জান্নাতুল বাকি—আরবিতে বাকিউল গারকাদ—পবিত্র মদিনার একটি কবরস্থান যেখানে, ইমাম মালিক (রহ.) এর কথা মতে, প্রায় দশ হাজার সাহাবা কবরস্থ আছেন। আহলে বাইতের অধিকাংশ সদস্য, আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব, উসমান ইবনে মাজউন, আকীল ইবনে আবি তালিব ও খাদিজা (রাঃ) ও মায়মুনা (রাঃ) ব্যতীত রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এর অন্যান্য স্ত্রীগণ, আব্দুর রহমান, সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস প্রমুখ জলিলুল কদর সাহাবা (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) বাকিতে কবরস্থ আছেন। সে হিসেবে তাদেরকে সালাম দেয়া ও তাদের জন্য ইস্তিগফার ও দোয়া করার উদ্দেশ্যে জান্নাতুল বাকিতে যাওয়া শরিয়তসম্মত।
বাকি’তে সমাহিত মুমিনগণের প্রতি সালাম দেয়ার সুন্নত তরিকা হলো অনির্দিষ্টভাবে সবাইকে একসাথে সালাম দেয়া ও তাদের জন্য দোয়া করা। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)আহলে বাকি’র যিয়ারতকালে বলতেন।
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤْمِنِيْنَ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللهُ بِكُمْ لاَحِقُوْنَ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِأَهْلِ بَقِيْعِ الغَرْقَدِ.
-‘আপনাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক, মুমিন সম্প্রদায়ের আবাস স্থল। আমরা আপনাদের সাথে যুক্ত হব ইনশাআল্লাহ। হে আল্লাহ আপনি আহলে বাকিদেরকে মাফ করে দিন।’
বুরায়দা (রাঃ) এর বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে, ‘কবর যিয়ারতে গেলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)তাদেরকে শিখাতেন। তাদের মধ্যে থেকে একজন বলতেন :
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنَ المُؤْمِنِيْنَ وَالمُسْلِمِيْنَ ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللهُ لَلَاحِقُوْنَ ، أَسْأَلُ اللهَ لَنَا وَلَكُمْ العَافِيَةَ.
-আপনাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক হে অত্র জায়গায় বসবাসকারী মুমিন-মুসলিমগণ। আমরা (আপনাদের সাথে) যুক্ত হব, ইনশাআল্লাহ। আমাদের জন্য ও আপনাদের জন্য আল্লাহর দরবারে পরিত্রাণ কামনা করি।[1]
উল্লেখিত হাদিসসমূহে বাকিতে সমাহিত মুমিনগণকে সালাম দেয়ার পদ্ধতি অত্যন্ত স্পষ্ট। এর অতিরিক্ত কিছু করতে যাওয়া সুন্নতের খেলাফ; যেমন প্রত্যেকের কবরে ভিন্ন ভিন্নভাবে সালাম দেয়া- জায়েয থাকলেও- রাসূলুল্লাহ (ﷺ)ও সাহাবাদের আমলে এর কোনো উদাহরণ খুঁজে পাওয়া যায় না।
অনুরূপভাবে বাকি’র কবরস্থানে গিয়ে নিজের জন্য দোয়া করারও কোনো উদাহরণ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)ও তাঁর সাহাবাদের জীবনে খুঁজে পাওয়া যায় না। কবরের কাছে গিয়ে দোয়া করা বরং শরিয়ত বহির্ভূত একটি কাজ যা সালাফে সালেহীনদের কেউ করেননি। কবরবাসীদের ওসিলা বানিয়ে দোয়া করা—অর্থাৎ এরূপ বলা যে হে আল্লাহ জান্নাতুল বাকিতে শায়িত বুজুর্গ ব্যক্তিদের উসিলায় আমাকে ক্ষমা করে দাও-মারাত্মক ধরনের অপরাধ। তাই বাকিতে আবেগতাড়িত হয়ে কখনো এরূপ করবেন না। যেটুকুর অনুমতি হাদিসে আছে সে-টুকু করেই ক্ষান্ত হবেন। এতেই কল্যাণ ও বরকত রয়েছে।