এহরামের ক্ষেত্রে নারীর আলাদা কোনো পোশাক নেই। শালীন ও ঢিলে-ঢালা পর্দা বজায় থাকে এ ধরনের যে কোনো পোশাক পরে নারী এহরাম বাঁধতে পারে। এহরাম অবস্থায় সেলাইযুক্ত কাপড় পরা ও মাথা আবৃত করা পুরুষের জন্য নিষিদ্ধ হলেও নারীর জন্য নিষিদ্ধ নয়। এ ব্যাপারে ইমাম ইবনুল মুনযির ও ইবনে আব্দিল বার ইমামদের ইজমা- ঐকমত্যের কথা উল্লেখ করেছেন।[1]
তবে এহরাম অবস্থায় নিকাব বা অনুরূপ কোনো পরিচ্ছদ দিয়ে চেহারা ঢাকা বৈধ নয়। হাদিসে এসেছে, ‘নারী যেন নেকাব না লাগায় ও হাতমোজা না পরে।[2] তবে এর অর্থ এ নয় যে বেগানা পুরুষের সামনেও নারী তার চেহারা খোলা রাখবে, এ ক্ষেত্রে ওলামাগণ ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে মাথার উপর থেকে চাদর ঝুলিয়ে দিয়ে চেহারা ঢেকে নারীগণ বেগানা পুরুষ থেকে পর্দা করবে।[3] এ ব্যাপারে আয়েশা (রাঃ) থেকে একটি বর্ণনা ওপরে উল্লেখিত হয়েছে।
[2] - لا تنتقب المرأة ولا تلبس القفازين (বোখারি : হাদিস নং )
[3] - ইবনু আব্দিল বার: আত্তামহীদ, ১৫/১০৮
ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম আহমদের মতে নারীকে যদি সফরের দূরত্বে গিয়ে হজ্জ করতে হয় তবে মাহরাম সাথে থাকা শর্ত। হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)বলেছেন, ‘মাহরাম ব্যতীত কোনো পুরুষ কোনো নারীর সাথে যেন একা না হয়। এবং নারী যেন মাহরাম ব্যতীত সফর না করে। এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার স্ত্রী আমার সাথে হজ্জের উদ্দেশ্যে বের হয়েছে, আর আমি যুদ্ধে নাম লিখিয়েছি, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)বললেন,‘যাও তুমি তোমার স্ত্রীর সাথে হজ্জ কর।[1] অন্য এক হাদিসে এসেছে, ‘মাহরাম ছাড়া কোনো নারী যেন তিন দিনের দূরত্বে সফর না করে।[2] ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে এক হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)বলেছেন : ‘নারী যেন মাহরাম ব্যতীত কখনোই হজ্জ না করে।’[3]
[2] -لا تسافر المرأة ثلاثة إلا ومعها ذو محرم )মুসলিম : ২৩৮১
[3] - সাঈদ আব্দুল কাদের : আলমুগনী ফি ফিকহিল হজ্জ ওয়াল উমরা, পৃ: ২২
তালবিয়া হজ্জের স্লোগান। নারী-পুরুষ সকলের ক্ষেত্রেই তালবিয়া পাঠের গুরুত্ব সমান। পার্থক্য এতটুকু যে নারী পুরুষের মত উচ্চস্বরে তালবিয়া পড়বে না। নিজে শুনতে পারে ও পাশে-থাকা সঙ্গিনী শুনতে পারে এতটুকু উচ্চারণে নারী তালবিয়া পাঠ করবে। প্রখ্যাত তাবেয়ি আতা বলেন, ‘পুরুষ স্বর উঁচু করে তালবিয়া পড়বে। তবে নারী শুধু নিজেকেই শোনাবে এবং আওয়াজ উঁচু করবে না। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, নারীরা স্বর উচ্চ করে তালবিয়া পাঠ করবে না।[1]
হজ্জ পালনকালে কোনো নারীর হায়েয এসে গেলে তার দুটি অবস্থা:
এক. তাওয়াফে যিয়ারত—হজ্জের ফরজ তাওয়াফ—সম্পাদনের পর হায়েয শুরু হলে উলামায়ে কেরামের ঐকমত্যে হায়েযের কারণে তাকে আর বিদায়ি তাওয়াফ করতে হবে না।[1] আয়েশা (রাঃ) এর হাদিসে এসেছে, উম্মুল মুমিনিন সাফিইয়া (রাঃ) এর হায়েয চলে এলে রাসূলুললাহ (ﷺ)জিজ্ঞাসা করলেন, সে কি (হায়েযের কারণে) আমাদের যাত্রা-বিরতি করাবে ? সাহাবগণ বললেন, তিনি তো ইতোমধ্যে তাওয়াফে যিয়ারত সেরে নিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)বললেন, তাহলে যাত্রা-বিরতির দরকার নেই।[2]
দুই. তাওয়াফে যিয়ারত সম্পাদনের পূর্বে হায়েয চলে এলে সর্বসম্মতিক্রমে দু কাজের যেকোনো একটি করা যাবে:
- হায়েয থেকে পবিত্র হওয়া পর্যন্ত তিনি মক্কায় থাকবেন। মাহরামও তার সাথে থেকে যাবে। পবিত্র হলে তিনি তাওয়াফ সেরে নেবেন।
- খরচের টাকা শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে, কিংবা অন্য কোনো কারণে মক্কায় থাকা সম্ভব না হলে দেশে ফিরে যাবেন। তবে তাওয়াফের এ ফরজটি তার ওপর থেকে যাবে। পরবর্তীতে ফিরে এসে তাওয়াফ সেরে নিতে হবে। এ তাওয়াফ সম্পাদনের পূর্বে স্বামী-স্ত্রীর মিলন বৈধ হবে না। আর যদি পরবর্তীতে ফিরে আসার আদৌ কোনো সম্ভাবনা না থাকে, এবং পবিত্র হওয়া পর্যন্ত মক্কায় অবস্থান করাও সম্ভব না হয় তবে বিজ্ঞ ওলামাদের মতানুসারে হায়েয নিঃসৃত হওয়ার জায়গা ন্যাপকিন দিয়ে ভাল করে বেঁধে তাওয়াফে যিয়ারত সম্পাদন করে নেয়ার অনুমতি আছে। তবে একেবারেই অপারগ না হলে এরূপ করা উচিৎ নয়।
[2] - বোখারি : ১৬৩৮, মুসলিম : ২৩৫৩
নারী, পুরুষের সাথে মিশ্রিত হয়ে তাওয়াফ করবে না। বরং একপাশ হয়ে দূর দিয়ে তাওয়াফ করবে। হাজরে আসওয়াদ চুম্বন-স্পর্শের জন্য পুরুষের ভিড়ে যাবে না। যে তাওয়াফে পুরুষকে রামল ইযতিবা করতে হয় সেখানে নারীকে রামল ইযতিবা করতে হবে না।[1]
সাঈ করার সময় নারীকে সবুজ দুই বাতির মাঝে দৌড়াতে হবে না। স্বাভাবিকভাবে চলতে হবে। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর থেকে এক বর্ণনায় এসেছে, বায়তুল্লাহর তাওয়াফের সময় এবং সাফা মারওয়া সাঈর সময় নারীদের ওপর রামল করার কোনো নির্দেশ নেই।[2]
[2] - দেখুন: খালেসুল জুমান, ২০৬