কোন কোন বিদ্বানের মতে ৮৩ (তিরাশী) কিলোমিটার পরিমাণ দুরত্ব অতিক্রম করলে নামায কসর করবে। কোন কোন বিদ্বান বলেছেন, সমাজে প্রচলিত রীতিনীতিতে বা দেশীয় প্রথায় যাকে সফর বলা হয় তাতেই নামায কসর করবে। যদিও তা ৮০ কিলোমিটার না হয়। আর মানুষ যদি তাকে সফর না বলে, তবে তা সফর নয়; যদিও তা ১০০ কিঃ মিঃ হয়। এটাই শায়খুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া (রহঃ)এর মত। কেননা আল্লাহ্ তা’আলা নির্দিষ্টভাবে সফরের কোন দুরত্ব নির্ধারণ করেননি। অনুরূপভাবে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকেও সফরের দুরত্ব নির্ধারণের ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোন নির্দেশনা পাওয়া যায় না। আনাস বিন মালেক (রাঃ) বলেন,
إِذَا خَرَجَ مَسِيرَةَ ثَلَاثَةِ أَمْيَالٍ أَوْ ثَلَاثَةِ فَرَاسِخَ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ
“নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যদি তিন মাইল বা ফারসাখ পরিমাণ দুরত্ব অতিক্রম করতেন, তবে নামায কসর করতেন ও দু’রাকাত আদায় করতেন।” এজন্য শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়ার মতই অধিক সঠিক।
প্রচলিত রীতিনীতিতে মতভেদ দেখা দিলে ইমামদের যে কোন একটি মত গ্রহণ করলেও কোন অসুবিধা নেই। কেননা ইমামগণ সবাই মুজতাহিদ বা গবেষক। এক্ষেত্রে কোন দোষ হবে না ইনশাআল্লাহ্। কিন্তু বর্তমানে মানুষের প্রচলিত রীতিনীতি যেহেতু সুনির্দিষ্ট তাই ইহা গ্রহণ করাই অধিক সঠিক।
আর নামায কসর করা বৈধ হলেই কি জমা (বা দু’নামায একত্রিত) করা বৈধ? জবাবে বলব, একত্রিত করণের বিষয়টি শুধু কসরের সাথে নির্দিষ্ট নয়; বরং তা প্রয়োজনের সাথে সংশ্লিষ্ট। অতএব সফর বা গৃহে অবস্থান যে কোন সময় যদি মানুষ একত্রিত করণের প্রয়োজন অনুভব করে, একত্রিত করবে। অতএব বৃষ্টির কারণে যদি মসজিদে যেতে কষ্ট হয়, তবে দু’নামাযকে একত্রিত করবে। শীতকালে যদি কঠিন ঠান্ডা বাতাস প্রবাহিত হয় এবং সে কারণে মসজিদে যাওয়া কষ্টকর হয় তবে দু’নামাযকে একত্রিত করবে। নিজের মূল্যবান সম্পদের ক্ষতি বা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে তবে দু’নামাযকে একত্রিত করবে। এছাড়া এ ধরণের আরো কোন কঠিন সমস্যার সম্মুখিন হলে দু’নামাযকে একত্রিত করবে। ছহীহ্ মুসলিমে আবদুল্লাহ্ বিন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
جَمَعَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَيْنَ الظُّهْرِ وَالْعَصْرِ وَالْمَغْرِبِ وَالْعِشَاءِ بِالْمَدِينَةِ فِي غَيْرِ خَوْفٍ وَلَا مَطَرٍ
“নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদ্বীনায় বৃষ্টি বা ভয়-ভীতির কারণ ছাড়াই যোহর ও আছর একত্রে এবং মাগরিব ও এশা নামাযকে একত্রে আদায় করেছেন।” ইবনু আব্বাসকে প্রশ্ন করা হল, কেন তিনি এরূপ করেছেন? তিনি বললেন, তিনি উম্মতকে সংকটে ফেলতে চাননি।
অর্থাৎ এধরণের প্রয়োজনীয় মুহূর্তে দু’নামাযকে একত্রিত না করলে যে সংকট হওয়ার কথা তিনি তা চাননি।
এটাই হচ্ছে মূলনীতি। মানুষ যখনই দু’নামাযকে একত্রিত না করলে সমস্যা বা সংকটের সম্মুখিন হবে তখনই একত্রিত করণ তার জন্য বৈধ হয়ে যাবে। আর সমস্যা না হলে একত্রিত করবে না। কিন্তু যেহেতু সফর মানেই সমস্যা ও সংকট তাই মুসাফিরের জন্য দু’নামাযকে একত্রিত করা জায়েয। চাই তার সফর চলমান হোক বা কোন স্থানে অবস্থান করুক। তবে সফর চলমান থাকলে একত্রিত করা উত্তম। আর সফরে গিয়ে কোন গৃহে বা হোটেলে অবস্থান করলে একত্রিত না করাই উত্তম।
কিন্তু মুসাফির যদি এমন শহরে অবস্থান করে যেখানে নামায জামাআতের সাথে অনুষ্ঠিত হয়, তখন জামাআতের সাথে নামায আদায় করা ওয়াজিব। ঐ সময় নামায কসরও করবে না একত্রিতও করবে না। কিন্তু জামাআত ছুটে গেলে কসর করবে একত্রিত করবে না। অবশ্য একত্রিত করা জরূরী হয়ে পড়লে করতে পারে।