কেউ যথাসময়ে নামায পড়তে ঘুমিয়ে অথবা ভুলে গেলে এবং তার নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হয়ে গেলে, পরে যখনই তার চেতন হবে অথবা মনে পড়বে তখনই ঐ (ফরয) নামায কাযা পড়া জরুরী।
প্রিয় নবী (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তি কোন নামায পড়তে ভুলে যায় অথবা ঘুমিয়ে পড়ে, তাহলে তার কাফফারা হল স্মরণ হওয়া মাত্র তা পড়ে নেওয়া।” অন্য এক বর্ণনায় বলেন, “এ ছাড়া তার আর কোন কাফফারা (প্রায়শ্চিত্ত) নেই।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৬০৩ নং)
তিন আরো বলেন, “নিদ্রা অবস্থায় কোন শৈথিল্য নেই। শৈথিল্য তো জাগ্রত অবস্থায় হয়। সুতরাং যখন তোমাদের মধ্যে কেউ কোন নামায পড়তে ভুলে যায় অথবা ঘুমিয়ে পড়ে, তখন তার উচিৎ, স্মরণ হওয়া মাত্র তা পড়ে নেওয়া। কেন না, আল্লাহ তাআলা বলেন, “আর আমাকে স্মরণ করার উদ্দেশ্যে তুমি নামায কায়েম কর।” (কুরআন মাজীদ ২০/১৪, মুসলিম, মিশকাত ৬০৪নং)
অতএব কাযা নামায পড়ার জন্য কোন সময়-অসময় নেই। দিবা-রাত্রের যে কোন সময়ে চেতন হলে বা মনে পড়লেই উঠে সর্বাগ্রে নামায পড়ে নেওয়া জরুরী। অন্যথা পরবর্তী সময়ের অপেক্ষা বৈধ নয়।
বিনা ওজরে ইচ্ছাকৃত নামায ছেড়ে দিলে বা সুযোগ ও সময় থাকা সত্ত্বেও না পড়ে অন্য ওয়াক্ত এসে গেলে পাপ তো হবেই; পরন্তু সে নামাযের আর কাযা নেই। পড়লেও তা গ্রহণযোগ্য নয়। বিনা ওজরে যথাসময়ে নামায না পড়ে অন্য সময়ে কাযা পড়ায় কোন লাভ নেই। বরং যে ব্যক্তি এমন করে ফেলেছে তার উচিৎ, বিশুদ্ধচিত্তে তওবা করা এবং তারপর যথাসময়ে নামায পড়ায় যত্নবান হওয়ার সাথে সাথে নফল নামায বেশী বেশী করে পড়া। (মুহাল্লা, ফিকহুস সুন্নাহ্ ১/২৪১-২৪৩, ফিকহুস সুন্নাহ্ উর্দু ৭৮পৃ:, ১নং টীকা, মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ৫/৩০৬, ১৫/৭৭, ১৬/১০৫, ২০/১৭৪, মিশকাত ৬০৩নংহাদীসের আলবানীর টীকা দ্র:)
কেউ অজ্ঞান থাকলে জ্ঞান ফিরার পূর্বের নামায কাযা পড়তে হবে না। কারণ, সে জ্ঞানহীন পাগলের পর্যায়ভুক্ত। আর পাগলের পাপ-পুণ্য কিছু নেই। (আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, মিশকাত ৩২৮৭ নং, মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ২৬/১২৮, ফিকহুস সুন্নাহ্ ১/২৪১, আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ২/১২৬) ইবনে উমার (রাঃ) অজ্ঞান অবস্থায় কোন নামায ত্যাগ করলে তা আর কাযা পড়তেন না। (আব্দুর রাযযাক, মুসান্নাফ, ফিকহুস সুন্নাহ্ ১/২৪১)
অবশ্য নামায পড়তে পারত এমন সময়ের পর অজ্ঞান হলে জ্ঞান ফিরার পর সেই সময়ের নামায কাযা পড়া জরুরী। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ২/১২৬-১২৭)
পক্ষান্তরে কোন ব্যক্তি যদি কোন কারণে কোন বস্তু ব্যবহার করে স্বেচ্ছায় বেহুশ হয়, তাহলে তার জন্য কাযা পড়া জরুরী। (ঐ ২/১৮)
কাযা নামায পড়ার জন্য আযান ও ইকামত বিধেয়। কয়েক ওয়াক্তের নামায কাযা পড়তে হলে, প্রথমবার আযান ও তারপর প্রত্যেক নামাযের জন্য পূর্বে ইকামত বলা কর্তব্য।
এক সফরে আল্লাহর রসূল (ﷺ) সহ্ সাহাবাগণ ঘুমিয়ে পড়লে ফজরের নামায ছুটে যায়। তাঁদের চেতন হয় সূর্য ওঠার পর। অতঃপর একটু সরে গিয়ে তাঁরা ওযূ করেন। বিলাল (রাঃ) আযান দেন। (মুসলিম, সহীহ ৬৮১, আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান) অতঃপর সুন্নত কাযা পড়ে ইকামত দিয়ে ফজরের ফরয কাযা পড়েন। (বুখারী ৩৪৪, মুসলিম, সহীহ ৬৮০ নং, নাইলুল আউতার, শাওকানী ২/২৭)
খন্দকের যুদ্ধের সময় মহানবী (ﷺ) ও সাহাবাগণের চার ওয়াক্তের নামায ছুটে গেলে গভীর রাত্রিতে তিনি বিলাল (রাঃ) কে আযান দিতে আদেশ করেন। (শাফেয়ী, ইবনে খুযাইমাহ্, সহীহ, ইবনে হিব্বান, সহীহ) অতঃপর প্রত্যেক নামাযের পূর্বে ইকামত দিতে বলেন। এইভাবে প্রথমে যোহ্র, অতঃপর আসর, মাগরেব ও এশার নামায পরপর কাযা পড়েন। (নাসাঈ, সুনান, আহমাদ, মুসনাদ, বায়হাকী প্রমুখ, ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ১/২৫৭)
উল্লেখ্য যে, ফজরের আযান দিনে দিতে হলেও ‘আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম” বলতে হবে। কারণ ফজরের ঐ কাযা নামাযে মহানবী (ﷺ) ফজরের সময় যা করেন, দিনেও তাই করে নামায আদায় করেছেন বলে প্রমাণ আছে। (মুসলিম, সহীহ ৬৮১নং, আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ১/২০৪)
যে নামায যে অবস্থায় কাযা হয়, সেই নামাযকে সেই অবস্থা ও আকারে পড়া জরুরী। সুতরাং রাতের নামায দিনে কাযা পড়ার সুযোগ হলে রাতের মতই করে জোরে ক্বিরাআত করতে হবে। কারণ, মহানবী (ﷺ) যখন ফজরের নামায দিনে কাযা পড়েছিলেন, তখন ঠিক সেই রুপই পড়েছিলেন, যেরুপ প্রত্যেক দিন ফজরের সময় পড়তেন। (মুসলিম, সহীহ ৬৮১নং) তদনুরুপ ছুটে যাওয়া নামায রাতে কাযা পড়ার সুযোগ হলে দিনের মতই চুপে চুপে ক্বিরাআত পড়তে হবে। (নাইলুল আউতার, শাওকানী ২/২৭, আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ৪/২০৪, ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্, সঊদী উলামা-কমিটি ১/৩১০)
তদনুরুপ কেউ মুসাফির অবস্থায় নামায কাযা করে বাড়ি ফিরলে, বাড়ি ফিরার পর নামায কসর করে না পড়ে পুরোপুরি পড়বে; কিন্তু ঐ কাযা নামায কসর করেই আদায় করবে। কারণ, সফর অবস্থায় তার কসর নামাযই কাযা হয়েছে। আর বাড়িতে থাকা অবস্থায় কোন ছুটে যাওয়া নামায সফরে মনে পড়লে বা কাযা পড়ার সুযোগ হলে তা পুরোপুরিই আদায় করতে হবে। মোট কথা যেমন নামায কাযা হবে, ঠিক তেমনিভাবে তা আদায় করতে হবে। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ৪/৫১৮)
কোন নামায ছুটে গেলে সে নামায কাযা পড়ার পরই বর্তমান নামায পড়া যাবে। অনুরুপ কয়েক ওয়াক্তের নামায এক সঙ্গে কাযা পড়তে হলে অনুক্রম ও তরতীব অনুযায়ী প্রথমে ফজর, অতঃপর যোহ্র, অতঃপর আসর, মাগরেব, এশা -এই নিয়মে আদায় করতে হবে। আগা-পিছু করে পড়া বৈধ নয়। খন্দকের যুদ্ধে মহানবী (ﷺ) ও সাহাবাগণের কয়েক ওয়াক্তের নামায ছুটলে ঐ তরতীব খেয়াল রেখেই পরপর আদায় করেছিলেন। (বুখারী, মুসলিম, প্রমুখ, নাইলুল আউতার, শাওকানী ২/২৯)
এখন যদি কেউ যোহরের নামায কাযা রেখে আসরের অক্তে মসজিদে আসে, তাহলে সে প্রথমে যোহরের নামায পড়ে নেবে। তারপর পড়বে আসরের নামায। কিন্তু কেউ যদি এমন সময় মসজিদে আসে, যে সময় আসরের জামাআত চলছে, তাহলে সে একাকী কাযা পড়তে পারে না। কারণ, জামাআত চলাকালে একই স্থানে দ্বিতীয় জামাআত বা পৃথক একাকী (জামাআতী) নামায হয় না। (মুসলিম, মিশকাত ১০৫৮ নং) আবার কাযা রেখে আসরের নামায জামাআতে পড়লে যোহরের পূর্বে আসর পড়া হয়। আর তা হল তরতীব ও অনুক্রমের পরিপন্থী। সুতরাং সে ব্যক্তি তরতীব বজায় রেখে যোহরের কাযা আদায়ের নিয়তে জামাআতে শামিল হবে এবং তারপর একাকী আসর পড়ে নেবে। (তুহ্ফাতুল ইখওয়ান, ইবনে বায ৬৬পৃ:)
এ ক্ষেত্রে ইমামের নিয়ত ভিন্ন হলেও উক্ত মুক্তাদীর নামাযের কোন ক্ষতি হবে না। কারণ, ইমাম-মুক্তাদীর নিয়ত পৃথক পৃথক হলেও উভয়ের নামায যে শুদ্ধ, তার প্রমাণ সুন্নাহতে মজুদ।
মহানবী (ﷺ) একদা এক ব্যক্তিকে একাকী নামায পড়তে দেখলে তিনি অন্যান্য সাহাবীদের উদ্দেশ্যে বললেন, “এমন কেউ কি নেই, যে এর সাথে নামায পড়ে একে (জামাআতের সওয়াব) দান করবে?” এ কথা শুনে এক ব্যক্তি উঠে তার সাথে নামায পড়ল। (আবূদাঊদ, সুনান ৫৭৪, তিরমিযী, সুনান, মিশকাত ১১৪৬ নং) অথচ সে মহানবী (ﷺ) এর সাথে ঐ নামায পূর্বে পড়েছিল। সুতরাং ইমামের ছিল ফরয এবং মুক্তাদীর নফল।
একদা তিনি সালাম ফিরে দেখলেন, মসজিদের এক প্রান্তে দুই ব্যক্তি জামাআতে নামায পড়ে নি। কারণ জিজ্ঞাসা করলে তারা কাঁপতে কাঁপতে বলল, ‘আমরা আমাদের বাসায় নামায পড়ে নিয়েছি।’ তিনি বললেন, “এমনটি আর করো না। বরং যখন তোমাদের কেউ নিজ বাসায় নামায পড়ে নেয়, অতঃপর (মসজিদে এসে) দেখে যে, ইমাম নামায পড়ে নি, তখন সে যেন (দ্বিতীয়বার) তাঁর সাথে নামায পড়ে। আর এ নামায তার জন্য নফল হবে।” (আবূদাঊদ, সুনান ৫৭৫, তিরমিযী, সুনান, নাসাঈ, সুনান, মিশকাত ১১৫২ নং)
অনুরুপ মুআয বিন জাবাল (রাঃ) মহানবী (ﷺ) এর সাথে তাঁর মসজিদে (নববীতে) নামায পড়তেন। অতঃপর নিজ গোত্রে ফিরে এসে ঐ নামাযেরই ইমামতি করতেন। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ১১৫০ নং) অতএব বুঝা গেল যে, এক নামাযের পশ্চাতে অন্য নামায পড়া দোষাবহ্ ও অশুদ্ধ নয়। সুতরাং উক্ত ক্ষেত্রে তরতীবের ওয়াজেব উলঙ্ঘন না করে যোহরের কাযা নামায আসরের জামাআতে পড়ে নেওয়াই উত্তম।
পক্ষান্তরে মহানবী (ﷺ) এর এই হাদীস “যখন নামায খাড়া হয়, তখন ফরয (বা সেই) নামায ছাড়া অন্য কোন নামায নেই।” (বুখারী বিনা সনদে, ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার ২/১৭৪, মুসলিম, সহীহ ৭১০ নং, আহমাদ, মুসনাদ ২/৩৫২, প্রমুখ) এর অর্থ হল জামাআত খাড়া হলে ফরয বা (ঐ নামায তাকে পড়তে হলে) ঐ নামাযে শামিল হওয়া ছাড়া পৃথক করে কোন নফল বা সুন্নত নামায পড়া বৈধ নয়। অর্থাৎ ইকামতের পর আর কোন সুন্নত বা নফল নামায শুদ্ধ হবে না। হাদীসের ব্যাখ্যা দাতাগণ এরুপই ব্যাখ্যা করেছেন। (দেখুন, শরহুন নওবী ৫/২২১, ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার ২/১৭৫, আউনুল মা’বূদ ৪/১০১) এখানে এক নামাযের জামাআতে অন্য নামাযের নিয়ত করে নামায হবে না -সে উদ্দেশ্য নয়। (এ ব্যাপারে ইমামতির বিবরণও দ্রষ্টব্য।) তাছাড়া ইমাম-মুক্তাদীর নিয়ত ভিন্ন হলেও যে উভয়ের নামায শুদ্ধ, তা পূর্বেই প্রতিপাদিত হয়েছে।
মাগরেব কাযা রেখে কেউ মসজিদে এলে এবং এশার জামাআত শুরু দেখলে সে মাগরেবের কাযা আদায় করার নিয়তে শামিল হবে। অতঃপর তার তিন রাকআত পড়া হলে বসে যাবে। ইমাম তাশাহ্হুদে বসলে তার সঙ্গে তাশাহহুদ আদি পড়ে ইমামের সাথে সালাম ফিরবে। (ইবনে বায, কিদারেমী, সুনান ৯৬পৃ:)
পক্ষান্তরে ইমামের এক রাকআত হয়ে যাওয়ার পর জামাআতে শামিল হলে ইমামের সাথেই সালাম ফিরলে ৩ রাকআত মাগরেবের কাযা আদায় হয়ে যাবে। অতঃপর উঠে একাকী এশার নামায পড়বে। অথবা অন্য লোক থাকলে দ্বিতীয় জামাআতে পড়ে নেবে।
অনুরুপভাবে কেউ আসরের নামায কাযা রেখে মসজিদে এসে মাগরেবের জামাআত খাড়া দেখলে আসর কাযা পড়ার নিয়তে শামিল হবে। অতঃপর ইমাম সালাম ফিরলে সে আর এক রাকআত উঠে পূর্ণ ৪ রাকআত আসরের নামায আদায় করে নেবে। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্, সঊদী উলামা-কমিটি ১/৩১০) পরে একাকী অথবা দ্বিতীয় জামাআতে মাগরেব পড়বে।
জামাআতে শামিল হয়ে কাযা নামায পড়ার পর সময় অভাবে যে নামায একাকী বা দ্বিতীয় জামাআতে আদায় করা সম্ভব নয়, সে নামায জামাআতেই আদায় করা জরুরী। আর এ ক্ষেত্রে তরতীব বিবেচ্য নয়। যেমন, কেউ জুমআর নামায পড়তে এসে জামাআত খাড়া দেখে তার ফজরের নামায কাযা আছে তা মনে পড়ল। এখন তরতীব বজায় রেখে জামাআতে ফজরের কাযা আদায় করার নিয়তে শামিল হলে পরে একাকী বা দ্বিতীয় জামাআতে জুমআর নামায পড়া সম্ভব নয়। অতএব তখন সে জুমুআহ পড়ার নিয়তেই জামাআতে শামিল হবে এবং তার পরই ফজরের নামায কাযা পড়তে পারবে। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ২/১৪১)
তদনুরুপ বর্তমান নামাযের ওয়াক্ত চলে যাওয়ার আশঙ্কা হলেও তরতীব বিবেচ্য নয়। যেমন, এক ব্যক্তি ফজরের নামায পড়তে এমন সময় উঠল যখন সূর্য উঠতে চলেছে। এই সময় তার মনে পড়ল যে, তার এশার নামায কাযা আছে। তখন কাযা পড়তে গেলে সূর্য উঠে যাবে এবং ফজরের নামাযও কাযা হয়ে যাবে। সুতরাং দু’টো নামাযকে কাযা না করে ফজরের নামায তার যথা (শেষ) সময়ে আদায় করে তারপর এশার নামায কাযা পড়বে। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ২/১৪০-১৪১, তুহ্ফাতুল ইখওয়ান, ইবনে বায ৬৬পৃ:, মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ৫/২৯৭)
একইভাবে আসরের নামাযের শেষ সময়ে যোহ্র কাযা আছে মনে পড়লে, আসর আগে পড়ে তারপর যোহ্র পড়তে হবে। যাতে আসরও কাযা না হয়ে যায়।
বর্তমান নামায পড়তে শুরু করার পর অথবা পড়ে নেওয়ার পর পূর্বের নামায কাযা আছে মনে পড়লে আর তরতীব বিবেচ্য নয়। ভুলের জন্য তা ক্ষমার্হ হবে; ধর্তব্য হবে না। অতএব বর্তমান নামায শেষ করে কাযা নামায পড়ে নিতে হবে। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ৫/২৯৭)
পূর্বেই আলোচিত হয়েছে যে, ইচ্ছাকৃত নামায ত্যাগ করলে সে নামাযের কাযা নেই। অতএব তওবার পর কাযা উমরী বলে শরীয়তে কোন নামায নেই। বিধায় তা বিদআত।
অবশ্য এই তওবাকারী ব্যক্তির উচিৎ, বেশী বেশী করে নফল নামায পড়া এবং অন্যান্য নফল ইবাদতও বেশী বেশী করে করা। (দারেমী, সুনান ২/৪২) তার জন্য ওয়াজেব এই যে, সে সর্বদা নামায ত্যাগ করার ঐ অবহেলাপূর্ণ পাপ ও ক্ষতির কথা মনে রেখে তার প্রতিকারের উদ্দেশ্যে (নফল ইবাদতের মাধ্যমে) সদা সচেতন থাকবে। সম্ভবত: তার ঐ হারিয়ে দেওয়া দিনের কিছু ক্ষতিপূরণ অর্জন হয়ে যাবে। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ২/১৩৫)
রসূল (ﷺ) বলেন, “কিয়ামতের দিন বান্দার নিকট থেকে তার আমল সমূহের মধ্যে যে আমলের হিসাব সর্বাগ্রে নেওয়া হবে, তা হল নামায। নামায ঠিক হলে সে পরিত্রাণ ও সফলতা লাভ করবে। নচেৎ (নামায ঠিক না হলে) ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সুতরাং (হিসাবের সময়) ফরয নামাযে কোন কমতি দেখা গেলে আল্লাহ তাবারাকা অতাআলা ফিরিশ্তাদের উদ্দেশ্যে বলবেন, ‘দেখ, আমার বান্দার কোন নফল (নামায) আছে কি না।’ অতএব তার নফল নামায দ্বারা ফরয নামাযের ঘাটতি পূরণ করা হবে। অতঃপর আরো সকল আমলের হিসাব অনুরুপ গ্রহণ করা হবে।” (আবূদাঊদ, সুনান ৭৭০, তিরমিযী, সুনান ৩৩৭, ইবনে মাজাহ্, সুনান ১১৭নং, সহিহ তারগিব ১/১৮৫)
পক্ষান্তরে যে ব্যক্তির নামায অনিচ্ছা সত্ত্বেও ছুটে যায়, তার জন্য কাযা আছে। আল্লাহ বান্দার অন্তরের খবর রাখেন। তার মনে অবহেলা ও শৈথিল্য না থাকলে তিনি তার কাযা গ্রহণ করবেন। প্রিয় নবী (ﷺ) বলেন, “(এই কাযা আদায় করা ছাড়া) এর জন্য আর অন্য কোন কাফফারা নেই।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৬০৩নং)
পক্ষান্তরে কাযা আদায় করার সময় ও সুযোগ না পেলে কোন পাপ হয় না। সুতরাং এ কথা সুস্পষ্ট হয় যে, মরণের সময় অথবা পরে বেনামাযী অথবা কিছু নামায ত্যাগকারীর তরফ থেকে নামায-খন্ডনের উদ্দেশ্যে রাকআত হিসাব করে কাফফারা স্বরুপ কিছু দান-খয়রাত ইত্যাদি করা নিরর্থক ও নিষ্ফল। বরং এই উদ্দেশ্যে পাপ-খন্ডনের ঐ অনুষ্ঠান ও প্রথা এক বিদআত। (ইসলাহুল মাসাজিদ, আল্লামা আলবানীর টীকা সহ্ উর্দু তর্জমা মালেক, মুঅত্তা ২৯৬পৃ:, আহ্কামুল জানাইয, আলবানী ১৭৪, ২৭৫পৃ:, মু’জামুল বিদা’ ১৬৪পৃ:) বলা বাহুল্য এমন পাপস্খলনের রীতি তো অমুসলিমদের; যারা ইয়া বড় বড় পাপ করে কোন পানিতে ডুব দিলে অথবা কিছু অর্থ ব্যয় করলে নিষ্পাপ হয়ে ফিরে আসে!