নবী মুবাশ্শির (ﷺ) যোহরের সুন্নত কখনো ৪ রাকআত পড়তেন; ২ রাকআত ফরযের পূর্বে এবং ২ রাকআত ফরযের পরে।
ইবনে উমার (রাঃ) বলেন, ‘আমি নবী (ﷺ)-এর নিকট থেকে ১০ রাকআত নামায ±মরণে রেখেছি; ২ রাকআত যোহরের পূর্বে, ২ রাকআত যোহরের পরে, ২ রাকআত মাগরেবের পরে নিজ ঘরে, ২ রাকআত এশার পরে নিজ ঘরে এবং ২ রাকআত ফজরের নামাযের পূর্বে।’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ১১৬০নং)
কখনো ৬ রাকআত পড়তেন; ৪ রাকআত ফরযের পূর্বে এবং ২ রাকআত ফরযের পরে।
আব্দুল্লাহ বিন শাকীক মা আয়েশা (রাঃ)কে আল্লাহর রসূল (ﷺ)-এর সুন্নত প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে উত্তরে তিনি বললেন, ‘তিনি যোহরের আগে ৪ রাকআত এবং যোহরের পরে ২ রাকআত নামায পড়তেন।’ (আহমাদ, মুসনাদ, মুসলিম, আবূদাঊদ, সুনান, মিশকাত ১১৬২নং)
আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেন, “যে কোন মুসলিম বান্দা প্রত্যহ্ আল্লাহ তাআলার উদ্দেশ্যে বারো রাকআত নফল (ফরয ব্যতীত সুন্নত) নামায পড়লেই আল্লাহ তাআলা জান্নাতে তার জন্য এক গৃহ্ নির্মাণ করেন। অথবা তার জন্য জান্নাতে এক ঘর নির্মাণ করা হয়। (ঐ বারো রাকআত নামায;) যোহরের (ফরযের) পূর্বে চার রাকআত ও পরে দুই রাকআত, মাগরেবের পরে দুই রাকআত, এশার পরে দুই রাকআত, আর ফজরের (ফরয নামাযের) পূর্বে দুই রাকআত।” (মুসলিম, তিরমিযী, সুনান, মিশকাত ১১৫৯নং)
আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি নিয়মনিষ্ঠভাবে দিবারাত্রে বারো রাকআত নামায পড়বে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে; যোহরের (ফরয নামাযের) পূর্বে চার রাকআত ও পরে দুই রাকআত, মাগরেবের পর দুই রাকআত, এশার পর দুই রাকআত এবং ফজরের (ফরযের) পূর্বে দুই রাকআত।” (নাসাঈ, সুনান, শব্দগুলি তাঁরই, তিরমিযী, সুনান, ইবনে মাজাহ্, সুনান, সহিহ তারগিব৫৭৭নং)
তিনি কখনো বা ৮ রাকআত পড়তেন; ৪ রাকআত ফরযের পূর্বে এবং ৪ রাকআত ফরযের পরে।
হযরত উম্মেহাবীবা رضي الله عنها কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল (ﷺ) এর নিকট শুনেছি, তিনি বলেছেন, “যে ব্যক্তি যোহরের পূর্বে ৪ রাকআত এবং পরে ৪ রাকআত (সুন্নত নামাযের) প্রতি সবিশেষ যত্নবান হবে, আল্লাহ তাকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দেবেন।” (আহমাদ, মুসনাদ, সুনানু আরবাআহ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ্), মিশকাত ১১৬৭, সহিহ তারগিব ৫৮১নং)
আব্দুল্লাহ বিন সায়েব বলেন, ‘আল্লাহর রসূল (ﷺ) সূর্য ঢলার পর যোহরের আগে ৪ রাকআত নামায পড়তেন এবং বলতেন, “এটা হল এমন সময়, যে সময়ে আসমানের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করা হয়। আর আমি পছন্দ করি যে, এই সময়ে আমার নেক আমল উত্থিত হোক।” (তিরমিযী, সুনান, মিশকাত ১১৬৯নং)
যোহরের পূর্বে ৪ রাকআত সুন্নত, সওয়াবে ৪ রাকআত তাহাজ্জুদ পড়ার সমান। (ইবনে আবী শাইবা, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ১৪৩১নং)
প্রকাশ থাকে যে, যোহরের পূর্বে বা পরে ঐ ৪ রাকআত করে নামায ২ রাকআত করে পড়ে সালাম ফিরা উত্তম। কারণ, মহানবী (ﷺ) বলেন, “রাত ও দিনের নামায ২ রাকআত করে।” (আবূদাঊদ, সুনান) তবে একটানা ৪ রাকআত এক সালামেও পড়া বৈধ। (সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ১/৪৭৭, ২৩৭নং) মহানবী (ﷺ) বলেন, “যোহরের পূর্বে ৪ রাকআত; (যার মাঝে কোন সালামনেই,) তার জন্য আসমানের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করা হয়।” (আবূদাঊদ, সুনান ১২৭০, ইবনে মাজাহ্, সুনান ১১৫৭, ইবনে খুযাইমাহ্, সহীহ ১২১৪, জামে ৮৮৫নং, শেষ তাহক্কীকে বন্ধনীর মাঝের শব্দগুলি সহীহ নয়।)
আবূ আইয়ুব আনসারী (রাঃ) বলেন, নবী (ﷺ) সূর্য ঢলার সময় ৪ রাকআত নামায প্রত্যহ্ পড়তেন। একদা আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনি সূর্য ঢলার সময় এই ৪ রাকআত প্রত্যহ্ পড়ছেন?’ তিনি বললেন, “সূর্য ঢলার সময় আসমানের দরজাসমূহ খোলা হয় এবং যোহরের নামায না পড়া পর্যন্ত বন্ধ করা হয় না। অতএব আমি পছন্দ করি যে, এই সময় আমার নেক আমল (আকাশে আল্লাহর নিকট) উঠা হোক।” আমি বললাম, ‘তার প্রত্যেক রাকআতেই কি ক্বিরাআত আছে?’ তিনি বললেন, “হ্যাঁ।” আমি বললাম, ‘তার মাঝে কি পৃথককারী সালাম আছে?’ তিনি বললেন, “না।” (মুখতাসারুশ শামাইলিল মুহাম্মাদিয়্যাহ্, আলবানী ২৪৯নং)
অবশ্য অনেকের মতে ঐ নামায যাওয়ালের সুন্নত।
তবে মসজিদে গিয়ে পড়লে জামাআতের সময় খেয়াল রেখে এক সালাম বা ২ সালামের নিয়ত করতে হয়। যাতে সময় সংকীর্ণ হলে এবং ৩ রাকআত পূর্ণ না হতে হতে ইকামত না হয়ে বসে। নচেৎ, সুন্নত ত্যাগ করে জামাআতে শামিল হতে হলে সবটুকুই বরবাদ যাবে। পক্ষান্তরে ২ রাকআত করে পড়লে নষ্ট হওয়ার ভয় থাকবে না।
এই সুন্নতের কাযা :
সুন্নত কাযা পড়া সুন্নত; জরুরী নয়। কারণবশত: যোহরের পূর্বের সুন্নত পড়তে না পারলে ফরযের (পরের সুন্নতের) পরে তা কাযা করা বিধেয়। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘নবী (ﷺ) যোহরের পূর্বের ৪ রাকআত পড়তে না পারলে (ফরযের) পরে তা পড়ে নিতেন।’ (তিরমিযী, সুনান, তামামুল মিন্নাহ্, আলবানী ২৪১পৃ:)
তদনুরুপ যোহরের পরের সুন্নত পড়তে সময় না পেয়ে যোহরের ওয়াক্ত অতিবাহিত হলেও আসরের পর (নিষিদ্ধ সময় হলেও) তা কাযা পড়া যায়। উম্মে সালামাহ্ (রাঃ) বলেন, ‘একদা আল্লাহর রসূল (ﷺ) যোহরের (ফরয) নামায পড়লেন। ইতি অবসরে কিছু (সাদকার) মাল এসে উপস্থিত হল। তিনি তা ব ন্ট ন করতে বসলেন। এরপর আসরের আযান হয়ে গেল। তিনি আসরের নামায পড়লেন। তারপর আমার ঘরে ফিরে এলেন। সেদিন ছিল আমার (ঘরে তাঁর থাকার পালি)। তিনি এসে ২ রাকআত হাল্কা করে নামায পড়লেন। আমরা বললাম, ‘এ ২ রাকআত কোন্ নামায হে আল্লাহর রসূল? আপনি কি তা পড়তে আদিষ্ট হয়েছেন?’ তিনি বললেন, “না, আসলে এটা হল সেই ২ রাকআত নামায, যা আমি যোহরের পর পড়ে থাকি। কিন্তু আজ এই মাল এসে গেলে তা বন্টন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লে আসরের আযান হয়ে যায়। ফলে ঐ নামায আমার বাদ পড়ে যায়। আর তা ছেড়ে দিতেও আমি অপছন্দ করলাম।” (আহমাদ, মুসনাদ, বুখারী, মুসলিম, আবূদাঊদ, সুনান)
আর এ কথা বিদিত যে, মহানবী (ﷺ) যে আমল একবার করতেন, তা নিয়মিত করে যেতেন এবং বর্জন করতে পছন্দ করতেন না। যার জন্য মা আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘আল্লাহর রসূল (ﷺ) আসরের পর আমার কাছে ২ রাকআত (তাঁর ইন্তিকাল অবধি) কখনো ত্যাগ করেননি।’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ১১৭৮নং)
উল্লেখ্য যে, ঐ ২ রাকআত নামায মহানবী (ﷺ)-এর অনুকরণে আমরাও পড়তে পারি। অবশ্য আসরের পর নিষিদ্ধ সময় হলেও সূর্য হ্লুদবর্ণ হলে তবেই সে সময় নামায নিষিদ্ধ। (আবূদাঊদ, সুনান ১২৭৪নং) তার আগে নয়। (বিস্তারিত দ্র: সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ৬/১০১০-১০১৪)