ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম ঈমান শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ) ১ টি
প্রশ্ন: (৬৪) মুসীবত নাযিল হলে যে ব্যক্তি অসন্তুষ্ট হয়, তার হুকুম কী?

উত্তর: বালা-মুসীবত নাযিল হওয়ার সময় মানুষ চার স্তরে বিভক্ত হয়ে যায়। যথা:

প্রথম স্তর: অসন্তুষ প্রকাশ করা। এটি আবার কয়েক প্রকার।

১ম প্রকার: আল্লাহ যে বিষয় নির্ধারণ করেছেন, তার কারণে অন্তর দিয়ে আল্লাহর ওপর অসন্তুষ্ট হয়ে যাওয়া। এটা হারাম। কারণ, এধরণের অসন্তুষ্টি কখনো কুফুরীর দিকে নিয়ে যায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يَعۡبُدُ ٱللَّهَ عَلَىٰ حَرۡفٖۖ فَإِنۡ أَصَابَهُۥ خَيۡرٌ ٱطۡمَأَنَّ بِهِۦۖ وَإِنۡ أَصَابَتۡهُ فِتۡنَةٌ ٱنقَلَبَ عَلَىٰ وَجۡهِهِۦ خَسِرَ ٱلدُّنۡيَا وَٱلۡأٓخِرَةَۚ﴾ [الحج: ١١]

“মানুষের মধ্যে কেউ কেউ দ্বিধা-সংকোচ নিয়ে আল্লাহর ইবাদাত করে। যদি সে কল্যাণ প্রাপ্ত হয়, তবে ইবাদাতের উপর কায়েম থাকে এবং যদি কোনো পরীক্ষায় পড়ে, তবে পূর্বাবস্থায় ফিরে যায়। সে ইহকালে ও পরকালে ক্ষতিগ্রস্থ।” [সূরা আল-হজ, আয়াত: ১১]

২য় প্রকার: কখনো অসন্তুষ্টি কথার মাধ্যমে হয়ে থাকে। যেমন, হতাশা প্রকাশ করা এবং ধ্বংস হয়ে যাওয়ার দো‘আ করা। এটাও হারাম।

তৃতীয় প্রকার: কখনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে হয়ে থাকে। যেমন, গাল চাপড়ানো, জামা-কাপড় ছেড়া, মাথার চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলা ইত্যাদি সবই হারাম এবং ধৈর্য্য ধারণের পরিপন্থী।

দ্বিতীয় স্তর: বিপদের সময় ধৈর্য্য ধারণ করা। যেমন, কোনো আরবী কবি বলেছেন ‘বিপদের সময় ধৈর্য ধারণ করা খুবই কঠিন, কিন্তু এর শেষ পরিণাম খুবই সুমধুর।’ কেননা এ সবর করাটা তার নিকট খুবই কঠিন তবুও সে সবর করে। বিপদগ্রস্ত হওয়াটা যেমন অপছন্দ করে তেমনি তাতে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করাটাও তার নিকট অপছন্দনীয়। কিন্তু তার ঈমান তাকে অসন্তুষ্টি প্রকাশ থেকে বিরত রাখে। মোটকথা সে বিপদে আপতিত হওয়া এবং না হওয়াকে এক মনে করে না। এক্ষেত্রে ধৈর্য ধারণ করা ওয়াজিব। কারণ, আল্লাহ তায়ালা বিপদাপদে ধৈর্য ধারণ করার আদেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন,

﴿وَٱصۡبِرُوٓاْۚ إِنَّ ٱللَّهَ مَعَ ٱلصَّٰبِرِينَ﴾ [الانفال: ٤٦]

“তোমরা ধৈর্য্যধারণ কর। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।” [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৪৬]

তৃতীয় স্তর: বিপদ আসার পর সন্তুষ্ট থাকা এবং মুসীবত আসা ও না আসা উভয়কেই সমান মনে করা। তাই বিপদ আসলেও তার কাছে বিপদ সহ্য করা বেশি কঠিন মনে হয় না। গ্রহণযোগ্যমতে এ ধরণের ছবর মুস্তাহাব। ওয়াজিব নয়। এটা এবং পূর্ববর্তী স্তরের মাঝে পার্থক্য অতি সুস্পষ্ট। বিপদ হওয়া এবং না হওয়া সমান মনে হওয়া সন্তুষ্ট থাকার ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে। এ প্রকারের এবং পূর্বের প্রকারের মাঝে পার্থক্য এ যে, পূর্বের প্রকারে বিপদে আপতিত ব্যক্তি বিপদকে কঠিন মনে এবং ধৈর্য্য ধারণ করে।

চতুর্থ স্তর: শুকরিয়া আদায় করা। এটা সর্বোচ্চ স্তর। তা এই যে, বিপদের সময় আল্লাহর প্রশংসা করা। কারণ, সে ভালো করেই জানে যে, এ সমস্ত বিপদাপদ গুনাহ মোচন এবং ছাওয়াব বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مَا مِنْ مُصِيبَةٍ تُصِيبُ الْمُسْلِمَ إِلَّا كَفَّرَ اللَّهُ بِهَا عَنْهُ حَتَّى الشَّوْكَةِ يُشَاكُهَا»

“কোনো মুসলিম বিপদাপদে পতিত হলে বিনিময়ে আল্লাহ তা‘আলা তার গুনাহ মোচন করেন। এমন কি শরীরে একটি কাঁটা বিধলেও তার বিনিময়ে গুনাহ মাফ করা হয়”।[1]

[1] সহীহ বুখারী, কিতাবুল মারাজ্ব ওয়াত তিব্ব।