উত্তর: হ্যাঁ, কখনো কখনো কবরের আযাব হালকা করা হবে। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা দু’টি কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। তিনি বললেন, এ দু’জনকে কবরের মধ্যে আযাব দেওয়া হচ্ছে, তবে বড় কোনো অপরাধের কারণে আযাব দেওয়া হচ্ছে না। তাদের একজন পেশাব থেকে ভালোরূপে পবিত্রতা অর্জন করত না, আর দ্বিতীয়জন চুগলখোরী করত অর্থাৎ একজনের কথা অন্য জনের কাছে লাগাতো। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি তাজা খেজুরের শাখা নিয়ে দু’ভাগে ভাগ করে প্রত্যেক কবরের উপরে একটি করে পুঁতে দিয়ে বললেন, সম্ভবত খেজুরের শাখা দু’টি শুকানোর পূর্ব পর্যন্ত তাদের কবরের আযাব হালকা করা হবে। এ হাদীসের মাধ্যমে জানা যায় যে, আযাব কখনো হালকা করা হয়। তবে প্রশ্ন রয়ে যায় যে, আযাব হালকা হওয়ার সাথে খেজুরের শাখার সম্পর্ক কী?
উত্তরে বলা যায় যে, খেজুরের শাখা তাজা থাকাকালে আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করবে। তাসবীহ মৃতের কবরের আযাব হালকা করে থাকে। এর ওপর ভিত্তি করে আযাব হালকা হওয়ার আশায় কেউ যদি কবরের পাশে তাসবীহ পাঠ করে, তাহলে জায়েয হবে না। কোনো কোনো আলিম বলেছেন, তাজা খেজুরের শাখা তাসবীহ পাঠ করে বলে আযাব হালকা করা হয়, এ কারণটি দুর্বল। তাজা বা শুকনো সকল বস্তুই আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করে থাকে। আল্লাহ বলেন,
﴿تُسَبِّحُ لَهُ ٱلسَّمَٰوَٰتُ ٱلسَّبۡعُ وَٱلۡأَرۡضُ وَمَن فِيهِنَّۚ وَإِن مِّن شَيۡءٍ إِلَّا يُسَبِّحُ بِحَمۡدِهِۦ وَلَٰكِن لَّا تَفۡقَهُونَ تَسۡبِيحَهُمۡۚ﴾ [الاسراء: ٤٤]
“সপ্ত আকাশ ও পৃথিবী এবং এগুলোর মধ্যে যা কিছু আছে সব কিছু তাঁরই তাসবীহ পাঠ করে অর্থাৎ পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। এমন কিছু নেই যা তাঁর প্রশংসা ও মহিমা ঘোষণা করে না।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৪৪]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাথরের তাসবীহ শুনতে পেতেন। অথচ পাথর জড় পদার্থের অন্তর্ভুক্ত। তাহলে আযাব হালকা করার মূল কারণ কী?
উত্তরে বলা যায় যে, তিনি খেজুরের শাখা দু’টি সজিব থাকা পর্যন্ত কবরের আযাব হালকা করার জন্য দো‘আ করেছিলেন। বুঝা গেল শাস্তি মুলতবী থাকার সময়সীমা বেশি দিন দীর্ঘ ছিল না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের এ দু’টি কর্ম মানুষকে সাবধান করার জন্যই এরকম করেছিলেন। কারণ, তাদের কাজ দু’টি কবীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত ছিল। তাদের একজন পেশাব থেকে ভালোরূপে পবিত্রতা অর্জন করতনা। অন্যজন মানুষের মাঝে ঝগড়া-ফাসাদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে একজনের কথা অন্যজনের কাছে লাগাতো। এটা করা কবীরা গুনাহ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতকে সতর্ক করার জন্য সাময়িক সুপারিশ করেছেন।
কতক আলিম বলেছেন, কবরের আযাব হালকা করার জন্য কবরের উপরে খেজুরের শাখা অথবা গাছ পুঁতে রাখা সুন্নাত; কিন্তু এ ধরণের দলীল গ্রহণ সঠিক নয়। কারণ,
১) এ কবরবাসীকে আযাব দেওয়া হচ্ছে কি না তা আমরা জানি না, কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা জানতে পেরেছন।
২) আমরা যদি কবরের উপরে তা রাখি, তাহলে আমরা মৃতের ওপরে খারাপ আচরণ ও মন্দ ধারণা পোষণ করলাম। আমরা জানি না হতে পারে সে শান্তিতে আছে। হতে পারে আল্লাহ তা‘আলা অনুগ্রহ করে মৃত্যুর পূর্বে তাকে তাওবা করার তাওফীক দিয়েছেন। আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। তাই সে আযাব থেকে রেহাই পেয়ে গেছে।
৩) সালাফে ছালেহীনের কেউ কোনো কবরের উপরে খেজুরের শাখা রাখতেন না। অথচ তারা আল্লাহর শরী‘আত সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞানী ছিলেন।
৪) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে খেজুরের শাখা পুঁতে রাখার চেয়ে ভালো জিনিস শিক্ষা দিয়েছেন। মৃত ব্যক্তির দাফন সমাধা করার পর তিনি বলতেন,
«اسْتَغْفِرُوا لِأَخِيكُمْ وَسَلُوا لَهُ بِالتَّثْبِيتِ فَإِنَّهُ الْآنَ يُسْأَلُ»
“তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তার জন্য ঈমানের ওপর অটল থাকার তাওফীক কামনা কর। কেননা তাকে এখনই জিজ্ঞাসা করা হবে”।[1]