প্রশ্নোত্তরে হজ্জ ও উমরা সফরের আদব অধ্যাপক মোঃ নূরুল ইসলাম ১ টি
২১০- সফর সংক্রান্ত বিষয়ে শরীয়তের বিধি-বিধান কি?

যে কোন সফরে বের হওয়ার সময় কুরআন-সুন্নায় বর্ণিত নিম্নবর্ণিত আদবগুলো মেনে চলা উচিৎ।

(১) সফরের পূর্বে অভিজ্ঞ লোকদের সাথে পরামর্শ করে এবং দু’রাক‘আত ইস্তেখারার নামায পড়ে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিৎ। (বুখারী)

(২) যারা হজ্জ বা উমরা করতে যাবেন তারা আগে থেকেই মাস্আলাগুলো জেনে নেবেন।

(৩) হালাল মাল নিয়ে হজ্জ বা উমরায় যাবেন।

(৪) অসিয়তনামা লিখে যাবেন। ঋণ আছে কিনা তাও লিখে দিয়ে যাবেন। কারণ আপনি ফিরে আসতে পারবেন কিনা তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।

(৫) পরিবারের লোকদেরকে তাকওয়া অর্জনের এবং ইসলামী জীবন যাপন করার অসিয়ত করে যাবেন।

(৬) সাথী হিসেবে নেককার লোক বাছাই করে নেবেন।

(৭) পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়-স্বজন থেকে বিদায় নিয়ে যাবেন। (ইবনে মাজাহ)

(৮) বৃহস্পতিবার এবং দিনের শুরুতে সফরে রওয়ানা দেয়া মুস্তাহাব। (বুখারী)

(৯) ঘর থেকে বের হওয়ার দোয়াটি পড়ে রওয়ানা দেবেন। দোয়াটি নিম্নরূপঃ

بِسْمِ اللهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللهِ لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللهِ

(তিরমিযী ৩৪২৬)

(১০) গাড়ী বা বিমানে উঠেই তিনবার ‘আল্লাহু আকবার’ বলা, অতঃপর সফরের দোয়া পড়া।

দোয়াটি নিম্নরূপঃ

سُبْحَانَ الَّذِي سَخَّرَ لَنَا هٰذَا وَمَا كُنَّا لَهচ مُقْرِنِينَ وَإِنَّا إِلَى رَبِّنَا لَمُنْقَلِبُونَ - اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْأَلُكَ فِي سَفَرِنَا هٰذَا الْبِرَّ وَالتَّقْوَى وَمِنْ الْعَمَلِ مَا تَرْضٰى- اَللَّهُمَّ هَوِّنْ عَلَيْنَا سَفَرَنَا هٰذَا وَاطْوِ عَنَّا بُعْدَهُ - اللَّهُمَّ أَنْتَ الصَّاحِبُ فِي السَّفَرِ وَالْخَلِيفَةُ فِي الأَهْلِ - اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ وَعْثَا~ءِ السَّفَرِ وَكَآبَةِ الْمَنْظَرِ وَسُوءِ الْمُنْقَلَبِ فِي الْمَالِ وَالأَهْلِ. (মুসলিম ১৩৪২)

(১১) একাকী সফরে না যাওয়া উত্তম। (বুখারী)

(১২) সফরে তিনজন হলে একজনকে আমীর বানিয়ে নেয়া। (আবূ দাউদ)

(১৩) পথে ঘাটে উপরে উঠার সময় ‘আল্লাহু আকবার’ এবং নীচে নামার সময় ‘সুবহানাল্লাহ’ বলবেন। (বুখারী)

(১৪) বেশী বেশী দোয়া করা। কেননা মুসাফিরের দোয়া কবূল হয়। (তিরমিযী)

(১৫) গোনাহের কাজ থেকে বিরত থাকা। সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করা। চরিত্র হেফাযতে রাখা।

(১৬) সঠিকভাবে সালাত আদায় করা। তিলাওয়াত, যিকর ও তাসবীহ পাঠ করা।

(১৭) পথের সঙ্গী ও দুর্বলকে সহায়তা করা। পারলে টাকা পয়সা দেয়া।

(১৮) কাজ শেষে দেরী না করে তাড়াতাড়ি সফর থেকে চলে আসা। (বুখারী)

(১৯) রাতের বেলা ঘরে ফেরার চেষ্টা না করা ভাল।

(২০) সফর শেষে মুস্তাহাব হলো নিজ ঘরে প্রবেশের পূর্বে নিকটতম মসজিদে দু‘রাকআত নফল সালাত আদায় করা। (বুখারী)

(২১) নিজ গ্রামে ও ঘরে প্রবেশের নির্ধারিত দোয়া পড়া। (মুসলিম)

(২২) পরিবারের লোকজনের জন্য হাদিয়া উপঢৌকন নিয়ে আসা এবং ঘরে ফিরে তাদের সাথে কোমল ব্যবহার করা।

(২৩) সফর থেকে এসে এলাকার লোকজনের সাথে মু‘আনাকা (কোলাকুলি) ও মুসাফা করা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফর থেকে ফিরে তাঁর সাথীদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করতেন। (বুখারী)

(২৪) হানাফী মাযহাবে পথের দূরত্ব ৪৮ মাইলের বেশী হলে এটাকে সফর ধরা হয়। সফরের হালাতে যুহর, আসর ও এশার ৪ রাক‘আত ফরয সালাতগুলো ২ রাক‘আত করে কসর করে পড়তে হয়। সুন্নত নফল পড়া লাগে না। ইচ্ছা করলে পড়তে পারেন। তবে সফরের হালাতে ফজরের দু‘রাক‘আত সুন্নাত এবং বেতরের নামায পড়তেই হবে। কেউ কেউ যুহর ও আসরকে একত্রে কসর করে যুহর বা আসরের সময় এবং মাগরিব ও এশাকে একত্র করে মাগরিব বা এশার ওয়াক্তে জমা করে আদায় করে থাকে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও এমনভাবে করতেন বলে দলীল আছে। (মুসলিম)

(২৫) সফররত অবস্থায় ‘জুমুআ’ না পড়লে গোনাহ হবে না। তখন ‘জুমুআর’ বদলে জুহর পড়ে নেবেন। সফরে সালাতরত অবস্থায় কিবলা উল্টাপাল্টা হয়ে গেলেও নামায শুদ্ধ হয়ে যাবে। তবে কিবলা কোন দিকে এটা একটু চিন্তা ভাবনা করে ঠিক করে নিতে হবে।

দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১ পর্যন্ত, সর্বমোট ১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে