১। জুমআর ফজরের প্রথম রাকআতে সূরা সাজদাহ এবং দ্বিতীয় রাকআতে সূরা দাহ্র (ইনসান) পাঠ করা। উভয় সূরা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠ করাই সুন্নত। প্রত্যেক সূরার কিছু করে অংশ পড়া সুন্নত নয়।
অবশ্য অন্য সূরা পড়া দোষাবহ্ নয়। বরং কখনো কখনো ঐ দুই সূরা না পড়াই উচিৎ। যাতে সাধারণ মানুষ তা পড়া জরুরী মনে না করে বসে। বরং তা জরুরী মনে করে পড়া এবং কখনো কখনো না ছাড়া বা কেউতা না পড়লে আপত্তি করা বিদআত। (মু’জামুল বিদা’ ২৮১পৃ:)
২। সকাল সকাল মসজিদে যাওয়া। আগে আগে মসজিদে গিয়ে উপস্থিত হওয়ার বিশেষ মাহাত্ম আছে।
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তি জুমআর দিন নাপাকীর গোসলের মত গোসল করল। অতঃপর প্রথম সময়ে (মসজিদে গিয়ে) উপস্থিত হল, সে যেন এক উষ্ট্রী কুরবানী করল। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় সময়ে উপস্থিত হল, সে যেন একটি গাভী কুরবানী করল। যে ব্যক্তি তৃতীয় সময়ে পৌঁছল, সে যেন একটি শিং-বিশিষ্ট মেষ কুরবানী করল। যে ব্যক্তি চতুর্থ সময়ে পৌঁছল, সে যেন একটি মুরগী দান করল। আর যে ব্যক্তি পঞ্চম সময়ে পৌঁছল, সে যেন একটি ডিম দান করল। অতঃপর যখন ইমাম (খুতবাদানের জন্য) বের হয়ে যান (মিম্বরে চড়েন), তখন ফিরিশ্তাগণ (হাজরী খাতা গু টিয়ে) যিক্র (খুতবা) শুনতে উপস্থিত হন।” (মালেক, মুঅত্তা, বুখারী ৮৮১, মুসলিম, সহীহ ৮৫০, আবূদাঊদ, সুনান, ইবনে মাজাহ্, সুনান, নাসাঈ, সুনান)
৩। জুমআর জন্য প্রস্তুতিস্বরুপ দেহের দুর্গন্ধ দূর করা, সে জন্য গোসল করা, আতর ব্যবহার করা :
মহানবী (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তি জুমুআহ পড়তে আসবে, সে যেন গোসল করে আসে।” (বুখারী, মুসলিম, সহীহ)
তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি জুমআর দিন গোসল করবে, যথাসাধ্য পবিত্রতা অর্জন করবে, তেল ব্যবহার করবে, অথবা নিজ পরিবারের সুগন্ধি নিয়ে ব্যবহার করবে, অতঃপর (জুমআর জন্য) বের হয়ে (মসজিদে) দুই নামাযীর মাঝে ফাঁক সৃষ্টি করবে না (কাতার চিরবে না), অতঃপর যতটা তার ভাগ্যে লিখা আছে ততটা নামায পড়বে, অতঃপর ইমাম খুতবা দিলে চুপ থাকবে, সে ব্যক্তির এই জুমুআহ থেকে আগামী জুমুআহ পর্যন্ত কৃত পাপ মাফ হয়ে যাবে।” (বুখারী, মিশকাত ১৩৮১নং)
গোসল করা ওয়াজেব না হলেও ঈদ, জুমুআহ ও জামাআতের জন্য পরিচ্ছন্নতা অবলম্বন করা একটি প্রধান কর্তব্য। [1] কোন কোন বর্ণনায়, “ধৌত করায় ও করে” বা “গোসল করায় ও করে” শব্দ এসেছে। যাতে গোসল যে তাকীদপ্রাপ্ত আমল তা স্পষ্ট হয়। অবশ্য এর অর্থে অনেকে বলেন, ঐ দিন স্ত্রী-সহ্বাস করে নিজে গোসল করে এবং স্ত্রীকেও গোসল করায়। অথবা মাথা ও দেহ্ ধৌত করে পরিপূর্ণ পরিচ্ছন্নতা অর্জন করে। যারা করে তাদের জন্য রয়েছে উক্তরুপ পুরস্কার।
৪। দাঁত ও মুখ পরিষ্কার করা :
দাঁতন ব্রাশ করে দাঁত ও মুখের দুর্গন্ধ দূরীভূত করে নেওয়া জুমআর পূর্বে একটি করণীয় কর্তব্য। মহানবী (ﷺ) বলেন, “প্রত্যেক সাবালকের জন্য জুমআর দিন গোসল করা, মিসওয়াক করা এবং যথাসাধ্য সুগন্ধি ব্যবহার করা কর্তব্য।” (মুসলিম, সহীহ ৮৪৬নং)
৫। সুন্দর পোশাক পরা :
মহানবী (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তি জুমআর দিন গোসল করে, খোশবূ থাকলে তা ব্যবহার করে এবং তার সবচেয়ে সুন্দর পোশাকটি পরিধান করে, অতঃপর স্থিরতার সাথে মসজিদে আসে, অতঃপর ইচ্ছামত নামায পড়ে এবং কাউকে কষ্ট দেয় না, অতঃপর ইমাম বের হলে নামায শেষ হওয়া পর্যন্ত নিশ্চুপ থাকে, সে ব্যক্তির এ কাজ দুই জুমআর মাঝে কৃত গুনাহর কাফফারা হয়ে যায়।” (আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান,হাকেম, মুস্তাদরাক, ইবনে খুযাইমাহ্, সহীহ, মিশকাত ১৩৮৭নং)
জুমআর জন্য সাধারণ আটপৌরে পোশাক বা কাজের কাপড় ছাড়া পৃথক তোলা পোশাক ও কাপড় পরা বাঞ্ছনীয়। যেহেতু জুমআর দিন মুসলিমদের সমাবেশের দিন। আর এ দিনে সাজসজ্জা ও সুগন্ধি ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয়। যাতে অপরের কাছে কেউ ঘৃণার পাত্র না হয়ে যায়। অথবা তার অপরিচ্ছন্নতায় কেউ কষ্ট না পায়।
একদা খুতবার মাঝে মহানবী (ﷺ) বলেন, “তোমাদের মধ্যে যাদের সামথ্য আছে তাদের পরিশ্রমের কাপড় ছাড়া জুমআর জন্য অন্য এক জোড়া কাপড় থাকলে কি অসুবিধা আছে?” (আবূদাঊদ, সুনান, ইবনে মাজাহ্, সুনান ১০৯৫-১০৯৬নং)
৬। পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়া।
এর জন্য মর্যাদাও আছে পৃথক। আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তি জুমআর দিন (মাথা) ধৌত করে ও যথা নিয়মে গোসল করে, সকাল-সকাল ও আগে-আগে (মসজিদে যাওয়ার জন্য) প্রস্তুত হয়, সওয়ার না হয়ে পায়ে হেঁটে (মসজিদে) যায়, ইমামের কাছাকাছি বসে মনোযোগ সহকারে (খোতবা) শ্রবণ করে, এবং কোন অসার ক্রিয়া-কলাপ করে না, সে ব্যক্তির প্রত্যেক পদক্ষেপের বিনিময়ে এক বৎসরের নেক আমল ও তার (সারা বছরের) রোযা ও নামাযের সওয়াব লাভ হয়!” (আহমাদ, মুসনাদ, সুনানু আরবাআহ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ্), ইবনে খুযাইমাহ্, সহীহ, ইবনে হিব্বান, সহীহ,হাকেম, মুস্তাদরাক, সহিহ তারগিব ৬৮৭ নং)
প্রকাশ থাকে যে, যে ব্যক্তি গাড়ি করে জুমুআহ পড়তে আসে, তার এ সওয়াব লাভ হয় না। বলা বাহুল্য, যে বাসা থেকে ১০০ কদম পায়ে হেঁটে জামে মসজিদে পৌঁছবে, তার আমল-নামায় ১০০ বছরের রোযা-নামাযের সওয়াব লিপিবদ্ধ করা হবে; যাতে একটি গোনাহও থাকবে না। আর তা এখানেই শেষ নয়। এইভাবে সে প্রতি মাসে প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ এবং প্রতি বছরে প্রায় ৫২০০ বছরের নামায-রোযার সওয়াব অর্জন করবে ইনশাআল্লাহ। আর এ হল মুসলিম বান্দাদের প্রতি মহান আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ।
(ذلِكَ فَضْلُ اللهِ يُؤْتِيْهِ مَنْ يَّشَاءُ، وَاللهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيْم)
৭। সূরা কাহ্ফ পাঠ :
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তি জুমআর দিন সূরা কাহ্ফ পাঠ করবে তার জন্য দুই জুমআর মধ্যবর্তীকাল জ্যোতির্ময় হবে।” (নাসাঈ, সুনান, বায়হাকী,হাকেম, মুস্তাদরাক, সহিহ তারগিব ৭৩৫ নং)
অন্য বর্ণনায় আছে, “যে ব্যক্তি জুমআর দিন সূরা কাহ্ফ পাঠ করবে তার জন্য তার ও কা’বা শরীফের মধ্যবর্তী জ্যোতির্ময় হবে।” (বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, জামে ৬৪৭১নং)উল্লেখ্য যে, জুমআর সময় মসজিদে এই সূরা তেলাওয়াত করলে এমনভাবে তেলাওয়াত করতে হবে, যাতে অপরের ডিষ্টার্ব না হয়।
জ্ঞাতব্য যে, এ দিনে সূরা দুখান পড়ার হাদীস সহীহ নয়। (যইফ জামে ৫৭৬৭, ৫৭৬৮নং) যেমন আলে ইমরান সূরা পাঠ করার হাদীসটি জাল। (যইফ জামে ৫৭৫৯নং)
তদনুরুপ জুমআর নামায পড়ে ৭ বার সূরা ফাতিহা, ইখলাস, ফালাক, নাস পড়ে অযীফা করার হাদীসদ্বয়ের ১টি জাল এবং অপরটি দুর্বল হাদীস। (যইফ জামে ৫৭৫৮, ৫৭৬৪, সিলসিলাহ যায়ীফাহ, আলবানী ৪৬৩০নং) সুতরাং এমন অযীফা পাঠ বিদআত। (মু’জামুল বিদা’ ১২২, ৩২৬পৃ:)
৮। বেশী বেশী দরুদ পাঠ :
জুমআর রাতে (বৃহ্স্পতিবার দিবাগত রাতে) ও (জুমআর) দিনে প্রিয়তম হাবীব মহানবী (ﷺ)-এর শানে অধিকাধিক দরুদ পাঠ করা কর্তব্য। মহানবী (ﷺ) বলেন, “তোমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হল, জুমআর দিন। এই দিনে তোমরা আমার প্রতি দরুদ পাঠ কর। যেহেতু তোমাদের দরুদ আমার উপর পেশ করা হয়ে থাকে। (আবূদাঊদ, সুনান ১৫৩১নং)
তিনি আরো বলেন, “জুমআর রাতে ও দিনে তোমরা আমার উপর বেশী বেশী দরুদ পাঠ কর। আর যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরুদ পাঠ করবে, সে ব্যক্তির উপর আল্লাহ ১০ বার রহ্মত বর্ষণ করবেন।” (বায়হাকী, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ১৪০৭নং)