উত্তর: আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মজীদে কিয়ামতের আলোচনা করতে গিয়ে বলেন,
﴿ وُجُوهٞ يَوۡمَئِذٖ نَّاضِرَةٌ ٢٢ إِلَىٰ رَبِّهَا نَاظِرَةٞ ٢٣﴾ [القيامة: ٢٢، ٢٣]
“সেদিন অনেক মুখমণ্ডল উজ্জল হবে। তারা তাদের রবর দিকে তাকিয়ে থাকবে।” [সূরা আল-কিয়ামাহ, আয়াত: ২২-২৩]
আয়াতে সুস্পষ্ট দলীল পাওয়া যায় যে, কিয়ামত দিবসে জান্নাতে আল্লাহকে চর্মচক্ষু দিয়ে দেখা যাবে। এর অর্থ এই নয় যে, আল্লাহর সমগ্র সত্ত্বাকে দর্শন করা সম্ভব হবে।
﴿وَلَا يُحِيطُونَ بِهِۦ عِلۡمٗا﴾ [طه: ١١٠]
“তারা তাঁকে জ্ঞান দ্বারা আয়ত্ব করতে পারে না।” [সূরা ত্বাহা, আয়াত: ১১০]
জ্ঞানের মাধ্যমে কোনো জিনিসকে আয়ত্ব করার বিষয়টি চোখের মাধ্যমে দেখে আয়ত্ব করার চেয়ে অধিকতর ব্যাপক। যখন জ্ঞানের মাধ্যমে আল্লাহকে পরিপূর্ণভাবে জানা সম্ভব নয় তাহলে প্রমাণিত হচ্ছে যে চর্মচক্ষু দ্বারা পরিপূর্ণভাবে দর্শন করা সম্ভব নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿لَّا تُدۡرِكُهُ ٱلۡأَبۡصَٰرُ وَهُوَ يُدۡرِكُ ٱلۡأَبۡصَٰرَۖ﴾ [الانعام: ١٠٣]
“দৃষ্টিসমূহ তাঁকে পারে না, অবশ্য তিনি দৃষ্টিসমূহকে পেতে পারেন।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১০৩]
প্রকৃত পক্ষেই মানুষ আল্লাহকে স্বচক্ষে দেখবে; কিন্তু পরিপূর্ণভাবে তাঁকে বেষ্টন করতে পারবে না। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা এর অনেক উর্ধে। টাই সালাফে সালেহীনের মাযহাব। তারা বিশ্বাস করেন যে, আল্লাহর দিকে তাকিয়ে থাকা জান্নাতীদের জন্য হবে সবচেয়ে বড় নি‘আমত। এ জন্যই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দো‘আয় বলতেন,
«وَأَسْأَلُكَ لَذَّةَ النَّظَرِ إِلَى وَجْهِكَ»
উচ্ছারণ: আস-আলুকা লায্যাতান নাযরি ইলা ওয়াজহিকা। অর্থ: “হে আল্লাহ আমি আপনার চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকার পরিতৃপ্তি প্রার্থনা করছি।” [1]
আল্লাহর চেহারার দিকে তাকানোর স্বাদ খুবই বিরাট। যে ব্যক্তি আল্লাহর নি‘আমত ও অনুগ্রহ লাভ করেছে, সেই কেবল তা অনুভব করতে সক্ষম হবে। আল্লাহর কাছে দো‘আ করি তিনি যেন আমাকে এবং আপনাদেরকে তাঁর দিদার লাভে ধন্য করেন।
যারা ধারণা করে যে, আল্লাহকে চর্মচক্ষু দ্বারা দেখা সম্ভব নয়; বরং আল্লাহকে দেখার অর্থ পরিপূর্ণভাবে অন্তর দিয়ে আল্লাহকে বিশ্বাস করার নামান্তর, তাদের কথা বাতিল এবং দলীল বিরোধী। প্রকৃত অবস্থা এ ধারণাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। কারণ, অন্তরের পরিপূর্ণ বিশ্বাস দুনিয়াতেই বর্তমান রয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহসানের ব্যাখ্যায় বলেন,
«أَنْ تَعْبُدَ اللَّهَ كَأَنَّكَ تَرَاهُ فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَإِنَّهُ يَرَاكَ»
“ইহসান হলো তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদাত করবে যে, যেন তুমি আল্লাহকে দেখছ। তা যদি সম্ভব না হয়, তাহলে বিশ্বাস করবে যে, আল্লাহ তোমাকে দেখছেন।”[2] তুমি এমন ঈমান নিয়ে আল্লাহর ইবাদাত করবে, যেন তুমি আল্লাহকে দেখছ। এটিই পরিপূর্ণ ঈমানের পরিচয়। যে সমস্ত আয়াত ও হাদীসে আল্লাহকে দেখার কথা আছে, সেগুলোকে অন্তরের বিশ্বাসের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা সম্পূর্ণ ভুল এবং কুরআনের আয়াতকে তার আসল অর্থ হতে পরিবর্তন করার শামিল। করা ওয়াজিব।
[2] সহীহ বুখারী, অধ্যায়: কিতাবুল ঈমান।