যে ব্যক্তি জুমআর ছালাত আদায় করল সে যোহরের সময়ের ফরযই আদায় করল। তাই সে আর যোহর আদায় করবে না। কিন্তু কিছু লোক জুমআর নামায আদায় করার পর যোহর নামায আদায় করে থাকে। সাধারণ পরিভাষায় এটাকে আখেরী যোহর বলা হয়। এটি একটি বিদআত। কেননা আল্লাহ্র কুরআন ও নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাতে এর কোন প্রমাণ নেই। অতএব তা পরিত্যাগ করা ওয়াজিব। এমনকি যদিও কয়েক স্থানে জুমআ অনুষ্ঠিত হয়, তবুও জুমআর নামায আদায় করার পর কোন মানুষের জন্য যোহর নামায আদায় করা শরীয়ত সম্মত নয়; বরং তা নিকৃষ্ট বিদআত। কেননা আল্লাহ্ তা’আলা একটি সময়ে একের অধিক ইবাদত ফরয করেননি। আর তা হচ্ছে জুমআর নামায। তা তো আদায় করা হয়েছে।
যারা জুমআ আদায় করার পর যোহর আদায় করতে বলেন, তাদের যুক্তি হচ্ছে, “এক শহরে একাধিক জুমআ আদায় করা জায়েয নয়। একাধিক জুমআ হলে যে মসজিদে প্রথমে নামায অনুষ্ঠিত হবে সেটাই জুমআ হিসেবে গণ্য হবে। অন্যগুলো বাতিল হবে। কিন্তু যেহেতু কোন্ মসজিদে জুমআ প্রথমে হয় তা জানা নেই। তাই সমস্ত জুমআ বাতিল। ফলে তার বদলে পরবর্তীতে যোহর আদায় করতে হবে।”
তাদেরকে আমি বলবঃ এ দলীল ও যুক্তি আপনারা কোথায় পেলেন? এটার ভিত্তি কি কোন হাদীছে আছে? বা ইহা কি বিশুদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গি ও সঠিক যুক্তি সঙ্গত কথা? উত্তর অবশ্যই না। বরং আমরা বলি, প্রয়োজনের ক্ষেত্রে যদি একাধিক জুমআ অনুষ্ঠিত হয় তবে সবগুলোই বিশুদ্ধ। কেননা আল্লাহ্ বলেন,
فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ
“তোমরা সাধ্যানুযায়ী আল্লাহ্কে ভয় কর।” (সূরা তাগাবুনঃ ১৬) আর শহর প্রশস্ত হওয়ার কারণে অথবা মসজিদে স্থান সংকুলান না হওয়ার কারণে এই শহরের অধিবাসীগণ প্রয়োজনের তাগিদেই বিভিন্ন স্থানে জুমআ অনুষ্ঠিত করেছে, এতে তারা সাধ্যানুযায়ী আল্লাহ্কে ভয় করেছে। আর যে ব্যক্তি সাধ্যানুযায়ী আল্লাহ্কে ভয় করেছে সে তার উপর নির্ধারিত ফরয বাস্তবায়ন করেছে। সুতরাং কিভাবে একথা বলা যায় যে তার আমল ফাসেদ বা বাতিল হয়ে গেছে, তাই জুমআর পরিবর্তে যোহর নামায আদায় করতে হবে?
তবে বিনা প্রয়োজনে এক শহরে একাধিক জুমআ অনুষ্ঠিত করা নিঃসন্দেহে সুন্নাহ্ বিরোধী কাজ। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও খোলাফায়ে রাশেদার নীতি বিরোধী কাজ। তাই অধিকাংশ বিদ্বানের মত এরূপ করা হারাম। তারপরও আমরা বলতে পারি না যে তাদের ইবাদতই বিশুদ্ধ হবে না। কেননা এক্ষেত্রে সাধারণ জনগণের কোন দায়দায়িত্ব নেই। এ দায়দায়িত্ব বহণ করবে প্রশাসন যাদের অনুমতিতে বিনা প্রয়োজনে একাধিক জুমআ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তাই প্রশাসনের মধ্যে যারা মসজিদ তত্ববধানের দায়িত্বে নিয়োজিত তাদের কাছে আমরা আবেদন করি, প্রয়োজন দেখা না দিলে তারা যেন একাধিক জুমআর মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হতে অনুমতি না দেন। কেননা ইসলামী শরীয়তের সুপ্রশস্ত ও সুদূর প্রসারী দৃষ্টিভঙ্গী হচ্ছে, ইবাদতের মাধ্যমে মুসলমানদেরকে একস্থানে সমবেত করে পরস্পরের মাঝে সমপ্রীতি ও ভালবাসা সৃষ্টি করা, অজ্ঞদেরকে দ্বীনের শিক্ষা দান করা। এছাড়া আরো অনেক বড় বড় উপকারিতা রয়েছে। শরীয়ত সম্মত সমাবেশ সমূহ হচ্ছেঃ কোনটি সাপ্তাহিক, কোনটি বাৎসরিক, কোনটি দৈনিক। দৈনিক সমাবেশ সমূহ হচ্ছে প্রত্যেক গ্রাম ও মহল্লার মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত অনুষ্ঠিত করা। কেননা শরীয়ত প্রণেতা যদি মুসলমানদেরকে প্রতিদিন পাঁচবার শহরের একটি মাত্র স্থানে একত্রিত হওয়ার আদেশ করতেন তবে নিঃসন্দেহে তা কষ্টকর হত। এজন্য তাদের প্রতি সহজতা কল্পে এই সমাবেশকে প্রত্যেক মহল্লার প্রত্যেক মসজিদে বৈধ করে দেয়া হয়েছে।
আর সপ্তাহিক সমাবেশ হচ্ছে জুমআর দিবসে। এলাকার সমস্ত লোক সপ্তাহে একবার একস্থানে সমবেত হবে। এজন্য সুন্নাত হচ্ছে তারা একটি মাত্র মসজিদেই একত্রিত হবে বিভিন্ন স্থানে নয়। কেননা সপ্তাহিক এই সমাবেশে আসা তাদের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হবে না বা বেশী কষ্টকর হবে না। তাছাড়া এতে রয়েছে বিশাল উপকারিতা। সমস্ত লোক একজন মাত্র ইমামের খুতবা শুনবে ও তার নেতৃত্বে ইবাদত আদায় করবে। তিনি তাদেরকে নসীহত করবেন নির্দেশনা প্রদান করবেন। তখন লোকেরা একদিকে নসীহত ও অন্যদিকে নামায নিয়ে গৃহে প্রত্যাবর্তন করবে। তাই বিনা প্রয়োজনে জুমআর নামায একাধিক স্থানে অনুষ্ঠিত করা জায়েয নয়।
আর বাৎসরিক সমাবেশ হচ্ছে, দু’ঈদের নামায। সমস্ত শহরবাসীর জন্য বাৎসরিক দু’টি সমাবেশ। এজন্য একান্ত প্রয়োজন দেখা না দিলে একাধিক ঈদগাহ্ কায়েম করা জায়েয নয়।