- ইমান ও আমলে দৃঢ়তা সৃষ্টি হওয়া। পার্থিবতা ও দুনিয়া-সংগ্ন বিষয়-আশয়ের প্রতি অনীহা ও পরকালের প্রতি প্রবল আগ্রহ-লোভ সৃষ্টি হওয়া।
- হজ্জ-পূর্ব জীবনে যেসব পাপ ও অন্যায়ের সংলগ্নতায় জীবযাপন করতে অভ্যসস্ত ছিল সেগুলো থেকে সম্পূর্ণভাবে বিমুক্ত হয়ে জীবনযাপন করতে শুরু করা।
- হজ্জ সম্পাদনের পর কৃত আমলকে অল্প মনে করা। কেননা মানুষ যত আমলই করুক না-কেন আল্লাহর প্রদত্ত নিয়ামতের তুলনায় তা নিতান্তই তুচ্ছ। এ কারণেই মুখলিস বান্দাদের গুনাবলীর একটি হল, তারা নিজেদের আমলকে সবসময়ই ছোট মনে করেন। অহংকার ও বড়োত্ব বোধ থেকে বেঁচে থাকা এবং ইবাদত পালনে উৎসাহ ও চাঞ্চল্যে কখনও যেন ঘাটতি না আসে সে জন্যই এরূপ অত্যাশ্যক।
- আমল কবুল না হওয়ার ভয় করা: সাহাবায়ে কেরাম (রাদি আল্লাহু আনহুম) আমল কবুল হওয়া না হওয়ার ব্যাপারে খুবই শঙ্কিত থাকতেন। তাদের প্রসঙ্গেই পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে :
وَالَّذِينَ يُؤْتُونَ مَا آَتَوْا وَقُلُوبُهُمْ وَجِلَةٌ أَنَّهُمْ إِلَى رَبِّهِمْ رَاجِعُونَ
আর যারা যা দান করে, যা তাদের দেওয়া হয়েছে তা থেকে ভীত, কম্পিত হৃদয়ে- এই বোধে যে, তারা তাদের পালন কর্তার কাছে ফিরে যাবে।[1] নবী করিম (ﷺ)উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন: তারা সিয়াম, সালাত ও সদকা আদায় করে এবং এই ভয় করে যে, না জানি এগুলো কবুল হচ্ছে কি-না।
- আশা রাখা ও অধিক পরিমাণে দোয়া করা: ভয় ও শঙ্কার পাশা-পাশী ইবাদত কবুল বিষয়ে আশায় বুক বাঁধতে হয়। কেননা আশারহিত ভয় নৈরাশ্য ডেকে আনতে বাধ্য। ইব্রাহীম ও ইসমাইল (আঃ) কা’বা-গৃহ নির্মাণ করে দোয়ায় মশগুল হয়েছেন। এরশাদ হয়েছে:
وَإِذْ يَرْفَعُ إِبْرَاهِيمُ الْقَوَاعِدَ مِنَ الْبَيْتِ وَإِسْمَاعِيلُ رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا إِنَّكَ أَنْتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
আর যখন ইব্রাহীম ও ইসমাইল কা’বা-গৃহের ভিত্তি স্থাপন করলেন। (তারা দোয়া করলেন) হে পরওয়ারদেগার আমাদের পক্ষ থেকে কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি শ্রবণকারী, ও অতি জ্ঞানী।[2]
- অধিক পরিমাণে ক্ষমা চাওয়া: কেননা আমল পূর্ণাঙ্গরূপে আদায়ের করার যতোই চেষ্টা-সাধনা করা হোক না-কেন কোথাও না কোথাও ত্রুটি থেকে যাওয়া স্বাভাবিক। এ ধরনের ত্রুটি থেকে আমলকে পরিচ্ছন্ন করার জন্য ইবাদতের পর ইস্তিগফার (কৃত অন্যায় থেকে ক্ষমা প্রার্থনা) করার নির্দেশ রয়েছে। পবিত্র কুরআনে হজ্জের কর্মধারা উল্লেখপূর্বক এরশাদ হয়েছে:
ثُمَّ أَفِيضُوا مِنْ حَيْثُ أَفَاضَ النَّاسُ وَاسْتَغْفِرُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ
অতঃপর তোমরা তাওয়াফের জন্যে দ্রুত গতিতে সেখান থেকে ফিরে আস, যেখান থেকে সবাই ফিরে। আর আল্লাহর কাছে মাগফিরাত কামনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাকারী, করুণাময়।[3] এমনকী স্বয়ং রাসূল )ﷺ( ফরজ সালাত শেষ করে তিনবার আল্লাহ কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন ও বলতেন- আস্তাগফিরুল্লাহ।
- অধিক পরিমাণে নেক আমল করা: কারণ নেক আমল একটি বৃক্ষের ন্যায় যার গোড়ায় পানি সেচ দেয়া জরুরি যাতে তা বৃদ্ধি পেয়ে ফল দেয়। কোন একটি নেক আমল কবুল হওয়ার আলমত হল অনুরূপ নেক আমলের ধারাবাহিকতা চালিয়ে যাওয়ার আগ্রহ ও উদ্যোগ সৃষ্টি হওয়া। কেননা একটি নেক আমল অন্য আরেকটির দিকে টেনে নেয়।
আল্লাহ তা’আলা আমাদের সকলের নেক আমল সমূহ কবুল করুক।
[2] - সূরা বাকারা : ১২৭
[3] - সূরা বাকারা : ১৯৯