চাশতের নামায পড়ার পর ঠিক মাথার উপর সূর্য হওয়ার পূর্বে ৪ রাকআত নফল পড়া সুন্নত। এ নামায মহানবী (ﷺ) পড়তেন। (আহমাদ, মুসনাদ, তিরমিযী, সুনান, নাসাঈ, সুনান, ইবনে মাজাহ্, সুনান, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ২৩৭নং)
অনেকের মতে যাওয়ালের পরেও নির্দিষ্ট ৪ রাকআত নামায রয়েছে।
আবূ আইয়ুব আনসারী (রাঃ) বলেন, নবী (ﷺ) সূর্য ঢলার সময় ৪ রাকআত নামায প্রত্যহ্ পড়তেন। একদা আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনি সূর্য ঢলার সময় এই ৪ রাকআত প্রত্যহ্ পড়ছেন?’ তিনি বললেন, “সূর্য ঢলার সময় আসমানের দরজাসমূহ খোলা হয় এবং যোহরের নামায না পড়া পর্যন্ত বন্ধ করা হয় না। অতএব আমি পছন্দ করি যে, এই সময় আমার নেক আমল (আকাশে আল্লাহর নিকট) উঠা হোক।” আমি বললাম, ‘তার প্রত্যেক রাকআতেই কি ক্বিরাআত আছে?’ তিনি বললেন, “হ্যাঁ।” আমি বললাম, ‘তার মাঝে কি পৃথককারী সালাম আছে?’ তিনি বললেন, “না।” (মুখতাসারুশ শামাইলিল মুহাম্মাদিয়্যাহ্, আলবানী ২৪৯নং)
আব্দুল্লাহ বিন সায়েব বলেন, আল্লাহর রসূল (ﷺ) সূর্য ঢলার পর যোহরের আগে ৪ রাকআত নামায পড়তেন এবং বলেছেন, এটা হল সেই সময়, যে সময় আসমানের দরজাসমূহ খোলা হয়। অতএব আমি পছন্দ করি যে, এই সময় আমার নেক আমল (আকাশে আল্লাহর নিকট) উঠা হোক।” (ঐ ২৫০নং)
কিন্তু অনেকের মতে ঐ নামায যোহরের পূর্বের সুন্নত। অাল্লাহু আ’লাম।
কোন বৈধ বিষয় বা কাজে (যেমন ব্যবসা, সফর, বিবাহের ব্যাপারে) ভালো মন্দ বুঝতে না পারলে, মনে ঠিক-বেঠিক, উচিৎ-অনুচিত বা লাভ-নোকসানের দ্বন্দ্ব হলে আল্লাহর নিকট মঙ্গল প্রার্থনা করতে দুই রাকআত নফল নামায পড়ে নিম্নের দুআ পাঠ করা সুন্নত।
اَللّهُمَّ إِنِّيْ أَسْتَخِيْرُكَ بِعِلْمِكَ وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيْمِ، فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلاَ أَقْدِرُ وَتَعْلَمُ وَلاَ أَعْلَمُ وَأَنْتَ عَلاَّمُ الْغُيُوْبِ، اَللّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هذَا الأَمْرَ(--) خَيْرٌ لِيْ فِيْ دِيْنِيْ وَمَعَاشِيْ وَعَاقِبَةِ أَمْرِيْ وَعَاجِلِهِ آجِلِهِ فَاقْدُرْهُ لِيْ وَيَسِّرْهُ لِيْ ثُمَّ بَارِكْ لِيْ فِيْهِ، وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هذَا الأَمْرَ شَرٌّ لِيْ فِيْ دِيْنِيْ وَمَعَاشِيْ وَعَاقِبَةِ أَمْرِيْ وَعَاجِلِهِ وَآجِلِهِ فَاصْرِفْهُ عَنِّيْ وَاصْرِفْنِيْ عَنْهُ وَاقْدُرْ لِىَ الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ ثُمَّ رَضِّنِيْ بِهِ।
উচ্চারণ- “আল্লা-হুম্মা আস্তাখীরুকা বিইলমিকা অ আস্তাক্বদিরুকা বি ক্বুদরাতিকা অ আসআলুকা মিন ফায্বলিকাল আযীম, ফাইন্নাকা তাক্বদিরু অলা আক্বদিরু অতা’লামু অলা আ’লামু অ আন্তা আল্লা-মুল গুয়ূব। আল্লা-হুম্মা ইন কুন্তা তা’লামু আন্নাহা-যাল আমরা (----) খাইরুল লী ফী দ্বীনী অ মাআ’শী অ আ’-ক্বিবাতি আমরী অ আ’-জিলিহী অ আ-জিলিহ, ফাক্বদুরহু লী, অ য়্যাসসিরহু লী, সুম্মা বা-রিক লী ফীহ্। অইন কুন্তা তা’লামু আন্নাহা-যাল আমরা শারুল লী ফী দ্বীনী অ মাআ’শী অ আ’-কিবাতি আমরী অ আ’-জিলিহী অ আ-জিলিহ্, ফাস্বরিফহু আ ন্নী অস্বরিফনী আনহু, অক্বদুর লিয়াল খাইরাহাইসু কা-না সুম্মা রায্বযিনী বিহ্।
অর্থ- হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার নিকট তোমার ইলমের সাথে মঙ্গল প্রার্থনা করছি। তোমার কুদরতের সাথে শক্তি প্রার্থনা করছি এবং তোমার বিরাট অনুগ্রহ থেকে ভিক্ষা যাচনা করছি। কেননা, তুমি শক্তি রাখ, আমি শক্তি রাখি না। তুমি জান, আমি জানি না এবং তুমি অদৃশ্যের পরিজ্ঞাতা। হে আল্লাহ! যদি তুমি এই (---) কাজ আমার জন্য আমার দ্বীন, দুনিয়া, জীবন এবং কাজের বিলম্বিত ও অবিলম্বিত পরিণামে ভালো জান, তাহলে তা আমার জন্য নির্ধারিত ও সহ্জ করে দাও। অতঃপর তাতে আমার জন্য বর্কত দান কর। আর যদি তুমি এই কাজ আমার জন্য আমার দ্বীন, দুনিয়া, জীবন এবং কাজের বিলম্বিত ও অবিলম্বিত পরিণামে মন্দ জান, তাহলে তা আমার নিকট থেকে ফিরিয়ে নাও এবং আমাকে ওর নিকট থেকে সরিয়ে দাও। আর যেখানেই হোক মঙ্গল আমার জন্য বাস্তবায়িত কর, অতঃপর তাতে আমার মনকে পরিতুষ্ট করে দাও।
প্রথমে هذا الأمر ‘হা-যাল আমরা’ এর স্থলে বা পরে কাজের নাম নিতে হবে অথবা মনে মনে সেই জ্ঞাতব্য বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করতে হবে।
মহানবী (ﷺ) এই দুআ সাহাবীগণকে শিখাতেন, যেমন কুরআনের সূরা শিখাতেন। আর এখান থেকেই ছোট-বড় সকল কাজেই ইস্তিখারার গুরুত্ব প্রকাশ পায়।
সে ব্যক্তি কর্মে কোনদিন লাঞ্জিত হয় না যে আল্লাহর নিকট তাতে মঙ্গল প্রার্থনা করে, অভিজ্ঞদের নিকট পরামর্শ গ্রহণ করে এবং ভালো-মন্দ বিচার করার পর কর্ম করে। (বুখারী, আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, আহমাদ, মুসনাদ ৩ /৩৪৪)
জ্ঞাতব্য যে, ইস্তিখারার পূর্বে কাজের ভালো-মন্দের কোন একটা দিকের প্রতি অধিক প্রবণতা থাকলে চলবে না। বরং এই প্রবণতা আল্লাহর তরফ থেকে সৃষ্টি হবে ইস্তিখারার পরেই। আর তা একবার করলেই হবে। ৭ বার করার হাদীস সহীহ নয়। (ইবনুস সুন্নী ৫৯৮নং-এর টীকা দ্র:)
প্রকাশ থাকে যে, সুনানে রাতেবাহ্ অথবা তাহিয়্যাতুল মাসজিদ অথবা যে কোন ২ রাকআত সুন্নতের পর রাতের অথবা দিনের (নিষিদ্ধ সময় ছাড়া) যে কোন সময়ে উক্ত দুআ পড়া যায়। উক্ত নামাযের নিয়ম সাধারণ সুন্নত নামাযের মতই।
এ নামাযের প্রত্যেক রাকআতে কোন নির্দিষ্ট পঠনীয় সূরা নেই। যে কোন সূরা পড়লেই চলে। এই নামায অন্য দ্বারা পড়ানো যায় না। যেমন স্বপ্নযোগে স্পষ্ট কিছু দেখাও জরুরী নয়।
মহানবী (ﷺ) থেকে বর্ণিত করা হয়ে থাকে যে, একদা তিনি তাঁর চাচা আব্বাস (রাঃ)-কে বললেন, “হে আব্বাস, হে চাচা! আমি কি আপনাকে দেব না? আমি কি আপনাকে দান করব না? আমি কি বিশেষভাবে আপনাকে একটি জিনিস দান করব না? আমি কি আপনাকে এমন জিনিস শিখিয়ে দেব না, যা আপনার ১০ প্রকার পাপ খন্ডন করে দিতে পারে? যদি আপনি তা করেন তাহলে আল্লাহ আপনার প্রথম ও শেষের, পুরাতন ও নূতন, অনিচ্ছাকৃত ও ইচ্ছাকৃত, ছোট ও বড়, গুপ্ত ও প্রকাশ্য এই ১০ প্রকার পাপ মাফ করে দেবেন।
সেটা হল এই যে, আপনি ৪ রাকআত নামায পড়বেন। প্রত্যেক রাকআতে আপনি সূরা ফাতিহার পর একটি সূরা পড়বেন। অতঃপর প্রথম রাকআতে সূরা পড়া শেষ হলে আপনি দাঁড়িয়ে থেকেই ১৫ বার বলবেন,
سُبْحَانَ اللهِ، وَالْحَمْدُ للهِ، وَلاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ، وَاللهُ أَكْبَرُ।
সুবহানাল্লাহি অলহামদু লিল্লাহি অলা ইলাহা ইল্লাল্লাহু অল্লাহু আকবার।
এরপর আপনি রুকূ করবেন। রুকূ অবস্থায় (তাসবীহর পর) ১০ বার ঐ যিক্র বলবেন। অতঃপর রুকূ থেকে মাথা তুলবেন। (রাব্বানা লাকালহাম্দ বলার পর) ঐ যিক্র ১০ বার বলবেন। অতঃপর আপনি সিজদায় যাবেন। (সিজদার তাসবীহ পড়ে) ঐ যিক্র ১০ বার বলবেন। অতঃপর সিজদা থেকে মাথা তুলে (দুআ বলার পর) ঐ যিক্র ১০ বার বলবেন। তারপর পুনরায় সিজদায় গিয়ে (তাসবীহর পর) ঐ যিক্র ১০ বার বলবেন। অতঃপর সিজদা থেকে মাথা তুলে (ই স্তি রাহার বৈঠকে) ঐ যিক্র ১০ বার বলবেন। এই হল প্রত্যেক রাকআতে ৭৫ বার পঠনীয় যিক্র। (৪ রাকআতে সর্বমোট ৩০০ বার।)
এইভাবে আপনি প্রত্যেক রাকআতে পাঠ করে ৪ রাকআত নামায পড়েন। পারলে প্রত্যেক দিন ১বার পড়েন। তা না পারলে প্রত্যেক জুমআয় ১বার পড়েন। তা না পারলে প্রত্যেক মাসে ১বার। তা না পারলে প্রত্যেক বছরে ১বার। তাও না পারলে সারা জীবনেও ১বার পড়েন। (আবূদাঊদ, সুনান, নাসাঈ, সুনান, ইবনে মাজাহ্, সুনান, ইবনে খুযাইমাহ্, সহীহ,হাকেম, মুস্তাদরাক, ত্বাবারানী, মু’জাম, সহিহ তারগিব ৬৭৪নং, জামে ৭৯৩৭নং)
এক বর্ণনায় আছে, “আপনার গুনাহ যদি সমুদ্রের ফেনা বা জমাট বাঁধা বালির মত অগণিত হয় তবুও আল্লাহ আপনার জন্য সমস্তকে ক্ষমা করে দেবেন।” (তিরমিযী, সুনান, ইবনে মাজাহ্, সুনান, দারাক্বুত্বনী, সুনান, বায়হাকী, ত্বাবারানী, মু’জাম, সহিহ তারগিব ৬৭৫নং)
প্রকাশ যে, তাশাহহুদের বৈঠকে তাসবীহ তাশাহহুদ পড়ার আগে পড়তে হবে। (নামাযে নববী, সাইয়েদ শাফীকুর রহ্মান, লাহোর ছাপা ২৩৮পৃ:)
এই নামাযের সময়
আব্দুল্লাহ বিন আম্র অথবা আব্দুল্লাহ বিন উমার অথবা আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস বলেন, একদা নবী (ﷺ) আমাকে বললেন, “তুমি আগামী কাল আমার নিকট এস। আমি তোমাকে কিছু দান করব, কিছু প্রতিদান দেব, কিছু দেব।” আমি ভাবলাম, হয়তো তিনি আমাকে কোন জিনিস উপহার দেবেন। কিন্তু তিনি আমাকে বললেন, “দিন (সূর্য)ঢলে গেলে (যোহরের পূর্বে) ওঠ এবং ৪ রাকআত নামায পড়।” (আউনুল মা’বূদ ৪/১২৭, তুহ্ফাতুল আহওয়াযী ২/৪৯১)
অতঃপর আব্দুল্লাহ পূর্বোক্ত হাদীসের মত উল্লেখ করলেন। পরিশেষে মহানবী (ﷺ) তাঁকে বললেন, “যদি তুমি পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে বড় পাপীও হও তবুও ঐ নামাযের অসীলায় আল্লাহ তোমাকে মাফ করে দেবেন।”
আব্দুল্লাহ বলেন, আমি যদি ঐ সময় ঐ নামায পড়তে না পারি? তিনি বললেন, “রাতে দিনে যে কোন সময়ে পড়।” (আবূদাঊদ, সুনান ১২৯৮নং)
প্রকাশ থাকে যে, এই নামাযে ভুল হলে সহু সিজদায় ঐ যিক্র পাঠ করতে হবে না। (আউনুল মা’বূদ ৪/১২৬, তুহ্ফাতুল আহওয়াযী ২/৪৯০)
জ্ঞাতব্য যে জামাআত করে এ নামায পড়া বিধেয় নয়। আরো সতর্কতার বিষয় যে, এ নামাযকে অনেকে বিদআত বলে উল্লেখ করেছেন। শায়খ ইবনে উষাইমীন বলেন,
‘দুর্বল হাদীসকে ভিত্তি করে মতভেদ সৃষ্টি হওয়ার একটি উদাহ্রণ ‘স্বালাতুত তাসবীহ্।’ এ নামায কিছু উলামার নিকট মুস্তাহাব। এর পদ্ধতি হল এই যে, চার রাকআত নামাযে নামাযী সূরা ফাতিহা পাঠ করবে এবং তারপর ১৫ বার তাসবীহ্ পড়বে। অনরুপ রুকূ ও সিজদায় (১০ বার) তাসবীহ্ পাঠ করবে---। এইভাবে শেষ রাকআত পর্যন্ত যে নিয়ম-পদ্ধতি আছে, যার বর্ণনা আমি সঠিকভাবে দিতে পারছি না। কারণ, উক্ত নামাযের হাদীসকে শরীয়তের হাদীস বলে আমার বিশ্বাস হয় না।
অন্যান্য উলামাগণ মনে করেন যে, ‘স্বালাতুত তাসবীহ্’ নামায অপছন্দনীয় বিদআত এবং তার হাদীস সহীহ নয়। এঁদের মধ্যে একজন হলেন ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ)। তিনি বলেছেন, ‘নবী (ﷺ) থেকে এ হাদীস সহীহ সূত্রে বর্ণিত নয়।’
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ্ বলেন, ‘উক্ত নামাযের হাদীসটি আল্লাহর রসূল (ﷺ)-এর প্রতি আরোপিত মিথ্যা।’
প্রকৃত প্রস্তাবে যে ব্যক্তি এ নামাযটি (হাদীসটি) নিয়ে বিচার-বিবেচনা করবে, সে দেখতে পাবে যে, এতে রয়েছে একাধিক উদ্ভট্টি। এমনকি নামাযটি বিধিবদ্ধ হওয়ার ব্যাপারেও উদ্ভট্টি লক্ষণীয়। কেননা, ইবাদত হয় হৃদয়ের জন্য উপকারী হবে। আর তা হলে ঐ ইবাদত সর্বকাল ও সর্বস্থানের জন্য বিধিবদ্ধ হবে। নচেৎ তা উপকারী হবে না। আর তা হলে তা বিধিবদ্ধই নয়। বলা বাহুল্য, উক্ত হাদীসে যে নামাযের কথা বলা হয়েছে যে, তা প্রত্যেক দিন অথবা প্রত্যেক সপ্তাহ্ অথবা প্রত্যেক মাস অথবা প্রত্যেক বছরে একবার। আর তা না পারলে জীবনেও একবার পড়বে -এমন কথার নযীর শরীয়তে মিলে না। সুতরাং উক্ত হাদীসটি তার সনদ ও মতন (বর্ণনা-সূত্র ও বক্তব্য) উভয় দিক দিয়েই যে উদ্ভট, তা স্পষ্ট হয়। আর যিনি হাদীসটিকে মিথ্যা বলেছেন -যেমন শায়খুল ইসলাম বলেছেন -তিনি ঠিকই বলেছেন। এ জন্য শায়খুল ইসলাম আরো বলেছেন, ‘ইমামগণের কেউই এই নামাযকে মুস্তাহাব মনে করেননি।’
এখানে ‘স্বালাতুত তাসবীহ্’ দিয়ে উদাহ্রণ দেওয়ার একমাত্র কারণ এই যে, নারী-পুরুষ অনেকেই এ নিয়ে প্রশ্ন করে থাকে। যাতে আমার ভয় হয় যে, এই নামাযের বিদআতটি বিধেয় (শরয়ী) বিষয়ে পরিণত হয়ে যাবে। আর যদিও কিছু মানুষের নিকট ভারী, তবুও আমি এই নামাযকে বিদআত এই কারণে বলছি যে, আমরা বিশ্বাস করি, মহান আল্লাহর উদ্দেশ্যে যে কোন ইবাদতের বর্ণনা কিতাব অথবা তাঁর রসূলের (সহীহ) সুন্নায় না থাকলে তা বিদআত।’ (লেখক কর্তৃক অনূদিত উলামার মতানৈক্য ২৪-২৫পৃ:)
পক্ষান্তরে ইবনে হাজার, শায়খ আহমাদ শাকের ও আল্লামা মুবারকপুরী প্রমুখ উক্ত হাদীসকে হাসান বলেন। ইমাম হাকেম ও যাহাবীও হাদীসটিকে শক্তিশালী বলে মন্তব্য করেন। খতীব বাগদাদী, ইমাম নওবী, ইবনে স্বালাহ্ এবং মুহাদ্দেস আল্লামা আলবানী (রহঃ) প্রমুখ উলামাগণ উক্ত নামাযের হাদীসকে সহীহ বলেন। (দ্র: মিশকাত ১৩২৮নং, ১/৪১৯, ১নং টীকা) অতএব আল্লাহই ভালো জানেন।
স্বালাতুলহা-জাহ্ বা প্রয়োজন পূরণের নামায অর্থাৎ গুরুত্বপূর্ণ কিছু চাইতে ২ রাকআত এই নফল নামায বিধেয়। মহানবী (ﷺ) যখন কোন কঠিন বিপদে বা সমস্যায় পড়তেন, তখন নামায পড়তেন। (আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান ১৩১৯, নাসাঈ, সুনান, মিশকাত ১৩২৫নং) আর মহান আল্লাহ বলেন,
(يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا اسْتَعِيْنُوْا بِالصَّبْرِ وَالصَّلاَةِ)
অর্থাৎ, হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে (আল্লাহর কাছে) সাহায্য প্রার্থনা কর। (কুরআন মাজীদ ২/৪৫, ১৫৩)
এক অন্ধ ব্যক্তি নবী (ﷺ)-এর নিকট এসে বলল, ‘আপনি আল্লাহর নিকট দুআ করুন, যেন আল্লাহ আমাকে অন্ধত্ব থেকে মুক্ত করেন।’ তিনি বললেন, “যদি তুমি চাও তোমার জন্য দুআ করব। নচেৎ যদি চাও ধৈর্য ধর এবং সেটাই তোমার জন্য শ্রেয়।” লোকটি বলল, ‘বরং আপনি দুআ করুন।’
সুতরাং তিনি তাকে ওযু করতে বললেন এবং ভালোরুপে ওযু করে দু’ রাকআত নামায পড়ে এই দুআ করতে আদেশ দিলেন:-
‘হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করছি। তোমার নবী, দয়ার নবীর সাথে তোমার অভিমুখ হ্চ্ছি। হে মুহাম্মদ! আমি আপনার সাথে আমার প্রতিপালকের প্রতি আমার এই প্রয়োজন পূরণের ব্যাপারে অভিমুখী হয়েছি। হে আল্লাহ! আমার ব্যাপারে তুমি এর সুপারিশ গ্রহণ কর এবং এর ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ গ্রহণ কর।’
বর্ণনাকারী বলেন যে, অতঃপর ঐ ব্যক্তি ঐরুপ করলে সে তার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেল। (তিরমিযী, সুনান, নাসাঈ, সুনান, ইবনে মাজাহ্, সুনান, ইবনে খুযাইমাহ্, সহীহ,হাকেম, মুস্তাদরাক, সহিহ তারগিব ৬৭৮নং)
প্রকাশ থাকে যে, অভাব মোচনের নামায ও লম্বা দুআর হাদীসটি অত্যন্ত দুর্বল। (তিরমিযী, সুনান ৪৭৯, ইবনে মাজাহ্, সুনান, মিশকাত ১৩২৭নং, টীকা দ্র:)
স্বালাতুত তাওবাহ্ বা তওবা করার সময় বিশেষ ২ অথবা রাকআত নামায পড়া বিধেয়। মহানবী (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তি কোন গুনাহ করে ফেলে অতঃপর উঠে ওযূ করে ২ রাকআত নামায পড়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, সে ব্যক্তিকে আল্লাহ মাফ করে দেন।” অতঃপর মহানবী (ﷺ) এই আয়াত তেলাওয়াত করেন:-
(وَالَّذِيْنَ إِذَا فَعَلُوا فَاحِشَةً أَوْ ظَلَمُوْا أَنْفُسَهُمْ ذَكَرُوا اللهَ فَاسْتَغْفَرُوْا لِذُنُوْبِهِمْ، وَمَنْ يَّغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلاَّ الله، وَلَمْ يُصِرُّوْا عَلَى مَا فَعَلُوْا وَهُمْ يَعْلَمُوْنَ، أُولَئِكَ جَزَاؤُهُمْ مَّغْفِرَةٌ مِّنْ رَّبِّهِمْ وَجَنَّاتٌ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الأَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَا)
অর্থাৎ, আর যারা কোন অশ্লীল কাজ করে ফেলে অথবা নিজেদের প্রতি জুলুম করে (পাপ করে) ফেলে অতঃপর সাথে সাথে আল্লাহকে স্মরণ করে নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে; আর আল্লাহ ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করবে? আর তারা জেনে-শুনে নিজেদের অপরাধের উপর হ্ঠকারিতা করে না। ঐ সকল লোকেদের পুরস্কার হল তাদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা এবং সেই বেহেশ্ত যার পাদদেশে নদীমালা প্রবাহিত; সেখানে তারা চিরকাল বাস করবে। (কুরআন মাজীদ ৩/১৩৫-১৩৬) (আবূদাঊদ, সুনান ১৫২১, তিরমিযী, সুনান, নাসাঈ, সুনান, ইবনে মাজাহ্, সুনান, ইবনে হিব্বান, সহীহ, ইবনে খুযাইমাহ্, সহীহ, বায়হাকী, সহিহ তারগিব ৬৭৭নং)
তিনি আরো বলেন, “যে ব্যক্তি উত্তমরুপে ওযূ করে অতঃপর উঠে ২ রাকআত অথবা ৪ রাকআত ফরয অথবা অফরয (সুন্নত বা নফল) নামায উত্তমরুপে রুকূ ও সিজদা করে পড়ে, অতঃপর সে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, সে ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়।” (ত্বাবারানী, মু’জাম)
স্বালাতুল কুসূফ অল-খুসূফ বা চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণের নামায ৪ রুকূতে ২ রাকআত সুন্নাতে মুআক্কাদাহ। এই নামাযের নিয়ম নিম্নরুপ :-
চন্দ্রে অথবা সূর্যে গ্রহণ লাগা শুরু হলে ‘আস-স্বালা-তু জামেআহ’ বলে আহবান করতে হবে মুসলিমদেরকে।
জামাআতে কাতার বাঁধা হলে ইমাম সাহেব নামায শুরু করবেন। সশব্দে সূরা ফাতিহার পর লম্বা ক্বিরাআত করবেন এবং তারপর রুকূতে যাবেন। লম্বা রুকূ থেকে মাথা তুলে পুনরায় বুকেহাত রেখে (সূরা ফাতিহা পড়ে) আবার পূর্বাপেক্ষা কম লম্বা ক্বিরাআত করবেন। অতঃপর দ্বিতীয়বার অপেক্ষাকৃত কম লম্বা রুকূ করে বাকী রাকআত সাধারণ নামাযের মত শেষ করে দ্বিতীয় রাকআতেও অনুরুপ ২ বার ক্বিরাআত ও ২ বার রুকূ করে নামায সম্পন্ন করবেন। এ নামাযের সিজদাও হবে খুব লম্বা। প্রথম রাকআতের চেয়ে দ্বিতীয় রাকআত অপেক্ষাকৃত ছোট হবে। মুক্তাদীগণ যে নিয়মে ইমামের অনুসরণ করতে হয়, সেই নিয়মে অনুসরণ করবে। এই নামায এত লম্বা হওয়া উচিৎ যে, যেন নামায শেষ হয়ে দেখা যায়, সূর্য বা চন্দ্রের গ্রহণ ছেড়ে গেছে।
অনুরুপভাবে নামায শেষ করে দাঁড়িয়ে মহানবী (ﷺ) খুতবা দিয়েছিলেন। হাম্দ ও সানার পর বলেছিলেন, “সূর্য ও চন্দ্র মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাআলার অন্যতম নিদর্শন। কারো মৃত্যু বা জন্মের জন্য উভয়ে গ্রহণ লাগে না। অতএব তাতে গ্রহণ লাগতে দেখলে তোমরা আতঙ্কিত হয়ে নামাযে মগ্ন হও।” (বুখারী ১০৪৭নং, মুসলিম, সহীহ)
নামাযের সাথে সাথে এই সময় দুআ, তকবীর, ইস্তিগফার ও সদকাহ্ করা মুস্তাহাব। যেহেতু মহানবী (ﷺ) বলেন, “সূর্য ও চন্দ্র মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাআলার অন্যতম বড় নিদর্শন। কারো মৃত্যু বা জন্মের জন্য উভয়ে গ্রহণ লাগে না। অতএব তাতে গ্রহণ লাগতে দেখলে তোমরা আল্লাহর কাছে দুআ কর, তকবীর পড়, সদকাহ্ কর এবং নামায পড়।” (বুখারী ১০৪৪নং, মুসলিম, মিশকাত ১৪৮৩নং) অন্য এক বর্ণনায় আছে, “তোমরা আতঙ্কিত হয়ে আল্লাহর যিক্র, দুআ ও ইস্তিগফারে মগ্ন হও।” (ঐ, মিশকাত ১৪৮৪নং)
এই সময় তিনি ক্রীতদাস মুক্ত করতে (বুখারী ১০৫৪নং) এবং কবরের আযাব থেকে পানাহ চাইতেও আদেশ করেছেন। (বুখারী ১০৫০নং)
উল্লেখ্য যে, কারো যদি দুই রুকুর একটিও ছুটে যায়, তাহলে রাকআত গণ্য করবে না। কারণ, একটি রুকূ ছুটে গেলে রাকআত হবে না। ইমামের সালাম ফিরার পর ২টি রুকূ বিশিষ্ট ১ রাকআত নামায কাযা পড়তে হবে। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্, সঊদী উলামা-কমিটি ১/৩৫০, মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১৩/৯৮, ২৩/৯৩, মুখতাসারু মুখালাফাতু ত্বাহারাতি অসস্বালাহ, আব্দুল আযীয সাদহান ১২৯-১৩০পৃ:)
পূর্বেই বলা হয়েছে যে, চন্দ্র-সূর্য গ্রহণের নামায সুন্নাতে মুআক্কাদাহ। কিন্তু এর তুলনায় যে নামাযের গুরুত্ব বেশী সেই নামাযের সময়ে এই নামাযের সময় হলে অধিক গুরুত্বপূর্ণ নামাযই পড়তে হবে। যেমন, জুমুআহ বা ঈদের সময় সূর্যগ্রহণ শুরু হলে, অথবা তারাবীহ্র সময় চন্দ্রগ্রহণ শুরু হলে গ্রহণের নামাযের উপর ঐ সকল নামায প্রাধান্য পাবে।
নিষিদ্ধ সময়ের মধ্যে; যেমন ফজর ও আসরের পর গ্রহণ লাগলেও ঐ নামায পড়া যায়। ফরয নামাযের সময় এসে গেলে ঐ নামায হাল্কা করে পড়তে হবে। নামাযের পরও গ্রহণ বাকী থাকলে দ্বিতীয়বার ঐ নামায পড়া বিধেয় নয়।
যেমন গ্রহণ প্রত্যক্ষ না করা পর্যন্ত কেবল পঞ্জিকার হিসাবের উপর নির্ভর করে ঐ নামায পড়া বিধেয় নয়। অনুরুপ বিধেয় নয় গ্রহণ দৃশ্য না হলে।
ভূমিকম্প, ঝড়, নিরবচ্ছিন্ন বজ্রপাত, আগ্নেয়গিরির অগ্নি উদগিরণ প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ও গ্রহণের মত নামায পড়ার কথা হযরত আলী, ইবনে আব্বাস ও হুযাইফা সাহাবী কর্তৃক বর্ণিত আছে। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ৫/২৫৫)
প্রকাশ থাকে যে, সূর্য বা চন্দ্র গ্রহণের সময় গর্ভবতীকে এ করতে নেই, সে করতে নেই, শুয়ে থাকতে হয় বা তার এই করলে সেই হয় প্রভৃতি কথা শরীয়তে নেই। সুতরাং বিজ্ঞান যদি তা সমর্থন না করে তাহলে তা অমূলক ধারণাপ্রসূত কথা। পরন্তু শরীয়তে আছে মনে করে এ কথা বলা ও মানা হলে তা বিদআত। অবশ্য খালি চোখে গ্রহণ দেখলে চোখ খারাপ হতে পারে, সে কথা সত্য।
স্বালাতুল ইস্তিসকা বা বৃষ্টি প্রার্থনার নামায অনাবৃষ্টির সময় মহান প্রতিপালকের নিকট বৃষ্টি প্রার্থনার উদ্দেশ্যে পড়া সুন্নত।
বৃষ্টি বন্ধ হওয়ার কারণ, মানুষের পাপ ও বিশেষ করে যাকাত বন্ধ করে দেওয়া। মহানবী (ﷺ) বলেন, “হে মুহাজিরদল! পাঁচটি কর্ম এমন রয়েছে যাতে তোমরা লিপ্ত হয়ে পড়লে (উপযুক্ত শাস্তি তোমাদেরকে গ্রাস করবে)। আমি আল্লাহর নিকট পানাহ চাই, যাতে তোমরা তা প্রত্যক্ষ না কর।
যখনই কোন জাতির মধ্যে অশ্লীলতা (ব্যভিচার) প্রকাশ্যভাবে ব্যাপক হবে তখনই সেই জাতির মধ্যে প্লেগ এবং এমন মহামারী ব্যাপক হবে যা তাদের পূর্বপুরুষদের মাঝে ছিল না। যে জাতিই মাপ ও ওজনে কম দেবে সে জাতিই দুর্ভিক্ষ, কঠিন খাদ্য-সংকট এবং শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচারের শিকার হবে।
যে জাতিই তার মালের যাকাত দেওয়া বন্ধ করবে সে জাতির জন্যই আকাশ হতে বৃষ্টি বন্ধ করে দেওয়া হবে। যদি অন্যান্য প্রাণীকুল না থাকত তাহলে তাদের জন্য আদৌ বৃষ্টি হত না।যে জাতি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করবে সে জাতির উপরেই তাদের বিজাতীয় শত্রুদলকে ক্ষমতাসীন করা হবে; যারা তাদের মালিকানা-ভুক্ত বহু ধন-সম্পদ নিজেদের কুক্ষিগত করবে।আর যে জাতির শাসকগোষ্ঠী যতক্ষণ পর্যন্ত না আল্লাহর কিতাব (বিধান) অনুযায়ী দেশ শাসন করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি তাদের মাঝে গৃহদ্বন্দ্ব অবস্থায়ী রাখবেন।” (বাইহাকী, ইবনে মাজাহ্ ৪০১৯নং, সহীহ তারগীব ৭৫৯নং)
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেন, “ পাঁচটির প্রতিফল পাঁচটি।” জিজ্ঞাসা করা হল, ‘হে আল্লাহর রসূল! পাঁচটির প্রতিফল পাঁচটি কি কি?’ তিনি বললেন, “যে জাতিই (আল্লাহর) প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করবে সেই জাতির উপরেই তাদের শত্রুকে ক্ষমতাসীন করা হবে। যে জাতিই আল্লাহর অবতীর্ণকৃত সংবিধান ছাড়া অন্য দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালনা করবে সেই জাতির মাঝেই দরিদ্রতা ব্যাপক হবে। যে জাতির মাঝে অশ্লীলতা (ব্যভিচার) প্রকাশ পাবে সে জাতির মাঝেই মৃত্যু ব্যাপক হবে। যে জাতিই যাকাত দেওয়া বন্ধ করবে সেই জাতির জন্যই বৃষ্টি বন্ধ করে দেওয়া হবে। যে জাতি দাঁড়ি-মারা শুরু করবে সে জাতি ফসল থেকে বঞ্চিত হবে এবং দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত হবে।” (ত্বাবারানী, মু’জাম, সহিহ তারগিব ৭৬০নং)
বলা বাহুল্য, বৃষ্টি প্রার্থনার জন্য তওবা ও ইস্তিগফার জরুরী। মহান আল্লাহ হযরত নূহ্ (আঃ)-এর কথা উল্লেখ করে বলেন,
(فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوْا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّاراً، يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِّدْرَاراً، وَيُمْدِدْكُمْ بِأَمْوَالٍ وَّبَنِيْنَ وَيَجْعَلْ لَكُمْ جَنَّاتٍ وَّيَجْعَلْ لَكُمْ أَنْهَاراً)
অর্থাৎ, আমি তাদেরকে বললাম, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা (ইস্তিগফার) কর। তিনি তো মহা ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত করবেন। তিনি তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দ্বারা সমৃদ্ধ করবেন। আর তোমাদের জন্য বাগান তৈরী করে দেবেন এবং প্রবাহিত করে দেবেন নদী-নালা। (কুরআন মাজীদ ৭১/১০-১২)
একান্ত বিনয়ের সাথে, সাধারণ আটপৌরে বা কাজের (পুরাতন) কাপড় পরে, ধীর ও শান্তভাবে কাকুতি-মিনতির সাথে সকালে ঈদগাহে বের হয়ে এই নামায পড়তে হয়।
এই নামায ঈদের নামাযের মতই আযান ও ইকামত ছাড়া ২ রাকআত। প্রত্যেক রাকআতে সশব্দে সূরা ফাতিহার পর যে কোন সূরা পড়া যায়। নামাযের আগে অথবা পরে হবে খুতবা। খুতবায় ইমাম সাহেব বেশী বেশী ইস্তিগফার ও দুআ করবেন। মুক্তাদীগণ সে দুআয় ‘আমীন’ বলবে। এই দুআয় বিশেষ করে ইমাম (এবং সকলে) খুব বেশী হাত তুলবেন। মাথা বরাবর হাত তুলে দুআ করবেন। (আবূদাঊদ, সুনান ১১৬৮, ইবনে হিব্বান, সহীহ, মিশকাত ১৫০৪নং) এমন কি চাদর গায়ে থাকলে তাতে বগলের সাদা অংশ দেখা যাবে। (বুখারী ১০৩১, মুসলিম, সহীহ ৮৯৫নং)
বৃষ্টি প্রার্থনার সময় উল্টা হাতে দুআ করা মুস্তাহাব। অর্থাৎ, সাধারণ প্রার্থনার করার সময় হাতের তেলো বা ভিতর দিকটা হবে আকাশের দিকে এবং বৃষ্টি প্রার্থনার সময় হবে মাটির দিকে; আর হাতের বাহির দিকটা হবে আকাশের দিকে। হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, ‘একদা নবী (ﷺ) বৃষ্টি প্রার্থনা করলে তিনি তাঁর হাতের পিঠের দিকটা আকাশের দিকে তুলে ইঙ্গিত করলেন।’ (মুসলিম, সহীহ ৮৯৫-৮৯৬নং)
ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ্ প্রমুখ উলামাগণ বলেন, কোন কিছু চাওয়া হয় হাতের ভিতরের অংশ দিয়েই, বাইরের অংশ দিয়ে নয়। আসলে আল্লাহর নবী (ﷺ) হাত দুটিকে মাথার উপরে খুব বেশী উত্তোলন করলে দেখে মনে হয়েছিল যে, তিনি হাতের বাইরের অংশ আকাশের দিকে করেছিলেন। (আল-ইনসাফ ২/৪৫৮, আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ৫/২৮৩)
অতঃপর কিবলামুখ হয়ে চাদর উল্টাবেন; অর্থাৎ, চাদরের ডান দিকটাকে বাম দিকে, বাম দিকটাকে ডান দিকে করে নেবেন এবং উপর দিকটা নিচের দিকে ও নিচের দিকটা উপর দিকে করবেন। মুক্তাদীগণও অনুরুপ করবে। এরপর সকলে পুনরায় (একাকী) দুআ করে বাড়ি ফিরবে।
চাদর উল্টানো এবং দুআর সময় উল্টাহাত করা আসলে এক প্রকার কর্মগত দুআ। অর্থাৎ, হে মওলা! তুমি আমাদের এই চাদর ওহাত উল্টানোর মত আমাদের বর্তমান দুরবস্থাও পাল্টে দাও। আমাদের অনাবৃষ্টির অবস্থাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে দাও। (নামাযে নববী, সাইয়েদ শাফীকুর রহ্মান, লাহোর ছাপা ২৩৪পৃ:)
প্রকাশ থাকে যে, ইস্তিসকার জন্য কোন নির্দিষ্ট দিন নেই। যে কোন একটি দিন ঠিক করে সেই দিনে নামায পড়া যায়। রোযা রাখা, পশু নেওয়া ইত্যাদির কথাও হাদীসে নেই। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ৫/২৭১-২৭২)
বৃষ্টি প্রার্থনার দ্বিতীয় পদ্ধতি :
জুমআর খুতবায় ইমাম সাহেব হাত তুলে দুআ করবেন এবং মুক্তাদীরাও হাত তুলে ‘আমীন-আমীন’ বলবে।
একদা মহানবী (ﷺ) জুমআর খুতবা দিচ্ছিলেন। এমন সময় এক মরুবাসী (বেদুঈন) উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! মাল-ধন ধ্বংস হয়ে গেল আর পরিবার পরিজন (খাদ্যের অভাবে) ক্ষুধার্ত থেকে গেল। সুতরাং আপনি আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করুন।’ তখন নবী (ﷺ) নিজের দুইহাত তুলে দুআ করলেন এবং লোকেরাও তাঁর সাথে দুআর জন্য হাত তুলল। ফলে এমন বৃষ্টি শুরু হল যে পরবর্তী জুমআতে উক্ত (বা অন্য এক) ব্যক্তি পুনরায় খাড়া হয়ে বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! ঘর-বাড়ি ভেঙে গেল এবং মাল-ধন ডুবে গেল। সুতরাং আপনি আমাদের জন্য দুআ করুন!’ মহানবী (ﷺ) তখন নিজেরহাত তুলে পুনরায় বৃষ্টি বন্ধ হওয়ার জন্য দুআ করলেন এবং বৃষ্টিও থেমে গেল। (বুখারী ৯৩২, ৯৩৩, ১০১৩, ১০২৯, মুসলিম, সহীহ ৮৯৭নং, নাসাঈ, সুনান, আহমাদ, মুসনাদ ৩/২৫৬, ২৭১)
বৃষ্টি প্রার্থনার তৃতীয় পদ্ধতি :
শুরাহ্বীল বিন সিমত একদা কা’ব বিন মুর্রাহ্কে আল্লাহর রসূল (ﷺ)-এর হাদীস বর্ণনা করতে বললে তিনি বললেন, এক ব্যক্তি আল্লাহর রসূল (ﷺ)-এর নিকট এসে বলল, ‘আপনি মুযার (গোত্রের) জন্য বৃষ্টি প্রার্থনা করুন।’ তিনি বললেন, “তুমি তো বেশ দুঃসাহ্সিক! (কেবল) মুযারের জন্য (বৃষ্টি)?” লোকটি বলল, ‘আপনি আল্লাহ আযযা অজাল্লার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেছেন, তিনি আপনাকে সাহায্য করেছেন। আল্লাহ আযযা অজাল্লার কাছে দুআ করেছেন, তিনি তা কবুল করেছেন।’ এ কথা শোনার পর মহানবী (ﷺ) দুইহাত তুলে বৃষ্টি প্রার্থনার দুআ করলেন এবং এত বৃষ্টি হল যে, তা বন্ধ করার জন্য পুনরায় তিনি দুআ করলেন। (আহমাদ, মুসনাদ, ইবনে মাজাহ্, সুনান ১২৬৯নং, বায়হাকী, ইবনে আবী শাইবা,হাকেম, মুস্তাদরাক)
বৃষ্টি প্রার্থনার চতুর্থ পদ্ধতি :
ইমাম শা’বী কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা উমার (রাঃ) বৃষ্টি প্রার্থনা করতে বের হয়ে কেবল ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করে ফিরে এলেন। লোকেরা বলল, ‘আমরা তো আপনাকে বৃষ্টি চাইতে দেখলাম না?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘আমি সেই নক্ষত্রের মাঝে বৃষ্টি প্রার্থনা করেছি, যাতে বৃষ্টি হয়ে থাকে। অতঃপর তিনি এই আয়াত পাঠ করলেন,
(اِسْتَغْفِرُوْا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّاراً، يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِّدْرَاراً)
অর্থাৎ, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা (ইস্তিগফার) কর। তিনি তো মহা ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত করবেন। (কুরআন মাজীদ ৭১/১০-১১)
(اِسْتَغْفِرُوْا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوْبُوْا إِلَيْهِ يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِّدْرَاراً وَّيَزِدْكُمْ قُوَّةً إِلَى قُوَّتِكُمْ وَلاَ تَتَوَلَّوْا مُجْرِمِيْنَ)
অর্থাৎ, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা (ইস্তিগফার) কর। অতঃপর তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন কর; তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। তিনি তোমাদেরকে আরো শক্তি দিয়ে শক্তি বৃদ্ধি করবেন। আর তোমরা অপরাধী হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিও না। (কুরআন মাজীদ ১১/৫২) (সুনানু সাঈদ বিন মানসূর, আব্দুর রাযযাক, মুসান্নাফ, বায়হাকী, ইবনে আবী শাইবা ৮৩৪৩নং)
বৃষ্টি-প্রার্থনার কতিপয় দুআ
১- اَلْحَمْدُ للهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ، اَلرَّحْمنِ الرَّحِيْمِ ، مَالِكِ يَوْمِ الدِّيْنِ، لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ يَفْعَلُ مَا يُرِيْدُ، اَللّهُمَّ أَنْتَ اللهُ لاَ إِلهَ إِلاَّ أَنْتَ، أَنْتَ الْغَنِيُّ وَنَحْنُ الْفُقَرَاءُ، أَنْزِلْ عَلَيْنَا الْغَيْثَ وَاجْعَلْ مَا أَنْزَلْتَ لَنَا قُوَّةً وَّبَلاَغاً إِلىحِيْن।
উচ্চারণ:- আলহামদু লিল্লা-হি রাব্বিল আ-লামীন আর রাহ্মা-নির রাহীম, মা-লিকি য়্যাউমিদ্দ্বীন, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু য়্যাফআলু মা য়্যুরীদ, আল্লা-হুম্মা আন্তাল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা আন্ত, আন্তাল গানিইয়্যু অনাহ্নুল ফুক্বারা-’, আনযিল আলাইনাল গাইসা অজ্আল মা আনযালতা লানা ক্বুউওয়াতাউঅ বালা-গান ইলা-হীন।
অর্থ:- সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর নিমি ত্তে। যিনি বিশ্বজাহানের প্রতিপালক। যিনি অসীম করুণাময়, দয়াবান। বিচার দিবসের অধিপতি। আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই, তিনি যা ইচ্ছা তাই করেন। হে আল্লাহ! তুমিই আল্লাহ! তুমি ছাড়া কোন সত্য আরাধ্য নেই। তুমিই অভাবমুক্ত এবং আমরা অভাবগ্রস্ত। আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ কর এবং যা বর্ষণ করেছ তা আমাদের জন্য নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত শক্তি ও যথেষ্টতার কারণ বানাও। (আবূদাঊদ, সুনান ১১৭৩নং)
২- اَللّهُمَّ اسْقِنَا غَيْثاً مُّغِيْثاً مَّرِيْئاً مَّرِيْعاً نَافِعاً غَيْرَ ضَارٍّ عَاجِلاً غَيْرَ آجِلٍ।
উচ্চারণ:- আল্লা-হুম্মাসক্বিনা গাইষাম মুগীষাম মারীআম মারীআ’ন না-ফিআন গাইরা যা-রিGন আ’-জিলান গাইরা আ-জিল।
অর্থ- আল্লাহ গো! আমাদেরকে বৃষ্টি দান কর, প্রয়োজন পূর্ণকারী স্বাচ্ছন্দ্য ও উর্বরতা আনয়নকারী, লাভদায়ক ও হিতকর, এবং বিলম্বে নয় অবিলম্বে বর্ষণশীল বৃষ্টি। (আবূদাঊদ, সুনান ১১৬৯নং)
৩- اَللّهُمَّ أَغِثْنَا، اَللّهُمَّ أَغِثْنَا، اَللّهُمَّ أَغِثْنَا।
উচ্চারণ- আল্লা-হুম্মা আগিষনা, আল্লা-হুম্মা আগিষনা, আল্লা-হুম্মা আগিষনা।
অর্থ- হে আল্লাহ! আমাদের জন্য পানি বর্ষণ কর। (বুখারী, মুসলিম, সহীহ ৮৯৭নং)
৪- اَللّهُمَّ اسْقِ عِبَادَكَ وَبَهَائِمَكَ وَانْشُرْ رَحْمَتَكَ وَأَحْيِ بَلَدَكَ الْمَيِّتَ।
উচ্চারণ:- আল্লা-হুম্মাসক্বি ইবা-দাকা অবাহা-ইমাকা অনশুর রাহ্মাতাকা অআহ্য়ি বালাদাকাল মাইয়্যিত।
অর্থ:- হে আল্লাহ! তোমার বান্দাদের ও প্রাণীদের উপর পানি বর্ষণ কর এবং তোমার রহ্মত ছড়িয়ে দাও। আর তোমার মৃত দেশকে জীবিত কর। (আবূদাঊদ, সুনান ১১৭৬নং) [1]
অতিবৃষ্টি হলে
اَللهُمَّ حَوَالَيْنَا وَلاَ عَلَيْنَا، اَللّهُمَّ عَلَى الآكَامِ وَالظِّرَابِ وَ بُطُوْنِ الأَوْدِيَةِ وَمَنَابِتِ الشَّجَرِ।
উচ্চারণ:- আল্লা-হুম্মাহাওয়া-লাইনা অলা আলাইনা, আল্লা-হুম্মা আলাল আ-কামি অযযিরা-বি অবুতূনিল আউদিয়াতি অমানা-বিতিশ শাজার।
অর্থ:- হে আল্লাহ! আমাদের আশে-পাশে বর্ষাও, আমাদের উপরে নয়। হে আল্লাহ! পাহাড়, টিলা, উপত্যকা এবং বৃক্ষাদির উদগত হওয়ার স্থানে বর্ষাও। (বুখারী, মুসলিম, সহীহ ৮৯৭নং)
জানাযার নামায সম্পর্কে লেখক কর্তৃক প্রণীত ‘জানাযা দর্পণ’ দ্রষ্টব্য।