ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম সালাত শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ) ১ টি
(৩০৮) একটি বিষয় নিয়ে মুছল্লীদের মাঝে মতবিরোধ হয়েছে। বিষয়টি হচ্ছে, জনৈক লোক নামায কায়েম হওয়ার পর মসজিদে প্রবেশ করে দেখে কাতার পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। কাতারে কোন জায়গা নেই। সে কি আগের কাতার থেকে একজন লোক টেনে নিয়ে তাকে নিয়ে নতুন কাতার করবে? না একাকী কাতারে দাঁড়াবে? না অন্য কিছু করবে?

নামাযে এসে যদি দেখে যে, কাতার পরিপূর্ণ হয়ে গেছে, তবে তার তিনটি অবস্থা রয়েছেঃ

১) কাতারের পিছনে একাকী নামায আদায় করবে।
২) অথবা সামনের কাতার থেকে একজন লোক টেনে নিবে এবং তাকে নিয়ে নতুন কাতার বানাবে।
৩) অথবা কাতার সমূহের আগে চলে গিয়ে ইমামের ডান দিকে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করবে।

এ তিনটি অবস্থা হচ্ছে যদি সে নামাযে প্রবেশ করতে চায়। চতুর্থ অবস্থা হচ্ছে, এর কোনটিই করবে না। অর্থাৎ-

৪) এ জামাআতে শামিল হবে না, অপেক্ষা করবে।

এ চারটি অবস্থার মধ্যে কোনটি গ্রহণ করা বিশুদ্ধ?

আমরা বলব, এচারটি অবস্থার মধ্যে বিশুদ্ধতম অবস্থাটি হচ্ছে, কাতারের পিছনে একাকী দাঁড়াবে এবং ইমামের সাথে নামায আদায় করবে। কেননা ওয়াজিব হচ্ছে জামাআতের সাথে এবং কাতারে শামিল হয়ে নামায আদায় করা। এই দু’টি ওয়াজিবের মধ্যে একটি বাস্তবায়ন করতে অপারগ হলে অন্যটি বাস্তবায়ন করবে। অতএব আমরা বলব, কাতারের পিছনে একাকী হলেও জামাআতের সাথে নামায আদায় করবেন। যাতে তার ফযীলত লাভ করতে পারেন। এ অবস্থায় কাতারে শামিল হওয়ার ওয়াজিব আপনার উপর থেকে রহিত হয়ে যাবে। কেননা আপনি তাতে অপারগ। আর আল্লাহ্‌ সাধ্যের বাইরে কোন কাজ বান্দার উপর চাপিয়ে দেননি। তিনি বলেন,

لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا

“আল্লাহ্‌ মানুষের সাধ্যাতিত কোন কিছু তার উপর চাপিয়ে দেননি।” (সূরা বাক্বারাঃ ২৮৬) তিনি আরো বলেন,

فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ

“তোমরা সাধ্যানুযায়ী আল্লাহ্‌কে ভয় কর।” (সূরা তাগাবুনঃ ১৬) এমতের প্রমাণে বলা যায়, কোন নারী যদি কাউকে সাথী হিসেবে না পায় তবুও সে একাকী কাতারের পিছনে দাঁড়াবে। কেননা পুরুষের কাতারে দাঁড়ানো তার অনুমতি নেই। যখন কিনা শরঈ নির্দেশের কারণে পুরুষের কাতারে দাঁড়াতে সে অপারগ, তখন একাকী কাতারে দাঁড়াবে এবং নামায আদায় করবে।

অতএব যে ব্যক্তি কাতার পূর্ণ হওয়ার পর মসজিদে প্রবেশ করবে এবং সে প্রকৃতপক্ষে কাতারে দাঁড়ানোর জন্য স্থান পাবে না, তখন তার এই ওয়াজিব রহিত হয়ে যাবে। বাকী থাকবে জামাআতের সাথে নামায আদায় করা। তাই সে কাতারের পিছনে একাকীই দাঁড়াবে ও নামায আদায় করবে। কিন্তু সম্মুখের কাতার থেকে কোন লোককে টেনে নিয়ে আসলে তিনটি নিষিদ্ধ কাজ করা হয়ঃ

ক) আগের কাতারে একটি স্থান ফাঁকা করা হল, ফলে কাতার বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। যা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নির্দেশের বিরোধী। তিনি কাতারকে বরাবর ও ফাঁকা স্থান পূর্ণ করতে আদেশ করেছেন।

খ) টেনে নিয়ে আসা লোকটিকে তার উত্তম স্থান থেকে কম ছাওয়াবের স্থানে সরিয়ে দেয়া হল। যা রীতিমত একটি অপরাধ।

গ) লোকটির নামাযে ব্যাঘাত ঘটানো হল। কেননা তাকে টানাটানি করলে তার অন্তরে একাগ্রতা কমে যাবে। এটিও একটি অপরাধ।

তৃতীয় অবস্থায় ইমামের ডান দিকে গিয়ে দাঁড়াতে বলা হয়েছেঃ কিন্তু ইহা উচিৎ নয়। কেননা ইমামের স্থান অবশ্যই মুক্তাদীদের থেকে আলাদা থাকতে হবে। যেমন করে ইমাম কথায় ও কাজে মুক্তাদীদের থেকে বিশেষ ও আলাদা থাকেন।

এটাই নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর হেদায়াত। ইমাম মুক্তাদীদের থেকে আলাদা স্থানে তাদের সম্মুখে এককভাবে অবস্থান করবেন। এটাই ইমামের বিশেষত্ব। এখন মুক্তাদীগণও যদি তাঁর সাথে দন্ডায়মান হয়, তবে তো তার উক্ত বিশেষত্ব শেষ হয়ে গেল।

আর চতুর্থ অবস্থায় জামাত ছেড়ে দাঁড়িয়ে থাকার কথা বলা হয়েছেঃ এটা অযৌক্তিক বিষয়। কেননা জামাআতে শামিল হওয়া ওয়াজিব এবং কাতারে শামিল হওয়াও ওয়াজিব। দু’ওয়াজিবের একটিতে অপারগ হলে তার কারণে অপরটিকে পরিত্যাগ করা জায়েয হবে না।