উত্তর: ইরাদাহ (ইচ্ছা) দু’প্রকার
১. ইরাদাহ কাওনীয়া (সৃষ্টিগত ইচ্ছা)
২. ইরাদা শারঈয়া (শরী‘আতগত ইচ্ছা)
আল্লাহর যে ইচ্ছা সৃষ্টি করার সাথে সম্পৃক্ত তাই ইরাদাহ কাওনীয়া। আর যে ইচ্ছা ভালোবাসার সাথে সম্পৃক্ত তাকে ইরাদাহ শারঈয়া বলা হয়। অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা কোনো জিনিসকে ভালোবেসে যে ইচ্ছা পোষাণ করেন তাকে ইরাদাহ শরঈয়া বলা হয়। ইরাদাহ শরঈয়ার উদাহরণ হলো, আল্লাহর বাণী
﴿وَٱللَّهُ يُرِيدُ أَن يَتُوبَ عَلَيۡكُمۡ﴾ [النساء: ٢٧]
“আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করতে ইচ্ছা করেন।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ২৭]
এখানে ইচ্ছা করেন অর্থ ভালোবাসেন। এখানে সৃষ্টিগত ইচ্ছা অর্থে ব্যবহার হয় নি; বরং ব্যবহৃত হয়েছে শরী‘আতগত ইচ্ছায়। যদি সৃষ্টিগত অর্থে হত তাহলে সকল মানুষকে ক্ষমা করে দিতেন; কিন্তু তা তো করেন নি। কেননা অধিকাংশ বনী আদমই কাফির। সুতরাং আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করতে ইচ্ছা করেন অর্থ আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করা পছন্দ করেন। আল্লাহ কোনো জিনিসকে ভালোবাসার অর্থ এই নয় যে, তা অবশ্যই কার্যকরী হবে। তা কার্যকরী না হওয়ার পিছনে নিশ্চয় কোনো রহস্য রয়েছে।
ইরাদাহ কাওনীয়া তথা সৃষ্টির সাথে সংলিষ্ট ইচ্ছার দৃষ্টান্ত হলো,
﴿إِن كَانَ ٱللَّهُ يُرِيدُ أَن يُغۡوِيَكُمۡۚ﴾ [هود: ٣٤]
“যদি আল্লাহই তোমাদেরকে পথভ্রষ্ট করার ইচ্ছা করেন।” [সূরা হূদ, আয়াত: ৩৪]
এখানে যে ইচ্ছার কথা বলা হয়েছে, তাতে আল্লাহর ভালোবাসা থাকা জরুরি নয়।
যদি বলা হয় কার্যকরী হওয়া বা না হওয়ার দিক থেকে ইরাদাহ কাওনীয়া এবং ইরাদাহ শরঈয়ার মধ্যে পার্থক্য কী? উত্তরে আমরা বলব যে, ইরাদাহ কাওনীয়াতে উদ্দিষ্ট বস্তু অবশ্যই কার্যকরী হবে। আল্লাহ কোনো বস্তু সৃষ্টি করতে চাইলে তা অবশ্যই করবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِنَّمَآ أَمۡرُهُۥٓ إِذَآ أَرَادَ شَيًۡٔا أَن يَقُولَ لَهُۥ كُن فَيَكُونُ ٨٢﴾ [يس: ٨٢]
“আল্লাহর আদেশ তো এমনই যে, তিনি যখন কোনো কিছু সৃষ্টি করতে চান, তখন তিনি বলেন, হয়ে যাও। আর সাথে সাথে তা হয়ে যায়।” [সূরা ইউনুছ, আয়াত: ৮২]
আর ইরাদা শারঈয়া বাস্তবায়িত হওয়া আবশ্যক নয়। কখনো তা কার্যকরী হয় আবার কখনো কার্যকরী হয় না। তা‘আলা শরী‘আতগতভাবে জিনিসটি বাস্তবায়িত হওয়াকে পছন্দ করেন।
যদি কোনো লোক জিজ্ঞাসা করে যে, আল্লাহ কি পাপ কাজের ইচ্ছা পোষণ করেন? উত্তর হলো সংঘটিত হওয়ার দিক থেকে পাপ কাজও আল্লাহর ইচ্ছাতেই হয়; কিন্তু আল্লাহ তা পছন্দ করেন না এবং ভালোবাসেন না, তবে আকাশ-জমিনে যা কিছু হয়, তা আল্লাহর ইচ্ছাতেই হয়।