সফরে ৪ রাকআত বিশিষ্ট ফরয নামাযকে ২ রাকআত কসর (সংক্ষেপ) করে পড়া সুন্নত ও আফযল। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন,

(وَإِذَا ضَرَبْتُمْ فِي الأَرْضِ فَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَنْ تَقْصُرُوْا مِنَ الصَّلاَةِ إِنْ خِفْتُمْ أَنْ يَّفْتِنَكُمُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا)

অর্থাৎ, যখন তোমরা ভূপৃষ্ঠে সফর কর, তখন তোমরা নামায সংক্ষেপ করলে তোমাদের কোন অপরাধ নেই; যদি তোমরা এই আশংকা কর যে, কাফেররা তোমাদেরকে বিব্রত করবে। (কুরআন মাজীদ ৪/১০১)

বাহ্যত: উক্ত আয়াত থেকে যদিও এই কথা বুঝা যায় যে, কেবল ভয়ের সময় নামায কসর করা বৈধ, তবুও ভয় ছাড়া নিরাপদ সময়েও কসর করা যায়। মহানবী (ﷺ) ও তাঁর সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-গণ ভয়-অভয় উভয় অবস্থাতেই কসর করেছেন বলে প্রমাণিত।

একদা হযরত য়্যা’লা বিন উমাইয়া (রাঃ) হযরত উমার (রাঃ)-কে বলেন, কি ব্যাপার যে, লোকেরা এখনো পর্যন্ত নামায কসর পড়েই যাচ্ছে, অথচ মহান আল্লাহ তো কেবল বলেছেন যে, “যখন তোমরা ভূপৃষ্ঠে সফর কর, তখন তোমরা নামায সংক্ষেপ করলে তোমাদের কোন অপরাধ নেই; যদি তোমরা এই আশংকা কর যে, কাফেররা তোমাদেরকে বিব্রত করবে।” আর বর্তমানে তো ভীতির সে অবস্থা অবশিষ্ট নেই?

হযরত উমার (রাঃ) উত্তরে বললেন, যে ব্যাপারে তুমি আশ্চর্যবোধ করছ, আমিও সেই ব্যাপারে আশ্চর্যবোধ করে নবী (ﷺ)-এর নিকট এ কথার উল্লেখ করলে তিনি বললেন, “এটা তোমাদেরকে দেওয়া আল্লাহর একটি সদকাহ্‌। সুতরাং তোমরা তাঁর সদকাহ্‌ গ্রহণ কর।” (আহমাদ, মুসনাদ, মুসলিম, সুনানু আরবাআহ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ্‌), মিশকাত ১৩৩৫নং)

মা আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘মক্কাতে প্রথমে ২ রাকআত করে নামায ফরয করা হয়। অতঃপর নবী (ﷺ) যখন মদ্বীনায় হিজরত করে আসেন, তখন আরো ২ রাকআত করে নামায বৃদ্ধি করা হল। কেবল মাগরেবের নামায (৩ রাকআত) করা হল। কারণ, তা দিনের বিত্‌র। আর ফজরের নামাযও ২ রাকআত রাখা হল। কারণ, তার ক্বিরাআত লম্বা। কিন্তু নবী (ﷺ) যখন সফরে যেতেন, তখন তিনি ঐ প্রথমকার সংখ্যাই (মক্কায় ফরযকৃত ২ রাকআত নামাযই) পড়তেন।’ (আহমাদ, মুসনাদ, বায়হাকী, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান, ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ)

মহানবী (ﷺ) প্রত্যেক সফরেই কসর করে নামায পড়েছেন এবং কোন নির্ভরযোগ্য রেওয়ায়াত দ্বারা এ কথা প্রমাণিত নেই যে, তিনি কোন সফরে নামায পূর্ণ করে পড়েছেন। হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) বলেন, ‘আমি নবী (ﷺ), আবূ বাক্‌র, উমার ও উসমান (রাঃ)-এর সাথে সফরে থেকেছি। কিন্তু কখনো দেখি নি যে, তাঁরা ২ রাকআতের বেশী নামায পড়েছেন।’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ১৩৩৮নং)

অবশ্য হযরত উসমান (রাঃ) তাঁর খেলাফতের শেষ দিকে মিনায় পূর্ণ (৪ রাকআত) নামায পড়েছেন। (বুখারী ১০৮২, মুসলিম, মিশকাত ১৩৪৭নং) তদনুরুপ মা আয়েশাও সফরে পূর্ণ নামায পড়তেন। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ১৩৪৮নং) অবশ্য তাঁদের এ কাজের ব্যাখ্যা এই ছিল যে, প্রথমত: তাঁরা জানতেন, কসর করা সুন্নত; ওয়াজেব নয়। আর দ্বিতীয়ত: যাতে অজ্ঞ লোকেরা তাঁদের কসর করা দেখে মনে না করে বসে যে, যোহ্‌র, আসর ও এশার নামায মাত্র ২ রাকআত। (ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার ২/৬৬৪-৬৫)

পক্ষান্তরে ফজর ও মাগরেবের নামাযে কসর নেই।