মুসাফিরের ইমাম ও মুক্তাদী হয়ে নামায

মুসাফির ইমামতি করতে পারে এবং এ অবস্থাতেও সে কসর করে নামায পড়তে পারে। এ ক্ষেত্রে গৃহ্‌বাসী অমুসাফির মুক্তাদীরা মুসাফির ইমামের সালাম ফিরার পর সালাম না ফিরে উঠে বাকী নামায পূরণ করতে বাধ্য হবে। (লিকাউবাবিল মাফতূহ্‌, ইবনে উষাইমীন ৭/১৮)

অনুরুপ মুসাফির অমুসাফির ইমামের পিছনে নামায পড়তে পারে। আর এ ক্ষেত্রে সে ঐ ইমামের মতই পূর্ণ নামায পড়তে বাধ্য হবে। এমন কি ইমামের শেষের ২ রাকআতে জামাআতে শামিল হলেও মুসাফির বাকী ২ রাকআত একাকী আদায় করতে বাধ্য। এখানে ঐ ২ রাকআতকে কসর ধরে নিলে হবে না।

হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করা হল যে, মুসাফির একাকী নামায পড়লে ২ রাকআত, আর অমুসাফির ইমামের পশ্চাতে পড়লে ৪ রাকআত নামায পড়ে, তার কারণ কি? উত্তরে তিনি বললেন, ‘এটাই হল আবুল কাসেম (ﷺ)-এর সুন্নত।’ (আহমাদ, মুসনাদ ১৮৬২, ত্বাবারানীরানী, মু’জাম ১২৮৯৫নং)

তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল, ‘মক্কায় থেকে ইমামের সাথে জামাআতে নামায না পেলে কিভাবে নামায পড়ব?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘দুই রাকআত আবুল কাসেম (ﷺ)-এর সুন্নত।’ (মুসলিম, সহীহ ৬৮৮নং, ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ)

যদি কোন মুসাফির পথের কোন মসজিদে জামাআত চলতে দেখে এবং সে বুঝতে না পারে যে, ইমাম স্থানীয় বসবাসকারী, বিধায় পূর্ণ নামায পড়ার নিয়ত করে জামাআতে শামিল হবে, নাকি মুসাফির, বিধায় কসর করার নিয়তে শামিল হবে?

এমত অবস্থায় মুসাফির ইমামের আকার-আকৃতি ও সফরের চিহ্ন দেখে মোটামুটি আন্দাজ লাগাবে, ইমাম কি? এরপর যদি প্রবল ধারণা হয় যে, সে স্থায়ী বসবাসকারী, তাহলে পূর্ণ নামায পড়ার নিয়তে জামাআতে শামিল হবে।

পক্ষান্তরে যদি তার প্রবল ধারণা এই হয় যে, সে মুসাফির, তাহলে কসরের নিয়তে জামাআতে শামিল হবে।

কিন্তু সালাম ফিরার পর যদি বুঝতে পারে যে, ইমাম স্থানীয় বাসিন্দা এবং তার পিছনে যে ২ রাকআত নামায সে পড়েছে তা ইমামের তৃতীয় ও চতুর্থ রাকআত, তাহলে সে উঠে আরো ২ রাকআত পড়ে নিয়ে নামায পূর্ণ করবে। আর এর জন্য তাকে সিজদা-এ সাহও করতে হবে। এতে যদি সে মাঝে প্রকৃত জানার জন্য কথাও বলে থাকে তাতে কোন ক্ষতি হবে না। (মা-যা তাফআলু ফিলহা-লা-তিল আ-তিয়াহ্‌, মুহাম্মাদ সালেহ্‌ আল-মুনাজ্বিদ ১৬পৃ:)

পরন্তু যদি প্রবল ধারণায় কোন এক দিক বুঝা না যায়, তাহলে মুসাফির সম্ভাবনাময় নিয়ত করতে পারে। যেমন মনে এই সংকল্প করতে পারে, যদি ইমাম পূর্ণ নামায পড়ে তাহলে আমিও পূর্ণ পড়ব। নচেৎ, কসর পড়লে আমিও কসর পড়ব। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৪/৫২১)

জ্ঞাতব্য যে, মুসাফির নামাযে দাঁড়িয়ে তাকবীরে তাহ্‌রীমা দেওয়ার পর যদি কসরের নিয়ত করে তাহলেও চলবে। পূর্ব থেকেই কসরের নিয়ত জরুরী নয়। (ঐ ৪/৫২৫)

প্রকাশ থাকে যে, মুসাফিরের জন্যও স্থানীয় জামাআতে শরীক হয়ে নামায পড়া উত্তম। অবশ্য সফরের পথে কোন ক্ষতির আশঙ্কা হলে ভিন্ন কথা। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্‌ ১২/৮৯)