জানাযা পড়ার পদ্ধতি হচ্ছে, ইমাম পুরুষের লাশের মাথা বরাবর, আর মহিলার মধ্যবর্তী স্থান বরাবর দাঁড়াবে। চার তাকবীরের সাথে জানাযা আদায় করতে হয়। অন্তরে নিয়ত করে দাঁড়াবে। (আরবীতে বা বাংলায় মুখে নিয়ত বলা বা শিখিয়ে দেয়া বিদআত।) প্রথম তাকবীর দিয়ে আঊযুবিল্লাহ্... বিসমিল্লাহ্... পাঠ করে সূরা ফাতিহা তারপর ছোট কোন সূরা পাঠ করবে। বিদ্বানদের অনেকে ছোট একটি সূরা পাঠ করা সুন্নাত বলেছেন। (তবে ছানা পাঠ করার কোন ছহীহ্ হাদীছ নেই) দ্বিতীয় তাকবীর দিয়ে দরূদে ইবরাহীম (যা ছালাতে পাঠ করতে হয়) পাঠ করবে।
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ
এরপর তৃতীয় তাকবীর দিয়ে জানাযার জন্য বর্ণিত যে কোন দু’আ পাঠ করবে। এই দু’আটি পাঠ করা যেতে পারে,
اللهمَّ اغْفِرْ لِحَيِّناَ وَمَيِّتِنَا وَشاَهِدِناَ وَغَائِبِناَ، وَصَغِيْرَناَ وَكَبِيْرِناَ، وَذَكَرِناَ وَأُنْثاَناَ، اللَّهُمَّ مَنْ أَحْيَيْتَهُ مِناَّ فَأَحْيِهِ عَلَى الإسْلاَمِ، وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِناَّ فَتَوَفَّهُ عَلىَ الإيْمَانِ، اللَّهُمَّ لاَتَحْرِمْناَ أجْرَهُ وَلاَتُضِلَّناَ بَعْدَهُ
“হে আল্লাহ্! আপনি আমাদের জীবিত-মৃত, উপস্থিত অনুপসি'ত, ছোট ও বড় নর ও নারীদেরকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ্! আমাদের মাঝে যাদের আপনি জীবিত রেখেছেন তাদেরকে ইসলামের উপরে জীবিত রাখুন, এবং যাদেরকে মৃত্যু দান করেন তাদেরকে ঈমানের সাথে মৃত্যু দান করুন। হে আল্লাহ্! আমাদেরকে তার ছওয়াব হতে বঞ্চিত করবেন না এবং তার মৃত্যুর পর আমাদেরকে পথ ভ্রষ্ট করবেন না।” এবং এই দু’আটিও পড়তে পারে,
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ وَارْحَمْهُ، وَعاَفِهِ واَعْفُ عَنْهُ، وَأَكْرِمْ نُزُلَهُ، وَوَسِّعْ مُدْخَلَهُ، وَاغْسِلْهُ بِالْماَءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرْدِ، وَنَقِّهِ مِنْ الْخَطاَياَ كَمَا يُنَقَّىالثَّوْبُ الأبْيَضُ مِنْ الدَّنَسِ، وَأَبْدِلْهُ دَارًا خَيْرًا مِّنْ دَارِهِ، وَأَهْلاً خَيْراً مِّنْ أَهْلِهِ، وَزَوْجاً خَيْراً مِنْ زَوْجِهِ، وَأَدْخِلْهُ الْجَنَّةَ، وَأَعِذْهُ مِنْ عَذاَبِ الْقَبْرِ، وَعَذاَبِ النَّارِ
“হে আল্লাহ্! আপনি তাকে ক্ষমা করুন, তার প্রতি দয়া করুন, তাকে পূর্ণ নিরাপত্তায় রাখুন। তাকে মাফ করে দিন। তার আতিথেয়তা সম্মান জনক করুন। তার বাসস্থানকে প্রশস্ত করে দিন। আপনি তাকে ধৌত করুন পানি, বরফ ও শিশির দিয়ে। তাকে গুনাহ হতে এমন ভাবে পরিস্কার করুন যেমন করে সাদা কাপড়কে ময়লা হতে পরিস্কার করা হয়। তাকে তার (দুনিয়ার) ঘরের পরিবর্তে উত্তম ঘর দান করুন। তার (দুনিয়ার) পরিবার অপেক্ষা উত্তম পরিবার দান করুন। আরো তাকে দান করুন দুনিয়ার স্ত্রী অপেক্ষা উত্তম স্ত্রী। তাকে বেহেসে-প্রবেশ করিয়ে দিন, আর কবরের আযাব ও জাহান্নামের আযাব হতে পরিত্রাণ দিন।”
এরপর চতুর্থ তাকবীর দিয়ে কোন কোন বিদ্বান বলেছেন, “রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাঁও ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতাঁও ওয়াক্বিনা আযাবান্নার।” তারপর ডান দিকে সালাম ফিরাবে। বাম দিকেও সালাম ফেরাতে পারে। পঞ্চম তাকবীর প্রদান করলেও কোন অসুবিধা নেই। কেননা এটাও নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে প্রমাণিত। অতএব কখনো কখনো পঞ্চম তাকবীর দিয়ে জানাযা পড়াও সুন্নাত। আর যা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে ছহীহ্ সূত্রে প্রমাণিত হয়েছে মানুষের উচিৎ হচ্ছে সেগুলোর উপর আমল করা। কখনো এটা আমল করবে কখনো ওটা আমল করবে। যদিও চার তাকবীরে জানাযা পাঠ করার বিষয়টি বহুল প্রচলিত।
কয়েকটি লাশ একত্রিত হলে একসাথে জানাযা পড়া যাবে। তখন ইমামের নিকটবর্তী রাখবে প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষকে, তারপর নাবালেগ পুরুষ, এরপর প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলা, অতঃপর নাবালেগ মেয়েদেরকে রাখবে। এদেরকে সাাজনোর তারতীব হচ্ছে, মহিলাদের বুক বরাবর পুরুষদের মাথা রাখতে হবে। আর ইমাম দাঁড়াবে পুরুষদের মাথা বরাবর। যাতে করে প্রত্যেকটি লাশের সামনে ইমামের দাঁড়ানো শরীয়ত সম্মত হয়।
লক্ষনীয় একটি বিষয়, সাধারণ মানুষের অনেকে ধারণা করে যে, যারা জানাযা উপস্থাপন করবে তাদের জন্য উত্তম হচ্ছে, ইমামের ডানে বামে দাঁড়ানো। বরং কমপক্ষে একজন হলেও ইমামের সাথে দাঁড়াবে। কিন্তু এটা ভুল। কেননা সুন্নাত হচ্ছে, ইমাম সম্মুখে একাকী দাঁড়াবেন। যদি তারা প্রথম কাতারে স্থান না পায় তবে ইমামের পিছনে প্রথম কাতারের সামনে দাঁড়িয়ে পড়বে।