উত্তর: মুমিনের ওপর কর্তব্য হলো অন্তরকে আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত রাখা এবং কল্যাণ অর্জন এবং অকল্যাণ দূর করণে আল্লাহর ওপর ভরসা করা। কেননা আকাশ-জমিনের চাবি কাঠি আল্লাহর হাতে। তাঁর হাতেই মানুষের সকল বিষয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلِلَّهِ غَيۡبُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ وَإِلَيۡهِ يُرۡجَعُ ٱلۡأَمۡرُ كُلُّهُۥ فَٱعۡبُدۡهُ وَتَوَكَّلۡ عَلَيۡهِۚ وَمَا رَبُّكَ بِغَٰفِلٍ عَمَّا تَعۡمَلُونَ ١٢٣﴾ [هود: ١٢٣]
“আল্লাহর নিকটেই আছে আকাশ ও জমিনের গোপন তথ্য, আর প্রত্যেকটি বিষয় প্রত্যাবর্তন করবে তাঁরই দিকে। অতএব, তাঁর-ই বন্দেগী কর এবং তাঁর-ই ওপর ভরসা রাখ, আর তোমাদের কার্যকলাপ সম্বন্ধে তোমার রব বে-খবর নন।” [সূরা হূদ, আয়াত: ১২৩]
মূসা আলাইহিস সালাম স্বজাতিকে লক্ষ্য করে বলেন,
﴿وَقَالَ مُوسَىٰ يَٰقَوۡمِ إِن كُنتُمۡ ءَامَنتُم بِٱللَّهِ فَعَلَيۡهِ تَوَكَّلُوٓاْ إِن كُنتُم مُّسۡلِمِينَ ٨٤ فَقَالُواْ عَلَى ٱللَّهِ تَوَكَّلۡنَا رَبَّنَا لَا تَجۡعَلۡنَا فِتۡنَةٗ لِّلۡقَوۡمِ ٱلظَّٰلِمِينَ ٨٥ وَنَجِّنَا بِرَحۡمَتِكَ مِنَ ٱلۡقَوۡمِ ٱلۡكَٰفِرِينَ ٨٦﴾ [يونس: ٨٤، ٨٦]
“আর মূসা বললেন, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা যদি আল্লাহর ওপর ঈমান এনে থাক, তবে তার-ই ওপর ভরসা কর যদি তোমরা মুসলিম হয়ে থাক। তখন তারা বলল, আমরা আল্লাহর ওপর ভরসা করলাম। হে আমাদের রব, আমাদেরকে এ যালেম সম্প্রদায়ের ফিতনার বিষয়ে পরিণত করো না। আর আমাদেরকে অনুগ্রহ করে এ কাফিরদের কবল হতে উদ্ধার করুন”। [সূরা ইউনুস, আয়াত: ৮৪-৮৬]
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَعَلَى ٱللَّهِ فَلۡيَتَوَكَّلِ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ﴾ [ال عمران: ١٦٠]
“মুমিনদের ওপর আবশ্যক হচ্ছে আল্লাহর প্রতি ভরসা করা”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৬০]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿وَمَن يَتَوَكَّلۡ عَلَى ٱللَّهِ فَهُوَ حَسۡبُهُۥٓۚ إِنَّ ٱللَّهَ بَٰلِغُ أَمۡرِهِۦۚ قَدۡ جَعَلَ ٱللَّهُ لِكُلِّ شَيۡءٖ قَدۡرٗا﴾ [الطلاق: ٣]
“যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে তার জন্য তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ তার কাজ পূর্ণ করবেন। আল্লাহ সবকিছুর জন্য একটি পরিমাণ স্থির করে রেখেছেন”। [সূরা আত-ত্বালাক, আয়াত: ৩]
সুতরাং বান্দার ওপর আবশ্যক হলো তার মালিক এবং আকাশ-জমিনের মালিকের ওপর ভরসা করবে এবং তাঁর প্রতি ভালো ধারণা রাখবে। সাথে সাথে বাহ্যিক উপায়-উপকরণ গ্রহণ করবে এবং আত্মরক্ষামূলক সতর্কতা অবলম্বন করবে। কেননা কল্যাণ সংগ্রহের উপকরণ গ্রহণ করা এবং অকল্যাণ থেকে বেঁচে থাকার উপায় অবলম্ভন করা আল্লাহর ওপর ঈমান আনা এবং তাঁর ওপর ভরসা করার পরিপন্থী নয়। দেখুন সর্বশ্রেষ্ঠ ভরসাকারী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উপায় ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। নিদ্রায় যাওয়ার পূর্বে তিনি সূরা ইখলাস, ফালাক এবং নাস পাঠ করার মাধ্যমে রোগ-ব্যাধি থেকে বাঁচার জন্য শরীরে ফুঁক দিতেন। যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুদের আঘাত থেকে শরীর হিফাযত করার জন্য লোহার পোষাক পরিধান করতেন। যখন মুশরিক সম্প্রদায় মদীনা আক্রমণ করার জন্য তার চারপাশে একত্রিত হলো, তখন মদীনাকে সংরক্ষণ করার জন্য তার চতুর্পার্শ্বে খন্দক খনন করেছেন। যুদ্ধের সময় আত্মরক্ষার জন্য আল্লাহ যে সমস্ত হাতিয়ার সৃষ্টি করেছেন, তার জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা উচিৎ। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবী দাউদ আলাইহিস সালামের সম্পর্কে বলেন,
﴿وَعَلَّمۡنَٰهُ صَنۡعَةَ لَبُوسٖ لَّكُمۡ لِتُحۡصِنَكُم مِّنۢ بَأۡسِكُمۡۖ فَهَلۡ أَنتُمۡ شَٰكِرُونَ ٨٠﴾ [الانبياء: ٨٠]
“আমি তাঁকে তোমাদের জন্যে বর্ম নির্মাণ শিক্ষা দিয়েছিলাম, যাতে তা যুদ্ধে তোমাদেরকে রক্ষা করে। অতএব, তোমরা কি কৃতজ্ঞ হবে? [সূরা আম্বিয়া, আয়াত: ৮০]
আল্লাহ তা‘আলা দাউদ আলাইহিস সালামকে ভালোভাবে যুদ্ধের বর্ম তৈরি করার আদেশ দিয়েছেন এবং তা লম্বা করে তৈরি করতে বলেছেন। কারণ, আত্মরক্ষার ক্ষেত্রে অধিক শক্তিশালী।
উপরের আলোচনার ওপর ভিত্তি করে বলা যায় যে, যুদ্ধের স্থানের কাছাকাছি অঞ্চলের লোকদের জন্য ক্ষতিকারক গ্যাস শরীরে প্রবেশের ভয় থাকলে তারা যদি উপযুক্ত পোষাক পরিধান করে, তা হলে কোনো অসুবিধা নেই। কেননা এ সমস্ত উপকরণ শরীরকে হিফাযত করবে। এমনিভাবে খাদ্য দ্রব্য সংগ্রহ করে রাখাতেও কোনো অসুবিধা নেই। বিশেষ করে যদি প্রয়োজনের সময় এগুলো না পাওয়ার ভয় থাকে। সর্বোপুরি ভরসা থাকবে আল্লাহর ওপর। তা‘আলা এ সমস্ত আসবাব[1] গ্রহণ করার অনুমতি দিয়েছেন তাই এ সমস্ত আসবাব-উপকরণ গ্রহণ করা বৈধ। এ জন্য নয় যে, এগুলোর ভিতরে কল্যাণ-অকল্যাণ বয়ে আনার ক্ষমতা আছে। পৃথিবীতে মানুষের চলার জন্য আল্লাহ তা‘আলা যেসমস্ত নি‘আমত সৃষ্টি করেছেন, তার জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা উচিৎ। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা এ যে, তিনি যেন আমাদের সকলকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেন এবং আমাদের ও আমাদের মুমিন ভাইদেরকে তাঁর প্রতি জন্য ঈমান এবং তাঁর ওপর ভরসার বলে বলিয়ান করেন এবং এমন সব উপায় উপকরণ গ্রহণ সহজ করেন যা তাঁর পক্ষ থেকে অনুমদিত ও মনোনিত।