জিলহজ্জ মাসের নয় তারিখকে ‘য়াউমে আরাফা’-আরাফা দিবস বলে। এক আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম দিবস আরাফা দিবস। আল্লাহ তাআলা, আরাফা দিবসে, তাঁর বান্দাদেরকে সবচেয়ে বেশি জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)বলেছেন, ‘এমন কোনো দিবস নেই যেখানে আল্লাহ তাআলা আরাফা দিবস থেকে বেশি বান্দাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। এবং আল্লাহ নিশ্চয়ই নিকটবর্তী হন, ও তাদেরকে নিয়ে ফেরেশতাদের সাথে গর্ব করেন, বলেন—ওরা কী চায়?[1] অন্য এক হাদিসে এসেছে, ‘আল্লাহ তাআলা আরাফায় অবস্থানরতদেরকে নিয়ে আকাশবাসীদের সাথে গর্ব করেন। তিনি বলেন, আমার বান্দাদের দিকে তাকিয়ে দেখো, তারা আমার কাছে এসেছে এলোথেলো ও ধুলায় আবৃত অবস্থায়।[2]
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)আরাফার ময়দানে সূর্যাস্তের পূর্বে বেলালকে (রাঃ) নির্দেশ দিলেন মানুষদেরকে চুপ করাতে। বেলাল বললেন: আপনারা রাসূলুল্লাহ (রাঃ) এর জন্য নীরবতা অবলম্বন করুন। জনতা নীরব হল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)বললেন, ‘হে লোকসকল! একটু পূর্বে জিবরাইল আমার কাছে এসেছেন। তিনি আমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আহলে আরাফা ও আহলে মুযদালেফার জন্য আমার কাছে সালাম পৌঁছিয়েছেন, ও তাদের অন্যায়ের জিম্মাদারি নিয়েছেন। ওমর দাঁড়িয়ে বললেন, য়্যা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)! এটা কি শুধুই আমাদের জন্য? তিনি বললেন, এটা তোমাদের জন্য ও তোমাদের পর কেয়ামত পর্যন্ত যারা আসবে তাদের জন্য। ওমর (রাঃ) বললেন, আল্লাহর অনুকম্পা অঢেল ও উত্তম।[3]
আরাফা দিবস মুসলমানদের ওপর আল্লাহর দ্বীন ও নেয়ামত পরিপূর্ণতা প্রাপ্তির দিবস। তারিক ইবনে শিহাব থেকে বুখারির এক বর্ণনায় এসেছে, ইহুদিরা ওমর (ﷺ)কে বলল: আপনারা একটি আয়াত পড়েন, যদি তা আমাদের ওপর নাযিল হতো তাহলে এ দিবসে আমরা উৎসব পালন করতাম। ওমর (রাঃ) বললেন, আমি অবশ্যই জানি কী উদ্দেশ্যে ও কোথায় তা নাযিল হয়েছে, এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কোথায় ছিলেন যখন তা নাযিল হল। (তা ছিল) আরাফা দিবস। আর আমরা-আল্লাহর কসম- আরাফার ময়দানে। সুফয়ান বলেন, দিনটি জুমাবার ছিল কি-না, আমার সন্দেহ আছে। (আয়াতটি ছিল : الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ - আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দিনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম)[4] ([5])
আরাফা দিবসের রোজা, পূর্বের এক বছর ও পরের এক বছরের গুনাহের কাফফারা হয়ে যায়।[6] তবে এ রোজা হাজিদের জন্য নয়, বরং যারা হজ্জ করতে আসেনি তাদের জন্য। হাজিদের জন্য আরাফার দিবসে রোজা রাখা মাকরুহ। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)বিদায় হজ্জের সময় আরাফা দিবসে রোজা রাখেননি। বরং সবার সম্মুখে তিনি দুধ পান করেছেন।[7] ইকরামা থেকে এক বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন, আমি আবু হুরায়রা (রাঃ) এর বাড়িতে প্রবেশ করে আরাফা দিবসে আরাফার ময়দানে থাকা অবস্থায় রোজা রাখার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন: রাসূলুল্লাহ (ﷺ)আরাফার ময়দানে আরাফা দিবসের রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন।[8]
[2] - عن أبي هريرة رضي الله عنه قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : إن الله يباهي بأهل عرفات أهل السماء ، فيقول لهم انظروا إلي عبادي جاؤوني شعثا غبرا (মুসনাদে আহমদ : ২/২২৪)
[3] -عن أنس رضي الله عنه قال : وقف النبي صلى الله عليه وسلم بعرفات وقد كانت الشمس تغرب ، فقال : يا بلال أنصت لي الناس ، فقام بلال ، فقال : أنصتوا لرسول الله صلى الله عليه وسلم ، فصمت الناس . فقال : يا معشر الناس أتاني جبريل آنفا فأقرأني من ربي السلام لأهل عرفات وأهل المشعر الحرام وضمن عنهم التبعات ، قام عمر بن الخطاب ুرضي الله عنه- فقال : يارسول الله هذا لنا خاصة قال : هذا لكم ولمن أتى بعدكم إلى يوم القيامة ، فقال عمربن الخطاب : كثر خير الله وطاب؟
(আলমাতজার আররাবেহ : ২৩৬ ; ইবনে মুবারক হাদিসটি বিশুদ্ধ বর্ণনায় উল্লেখ করেছেন)
[4] - বোখারি : হাদিস নং ৪৬০৬
[5] - আরাফা দিবসে দ্বীন পরিপূর্ণ করে দেয়ার অর্থ কী? এর ব্যাখ্যায় ইবনে রজব বলেন, ওই দিবসে দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দেয়া কয়েকভাবে ঘটেছে। এক. মুসলমানরা, হজ্জ ফরয হওয়ার পর, নিরেট ইসলামী আবহে ইতোপূর্বে হজ্জ পালন করেননি। অধিকাংশ ওলামা এ অভিমতই ব্যক্ত করেছেন। দুই. আল্লাহ পাক হজ্জকে (এই দিনে) ইব্রাহীমী ভিত্তিতে ফিরিয়ে আনেন, এবং শিরক ও মুশরিকদেরকে বিচ্ছিন্ন করেন। অতঃপর আরাফার ওই স্থানে তাদের কেউই মুসলমানদের সাথে মিশ্রিত হয়নি।
নেয়ামতের পরিপূর্ণতা ঘটেছে আল্লাহর ক্ষমা-মার্জনা লাভের মাধ্যমে। কেননা আল্লাহর ক্ষমা ব্যতীত নেয়ামত পরিপূর্ণ হয়না। এর উদাহরণ, আল্লাহ তা’লা তাঁর নবীকে বলেন, لِيَغْفِرَ لَكَ اللَّهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِكَ وَمَا تَأَخَّرَ وَيُتِمَّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكَ وَيَهْدِيَكَ صِرَاطًا مُسْتَقِيمًا
যাতে আল্লাহ ক্ষমা করেন তোমার অতীতের ও ভবিষ্যতের ত্রুটি, ও পূর্ণ করে দেন তোমার ওপর তাঁর নেয়ামত। আর প্রদর্শন করেন তোমাকে সরল পথ (সূরা আল ফাতহ: ২)
[6] - عن أبي قتادة أن النبي صلى الله عليه وسلم سئل عن صوم يوم عرفة ؟ فقال : يكفر السنة الماضية والباقية (মুসলিম : ১১৬৩)
[7] - দেখুন : মুসলিম : হাদিস নং ১১২৩-১১২৩
[8] - عن عكرمة قال : دخلت على أبي هريرة في بيته ، فسألته عن صوم يوم عرفة بعرفات ؟ فقال : نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم عن صوم يوم عرفة بعرفات (মুসনাদে আহমদ: ২/৩০৪, আহমদ শাকের বলেছেন : হাদিসটির সনদ শুদ্ধ)
ফেরেশতা জিব্রিল (আঃ) হজ্জের আমলসমূহ শিখিয়েছেন ইব্রাহীম (আঃ) কে আরাফার ময়দানে। শেখানো শেষে ইব্রাহীম (আঃ) কে জিজ্ঞেস করে বলেছেন, ‘هل عرف -আপনি কি জানতে পেরেছেন?’। সেই থেকে আরাফার নাম ‘আরাফা’ হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। আদম ও হাওয়া পৃথিবীতে আসার পর প্রথম পরিচয় হয় আরাফার ময়দানে বলেও একটি কথা আছে। [1] আরাফা শব্দের এক অর্থ পরিচয় লাভ করা, সে হিসেবেও আরাফার নাম আরাফা হয়ে থাকতে পারে। কারও কারও মতে, যেহেতু এ ময়দানে মানুষ
আল্লাহর দরবারে গুনাহ-পাপ স্বীকার করে থাকে, এখান থেকেও আরাফা নামটির উৎপত্তি হয়ে থাকতে পারে। কেননা عَرَفَ ধাতুরই রূপান্তরিত শব্দ اِعْتَرَفَ - ‘স্বীকার করেছে’।
আরাফার ময়দান হেরেম এলাকার বাইরে অবস্থিত। কাবা শরীফ থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে, মসজিদুল হারাম রোড হয়ে ২২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আরাফার এই ময়দান। ১০.৪ কি.মি. জায়গা জুড়ে বিস্তৃত আরাফার ময়দান। চতুর্দিকে সীমানা-নির্ধারণমূলক উঁচু ফলক রয়েছে। ৯ জিলহজ্জ ভোরে ফজরের সালাত মিনায় আদায় করে সূর্যোদয়ের পর ‘তালবিয়া’ পড়া অবস্থায় রওয়ানা হতে হয় আরাফা অভিমুখে। তবে বর্তমানে হজ্জযাত্রীদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ফজরের পূর্বেই নিয়ে যাওয়া হয় আরাফায়। এটা নিশ্চয়ই সুন্নতের খেলাফ তবে সমস্যার কারণে এ সুন্নত ছুটে গেলে কোনো সমস্যা হবে না।
আরাফার ময়দানে প্রবেশের সুন্নত তরিকা হল, মসজিদে ইব্রাহীমে[1]- যা বর্তমানে নামিরার মসজিদ বলে খ্যাত-জোহর আসর একসাথে হজ্জের ইমামের পিছনে আদায় করে আরাফার ময়দানে প্রবেশ করা। তবে বিশ লক্ষাধিক হাজির পক্ষে এ জাগায় অবস্থান নিয়ে জোহর আসর একসাথে পড়ে আরাফার ময়দানে প্রবেশ করা এবং উকুফ সম্পাদন করা অসম্ভব বিধায় এ সুন্নতের উপরও আমল করা সম্ভব হয় না। বর্তমান হজ্জ ব্যবস্থাপনার আওতায় হাজিদেরকে সরাসরি আরাফার ময়দানের ভেতরে পূর্বেই নিয়ে যাওয়া হয়। এতেও কোনো অসুবিধা নেই। তবে যদি ব্যক্তিগতভাবে কারো পক্ষে সম্ভব হয় এবং পথঘাট ভালো করে চেনা থাকে, একা একা আরাফায় সাথিদের কাছে ফিরে আসতে পারবে বলে নিশ্চিত থাকে, অথবা একা একাই মুযদালেফা গমন, রাত্রিযাপন ও সেখান থেকে মিনার তাঁবুতে ফিরে আসার মতো সামর্থ্য-সাহস ও আত্মবিশ্বাস থাকে তবে তার পক্ষে নামিরার মসজিদে এ সুন্নত আদায় করাই উত্তম।
আরাফার ময়দানে প্রবেশের পূর্বে গোসল করাকেও কেউ কেউ মুস্তাহাব বলেছেন। ইবনে ওমর (রাঃ) এরূপ করতেন। ওমর (রাঃ) ও ইবনে মাসউদ (রাঃ) ও গোসল করতেন বলে বর্ণায় এসেছে [2]
[2] - দেখুন : ইমাম নববী : কিতাবুল ইযাহ ফি মানাসিকিল হাজ্জি ওয়াল ওমরাহ , পৃ: ২৭২
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)সাহাবায়ে কেরামদেরকে নিয়ে জোহর আসর একসাথে আদায় করেছিলেন। বিদায় হজ্জ সম্পর্কে যাবের (রাঃ) এর হাদিসে এসেছে, ‘নবী (রাঃ) উপত্যকার মধ্যখানে এলেন। তিনি লোকজনকে লক্ষ্য করে খোতবা দিলেন। অতঃপর আজান দেয়া হল, একামত হল, এবং তিনি যোহরের সালাত আদায় করলেন। এরপর একামত হল এবং তিনি আসরের সালাত আদায় করলেন। এ দু’য়ের মাঝখানে অন্য কোনো সালাত আদায় করলেন না।[1]
জোহর আসর একত্রে পড়ার ক্ষেত্রে কেউ কেউ দশটি শর্ত লাগিয়েছেন। তন্মধ্যে একটি হল ‘হজ্জের ইমামের পেছনে হওয়া’। তবে এসব শর্ত লাগানোর পেছনে শক্ত কোনো দলিল নেই। বরং ইবনে ওমর (রাঃ) হজ্জের ইমামের পিছনে জামাত না পেলেও তিনি জোহর-আসর একসাথে জমা করতেন, এ মর্মে সহিহ বুখারিতে একটি বর্ণনা এসেছে। বর্ণনাটির ভাষ্য হল:
كان ابن عمر رضى الله عنهما إذا فاتته الصلاة مع الإمام جمع بينهما
- ইবনে ওমর (রাঃ) ইমামের সাথে সালাত না পেলেও দুই সালাত একত্রে পড়তেন।[2] প্রসিদ্ধ হাদিস বর্ণনাকারী নাফে’ (রাঃ) ইবনে ওমর (রাঃ) সম্পর্কে বলেন:
أن ابن عمر كان إذا لم يدرك الإمام يوم عرفة جمع بين الظهر والعصر في منزله
- ইবনে ওমর (র) আরাফা দিবসে ইমামের সাথে (সালাত) ধরতে না পারলে, নিজ অবস্থানের জায়গাতেই জোহর-আসর জমা করতেন।[3]
হানাফি মাজহাবের প্রসিদ্ধ দুই ইমাম, ইমাম মুহাম্মদ ও ইমাম আবু ইউসুফও একই অভিমত ব্যক্ত করেছেন। আমি এখানে এলাউস্সুনান কিতাব থেকে একটি উদ্ধৃতি তুলে ধরছি—
محمد قال: أخبرنا أبو حنيفة، عن حماد ، عن ابراهيم، قال: إذا صليت يوم عرفة في رحلك فصل كل واحدة من الصلاتين لوقتها، وترتحل من منزل حتى تفرغ من الصلاة، قال محمد: وبهذا كان يأخذ أبو حنيفة، فأما في قولنا فإنه يصليها في رحله كما يصليها مع الإمام، يجمعهما جميعا بأذان وإقامتين، لأن العصر إنما قدمت للوقوف وكذلك بلغنا عن عائشة أم المؤمنين، وعبد الله بن عمر، وعن عطاء بن إبي رباح ، وعن مجاهد .
অর্থাৎ: (ইমাম) মুহাম্মদ বলেছেন: (ইমাম) আবু হানিফা আমাদেরকে জানিয়েছেন, হাম্মাদ, ও ইব্রাহীম এর সূত্র ধরে, তিনি বলেছেন: আরাফার দিন যদি তুমি নিজের অবস্থানের জায়গায় সালাত আদায় কর তবে দুই সালাতের প্রত্যেকটি যার যার সময়ে আদায় করবে, ও সালাত থেকে ফারেগ হয়ে নিজের অবস্থানের জায়গা থেকে প্রস্থান করবে। (ইমাম) মুহাম্মদ বলেন, (ইমাম) আবু হানিফা এ বর্ণনা অনুযায়ী আমল করেন। পক্ষান্তরে আমাদের কথা এই যে (হাজি) তার উভয় সালাত নিজের অবস্থানের জায়গায় ঠিক একই রূপে আদায় করবে যেভাবে আদায় করে ইমামের পেছনে। উভয় সালাতকে একত্রে জমা করবে, এক আজান ও দুই একামতের সাথে। কেননা সালাতুল আসরকে উকুফের স্বার্থে এগিয়ে আনা হয়েছে। এরূপই আমাদের কাছে পৌঁছেছে আয়েশা, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর, আতা ইবনে আবি রাবাহ ও মুজাহিদ থেকে।[4]
সে হিসেবে হজ্জের ইমামের পিছনে জামাতের সাথে সালাত আদায় সম্ভব হোক বা না হোক সর্বাবস্থায় জোহর আসর একত্রে পড়া সুন্নত।
ইমামুল হজ্জের শর্ত লাগানোর পেছনে একটি যুক্তি এই দেখানো হয় যে, রাসূল (ﷺ)ছিলেন ইমামুল হজ্জ আর সাহাবায়ে কেরাম তাঁর পেছনে সালাত আদায় করেছেন। তাই ইমামুল হজ্জের পেছনে জামাতের সাথে সালাত আদায় না করলে জমা করা যাবে না। এই বিষয়টি প্রমাণের ক্ষেত্রে ফেকাহ শাস্ত্রের ‘মাফহুমুল মুখালাফার’ আশ্রয় নেয়া হয়েছে যা হানাফি মাজহাবে দলিল হিসেবে গণ্য নয়।
[2] - বোখারি : ১৬৬২ নং হাদিসের পূর্বের অংশ
[3] - দেখুন : জাফার আহমদ উসমানী : এলাউস্সুনান, খন্ড :৭ , পৃ:৩০৭৩ , দারুল ফিকর, বইরুত, ২০০১
[4] - দেখুন : জাফার আহমদ উসমানী, প্রাগুক্ত, খন্ড : ৭ , পৃ: ৩০-৭৩
আরাফা দিবসের মূল আমল দোয়া। দোয়ার কিছু আদব ও কায়দা-কানুন আছে যেগুলোর অনুসরণ দোয়া কবুলে সহায়ক হতে পারে। নীচে দোয়ার কিছু আদব উল্লেখ করা হল।
- শুদ্ধ নিয়ত: অর্থাৎ দোয়া আরম্ভের সময় মনে মনে নিয়ত করবেন যে আপনি একটি মহৎ ইবাদত বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছেন। কেননা ‘দোয়াই ইবাদত’ বলে হাদিসে এসেছে।[1] মনে মনে এ ধরনের ভাবও উদ্রেক করবেন যে একমাত্র আল্লাহই সমস্ত হাজত পুরা করতে পারেন। হাজত-প্রয়োজন পুরা করা অন্য কারো পক্ষে সম্ভব নয়।
- ওজু অবস্থায় দোয়া করা। কেননা ওজু ব্যতীত দোয়া করা জায়েয হলেও যেহেতু দোয়া একটি ইবাদত তাই ওজু অবস্থায় করাই উত্তম।
- হাতের তালু চেহারার দিকে ফিরিয়ে দোয়া করা। হাদিসে এসেছে, ‘আল্লাহর কাছে তোমরা যখন সওয়াল করবে, হাতের তালু দিয়ে সওয়াল করবে। হাতের পিঠ দিয়ে নয়।[2] রাসূলুল্লাহ (ﷺ)দোয়া করার সময় হাতের তালু চেহারার দিকে রাখতেন।[3] প্রয়োজন ও হাজত প্রকাশের এটাই হল সর্বোত্তম ধরন, যাতে একজন অভাবী ব্যক্তি পাবার আশায় দাতার দিকে বিনয়াবনত হয়ে হাত বাড়িয়ে রাখে।
- হাত এতটুকু উঁচুতে ওঠাবেন যাতে বগলের নীচ দেখা যায়। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি তার হাত এতটুকু উঠায় যে, তার বগলের নীচ দৃশ্যমান হয়ে উঠে এবং আল্লাহর কাছে আর্জি পেশ করে, আল্লাহ তার আর্জি পূরণ করেন।[4]
- আল্লাহর প্রশংসা ও গুণ বর্ণনার মাধ্যমে দোয়া শুরু করা। রাসূলুল্লাহ (স) অধিকাংশ সময় এভাবেই দোয়া করতেন। এমনকী কেয়ামতের ময়দানে আরশের কাছে সিজদায় রত হয়ে তিনি দীর্ঘক্ষণ আল্লাহর প্রশংসা ও গুণ বয়ান করবেন, এরপর আল্লাহ তাঁকে সওয়াল করার অনুমতি দেবেন, ও বলবেন, হে মুহাম্মদ! মাথা উঠাও, বল, তোমার কথা শোনা হবে। সওয়াল কর দেয়া হবে। শাফায়াত করো, তোমার শাফায়াত মঞ্জুর করা হবে। [5]
- নবী (স) এর প্রতি দরুদ পাঠ করা। কেননা দরুদ ব্যতীত দোয়া ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে। হাদিসে এসেছে, ‘প্রত্যেক দোয়া নবী (স) প্রতি দরুদ না পড়া পর্যন্ত বাধাপ্রাপ্ত অবস্থায় থাকে।[6]
- প্রথমে নিজেকে দিয়ে শুরু করা। পবিত্র কুরআনে এর কিছু উদাহরণ এসেছে, যেমন; رَبِّ اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ - হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা করুন ও আমার মাতাপিতাকে।[7] قَالَ رَبِّ اغْفِرْ لِي وَلِأَخِي - সে বলল, হে আমার প্রতিপালক আমাকে ক্ষমা করুন ও আমার ভাইকে।[8]
رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ
- হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে ক্ষমা করুন ও আমাদের ভাইদেরকে যারা আমাদের পূর্বে ঈমান অবস্থায় অতিবাহিত হয়েছেন।[9] রাসূলুল্লাহ (ﷺ)ও কারো জন্য দোয়া করলে প্রথমে নিজেকে দিয়ে শুরু করতেন। [10]
- দোয়া করার সময় কোনো ইতস্তত না করা। এরূপ না বলা যে হে আল্লাহ তুমার যদি ইচ্ছা হয় তাহলে দোয়া কবুল করো। যদি ইচ্ছা হয় তবে রহম করো। যদি ইচ্ছা হয় আমাকে রিজিক দাও। বরং দৃঢ়-প্রত্যয়ী হয়ে দোয়া করা। [11]
- মন-মস্তিষ্ক জমিয়ে হৃদয়ের অন্তস্থল থেকে দোয়া করা। কেবল মুখে মুখে শব্দ উচ্চারণ করে না যাওয়া। হাদিসে এসেছে, ‘দোয়া কবুল হবে এই একীন নিয়ে আল্লাহর কাছে চাও। জেনে রাখো, আল্লাহ নিশ্চয়ই এমন দোয়া কবুল করেন না যা গাফেল ও উদাসীন হৃদয় থেকে বের হয়।[12]
- একীনের সাথে দোয়া করা। কেননা আল্লাহ পাক দোয়া কবুল করার ওয়াদা করেছেন, এরশাদ হয়েছে,
وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِي إِذَا دَعَانِ .
- যখন আমার বান্দারা আমার সম্পর্কে তোমাকে জিজ্ঞাসা করে, বল, যে আমি নিকটেই। আহবানকারীর আহবানে আমি সাড়া দেই যখন সে আহবান করে।[13] ওপরে বর্ণিত হাদিসেও উল্লেখ হয়েছে যে, ‘তোমরা কবুল হওয়ার একীন নিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করো।’ [14]
- দোয়ার সময় সীমা লঙ্ঘন না করা। অর্থাৎ অতিরঞ্জিত আকারে দোয়া না করা। সা’দ (র) তাঁর এক ছেলেকে এই বলে দোয়া করতে শুনলেন যে, হে আল্লাহ আমি তোমার কাছে জান্নাত চাচ্ছি। জান্নাতের সকল নেয়ামত চাচ্ছি। ও.. ও..। আমি তোমার কাছে জাহান্নাম থেকে পানাহ চাচ্ছি। জাহান্নামের শেকল ও বেড়ি সমূহ থেকে পানাহ চাচ্ছি। ও.. ও। সা’দ বলেন, হে বৎস! আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে বলতে শুনেছি: এমন সম্প্রদায় আসবে যারা তাদের দোয়ায় সীমা-লঙ্ঘন করবে।[15] সাবধান তুমি তাদের দলভুক্ত হবে না। তোমাকে যদি জান্নাত দেয়া হয় তাহলে এর মধ্যে যা কিছু আছে সবকিছু সমেত দেয়া হবে। আর যদি জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়া হয় তাহলে জাহান্নাম ও তার মধ্যে যতো খারাপি আছে তার থেকে মুক্তি দেয়া হবে।[16]
- আল্লাহর দরবারে হীনতা-দ্বীনতা ও অপারগতা প্রকাশ করা। সকল ক্ষমতা আল্লাহর হাতে। উপকার ও অনুপোকারের ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর। আল্লাহ যদি কারও কল্যাণ করতে না চান তাহলে সমগ্র পৃথিবীর সকল মানুষ মিলেও তার কোনো উপকার সাধন করতে পারবে না। আর যদি তিনি কারো উপকার করতে চান তাহলে সমগ্র পৃথিবীর মানুষ মিলেও তা ঠেকাতে পারবে না। এ ধরনের বিশ্বাস নিয়ে নিজেকে একেবারে হীন ও দুর্বল ভেবে আল্লাহর কাছে সওয়াল করতে হবে। আল্লাহ হলেন সৃষ্টিকর্তা আর আমি অতি নগণ্য, অনুল্লেখযোগ্য একজন দাস, বান্দা। আল্লাহ হলেন ধনী আমি গরিব, অক্ষম। তিনি পবিত্র ও সকল অসম্পূর্ণতা থেকে মুক্ত। আর আমি আদ্যোপান্ত অসম্পূর্ণ। একমাত্র তিনিই বিধান দাতা আমি বিধান গ্রহীতা। এ ধরনের মন-মানসিকতা নিয়ে দোয়া করতে হবে।
- পরিব্যাপ্ত ও নবী (স) থেকে বর্ণিত শব্দ ও বাক্য ব্যবহার করা। কেননা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যে শব্দ ও বাক্য ব্যবহার করেছেন তা পূর্ণাঙ্গ ও পরিব্যাপ্ত, ‘জামে’। এক বর্ণনায় এসেছে, ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ)পরিব্যাপ্ত দোয়া পছন্দ করতেন, ও অন্যগুলো ছেড়ে দিতেন। [17]
- পরিত্রাণ পাওয়ার দোয়া অধিক পরিমাণে করা। কেননা দুনিয়া ও আখেরাতে যে ব্যক্তি পরিত্রাণ পেয়ে গেল তার চেয়ে সৌভাগ্যবান আর কেউ হতে পারে না। হাদিসে এসেছে, ‘পরিত্রাণের দোয়া বেশি,বেশি করো’। [18]
- দোয়া কবুলের জন্য মাধ্যম হিসেবে কিছু পেশ করা। যেমন আল্লাহর নাম ও সিফাত-গুনাবলীর উসিলায় দোয়া তলব করা। এরশাদ হয়েছে,
وَلِلَّهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى فَادْعُوهُ بِهَا .
- -আল্লাহর আছে সুন্দর নাম-সমগ্র, সেগুলো দিয়ে তাঁকে ডাকো।[19] নিজের কৃত কোনো সৎকাজকে উসিলা করে দোয়া চাওয়া। এর উদাহরণ পবিত্র কুরআনে খোঁজে পাওয়া যায়। এরশাদ হয়েছে—
رَبَّنَا إِنَّنَا سَمِعْنَا مُنَادِيًا يُنَادِي لِلْإِيمَانِ أَنْ آمِنُوا بِرَبِّكُمْ فَآمَنَّا رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الْأَبْرَارِا
-হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা একজন আহবানকারীকে শুনতে পেয়েছি, তিনি ঈমানের দিকে আহবান করছেন, বলছেন, ঈমান আনো তোমাদের রবের প্রতি। অতঃপর ঈমান এনেছি। তাই, হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দিন, আমাদের মন্দ কর্মসমূহ মার্জনা করুন, ও সৎ ব্যক্তিদের অনুগামী করে আমাদের মৃত্যু নসিব করুন।[20] তবে এ ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। কোনো ব্যক্তিকে উসিলা বানিয়ে দোয়া করা কখনো উচিৎ নয়। সাহাবায়ে কেরাম রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে তাঁদের জন্য দোয়া করতে বলেছেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এর ওফাতের পর আব্বাস (রাঃ) কে দোয়া করতে বলেছেন। এরূপ করাকেই বলা হয় দোয়ার ক্ষেত্রে কাউকে উসিলা বানানো। সৎ ব্যক্তিদেরকে দিয়ে দোয়া করানোর এ পদ্ধতি এখনও অবলম্বন করা যায়।[21] তবে এরূপ বলা কখনো শরিয়তসম্মত নয় যে, হে আল্লাহ অমুক ব্যক্তির উসিলায় আমার দোয়া কবুল করুন।
- দোয়া করার সময় বেশি বেশি ‘ইয়া যাল্জালালি ওয়াল ইকরাম’ বলা। হাদিসে এসেছে, ‘(তোমাদের দোয়ায়) বেশি বেশি য়া যালজালালি ওয়াল ইকরাম বলো।[22]
- ইসমে আজম দিয়ে দোয়া করা। এক বর্ণনায় এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এক ব্যক্তিকে এই বলে দোয়া করতে শুনলেন যে, হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে সওয়াল করছি (এই একীন নিয়ে) যে আপনি আল্লাহ, অদ্বিতীয় ও অমুখাপেক্ষী। কাউকে জন্ম দেননি, কারও থেকে জন্ম গ্রহণও করেননি। আর তাঁর কোনো সমকক্ষ নেই। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)বললেন, লোকটি আল্লাহর ইসমে আজম দিয়ে সওয়াল করেছে। যার দ্বারা সওয়াল করলে আল্লাহ দান করেন, দোয়া করলে কবুল করেন।[23] এক. হাদিসে এসেছে, ‘ইসমে আজম এ দুটি আয়াতে রয়েছে: এক.
وَإِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيمُ[24]
- দু্ই. সূরা আল ইমরানের শুরুর আয়াত।[25]
- বেশি বেশি চাওয়া এবং অতিমাত্রায় অনুনয়-বিনয় করা। হাদিসে এসেছে, ‘তোমাদের কেউ যখন সওয়াল করবে সে যেন বেশি মাত্রায় করে। কেননা সে আল্লাহর কাছে সওয়াল করছে।’
- কেবলামুখী হয়ে দোয়া করা। কেননা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কেবলামুখী হয়ে দোয়া করতেন।[26] দোয়ার কেবলা আকাশ বলে যে একটি কথা আছে, তা ঠিক নয়।
- দোয়া শেষ হলে ‘আমীন’ বলা।
[2] - قال النبي صلى الله عليه وسلم : إذا سألتم الله فاسألوه ببطون أكفكم ، ولا تسألوه بظهورها (আবু দাউদ : ১৪৮৬)
[3] - كان إذا دعا جعل باطن كفه إلى وجهه (তাবারানী : ১১/১২২৩৪)
[4] - ما من عبد يرفع يديه حتى يبدو إبطه يسأل الله مسألة إلا أتاها إياه.. (তিরমিযী : ৩৬০৩) মুহাদ্দিস নাসিরুদ্দিন আলবানী এ হাদিসটি সহিহ বলেছেন (দ্রঃ সহিহুত্তিরমিযী :২৮৫৩)
[5] - বোখারি : হাদিস নং ৭৫১০ , মুসলিম : হাদিস নং ১৯৩
[6] - كل دعاء محجوب حتى يصلى على النبي (দায়লামী : ৩/৪৭৯১, সহিহুল জামে’ : ৪৫২৩)
[7] - সূরা নূহ : ২৮
[8] - সূরা আল আ’রাফ : ১৫১
[9] - সূরা আল হাশর : ১০
[10] - আবু দাউদ : হাদিস নং ৩৯৮৪
[11] - দ্র ঃ বোখারি : হাদিস নং ৬৩৩৯
[12] - أدعو الله تعالى و أنتم موقنون بالإجابة ، واعلموا أن الله لا يستجيب دعاء من قلب غافل لاه (তিরমিযী : ৩৪৭৯ ; সহিহুত্তিরমিযী : ২৭৬৬)
[13] - সূরা আল বাকারা : ১৮৬
[14]- তিরমিযী : ৩৪৭৯ ; সহিহুত্তিরমিযী : ২৭৬৬
[15] - سيكون قوم يعتدون في الدعاء (আহমদ : ১/১৭২)
[16] - আহমদ : ১/১৭২
[17] - كان يستحب جوامع من الدعاء ، ويدع ما سوى ذلك (আবু দাউদ : হাদিস নং ১৪৮২; সহীহু আবি দাউদ: ১৩১৫)
[18] - সহীহুল জামে’: হাদিস নং ১১৯৮
[19] - সূরা আল আরাফ : ১৮০
[20] - সূরা আল ইমরান: ১৯৩
[21] - দ্রঃ আব্দুল আযীয বিন ফাতহি আস্সাইয়িদ নাদা : মাওসুয়াতুল আদাব আল ইসলামিয়া, পৃ : ৩৬৪
[22] - সহিহুত্তিরমিযী : ২৭৯৭
[23] - سمع النبي صلى الله عليه وسلم رجلا يقول : اللهم إني أسألك بأنك أنت الله الأحد الصمد ، الذي لم يلد ولم يولد ، ولم يكن له كفوا أحد .فقال رسول الله : لقد سأل الله باسمه الأعظم ، الذي إذا سئل به أعطى ، وإذا دعى به أجاب (আবু দাউদ : হাদিস নং ১৪৯৩; সহীহু আবি দাউদ : ১৩২৪)
[24] - সূরা আল বাকারা : ১৬১
[25] - আবু দাউদ : ১৪৯৬ ; ইবনে মাযাহ : ৩৮৫৫; সহিহু ইবনে মাযাহ :৩১০৯
[26] - মুসলিম : হাদিস নং ২১৩৭
হাদিসে এসেছে, উত্তম দোয়া হল আরাফা দিবসের দোয়া, এবং আমি ও আমার পূর্ববর্তী নবীগণের সর্বোত্তম কথা হল—
لَا إِلهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ اْلَحمْدُ وَهَوُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ.
-আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। তিনি অদ্বিতীয়। তাঁর কোনো শরিক নেই। রাজত্ব তারই, প্রশংসাও তাঁর। এবং তিনি সকল বিষয়ের ওপর ক্ষমতাবান।[1] আরাফার ময়দানে এই দোয়াটি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)বেশি বেশি পড়েছেন।[2]
[2] - আহমদ : হাদিস নং ৬৯৬১
- সম্ভব হলে আরাফার ময়দানে প্রবেশের পূর্বে বা পরে গোসল করে নেয়া।
- যোহরের সময়ে জোহর-আসর একসাথে, এক আজান ও দুই একামতে কাসর করে আদায় করা। আসর ও যোহরের আগে পরে কোনো সুন্নত নফল সালাত আদায় না করা। সালাতের সময় নারীরা পুরুষের পেছনে একই জমাতে শরিক হতে পারবেন।
- সালাত শেষে দোয়া-মুনাজাতে ব্যস্ত হওয়া। দাঁড়িয়ে-বসে-চলমান অবস্থায় তথা সকল পরিস্থিতিতে দোয়া ও জিকির চালু রাখা। কুরআন তিলাওয়াত, ওয়াজ নসিহতের বৈঠকে শরিক হওয়া ইত্যাদিও উকুফে আরাফার আমলের মধ্যে শামিল হবে। তবে নারীদের ক্ষেত্রে কেবল চুপি স্বরে বসে বসে দোয়া-জিকির ও কুরআন তিলাওয়াতের নির্দেশ রয়েছে।
- ক্লান্তি চলে এলে সহযাত্রী হাজিদের সাথে কল্যাণকর আলাপচারিতার মাধ্যমে ক্লান্তি দুর করা যেতে পারে। অথবা ভালো কোনো ধর্মীয় বই পড়েও কিছু সময় কাটানো যেতে পারে।
- যারা দিনের বেলায় উকুফে আরাফা করবে তারা সূর্যাস্ত পর্যন্ত দোয়া-জিকির তথা উকুফ চালিয়ে যাবে। আর যারা ৯ তারিখ দিবাগত রাতে আরাফার ময়দানে আসবে, সুবহে সাদেকের পূর্ব পর্যন্ত সামান্য সময় অবস্থান করলেই উকুফ হয়ে যাবে।
- নারীদের পর্দা-পুশিদার ব্যাপারে সজাগ থাকা। কাপড় দিয়ে পর্দা টানিয়ে তার মধ্যে অবস্থান করা। বেগানা পুরুষের সামনে ওড়না বা চাদর ঝুলিয়ে চেহারা ঢেকে দেয়া। হাতও চাদরের ভেতরে ঢুকিয়ে রাখা। কেননা নারীর জন্য নেকাব ব্যবহার করে চেহারা ঢাকা ও হাত মোজা ব্যবহার করে হাত ঢাকা এহরাম অবস্থায় নিষেধ। তবে অন্য কিছু ব্যবহার করে ঢাকা নিষেধ নয়।
- আরাফার ময়দানের ভেতরে উকুফ হচ্ছে কি-না সে ব্যাপারে সজাগ থাকা। কেননা আরাফার বাইরে উকুফ করলে হজ্জ হবে না।
- জাবালে আরাফায় উঠার কোনো বিধান নেই। তাই এ পাহাড়ে উঠার চেষ্টা করা উচিৎ নয়। জাবালে আরাফার দিকে মুখ করে দোয়া করাও খেলাফে সুন্নত।
- উকুফে আরাফা হজ্জের শ্রেষ্ঠতম আমল। হাদিসে এসেছে الحج عرفة -হজ্জ হল আরাফা।[1] তাই এই পবিত্র দিবসে যেন কোনো প্রকার পাপের সাথে জড়িয়ে না যান সে ব্যাপারে কঠিনভাবে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তাই উচিৎ হবে সহযাত্রী হাজিদেরকে নিয়ে খোশগল্পে না বসা। কেননা এ ধরনের আসরে নিজের অজান্তেই গিবত-পরনিন্দার মতো জঘন্য পাপের সাথে নিজেদেরকে জড়িয়ে নেয়া হয়।
- এ দিবসে বেশি বেশি দান-খয়রাত করার চেষ্টা করা উচিৎ। তাই সহযাত্রীদের প্রয়োজনে আপনার হাত প্রসারিত করুন। সঙ্গে করে কিছু শুকনো খাবার নিয়ে যাবেন যেগুলো দিয়ে প্রয়োজনের সময় আপ্যায়ন করবেন।
- সম্ভব হলে কিছু সময় উন্মুক্ত জায়গায় দাঁড়িয়ে দোয়া করুন।
৯ জিলহজ্জ সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পর রওয়ানা হতে হয় আরাফা থেকে মুযদালেফার উদ্দেশ্যে। মাগরিবের সালাত আরাফার ময়দানে না পড়েই রওয়ানা হতে হয়, কেননা মুযদালিফায় গিয়ে এশার সাথে মিলিয়ে পড়তে হবে মাগরিবের সালাত। রওয়ানা হতে হয় ধীরে-সুস্থে শান্তভাবে।
আরাফার সীমানা শেষ হলেই মুযদালেফা শুরু হয় না। আরাফা থেকে প্রায় ৬ কি.মি. পথ অতিক্রম করার পর আসে মুযদালেফা। মুযদালেফার পর ওয়াদি আল-মুহাস্সার। এরপর মিনা। আরাফা থেকে যেতে দু পাশে সামনাসামনি দুটি পাহাড় পড়বে। ওয়াদি মুহাস্সার থেকে এ পাহাড়-দ্বয় পর্যন্ত মুযদালেফা। মুযদালেফার শুরু ও শেষ নির্দেশকারী বোর্ড রয়েছে।
বর্তমানে মুযদালেফার একাংশ মিনা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ননব্যালটি অধিকাংশ বাংলাদেশি হাজিদের মিনার তাঁবু মুযদালিফায় অবস্থিত। এই জায়গাটুকু মিনা হিসেবে ব্যবহৃত হলেও যেহেতু মৌলিক অর্থে মিনায় পরিণত হয়নি, তাই এই অংশে রাত্রিযাপন করলেও মুযদালেফার রাত্রিযাপন হয়ে যাবে।
মুযদালিফায় পৌঁছার পর প্রথম কাজ হল মাগরিব ও এশা এক সাথে আদায় করা। মাগরিব ও এশা উভয়টা এক আজান ও দুই একামতে আদায় করতে হবে।[1] আজান দেয়ার পর একামত দিয়ে প্রথমে মাগরিবের তিন রাকা’ত সালাত আদায় করতে হবে। এরপর সুন্নত নফল না পড়েই এশার উদ্দেশ্যে একামত দিয়ে এশার দু’রাকা’ত কসর সালাত আদায় করতে হবে। ফরজ আদায়ের পর বেতরের সালাতও আদায় করতে হবে। মাগরিবের সালাত মুযদালিফায় পৌঁছার সাথে সাথেই আদায় করা উচিৎ। গাড়ি থেকে মাল-সামানা নামানোর প্রয়োজন হলে মাগরিবের সালাত পড়ে তারপর গিয়ে নামাবেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)বিদায় হজ্জের সময় মাগরিবের সালাত আদায় করে তারপর যার যার উট যেখানে অবস্থান করবে সেখানে বসিয়েছেন। এরপর এশার সালাত আদায় করেছেন।[2]
খেয়াল রাখতে হবে যে মুযদালিফায় পৌঁছার পর যদি এশার সালাতের সময় না হয় তবে অপেক্ষা করতে হবে। কেননা, এক বর্ণনা অনুসারে, মুযদালেফার রাতে মাগরিবের সময় পরিবর্তন করে এশার ওয়াক্তে নিয়ে নেওয়া হয়েছে।[3] মাগরিবের সালাতের পর কোনো সুন্নত বা জিকির নেই। তবে এশার পর বেতরের তিন রাকাত সালাত আদায় করতে হবে। সালাত আদায়ের পর অন্য কোনো কাজ নেই। কেননা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)বিদায় হজ্জের সময় সুবহে সাদেক পর্যন্ত শুয়ে আরাম করেছেন।[4] যেহেতু ১০ জিলহজ্জ হাজি সাহেবকে অনেক পরিশ্রম করতে হবে তাই রাসূলুল্লাহ (ﷺ)মুযদালেফার রাতে আরাম করার বিধান রেখেছেন। তাই যারা বলেন যে, মুযদালেফার রাত ঈদের রাত, যা ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে কাটিয়ে দেয়া উচিৎ, তাদের কথা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এর সুন্নত মোতাবেক না হওয়ায় আমলযোগ্য নয়।
তবে এক ফাঁকে কঙ্কর কুড়িয়ে নিতে পারেন। কেননা মিনায় গিয়ে কঙ্কর খুঁজে পাওয়া রীতিমতো কষ্টের ব্যাপার। তবে মুযদালেফা থেকেই কঙ্কর নিতে হবে এ ধারণা ঠিক নয়।[5] মটরশুঁটির আকারের কঙ্কর নেবেন যা আঙুল দিয়ে নিক্ষেপ করা যায়।[6] ৭০ টি কঙ্কর কুড়াবেন। কঙ্কর পানি দিয়ে ধুইতে হবে এমন কোনো বিধান নেই। কেননা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কঙ্কর ধুয়েছেন বলে কোনো হাদিসে পাওয়া যায় না।
মুযদালিফায় থাকাবস্থায় সুবহে সাদেক উদিত হলে আওয়াল ওয়াক্তে ফজরের সালাত আদায় করে কেবলামুখী হয়ে হাত উঠিয়ে দোয়ায় মশগুল হবেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)অবশ্য ফজরের সালাত আদায়ের পর ‘কুযা’ পাহাড়ের পাদদেশে গিয়ে উপস্থিত হতেন ও উকুফ করতেন। এ স্থানটি বর্তমানে মাশআরুল হারাম মসজিদের সম্মুখ ভাগে অবস্থিত। এ মসজিদটি মুযদালেফার ৫ নং রোডের পাশে অবস্থিত, এবং ১২ হাজার মুসল্লি ধারণ ক্ষমতা রাখে। মসজিদটির পশ্চাৎ ভাগে ৩২ মিটার উঁচু দু’টি মিনারা রয়েছে অনেক দূর থেকেই যা স্পষ্ট দেখা যায়। এ মসজিদের এখানে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)উকুফ করেছেন এবং বলেছেন আমি এখানে উকুফ করলাম তবে মুযদালেফা পুরোটাই উকুফের স্থান।[7] সম্ভব হলে উক্ত মসজিদের কাছে গিয়ে উকুফ করা ভাল।
উক্ত মসজিদের কাছে গিয়েই হোক বা যেখানে অবস্থান করছেন সেখানেই হোক ফজরের সালাত আদায়ের পর দোয়ায় মশগুল হবেন ও খুব ফরসা হওয়া পর্যন্ত দোয়া ও জিকির চালিয়ে যাবেন। এরপর সূর্যোদয়ের আগেই মিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন।[8]
দুর্বল ব্যক্তিদের জন্য মধ্যরাতের পর চাঁদ ডুবে গেলে মুযদালেফা থেকে প্রস্থান করার অনুমতি আছে। ইবনে ওমর (রাঃ) তাঁর পরিবারের মধ্যে যারা দুর্বল তাদেরকে এগিয়ে দিতেন। রাতের বেলায় তারা মুযদালিফায় মাশআরুল হারামের নিকট উকুফ করতেন। তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী আল্লাহর জিকির করতেন। তারা ইমামের উকুফ ও প্রস্থানের পূর্বেই মুযদালেফা থেকে ফিরে যেতেন। তাদের মধ্যে কেউ ফজরের সালাতের সময় মিনায় গিয়ে পৌঁছাতেন। কেউ পৌঁছাতেন তারও পর। তারা যখন মিনায় পৌঁছাতেন কঙ্কর নিক্ষেপ করতেন। ইবনে ওমর (রাঃ) বলতেন: রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এদের ব্যাপারে অনুমতি দিয়েছেন।[9] মুযদালিফায় উকুফ করা ওয়াজিব। পবিত্র কুরআনে এসেছে—
‘فَإِذَا أَفَضْتُمْ مِنْ عَرَفَاتٍ فَاذْكُرُوا اللَّهَ عِنْدَ الْمَشْعَرِ الْحَرَامِ وَاذْكُرُوهُ كَمَا هَدَاكُمْ وَإِنْ كُنتُمْ مِنْ قَبْلِهِ لَمِنْ الضَّالِّينَ
-তোমরা যখন আরাফা হতে প্রত্যাবর্তন করবে, মাশআরুল হারামের নিকট পৌঁছে আল্লাহকে স্মরণ করবে, এবং তিনি যেভাবে নির্দেশ দিয়েছেন ঠিক সেভাবে তাঁকে স্মরণ করবে। যদিও তোমরা ইতিপূর্বে বিভ্রান্তদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে।[10] রাসূলুল্লাহ (ﷺ)মুযদালিফায় উকুফ করেছেন। সূর্যোদয়ের পূর্বে তিনি মুযদালেফা ত্যাগ করেছেন। তাই আমাদেরও উচিৎ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)যেভাবে মুযদালিফায় রাতযাপন করেছেন, উকুফ করেছেন, ঠিক একই রূপে রাতযাপন ও উকুফ করা।
[2] - বোখারি : ১৫৬০, মুসলিম : ২২৫৬
[3] - إن هاتين الصلاتين قد حولتا عن وقتهما في هذا المكان - (বোখারি)
[4] - أن النبي صلى الله عليه وسلم أتى المزدلفة فصلى بها المغرب والعشاء بأذان واحد وإقامتين ، ولم يسبح بينهما شيئا ، ثم اضطجع حتى طلع الفجر - নবী (সাঃ)মুযদালিফায় এলেন, সেখানে তিনি মাগরিব ও এশা এক আযান ও দুই একামতসহ আদায় করলেন। এ দুয়ের মাঝে কোনো তাসবীহ পড়লেন না । অতঃপর শুয়ে গেলেন এ পর্যন্ত যে ফজর (সুবহে সাদেক) উদিত হল। (মুসলিম)
[5] - রাসূলুল্লাহ (সাঃ)কোন জায়গা থেকে কংকর নিয়েছিলেন তা স্পষ্ট নয়। কারও কারও মতে তিনি জামারাত এর কাছ থেকে কংকর নিয়েছিলেন (দ্রঃ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমিন: মানাসিকুল হাজ্জ ওয়াল ওমরা, পৃ: ১৩০) তবে মুযদালিফা থেকে যে নেননি তা একটি হাদিস থেকে স্পষ্ট। হাদিসটিতে ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন যে রাসূলূল্লাহ (সাঃ)আমাকে আকাবা দিবসের - ১০ যিলহজ্জ-সকালে সোওয়ারের ওপর থাকাবস্থায় বললেন, ‘নাও , আমার জন্য কংকর কুড়াও (আহমদ) ১০ যিলহজ্জ সকালে তিনি অবশ্যই মুযদালিফায় ছিলেন না। তবে সাহাবী ইবনে ওমর (রাঃ) মুযদালিফা থেকে কঙ্কর কুড়িয়ে নিতেন বলে একটি বর্ণনায় এসেছে (দেখুন : সাইয়িদ সাবেক : ফিকহুস্সুন্নাহ, খন্ড : ১, পৃ: ৭২৯ ) সে হিসেবে মুযদালিফা থেকে কঙ্কর নেওয়ায় কোনো সমস্যা নেই তবে তা জরুরি মনে না করা ও মুযদালিফার কঙ্করের বিশেষ কোন গুণ আছে, এ ধরনের কোনো ধারণা পোষণ না করা।
[6] - আলাবানী : সহিহুন্নাসায়ী : ২/২৪০
[7] - মুসলিম : ২/৮৯৩
[8] - জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণীত হাদিসে এসেছে—
أنه صلى الله عليه وسلم لما أتى المزدلفة ، صلى المغرب والعشاء ، ثم اضطجع حتى طلع الفجر ، ثم ركب القصواء ، حتى أتى المشعر الحرام ، ولم يزل واقفا ، حتى أسفر جدا ثم دفع قبل طلوع الشمس
[9] - كان عبدالله بن عمر رضي اللهم عنهما يقدم ضعفة أهله فيقفون عند المشعر الحرام بالمزدلفة بليل فيذكرون الله ما بدا لهم ثم يرجعون قبل أن يقف الإمام وقبل أن يدفع فمنهم من يقدم منى لصلاة الفجر ومنهم من يقدم بعد ذلك فإذا قدموا رموا الجمرة وكان ابن عمر رضي اللهم عنهما يقول أرخص في أولئك رسول الله صلى اللهم عليه وسلم (বোখারি : হাদিস নং ১৫৬৪)
[10] - সূরা আল বাকারা : ১৯৮
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)মুযদালিফায় অবস্থানের ফজিলত সম্পর্কে বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা এই দিনে তোমাদের ওপর অনুকম্পা করেছেন, অতঃপর তিনি গুনাহ্গারদেরকে সৎকাজকারীদের কাছে সোপর্দ করেছেন। আর সৎকাজকারীরা যা চেয়েছে তা তিনি দিয়েছেন।[1]
মিনায় পৌঁছার পূর্বে ওয়াদি মুহাস্সার (মুহাস্সার উপত্যকা) সামনে আসবে। ওয়াদি মুহাস্সারের সীমানা নির্ধারক ফলক রয়েছে যেখানে وادي محسر লেখা আছে। এখানে আবরাহা রাজার হাতির বাহিনী ঝাঁকে ঝাঁকে পাখির নিক্ষিপ্ত পাথরের আঘাতে নাস্তানাবুদ হয়েছিল। আল্লাহর আযাব নাযিল হওয়ার স্থান হিসেবে, অন্যান্য আযাব নাযিলের স্থানের মতো রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এখানেও দ্রুত চলে পার হয়ে গেছেন। সে হিসেবে মুহাস্সার উপত্যকায় এলে দ্রুত চলে পার হয়ে যাওয়া মুস্তাহাব। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন দ্রুত চলতে গিয়ে অন্যদের কষ্ট না হয়। বর্তমানে অবশ্য ওয়াদি মুহাস্সারে তাঁবু টানিয়ে, মিনার দিনগুলোয়, হাজিদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়। মিনার মূল এরিয়ায় জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বিজ্ঞ ওলামাদের পরামর্শ ক্রমে এরূপ করা হয়েছে। তাই আপনার তাঁবু যদি ওয়াদি মুহাস্সারে অবস্থিত থাকে তা হলে এ জায়গাটুকু দ্রুত পার হওয়ার প্রয়োজন নেই। আপনি বরং এখানেই থেমে যাবেন, এবং নিজ তাঁবুতে প্রবেশ করবেন।