কিছু সুন্নত আছে যা পড়া মুস্তাহাব, কিন্তু তাকীদপ্রাপ্ত নয়। এমন কিছু সুন্নত নামায নিম্নরুপ:-

আসরের পূর্বে ২ অথবা ৪ রাকআত :

হযরত ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেন, “আল্লাহ সেই ব্যক্তির প্রতি কৃপা করেন যে আসরের পূর্বে ৪ রাকআত নামায পড়ে।” (আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ, ইবনে হিব্বান, সহীহ, সহিহ তারগিব ৫৮৪নং)

হযরত আলী (রাঃ) বলেন, ‘নবী (ﷺ) আসরের পূর্বে ৪ রাকআত নামায পড়তেন এবং প্রত্যেক দুই রাকআতে আল্লাহর নিকটবর্তী ফিরিশ্‌তা, আম্বিয়া ও তাঁদের অনুসারী মুমিন-মুসলিমদের প্রতি সালাম (তাশাহহুদ) দিয়ে তা পৃথক করতেন। আর সর্বশেষে সালাম ফিরতেন।’ (আহমাদ, মুসনাদ, তিরমিযী, সুনান, নাসাঈ, সুনান, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ২৩৭নং)

লক্ষণীয় যে, আসরের (দিনের) ৪ রাকআত বিশিষ্ট সুন্নত নামায এক সালামেও পড়া বৈধ।

এ ছাড়া মহানবী (ﷺ) বলেন, “প্রত্যেক আযান ও ইকামতের মাঝে নামায আছে। (যে পড়তে চায় তার জন্য।) (বুখারী, মুসলিম, সুনানু আরবাআহ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ্‌), জামে ২৮৫০নং) আর সে নামায কমপক্ষে ২ রাকআত। যেমন মহানবী (ﷺ) বলেন, “এমন কোন ফরয নামায নেই, যার পূর্বে ২ রাকআত নামায নেই।” (ইবনে হিব্বান, সহীহ, ত্বাবারানীরানী, মু’জাম, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ২৩২, জামে ৫৭৩০নং) অবশ্য হযরত আলী (রাঃ) কর্তৃক ২ রাকআতের বর্ণনাও আবূ দাঊদে এসেছে। কিন্তু তা সহীহ নয়। (যইফ আবূদাঊদ, সুনান ২৩৫নং, তামামুল মিন্নাহ্‌, আলবানী ২৪১পৃ:)

মাগরেবের আগে ২ রাকআত :

মাগরেবের আযানের পর এবং ফরয নামাযের পূর্বে ২ রাকআত সুন্নত গায়র মুআক্কাদাহ।

মহানবী (ﷺ) বলেন, “তোমরা মাগরেবের পূর্বে নামায পড়। তোমরা মাগরেবের পূর্বে নামায পড়।” অতঃপর তৃতীয়বারে তিনি বলেন, “যে চায় সে পড়বে।” এ কথা বলার কারণ, তিনি ঐ নামাযকে লোকেদের (জরুরী) সুন্নত মনে করে নেওয়াকে অপছন্দ করলেন। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ১১৬৫নং)

আনাস (রাঃ) বলেন, ‘আমরা মদ্বীনায় ছিলাম। মুআযযিন যখন মাগরেবের আযান দিত, তখন লোকেরা প্রতিযোগিতার সাথে মসজিদের খাম্বাগুলোর পশ্চাতে ২ রাকআত নামায পড়তে লেগে যেত। এমনকি যদি কোন অজানা লোক এসে মসজিদে প্রবেশ করত, তাহলে এত লোকের নামায পড়া দেখে সে মনে করত, হয়তো মাগরেবের জামাআত হয়ে গেছে। (এবং ওরা পরের সুন্নত পড়ছে।)’ (মুসলিম, মিশকাত ১১৮০ নং)

এ নামায মহানবী (ﷺ) পড়েছেন বলে কোন সহীহ প্রমাণ নেই। (তামামুল মিন্নাহ্‌, আলবানী ২৪২পৃ:) বরং হযরত আনাস বলেন, ‘আমরা আল্লাহর রসুল (ﷺ)-এর যুগে সূর্য ডোবার পর মাগরেবের নামাযের আগে ২ রাকআত নামায পড়তাম।’ এ কথা শুনে তাবেয়ী মুখতার বিন ফুলফুল তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আল্লাহর রসূল (ﷺ) কি ঐ ২ রাকআত নামায পড়তেন?’ উত্তরে আনাস (রাঃ) বললেন, ‘তিনি আমাদেরকে তা পড়তে দেখতেন। কিন্তু সে ব্যাপারে আমাদেরকে কিছু আদেশও করতেন না এবং নিষেধও করতেন না।’ (মুসলিম, মিশকাত ১১৭৯নং)

এশার পূর্বে ২ রাকআত :

মহানবী (ﷺ) বলেন, “প্রত্যেক আযান ও ইকামতের মাঝে নামায আছে।” এইরুপ তিনবার বলার পর শেষে বললেন, “যে চাইবে তার জন্য।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৬৬২নং)

তিনি আরো বলেন, “এমন কোন ফরয নামায নেই, যার পূর্বে ২ রাকআত নামায নেই।” (ইবনে হিব্বান, সহীহ, ত্বাবারানীরানী, মু’জাম, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ২৩২, জামে ৫৭৩০নং) অর্থাৎ, প্রত্যেক ফরয নামাযের পূর্বে ২ রাকআত নামায আছে। সুতরাং এশার ফরযের পূর্বেও আছে। তবে তা সুন্নাতে গায়র মুআক্কাদাহ।

মহানবী (ﷺ) এশার পরে ৪ রাকআত নামাযও ঘরে গিয়ে পড়তেন। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, এক রাত্রে আমার খালা মায়মূনার ঘরে শুলাম। দেখলাম, নবী (ﷺ) এশার নামায পড়ে এলেন এবং ৪ রাকআত নামায পড়লেন। (আহমাদ, মুসনাদ, বুখারী ১১৭নং, আবূদাঊদ, সুনান, নাসাঈ, সুনান)