উত্তর: সন্দেহ নেই যে, জিনেরা মানুষের ওপর প্রভাব বিস্তার করে এবং কষ্ট দিতে পারে। কখনো জিন্নেরা মানুষকে মেরে ফেলে। কখনো বা পাথর নিক্ষেপ করে এবং বিভিন্নভাবে ভয় দেখায়। জিন্নদের এ সকল কর্ম হাদীস এবং বিভিন্ন বাস্তব ঘটনার মাধ্যমে প্রমাণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত আছে যে, তিনি খন্দকের যুদ্ধের দিন জনৈক সাহাবীকে তার স্ত্রীর কাছে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে দিলেন। কারণ, তিনি নতুন বিবাহিত যুবক ছিলেন। ঘরে ফিরে যুবক দেখলেন, স্ত্রী ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। এ দেখে তিনি তার প্রতি মনক্ষুন্ন হলেন। স্ত্রী বললেন, ঘরে প্রবেশ করুন। ঘরে প্রবেশ করে দেখলেন বিছানার উপরে একটি সাপ ব্যাড় দিয়ে বসে রয়েছে। হাতেই ছিল বর্শা। বর্শা দিয়ে সাপকে আঘাত করার সাথে সাথে সাপটি মারা গেল এবং উক্ত সাহাবীও মারা গেলেন। সাপ এবং সাহাবীর মধ্যে কে আগে মারা গেল, তা জানা যায় নি।
এ সংবাদ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে পৌঁছার পর তিনি ঘরের মধ্যে বসবাসকারী সাপগুলো মারতে নিষেধ করলেন। তবে পিঠের উপরে রেখা বিশিষ্ট এবং লেজহীন ছোট ছোট সাপগুলো ব্যতীত।[1] এ ঘটনা থেকে আমরা জানতে পারলাম যে, জিন্নেরা মানুষের উপরে আক্রমণ করে এবং কষ্ট দেয়। মুতাওয়াতের এবং মাশহুর সনদে বর্ণিত হাদীসে আছে যে, মানুষ কখনো কখনো পুরাতন এবং ধ্বংস প্রাপ্ত বাড়ী-ঘরে প্রবেশ করলে পাথর নিক্ষিপ্ত হয়। অথচ সেখানে কোনো মানুষ দেখতে পায় না। কখনো কখনো আওয়াজ এবং গাছের পাতার নাড়াচাড়া শুনতে পায়। এতে মানুষ ভয় পায়। এমনিভাবে আসক্ত হয়ে কিংবা কষ্ট দেওয়ার জন্য অথবা অন্য কোনো কারণে জিন্ন মানুষের শরীরেও প্রবেশ করে। এ দিকে ইঙ্গিত করেই আল্লাহ বলেন,
﴿ٱلَّذِينَ يَأۡكُلُونَ ٱلرِّبَوٰاْ لَا يَقُومُونَ إِلَّا كَمَا يَقُومُ ٱلَّذِي يَتَخَبَّطُهُ ٱلشَّيۡطَٰنُ مِنَ ٱلۡمَسِّۚ﴾ [البقرة: ٢٧٥]
“যারা সুদ খায়, তারা কিয়ামতে দণ্ডায়মান হবে যেভাবে দণ্ডায়মান হয় ঐ ব্যক্তি, যাকে শয়তান (জিন্ন) আছর করে ভারসাম্যহীন পাগলের মতো করে দেয়।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৭৫] কখনো জিন্নেরা মানুষের শরীরে মিশে গিয়ে তার মুখ দিয়ে কথা বলে। জিন্নে ধরা রোগীর কাছে কবিরাজ যখন কুরআনের আয়াত পাঠ করে, তখন জিন্ন তার সাথে কথা বলে। কবিরাজ জিন্নের কাছ থেকে পুনরায় না আসার অঙ্গীকার গ্রহণ করে। এ ধরণের আরো কথা হাদীসে বর্ণিত আছে এবং জনসমাজে প্রচলিত রয়েছে। এর ওপর ভিত্তি করে আমরা বলতে পারি যে, জিন্নের ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য সুন্নাহতে বর্ণিত দো‘আগুলো পাঠ করতে হবে। তার মধ্যে আয়াতুল কুরসী অন্যতম। কোনো লোক রাত্রিতে আয়াতুল কুরসী পাঠ করলে সারা রাত আল্লাহর পক্ষ হতে একজন হিফাযতকারী থাকে। সকাল পর্যন্ত শয়তান তার নিকটেও আসতে পারে না।