৩ কিলোমিটার এবং মক্কা শহর থেকে ৪২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। মদ্বীনাবাসী এবং এ পথ দিয়ে যারা আসে তারা এখান থেকে ইহরাম বাধবে। মক্কা শহর থেকে এটাই সবচেয়ে দূরতম মীকাত।
এ জায়গাটি লোহিত সাগর থেকে ১০ কিলোমিটার ভিতরে (رابغ) ‘রাবেগ’ শহরের কাছে। জুহফাতে চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ‘রাবেগ’ নামক স্থান থেকে এখন লোকেরা ইহরাম পরে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ এখন এটি একটি বড় শহর। জম্মুম উপত্যকার পথ ধরে মক্কা শহর থেকে এ স্থানটি ১৮৬ কিলোমিটার দূরে অবসি'ত। যেসব দেশের লোকেরা এখান থেকে ইহরাম পরিধান করে তা হলঃ
(ক) সিরিয়া, (খ) লেবানন, (গ) জর্দান, (ঘ) ফিলিস্তীন, (ঙ) মিশর, (চ) সূদান, (ছ) মরক্কো, (জ) আফ্রীকার দেশসমূহ (ঝ) সৌদী আরবের উত্তরাঞ্চলীয় কিছু এলাকা এবং (ঞ) মদ্বীনার পথ ধরে যারা আসে না তারাও এখান থেকে ইহরাম বাঁধে।
কারনুল মানাযিল (قَرْنُ الْمَنَازِل) স্থানটি এখন (السيل الكبير) “সাইলুল কাবীর” নামে প্রসিদ্ধ। সরকারী বেসরকারী অফিস আদালতসহ এটি এখন একটা বড় গ্রাম। মক্কা থেকে এর দূরত্ব ৭৮ কিলোমিটার। যেসব এলাকা ও দেশের লোকেরা এখান থেকে ইহরাম বাঁধে সেগুলো হলঃ (ক) রিয়াদ, দাম্মাম ও তায়েফ (খ) কাতার (গ) কুয়েত (ঘ) আরব আমীরাত (ঙ) বাহরাইন (চ) ওমান (ছ) ইরাক, (জ) ইরানসহ উপসাগরীয় রাষ্ট্রসমূহ এবং এ পথ দিয়ে যারা আসে।
এটা তায়েফ-মক্কা রোডে ‘হাদা’ এলাকা হয়ে মক্কা শরীফ গমনের পথে মক্কা থেকে ৭৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এখানে সর্বাধুনিক ও বৃহদাকার মসজিদ, অজু-গোসল ও গাড়ী পার্কিংয়ের পর্যাপ্ত সুবিধাদি রয়েছে। এটা নতুন কোন মীকাত নয়, এটি কারনুল মানাযিলেরই অংশ বিশেষ।
‘ইয়ালামলাম’ শব্দটি একটি উপত্যাকার নাম বলে জানা যায়। এ জায়গাটি মক্কা শরীফ থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এলাকাটি السعدية ‘সাদীয়া’ নামেও পরিচিত। যেসব দেশের লোকেরা এখান থেকে ইহরাম বাঁধে সেগুলো হলঃ (ক) ইয়ামেন, (খ) বাংলাদেশ, (গ) ভারতবর্ষ, (ঘ) চীন, (ঙ) ইন্দোনেশিয়া, (চ) মালয়েশিয়া, (ছ) দক্ষিণ এশিয়াসহ পূর্বের দেশসমূহ।
পঞ্চম মীকাতটির নাম (ذات عرق) ‘যাতুইরক’। এটা মক্কা শহর থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে। প্রয়োজনীয় রাস্তাঘাট না থাকায় এটি এখন আর ব্যবহৃত হচ্ছে না। এটা ছিল ইরাকবাসীদের মীকাত। তারা এখন তৃতীয় মীকাত ‘সাইলুল কাবীর’ ব্যবহার করে।