রোগী হলেও জ্ঞান বর্তমান থাকা কাল পর্যন্ত কারো জন্য কোন অবস্থায় নামায মাফ নয়। ওযূ-গোসল না করতে পারলে তায়াম্মুম করে, তা না পারলেও বিনা তায়াম্মুমেই নামায পড়া জরুরী। পবিত্র না থাকতে পারলে অপবিত্র অবস্থাতেই, পবিত্র জায়গা না পেলে অপবিত্র জায়গাতেই নামায পড়তে হবে।
রোগী দাঁড়িয়ে নামায না পড়তে পারলে বসে নামায পড়বে। দুই পা-কে গুটিয়ে আড়াআড়িভাবে রেখে হাঁটু ভাঁজ করে (বাবু হয়ে) বসবে। কখনো কখনো প্রয়োজনে মহানবী (ﷺ) অনুরুপ বসে নামায পড়তেন। (নাসাঈ, সুনান,হাকেম, মুস্তাদরাক) আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) অসুবিধার কারণে নামাযে অনুরুপ বসতেন। (বুখারী ৮২৭নং) অবশ্য তাশাহহুদের বৈঠকে বসার মতও বসে নামায পড়তে পারে। (ফিকহুস সুন্নাহ্ আরবী ১/২৪৩)
বসে না পারলে (ডান) পার্শ্বদেশে শুয়ে, তা না পারলে চিৎ হয়ে শুয়ে, (মাথাটা বালিশ ইত্যাদি দিয়ে একটু উঁচু করে) কেবলার দিকে মুখ ও পা করে নামায পড়বে। দাঁড়াবার সামথ্য থাকলে এবং বসতে না পারলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নামায পড়বে।
মহান আল্লাহ বলেন,
(فَاذْكُرُوا اللهَ قِيَاماً وَّقُعُوْداً وَّعَلَى جُنُوْبِكُمْ)
অর্থাৎ, তোমরা দাঁড়িয়ে, বসে ও পার্শ্বদেশে শয়ন করে আল্লাহকে স্মরণ কর। (কুরআন মাজীদ ৪/১০৩)
তিনি আরো বলেন, (فَاتَّقُوا اللهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ)
অর্থাৎ, আল্লাহকে যথাসাধ্য ভয় করে চল। (কুরআন মাজীদ ৬৪/১৬)
ইমরান বিন হুসাইন (রাঃ) বলেন, আমার অর্শ রোগ ছিল। আমি (কিভাবে নামায পড়ব তা) আল্লাহর রসূল (ﷺ)-কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, “তুমি দাঁড়িয়ে নামায পড়। না পারলে বসে পড়। তাও না পারলে পার্শ্বদেশে শুয়ে পড়।” (বুখারী, আবূদাঊদ, সুনান, আহমাদ, মুসনাদ, মিশকাত ১২৪৮ নং)
কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও যদি রোগী বসে না পড়ে দাঁড়িয়ে নামায পড়ে, তাহলে তার জন্য রয়েছে ডবল সওয়াব। একদা একদল লোকের নিকট মহানবী (ﷺ) বের হয়ে দেখলেন, তারা অসুস্থতার কারণে বসে বসে নামায পড়ছে। তা দেখে তিনি বললেন, “বসে নামায পড়ার সওয়াব দাঁড়িয়ে নামায পড়ার সওয়াবের অর্ধেক।” (আহমাদ, মুসনাদ, ইবনে মাজাহ্, সুনান)
অনুরুপ বসে নামায পড়ার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যদি আরামনেওয়ার জন্য রোগী শুয়ে নামায পড়ে তাহলে তার জন্য রয়েছে অর্ধেক সওয়াব। (বুখারী ১১১৫নং)
যতটা সম্ভব দাঁড়িয়ে এবং যতটা প্রয়োজন বসেও নামায পড়তে পারে। বৃদ্ধ বয়সে মহানবী (ﷺ) রাতের নামাযে বসে ক্বিরাআত করতেন। অতঃপর ৩০/৪০ আয়াত ক্বিরাআত বাকী থাকলে তিনি উঠে তা পাঠ করে রুকূ করতেন। (বুখারী ১১১৮নং)
রোগী সাধ্যমত রুকূ-সিজদাহ করবে। না পারলে মস্তক দ্বারা ইঙ্গিত করবে। রুকূর চাইতে সিজদার সময় অধিক ঝুঁকবে। তা সম্ভব না হলে চোখের ইশারায় রুকূ-সিজদাহ করবে। রুকূর চাইতে সিজদার ক্ষেত্রে চক্ষুকে অধিকতর নিমীলিত করবে।
হাত বা আঙ্গুল দ্বারা ইশারা বিধিসম্মত নয়। কারণ, অনুরুপ নির্দেশ শরীয়তে আসেনি। (ইবনে বায, ইবনে উষাইমীন)
চক্ষু দ্বারা ইশারা সম্ভব না হলে অন্তরে (কল্পনায়) কিয়াম, রুকূ ও সিজদা আদির নিয়ত করে তকবীর, কিরাআত ও দুআ-দরুদ পাঠ করবে।
আত্মাকে কষ্ট দিয়ে সাধ্যের অতীত আমল করা শরীয়তে পছন্দনীয় নয়। সিজদাহ মাটিতে না করতে পারলে কোন জিনিস উঁচু করে বা তুলে তাতে সিজদাহ করা বৈধ নয়। একদা মহানবী (ﷺ) এক রোগীকে দেখা করতে গিয়ে দেখলেন, সে বালিশের উপর সিজদাহ করছে। তিনি তা নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন। সে একটি কাঠ নিলে কাঠটাকেও ছুঁড়ে ফেললেন। অতঃপর বললেন, “যদি ক্ষমতা থাকে তাহলে মাটিতে নামায পড় (সিজদাহ কর)। তা না পারলে কেবল ইশারা কর। আর তোমার রুকূর তুলনায় সিজদাকে অধিক নিচু কর।” (ত্বাবারানী, মু’জাম, বাযযার, বায়হাকী, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ৩২৩নং)
অবশ্য দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পড়ে যাওয়ার ভয় হলে দেওয়াল বা খুঁটিতে ভর করে দাঁড়াতে পারে। মহানবী (ﷺ) যখন বৃদ্ধ হয়ে পড়লেন এবং স্বাস্থ্য মোটা হয়ে গেল, তখন তাঁর নামাযের জায়গায় একটি খুঁটি বানানো হয়েছিল; যাতে তিনি ভর করে নামায পড়তেন। (আবূদাঊদ, সুনান,হাকেম, মুস্তাদরাক,সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ৩১৯, ইর: ৩৮৩নং)
রোগী হলেও প্রত্যেক নামায যথাসময়ে পড়বে। না পারলে জমা করার নিয়ম অনুযায়ী ২ ওয়াক্তের নামায জমা করে পড়বে।
অসুস্থ অবস্থায় পূর্ণরুপে নামায আদায় করতে সক্ষম না হলেও সুস্থ অবস্থার মত পূর্ণ সওয়াব লাভ হয়ে থাকে রোগীর। মহানবী (ﷺ) বলেন, “বান্দা যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে অথবা সফর করে, তখন আল্লাহ তাআলা তার জন্য সেই সওয়াবই লিখে থাকেন, যে সওয়াব সে সুস্থ ও ঘরে থাকা অবস্থায় আমল করে লাভ করত।” (আহমাদ, মুসনাদ, বুখারী, জামে ৭৯৯নং)
অসুস্থতার সময় রোগীর বেকার বসে বা শুয়ে থাকার সময়। এ সময়কে মূল্যবান জেনে আল্লাহর যিক্র করা উচিৎ রোগীর। কষ্টের সময়ে কেবল তাঁরই সকাশে আকূল আবেদনের সাথে নফল নামায ও খাস মুনাজাত করার এটি একটি সুবর্ণ সময়। রাত্রে বহু রোগীর ঘুম আসে না। এমন অনিদ্রায় ফালতু রাত্রি অতিবাহিত না করে তাহাজ্জুদ পড়ে রোগী তার পরপারের জন্য সম্বল বৃদ্ধি করতে পারে।