যে নামায পড়া বাধ্যতামূলক নয়, যা ত্যাগ করলে গুনাহ হয় না কিন্তু পড়লে সওয়াব হয় সেই শ্রেণীর নামাযের বড় মাহাত্ম রয়েছে শরীয়তে।
রসূল (ﷺ) বলেন, “কিয়ামতের দিন বান্দার নিকট থেকে তার আমলসমূহের মধ্যে যে আমলের হিসাব সর্বাগ্রে নেওয়া হবে, তা হল নামায। নামায ঠিক হলে সে পরিত্রাণ ও সফলতা লাভ করবে। নচেৎ (নামায ঠিক না হলে) ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সুতরাং (হিসাবের সময়) ফরয নামাযে কোন কমতি দেখা গেলে আল্লাহ তাবারাকা অতাআলা ফিরিশ্তাদের উদ্দেশ্যে বলবেন, ‘দেখ, আমার বান্দার কোন নফল (নামায) আছে কি না।’ অতএব তার নফল নামায দ্বারা ফরয নামাযের ঘাটতি পূরণ করা হবে। অতঃপর আরো সকল আমলের হিসাব অনুরুপ গ্রহণ করা হবে।” (আবূদাঊদ, সুনান ৭৭০, তিরমিযী, সুনান ৩৩৭, সইবনে মাজাহ্, সুনান ১১৭নং, সহিহ তারগিব ১/১৮৫)
মহানবী (ﷺ) বলেন, আল্লাহ বলেন, “যে ব্যক্তি আমার ওলীর বিরুদ্ধে শত্রুতা পোষণ করবে, আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করব। বান্দা যা কিছু দিয়ে আমার নৈকট্য লাভ করে থাকে তার মধ্যে আমার নিকট প্রিয়তম হল সেই ইবাদত, যা আমি তার উপর ফরয করেছি। আর সে নফল ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য অর্জন করতে থাকে। পরিশেষে আমি তাকে ভালোবাসি। অতঃপর আমি তার শোনার কান হয়ে যাই, তার দেখার চোখ হয়ে যাই, তার ধরার হাত হয়ে যাই, তার চলার পা হয়ে যাই! সে আমার কাছে কিছু চাইলে আমি অবশ্যই তাকে তা দান করি। সে আমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করলে আমি অবশ্যই তাকে আশ্রয় দিয়ে থাকি। আর আমি যে কাজ করি তাতে কোন দ্বিধা করি না -যতটা দ্বিধা করি এজন মুমিনের জীবন সম্পর্কে; কারণ, সে মরণকে অপছন্দ করে। আর আমি তার (বেঁচে থেকে) কষ্ট পাওয়াকে অপছন্দ করি।” (বুখারী ৬৫০২নং)
উল্লেখ্য যে, আল্লাহ বান্দার কান, চোখ, হাত ও পা হওয়ার অর্থ হল, বান্দা আল্লাহর সন্তুষ্টি মতেই এ সবকে ব্যবহার করে। যাতে ব্যবহার করলে তিনি অসন্তুষ্ট, তাতে সে ঐ সকল অঙ্গকে ব্যবহার করে না।
ফরয নামায বিধিবদ্ধ হয়েছে দ্বীনের প্রচার ও তার প্রতীকের বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর উদ্দেশ্যে। তাই ফরয নামায প্রকাশ্যভাবে লোক মাঝে প্রতিষ্ঠা করা হয়। পক্ষান্তরে নফল নামায বিধিবদ্ধ হয়েছে নিছক মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে তাঁর নৈকট্য লাভ করার লক্ষ্যে। সুতরাং নফল নামায যত গুপ্ত হবে, তত লোকচক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ তথা ‘রিয়া’ থেকে অধিক দূর ও পবিত্র হবে। (ফাইযুল ক্বাদীর ৪/২২০) আর সে জন্যই নফল নামায স্বগৃহে গোপনে পড়া উত্তম।
তাছাড়া নফল নামায ঘরে পড়লে নামাযের তরীকা ও গুরুত্ব পরিবার-পরিজনের কাছে প্রকাশ পায়। আর এ জন্য হুকুম হল, “তোমরা ঘরে নামায পড় এবং তা কবর বানিয়ে নিও না।” (বুখারী ৪৩২, মুসলিম, সহীহ ৭৭৭, আবূদাঊদ, সুনান ১৪৪৮, তিরমিযী, সুনান, নাসাঈ, সুনান, জামে ৩৭৮৪নং) অর্থাৎ, কবরে বা কবরস্থানে যেমন নামায নেই বা হয় না সেইরুপ নিজের ঘরকেও নামাযহীন করে রেখো না।
মহানবী (ﷺ) আরো বলেন, “তোমরা স্বগৃহে নামায পড় এবং তাতে নফল পড়তে ছেড়ো না।” (সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ১৯১০, জামে ৩৭৮৬নং)
আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেন, “তোমাদের কেউযখন মসজিদে (ফরয) নামায সম্পন্ন করে তখন তার উচিৎ, সে যেন তার নামাযের কিছু অংশ (সুন্নত নামায) নিজের বাড়ির জন্য রাখে। কারণ বাড়িতে পড়া ঐ কিছু নামাযের মধ্যে আল্লাহ কল্যাণ নিহিত রেখেছেন।” (মুসলিম, সহীহ ৭৭৮নং)
মহানবী (ﷺ) বলেন, “হে মানবসকল! তোমরা স্বগৃহে নামায আদায় কর। যেহেতু ফরয নামায ছাড়া মানুষের শ্রেষ্ঠতম নামায হল তার স্বগৃহে পড়া নামায।” (নাসাঈ, সুনান, ইবনে খুযাইমাহ্, সহীহ, সহিহ তারগিব ৪৩৭নং)
নবী মুবাশ্শির (ﷺ) বলেন, “যেখানে লোকে দেখতে পায় সেখানে মানুষের নফল নামায অপেক্ষা যেখানে লোকে দেখতে পায় না সেখানের নামায ২৫ টি নামাযের বরাবর।” (আবূ য়্যা’লা, জামে ৩৮২১নং)
আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেন, “লোকচক্ষুর সম্মুখে (নফল) নামায পড়া অপেক্ষা মানুষের স্বগৃহে নামায পড়ার ফযীলত ঠিক সেইরুপ, যেরুপ নফল নামায অপেক্ষা ফরয নামাযের ফযীলত বহুগুণে অধিক।” (বায়হাকী, সহিহ তারগিব ৪৩৮নং)
এমন কি মদ্বীনাবাসীর জন্যও মসজিদে নববীতে নফল নামায পড়ার চাইতে নিজ নিজ ঘরে পড়া বেশী উত্তম। (আবূদাঊদ, সুনান, জামে ৩৮১৪নং)
নফল নামায সাধারণত: একার নামায। তাই তাতে ইচ্ছামত লম্বা ক্বিরাআত করা যায়। বরং এই নামাযে কিয়াম লম্বা করা মুস্তাহাব। মহানবী (ﷺ)-কে জিজ্ঞাসা করা হল যে, সবচেয়ে উত্তম নামায কি? উত্তরে তিনি বললেন, “লম্বা কিয়াম বিশিষ্ট নামায।” (আবূদাঊদ, সুনান ১৪৪৯নং)
আর এ কথা বিদিত যে, মহানবী (ﷺ) তাহাজ্জুদের নামাযে এত লম্বা কিয়াম করতেন যে, তাতে তাঁর পা ফুলে যেত। সাহাবাগণ বলেছিলেন, আল্লাহ আপনার আগের-পরের সকল গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন তবুও আপনি কেন অনুরুপ নামায পড়েন? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, “আমি কি আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হ্ব না?” (বুখারী, মুসলিম, আহমাদ, মুসনাদ, তিরমিযী, সুনান, নাসাঈ, সুনান ইবনে মাজাহ্, সুনান, মিশকাত ১২২০নং)
ইতিপূর্বে আলোচিত হয়েছে যে, সক্ষম হলে ফরয নামায দাঁড়িয়ে পড়া ফরয। কিন্তু নফল নামায ক্ষমতা থাকতেও বসে পড়াও বৈধ। যদিও বসে নামায পড়ার সওয়াব দাঁড়িয়ে নামায পড়ার সওয়াবের অর্ধেক। মহানবী (ﷺ) বলেন, “বসে নামায পড়ার সওয়াব অর্ধেক নামাযের বরাবর।” (বুখারী, মিশকাত ১২৪৯নং)
বরং নফল নামায চিৎ হয়ে শুয়েও পড়া যায়। তবে এ অবস্থায় বসে পড়ার অর্ধেক সওয়াব হবে। মহানবী (ﷺ) বলেন, “আর শুয়ে নামায পড়ার সওয়াব বসে নামায পার অর্ধেক।” (বুখারী ১১১৬নং, আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ৪/১১৩-১১৪)
নফল নামাযের কিছু অংশ দাঁড়িয়ে এবং কিছু অংশ বসে পড়া যায়। বরং একই কিয়ামের কিছু অংশ দাঁড়িয়ে এবং কিছু অংশ বসে ক্বিরাআত করা যায়। তাতে কিয়ামের প্রথম অথবা শেষ অংশ বসে হলেও কোন দোষাবহ্ নয়।
হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘তিনি বসে ক্বিরাআত করতেন। অতঃপর রুকূ করার ইচ্ছা করলে উঠে দাঁড়িয়ে যেতেন।’ (মুসলিম, সহীহ ৭৩১নং)
মা আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘রাতের নামাযে আমি নবী (ﷺ)-কে বসে ক্বিরাআত করতে দেখিনি। অতঃপর তিনি যখন বার্ধক্যে উপনীত হলেন, তখন তিনি বসে ক্বিরাআত করতেন। পরিশেষে যখন ৪০ বা ৩০ আয়াত বাকী থাকত, তখন তিনি খাড়া হয়ে তা পাঠ করতেন। অতঃপর (রুকূ) সিজদা করতেন।’ (মুসলিম, সহীহ ৭৩১নং, আহমাদ, মুসনাদ, সুনানু আরবাআহ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ্)
সুন্নত নামায ছুটে গেলে কাযা পড়া সুন্নত, জরুরী নয়। পক্ষান্তরে ইচ্ছা করে ছেড়ে দিলে তার কাযা নেই। পড়লে তা মকবুলও নয়। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ৪/১০২)
ফরয নামায ছাড়া অন্যান্য নামায দুই প্রকার। প্রথম প্রকার হল সেই নামায, যা (সময় ও রাকআত সংখ্যা দ্বারা) নির্দিষ্ট নয়। এ নামায নিষিদ্ধ সময় ছাড়া যে কোন সময়ে অনির্দিষ্ট রাকআতে পড়া যায়। আর দ্বিতীয় প্রকার হল সেই নামায, যা (সময় ও রাকআত সংখ্যা দ্বারা) নির্দিষ্ট। যে নামাযের নির্দিষ্ট সময় ও রাকআত সংখ্যা মহানবী (ﷺ) কর্তৃক প্রমাণিত আছে। এই শ্রেণীর নামায আবার দুই প্রকার; সুন্নাতে মুআক্কাদাহ ও গায়র মুআক্কাদাহ।
যে সুন্নত ফরয নামাযের আগে-পিছে পড়া হয় তা হল দুই প্রকার। প্রথম প্রকার হল, সুন্নাতে মুআক্কাদাহ বা সুন্নাতে রাতেবাহ্। আর দ্বিতীয় হল, সুন্নাতে গায়র মুআক্কাদাহ বা গায়র রাতেবাহ্। (ফিকহুস সুন্নাহ্ উর্দু ১৬০পৃ: দ্র:)
সুন্নাতে মুআক্কাদাহ সেই সুন্নত নামায, যা মহানবী (ﷺ) ফরয নামাযের আগে-পিছে নিজে পড়েছেন এবং উম্মতকে পড়তে তাকীদ, উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করেছেন।
আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেন, “যে কোন মুসলিম বান্দা প্রত্যহ্ আল্লাহ তাআলার উদ্দেশ্যে বারো রাকআত নফল (ফরয ব্যতীত সুন্নত) নামায পড়লেই আল্লাহ তাআলা জান্নাতে তার জন্য এক গৃহ্ নির্মাণ করেন। অথবা তার জন্য জান্নাতে এক ঘর নির্মাণ করা হয়।” (মুসলিম, সহীহ ৭২৮নং, আবূদাঊদ, সুনান, নাসাঈ, সুনান, তিরমিযী, সুনান)
তিরমিযীর বর্ণনায় কিছু শব্দ অধিক রয়েছে, “(ঐ বারো রাকআত নামায;) যোহরের (ফরযের) পূর্বে চার রাকআত ও পরে দুই রাকআত, মাগরেবের পরে দুই রাকআত, এশার পরে দুই রাকআত, আর ফজরের (ফরয নামাযের) পূর্বে দুই রাকআত।”
হযরত আয়েশা رضي الله عنها হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি নিয়মনিষ্ঠভাবে দিবারাত্রে বারো রাকআত নামায পড়বে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে; যোহরের (ফরয নামাযের) পূর্বে চার রাকআত ও পরে দুই রাকআত, মাগরেবের পর দুই রাকআত, এশার পর দুই রাকআত এবং ফজরের (ফরযের) পূর্বে দুই রাকআত।” (নাসাঈ, সুনান, এবং শব্দগুলি তাঁরই, তিরমিযী, সুনান, ইবনে মাজাহ্, সুনান, সহিহ তারগিব ৫৭৭নং)
এই নামাযের ফযীলত :
হযরত আয়েশা رضي الله عنها হতে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেন, “ফজরের দুই রাকআত (সুন্নত) পৃথিবী ও তন্মধ্যস্থিত সকল বস্তু অপেক্ষা উত্তম।” (মুসলিম ৭২৫নং, তিরমিযী)
মা আয়েশা رضي الله عنها বলেন, ‘নবী (ﷺ) ফজরের সুন্নতের মত অন্য কোন নফল নামাযে তত নিষ্ঠা প্রদর্শন করতেন না।’ (আহমাদ, মুসনাদ, বুখারী, মুসলিম, সহীহ)
হযরত আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেছেন, “(ফজরের সময়) যে ব্যক্তি (স্বগৃহে) ওযু করে। অতঃপর মসজিদে এসে ফজরের (ফরয) নামাযের পূর্বে দুই রাকআত নামায পড়ে। অতঃপর বসে (অপেক্ষা ক’রে) ফজরের নামায (জামাআতে) পড়ে, সেই ব্যক্তির সেদিনকার নামায নেক লোকদের নামাযরুপে লিপিবদ্ধ করা হয়। আর তার নাম পরম করুণাময় (আল্লাহর) প্রতিনিধিদলের তালিকাভুক্ত হয়।” (ত্বাবারানীরানী, মু’জাম, সহিহ তারগিব ৪১৩নং)
এ নামাযকে হাল্কা করে পড়া :
হযরতহাফসা (রাঃ) বলেন, নবী (ﷺ) ফজরের নামাযের পূর্বে আমার ঘরে দুই রাকআত সুন্নত পড়তেন এবং তা খুবই হাল্কা করে পড়তেন।’ (আহমাদ, মুসনাদ, বুখারী, মুসলিম, সহীহ)
হযরত আয়েশা رضي الله عنها বলেন, ‘ নবী (ﷺ) ফজরের নামাযের পূর্বে দুই রাকআত নামায পড়তেন এবং তা এত সংক্ষেপে পড়তেন যে, আমি সন্দেহ্ করতাম, তিনি তাতে সূরা ফাতিহা পড়লেন কি না।’ (আহমাদ, মুসনাদ)
এ নামাযের ক্বিরাআত :
এই নামাযের প্রথম রাকআতে নবী মুবাশ্শির (ﷺ) সূরা কাফিরুন এবং দ্বিতীয় রাকআতে সূরা ইখলাস (ক্বুল হুওয়াল্লাহু আহাদ) পড়তেন। (মুসলিম, সহীহ ৭২৬, আবূদাঊদ, সুনান ১২৫৬, তিরমিযী, সুনান ৪১৭, ইবনে মাজাহ্, সুনান ১১৪৯নং)
তিনি বলতেন, “উত্তম সূরা সে দুটি, যে দুটি ফজরের পূর্বে দুই রাকআতে পড়া হয়; ‘ক্বুল ইয়া আইয়্যুহাল কাফিরুন’ এবং ‘ক্বুল হুওয়াল্লাহু আহাদ।” (ইবনে মাজাহ্, সুনান ১১৫০, ইবনে হিব্বান, সহীহ, বায়হাকী শুআবুল ঈমান, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ৬৪৬নং)
কখনো কখনো তিনি এই নামাযের প্রথম রাকআতে সূরা বাক্বারার ১৩৬ নং আয়াত এবং দ্বিতীয় রাকআতে সূরা আলে ইমরানের ৬৪নং আয়াত পাঠ করতেন। (মুসলিম, সহীহ ৭২৭নং, ইবনে খুযাইমাহ্, সহীহ,হাকেম, মুস্তাদরাক, বায়হাকী)
আবার কোন কোন সময়ে প্রথম রাকআতে সূরা বাক্বারার ১৩৬নং আয়াত এবং দ্বিতীয় রাকআতে সূরা আলে ইমরানের ৫২ নং আয়াত পড়তেন। (আবূদাঊদ, সুনান ১২৫৯নং)
এ ছাড়া ফজরের সুন্নত হাল্কা করে পড়া সুন্নত। অতএব তাতে যদি কেবল সূরা ফাতিহা পড়া যায়, তাহলেও বৈধ। (ফিকহুস সুন্নাহ্)
প্রকাশ থাকে যে, ফজরের সুন্নত পড়ার পর নির্দিষ্ট কোন দুআ পড়ার হাদীস সহীহ নয়। (তামামুল মিন্নাহ্, আলবানী ২৩৮-২৩৯পৃ:)
এই নামাযের পর ডান কাতে শয়ন :
হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘নবী (ﷺ) যখন ফজরের সুন্নত পড়ে নিতেন, তখন ডান কাতে শয়ন করতেন।’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ১১৯০নং)
তিনি আরো বলেন, ‘নবী (ﷺ) ফজরের সুন্নত পড়তেন। তারপর যদি আমি ঘুমিয়ে থাকতাম তাহলে তিনি শয়ন করতেন। নচেৎ, আমি জেগে থাকলে তিনি আমার সঙ্গে কথা বলতেন।’ (আহমাদ, মুসনাদ, বুখারী, মুসলিম, সুনানু আরবাআহ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ্), মিশকাত ১১৮৯নং)
মহানবী (ﷺ) বলেন, “তোমাদের কেউ যখন ফজরের দুই রাকআত সুন্নত পড়ে নেয়, তখন সে যেন ডান কাতে শয়ন করে।” (আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, ইবনে হিব্বান, সহীহ, ইবনে খুযাইমাহ্, সহীহ, জামে ৬৪২নং)
সম্ভবত: উক্ত শয়ন যে ব্যক্তি তাহাজ্জুদ পড়বে তার জন্য সুন্নত। যাতে একটানা নামায পড়ার পর ফরয নামায পড়ার আগে একটু জিরিয়ে নিতে পারে। পরন্তু তার জন্য সুন্নত নয়, যে একবার মাটিতে পার্শ্ব রাখলে চট করে ঘুমিয়ে পড়ে এবং তার ফলে ফজরের জামাআতই ছুটে যায়। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ৪/১০০)
তদনুরুপ উক্ত শয়ন যে ব্যক্তি বাসায় সুন্নত পড়বে তার জন্য সুন্নত ও মুস্তাহাব। পক্ষান্তরে যে মসজিদে সুন্নত পড়বে তার জন্য মুস্তাহাব নয়। কারণ, মহানবী (ﷺ)-এর শয়নের কথা তাঁর বাসায় থাকা অবস্থায় উল্লেখ হয়েছে। মসজিদে সুন্নত পড়ে যে তিনি শয়ন করতেন, তার উল্লেখ নেই। ইবনে উমার উক্ত মত পোষণ করতেন। তাই মসজিদে কেউ ফজরের সুন্নতের পর শয়ন করলে তাকে কাঁকর ছুঁড়ে উঠিয়ে দিতেন। (ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার, ইবনে আবী শাইবা, ফিকহুস সুন্নাহ্ ১/১৬৬)
এই জন্যই ফজরের সুন্নতের পর মসজিদে শয়নকে অনেকে বিদআত বলে মন্তব্য করেছেন। (মু’জামুল বিদা’ ৩৩৭পৃ:)
এই নামাযের কাযা :
অন্যান্য সুন্নাতে মুআক্কাদাহ নামাযের তুলনায় উক্ত নামাযের এত বেশী গুরুত্ব যে, মহানবী (ﷺ) ঘরে-সফরে তা পড়তেন এবং তা ছুটে গেলে কাযা করতে উদ্বুদ্ধ করতেন।
একদা মহানবী (ﷺ) সাহাবাবর্গের সাথে এক সফরে ছিলেন। ফজরের নামাযের সময় সকলে গভীরভাবে ঘুমিয়ে থাকলে সময় উত্তীর্ণ হয়ে গেল। সূর্যের ছটা তাঁদের মুখে লাগলে চেতন হলেন। অতঃপর একটু সরে গিয়ে মহানবী (ﷺ) বিলাল (রাঃ)-কে আযান দিতে বললেন। এরপর ফজরের দুই রাকআত সুন্নত পড়লেন। তারপর ইকামত দিয়ে ফজরের ফরয পড়লেন। (আহমাদ, মুসনাদ, বুখারী,মুসলিম, সহীহ ৬৮১নং)
উক্ত নামায কাযা করার দুটি সময় হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। ফজরের পর কোন নফল পড়া নিষিদ্ধ হলেও ফজরের আগে ছুটে যাওয়া সুন্নতকে ফরযের পর পড়া যায়। আর এটি হল ব্যতিক্রম নামায। একদা এক ব্যক্তি মসজিদে এসে দেখল আল্লাহর নবী (ﷺ) ফজরের ফরয পড়ছেন। সে সুন্নত না পড়ে জামাআতে শামিল হয়ে গেল। অতঃপর জামাআত শেষে উঠে ফজরের ছুটে যাওয়া দুই রাকআত সুন্নত আদায় করল। মহানবী (ﷺ) তার কাছে এসে বললেন, “এটি আবার কোন্ নামায? (ফজরের নামায কি দুইবার?)” লোকটি বলল, ‘ফজরের দুই রাকআত সুন্নত ছুটে গিয়েছিল।’ এ কথা শুনে তিনি আর কিছুই বললেন না (চুপ থাকলেন)। (আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান ১২৬৭, তিরমিযী, সুনান, ইবনে মাজাহ্, সুনান ১১৫৪, ইবনে খুযাইমাহ্, সহীহ, ইবনে হিব্বান, সহীহ)
আর এক হাদীসে মহানবী (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তি ফজরের ২ রাকআত (সুন্নত) না পড়ে থাকে, সে যেন তা সূর্য ওঠার পর পড়ে নেয়।” (আহমাদ, মুসনাদ, তিরমিযী, সুনান,হাকেম, মুস্তাদরাক, ইবনে খুযাইমাহ্, সহীহ, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ২৮৩, জামে ৬৫৪২নং)
এই নামায বিষয়ক আরো কিছু মাসায়েল :
মসজিদে এসে সুন্নাতে মুআক্কাদাহ পড়লে পৃথক আর তাহিয়্যাতুল মসজিদ নামায পড়ার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু কেউ যদি তা পড়ে সুন্নাতে মুআক্কাদাহ পড়ে তাহলেও কোন ক্ষতি হয় না। তবুও ফজরের সময় উত্তম হল তাহিয়্যাতুল মাসজিদ না পড়ে কেবল ফজরের সুন্নত পড়া। কারণ, মহানবী (ﷺ) ফজরের সুন্নতই বড় সংক্ষেপে পড়তেন। (ফাতাওয়া তাতাআল্লাকু বিজামাআতিল মাসজিদ ১৭-১৮পৃ:) তাছাড়া তিনি বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে উপস্থিত ব্যক্তি অনুপস্থিত ব্যক্তিকে যেন পৌঁছে দেয় যে, ফজরের (আযানের) পর দু’ রাকআত (সুন্নত) ছাড়া আর কোন (নফল) নামায পড়ো না।” (আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান ১২৭৮ নং) “ফজরের পর দুই রাকআত ছাড়া আর কোন নামায নেই।” (তিরমিযী, সুনান, ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৪৭৮, জামে ৭৫১১নং)
নবী মুবাশ্শির (ﷺ) যোহরের সুন্নত কখনো ৪ রাকআত পড়তেন; ২ রাকআত ফরযের পূর্বে এবং ২ রাকআত ফরযের পরে।
ইবনে উমার (রাঃ) বলেন, ‘আমি নবী (ﷺ)-এর নিকট থেকে ১০ রাকআত নামায ±মরণে রেখেছি; ২ রাকআত যোহরের পূর্বে, ২ রাকআত যোহরের পরে, ২ রাকআত মাগরেবের পরে নিজ ঘরে, ২ রাকআত এশার পরে নিজ ঘরে এবং ২ রাকআত ফজরের নামাযের পূর্বে।’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ১১৬০নং)
কখনো ৬ রাকআত পড়তেন; ৪ রাকআত ফরযের পূর্বে এবং ২ রাকআত ফরযের পরে।
আব্দুল্লাহ বিন শাকীক মা আয়েশা (রাঃ)কে আল্লাহর রসূল (ﷺ)-এর সুন্নত প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে উত্তরে তিনি বললেন, ‘তিনি যোহরের আগে ৪ রাকআত এবং যোহরের পরে ২ রাকআত নামায পড়তেন।’ (আহমাদ, মুসনাদ, মুসলিম, আবূদাঊদ, সুনান, মিশকাত ১১৬২নং)
আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেন, “যে কোন মুসলিম বান্দা প্রত্যহ্ আল্লাহ তাআলার উদ্দেশ্যে বারো রাকআত নফল (ফরয ব্যতীত সুন্নত) নামায পড়লেই আল্লাহ তাআলা জান্নাতে তার জন্য এক গৃহ্ নির্মাণ করেন। অথবা তার জন্য জান্নাতে এক ঘর নির্মাণ করা হয়। (ঐ বারো রাকআত নামায;) যোহরের (ফরযের) পূর্বে চার রাকআত ও পরে দুই রাকআত, মাগরেবের পরে দুই রাকআত, এশার পরে দুই রাকআত, আর ফজরের (ফরয নামাযের) পূর্বে দুই রাকআত।” (মুসলিম, তিরমিযী, সুনান, মিশকাত ১১৫৯নং)
আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি নিয়মনিষ্ঠভাবে দিবারাত্রে বারো রাকআত নামায পড়বে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে; যোহরের (ফরয নামাযের) পূর্বে চার রাকআত ও পরে দুই রাকআত, মাগরেবের পর দুই রাকআত, এশার পর দুই রাকআত এবং ফজরের (ফরযের) পূর্বে দুই রাকআত।” (নাসাঈ, সুনান, শব্দগুলি তাঁরই, তিরমিযী, সুনান, ইবনে মাজাহ্, সুনান, সহিহ তারগিব৫৭৭নং)
তিনি কখনো বা ৮ রাকআত পড়তেন; ৪ রাকআত ফরযের পূর্বে এবং ৪ রাকআত ফরযের পরে।
হযরত উম্মেহাবীবা رضي الله عنها কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল (ﷺ) এর নিকট শুনেছি, তিনি বলেছেন, “যে ব্যক্তি যোহরের পূর্বে ৪ রাকআত এবং পরে ৪ রাকআত (সুন্নত নামাযের) প্রতি সবিশেষ যত্নবান হবে, আল্লাহ তাকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দেবেন।” (আহমাদ, মুসনাদ, সুনানু আরবাআহ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ্), মিশকাত ১১৬৭, সহিহ তারগিব ৫৮১নং)
আব্দুল্লাহ বিন সায়েব বলেন, ‘আল্লাহর রসূল (ﷺ) সূর্য ঢলার পর যোহরের আগে ৪ রাকআত নামায পড়তেন এবং বলতেন, “এটা হল এমন সময়, যে সময়ে আসমানের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করা হয়। আর আমি পছন্দ করি যে, এই সময়ে আমার নেক আমল উত্থিত হোক।” (তিরমিযী, সুনান, মিশকাত ১১৬৯নং)
যোহরের পূর্বে ৪ রাকআত সুন্নত, সওয়াবে ৪ রাকআত তাহাজ্জুদ পড়ার সমান। (ইবনে আবী শাইবা, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ১৪৩১নং)
প্রকাশ থাকে যে, যোহরের পূর্বে বা পরে ঐ ৪ রাকআত করে নামায ২ রাকআত করে পড়ে সালাম ফিরা উত্তম। কারণ, মহানবী (ﷺ) বলেন, “রাত ও দিনের নামায ২ রাকআত করে।” (আবূদাঊদ, সুনান) তবে একটানা ৪ রাকআত এক সালামেও পড়া বৈধ। (সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ১/৪৭৭, ২৩৭নং) মহানবী (ﷺ) বলেন, “যোহরের পূর্বে ৪ রাকআত; (যার মাঝে কোন সালামনেই,) তার জন্য আসমানের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করা হয়।” (আবূদাঊদ, সুনান ১২৭০, ইবনে মাজাহ্, সুনান ১১৫৭, ইবনে খুযাইমাহ্, সহীহ ১২১৪, জামে ৮৮৫নং, শেষ তাহক্কীকে বন্ধনীর মাঝের শব্দগুলি সহীহ নয়।)
আবূ আইয়ুব আনসারী (রাঃ) বলেন, নবী (ﷺ) সূর্য ঢলার সময় ৪ রাকআত নামায প্রত্যহ্ পড়তেন। একদা আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনি সূর্য ঢলার সময় এই ৪ রাকআত প্রত্যহ্ পড়ছেন?’ তিনি বললেন, “সূর্য ঢলার সময় আসমানের দরজাসমূহ খোলা হয় এবং যোহরের নামায না পড়া পর্যন্ত বন্ধ করা হয় না। অতএব আমি পছন্দ করি যে, এই সময় আমার নেক আমল (আকাশে আল্লাহর নিকট) উঠা হোক।” আমি বললাম, ‘তার প্রত্যেক রাকআতেই কি ক্বিরাআত আছে?’ তিনি বললেন, “হ্যাঁ।” আমি বললাম, ‘তার মাঝে কি পৃথককারী সালাম আছে?’ তিনি বললেন, “না।” (মুখতাসারুশ শামাইলিল মুহাম্মাদিয়্যাহ্, আলবানী ২৪৯নং)
অবশ্য অনেকের মতে ঐ নামায যাওয়ালের সুন্নত।
তবে মসজিদে গিয়ে পড়লে জামাআতের সময় খেয়াল রেখে এক সালাম বা ২ সালামের নিয়ত করতে হয়। যাতে সময় সংকীর্ণ হলে এবং ৩ রাকআত পূর্ণ না হতে হতে ইকামত না হয়ে বসে। নচেৎ, সুন্নত ত্যাগ করে জামাআতে শামিল হতে হলে সবটুকুই বরবাদ যাবে। পক্ষান্তরে ২ রাকআত করে পড়লে নষ্ট হওয়ার ভয় থাকবে না।
এই সুন্নতের কাযা :
সুন্নত কাযা পড়া সুন্নত; জরুরী নয়। কারণবশত: যোহরের পূর্বের সুন্নত পড়তে না পারলে ফরযের (পরের সুন্নতের) পরে তা কাযা করা বিধেয়। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘নবী (ﷺ) যোহরের পূর্বের ৪ রাকআত পড়তে না পারলে (ফরযের) পরে তা পড়ে নিতেন।’ (তিরমিযী, সুনান, তামামুল মিন্নাহ্, আলবানী ২৪১পৃ:)
তদনুরুপ যোহরের পরের সুন্নত পড়তে সময় না পেয়ে যোহরের ওয়াক্ত অতিবাহিত হলেও আসরের পর (নিষিদ্ধ সময় হলেও) তা কাযা পড়া যায়। উম্মে সালামাহ্ (রাঃ) বলেন, ‘একদা আল্লাহর রসূল (ﷺ) যোহরের (ফরয) নামায পড়লেন। ইতি অবসরে কিছু (সাদকার) মাল এসে উপস্থিত হল। তিনি তা ব ন্ট ন করতে বসলেন। এরপর আসরের আযান হয়ে গেল। তিনি আসরের নামায পড়লেন। তারপর আমার ঘরে ফিরে এলেন। সেদিন ছিল আমার (ঘরে তাঁর থাকার পালি)। তিনি এসে ২ রাকআত হাল্কা করে নামায পড়লেন। আমরা বললাম, ‘এ ২ রাকআত কোন্ নামায হে আল্লাহর রসূল? আপনি কি তা পড়তে আদিষ্ট হয়েছেন?’ তিনি বললেন, “না, আসলে এটা হল সেই ২ রাকআত নামায, যা আমি যোহরের পর পড়ে থাকি। কিন্তু আজ এই মাল এসে গেলে তা বন্টন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লে আসরের আযান হয়ে যায়। ফলে ঐ নামায আমার বাদ পড়ে যায়। আর তা ছেড়ে দিতেও আমি অপছন্দ করলাম।” (আহমাদ, মুসনাদ, বুখারী, মুসলিম, আবূদাঊদ, সুনান)
আর এ কথা বিদিত যে, মহানবী (ﷺ) যে আমল একবার করতেন, তা নিয়মিত করে যেতেন এবং বর্জন করতে পছন্দ করতেন না। যার জন্য মা আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘আল্লাহর রসূল (ﷺ) আসরের পর আমার কাছে ২ রাকআত (তাঁর ইন্তিকাল অবধি) কখনো ত্যাগ করেননি।’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ১১৭৮নং)
উল্লেখ্য যে, ঐ ২ রাকআত নামায মহানবী (ﷺ)-এর অনুকরণে আমরাও পড়তে পারি। অবশ্য আসরের পর নিষিদ্ধ সময় হলেও সূর্য হ্লুদবর্ণ হলে তবেই সে সময় নামায নিষিদ্ধ। (আবূদাঊদ, সুনান ১২৭৪নং) তার আগে নয়। (বিস্তারিত দ্র: সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ৬/১০১০-১০১৪)