তালবিয়া হজ্জের স্লোগান। তাই তালবিয়া পাঠের কোনো বিকল্প নেই। তালবিয়া পাঠ ফরজ না ওয়াজিব না সুন্নত এই নিয়ে ফেকাহবিদদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে। হানাফি মাজহাব অনুযায়ী এহরাম বাধার সময় তালবিয়া অথবা অন্য কোনো জিকির একবার পাঠ করা ফরজ, এবং একাধিকবার পাঠ করা সুন্নত।
উমরার ক্ষেত্রে তালবিয়ার শুরু এহরামের নিয়ত করার সময় থেকে এবং শেষ বায়তুল্লাহর তাওয়াফ শুরু করার সময়ে। আর হজ্জের ক্ষেত্রে এহরামের নিয়ত করার সময় থেকে ১০ জিলহজ্জ বড় জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)থেকে বর্ণিত আরবি শব্দমালা ব্যবহার করে তালবিয়া পড়া সুন্নত। তবে যদি কেউ আল্লাহর আজমত ও বড়োত্ব প্রকাশক আরো কিছু শব্দ এর সাথে যুক্ত করতে চায় তাহলে তা জায়েয হবে। যেমনটি করেছেন ওমর (রাঃ)। তিনি উল্লেখিত তালবিয়ার শব্দমালা পড়ার পর বলতেন।[1]
لَبَّيْكَ اْللَّهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ، وَالَخيْرَ فِيْ يَدَيْكَ، وَالرَّغْبَاءُ إِلَيْكَ وَالْعَمَلُ.
‘আমি হাজির হে আল্লাহ আমি হাজির, আমি হাজির একমাত্র তোমারই সন্তুষ্টি কল্পে। কল্যাণ তোমার হাতে, আমল ও প্রেরণা তোমারই কাছে সমর্পিত।’
তবে আমাদের উচিৎ হবে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)ও সাহাবাদের ব্যবহৃত শব্দমালার বাইরে না যাওয়া।
যদি কেউ আরবি তালবিয়া আদৌ উচ্চারণ করতে না পারে, তাহলে বাংলা ভাষায় তালবিয়ার অনুবাদ মুখস্থ করে পড়লেও দায়িত্ব আদায় হয়ে যাবে। তবে যেহেতু আরবি তালবিয়াটিই হজ্জের শেয়া’র বা স্লোগান তাই হজ্জ পালনেচ্ছু ব্যক্তিমাত্রেরই উচিৎ হবে মেহনত করে শুদ্ধভাবে আরবি তালবিয়াটি শিখে নেয়া।
তালবিয়া মুখে উচ্চারণ করা জরুরি। যদি কেউ মনে মনে তালবিয়া পড়ে, তবে তা যথেষ্ট হবে না। কেননা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)ও সাহাবাগণ মুখে উচ্চারণ করে উচ্চ স্বরে তালবিয়া পড়েছেন। হাদিসে এসেছে, ‘আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এর সাথে বের হলাম হজ্জের তালবিয়া চিৎকার করে বলে বলে। [2] আর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)হজ্জ বিষয়ে নির্দেশ করে বলেছেন, ‘لِـتَأْخُذُوْا عَنِّىْ مَنَاسِكَكُم - আমার কাছ থেকে তোমরা যেন তোমাদের হজ্জকর্মসমূহ জেনে নাও।’ তালবিয়ার ক্ষেত্রে সশব্দে উচ্চারণ করে পড়া ব্যতীত অন্য কোনো পদ্ধতি আমাদের জানা নেই, তাই সশব্দে উচ্চারণ করে তালবিয়া না পড়লে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এর আদর্শের অনুসরণ হবে না।
বর্তমানে দেখা যায় যে হাজি সাহেবদের মধ্যে একজন প্রথমে তালবিয়ার কিছু শব্দ উচ্চারণ করেন, পরে অন্যান্য হাজিগণ তাকে অনুসরণ করে সমস্বরে তালবিয়া পড়েন। এভাবে একবার তালবিয়া শেষ হলে আবার শুরু করেন। এরূপ করা সুন্নতের বিপরীত। তালবিয়া পাঠের সময় সুন্নত তরিকা হল প্রত্যেকেই আলাদা আলাদা তালবিয়া পাঠ করবে। হাঁ যদি তালবিয়া শেখানোর প্রয়োজনে সাময়িকভাবে তালকিন করা হয়, তবে তার অনুমতি রয়েছে।
নারীদের জন্য জোরে তালবিয়া পড়া নিষিদ্ধ। নারীরা এতটুকু শব্দে তালবিয়া পাঠ করবেন যাতে পাশে থাকা সঙ্গিনী কেবল শুনতে পান। কোন বেগানা পুরুষ শুনতে পায় এমন উচ্চারণে নারীদের তালবিয়া পাঠ অবৈধ।
তালবিয়া বেশি বেশি পড়া মুস্তাহাব। দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে, চলন্ত অবস্থায়, ওজু ও বে-ওজু—সর্বাবস্থায় তালবিয়া পড়া যায়। বিশেষ করে ব্যক্তির অবস্থা পরিবর্তনের সময় তালবিয়া পড়া মুস্তাহাব। যেমন দাঁড়ানো অবস্থা থেকে বসার সময়, বসা থেকে উঠে দাঁড়ানোর সময়, ঘর থেকে বের হওয়ার সময়, ঘরে প্রবেশের সময়, গাড়িতে উঠার সময়, গাড়ি থেকে নামার সময় তালবিয়া পড়া মুস্তাহাব। মসজিদুল হারাম, মিনার মসজিদে খাইফ, আরাফার মসজিদে নামিরায় তালবিয়া পড়া মুস্তাহাব। তবে মসজিদে নিচু স্বরে তালবিয়া পাঠ বাঞ্ছনীয়।
[2] - خرجنا مع رسول الله صلى الله عليه وسلم نصرخ بالحج صراخا (মুসলিম : হাদিস নং ২১৯০)