স্বালাতে মুবাশ্‌শির জুম'আ আবদুল হামীদ ফাইযী ১ টি

মহানবী (ﷺ), হযরত আবূ বাকর ও হযরত উমার (রাঃ)-এর যামানায় জুমআর মাত্র ১টি আযানই প্রচলিত ছিল। আর এ আযান দেওয়া হত, যখন ইমাম খুতবাহ্‌ দেওয়ার জন্য মিম্বরে চড়ে বসতেন তখন মসজিদের দরজার সামনে উঁচু জায়গায় দাঁড়িয়ে। এইরুপ আযান চালু ছিল হযরত আবূ বাকর, উমারের খেলাফত কাল পর্যন্ত। অতঃপর হযরত উসমান (রাঃ) মদ্বীনার বাড়ি-ঘর দূরে দূরে এবং জনসংখ্যা বেশী দেখে উক্ত আযানের পূর্বে আরো একটি অতিরিক্ত আযান চালু করলেন। যাতে লোকেরা পূর্ব থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে জুমআর খুতবাহ্‌ শুনতে প্রথম থেকেই উপস্থিত হয়। আর এই আযান দেওয়া হত বাজারে যাওরা নামক একটি উঁচু ঘরের ছাদে। এ আযান শুনে লোকেরা জুমুআহর সময় উপস্থিত হয়েছে বলে জানতে পারত। এইভাবে ঐ আযান প্রচলিত থাকল। এতে কেউ তাঁর প্রতিবাদ বা সমালোচনা করল না। অথচ মিনায় (২ রাকআতের জায়গায়) ৪ রাকআত নামায পড়ার কারণে লোকেরা তাঁর সমালোচনা করেছিল। (বুখারী, সুনানু আরবাআহ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ্‌), আল-আজবিবাতুন নাফেআহ্‌, আন আসইলাতি লাজনাতি মাসজিদিল জামেআহ্‌, মুহাদ্দিস আলবানী ৮-৯পৃ:)

বলাই বাহুল্য যে, যে কাজ একজন খলীফায়ে রাশেদ করেছেন তা বিদআত হতে পারে না। বিশেষ করে মহানবী (ﷺ)-এর বিরোধিতা নেই যেখানে সেখানে সাহাবীর ইজতিহাদ ও আমল আমাদের জন্যও সুন্নত। কেননা, মহানবী (ﷺ) বলেন, “তোমাদের মধ্যে যে আমার পরে জীবিত থাকবে, সে বহু মতভেদ দেখতে পাবে। অতএব তোমরা আমার সুন্নাহ্‌ (পথ ও আদর্শ) এবং আমার পরবর্তী সুপথপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদ্বীনের সুন্নাহ্‌ অবলম্বন করো। তা দৃঢ়ভাবে ধারণ করো, দাঁতে কামড়ে ধরো। আর দ্বীনে নবরচিত কর্ম থেকে সাবধান থেকো। কারণ প্রত্যেক নবরচিত (দ্বীনী) কর্মই হল ‘বিদআত’। আর প্রত্যেক বিদআতই হল ভ্রষ্টতা।” (আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান ৪৬০৭, তিরমিযী, সুনান ২৮১৫ নং, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান, মিশকাত ১৬৫নং) (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্‌ ১৫/৭৫)

অতএব যদি অনুরুপ প্রয়োজন বোধ করে মাঠে-ঘাটে ও অফিসে-বাজারে সর্বসাধারণকে জুমআর জন্য প্রস্তুত হওয়ার কথা জানানো একান্ত জরুরী হয়েই থাকে, তাহলে তৃতীয় খলীফার সে সুন্নত ব্যবহার করতে আমাদের বাধা কোথায়?

পক্ষান্তরে বিদআত ও বাধা হল, একই উদ্দেশ্যে এর পরিবর্তে অন্য কিছু ব্যবহার করা। যেমন, মাইকে জুমআর সময় বলে দেওয়া, ওযূ-গোসল সেরে মসজিদে আসতে অনুরোধ করা, সূরা জুমআর শেষ ৩টি আয়াত পাঠ করা, গজল পড়া, বেল বা ঘন্টা বাজানো ইত্যাদি। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্‌, সঊদী উলামা-কমিটি ১/৪১১, ৪২১)

অবশ্য এই আযান দিতে হবে খুতবার আযানের সময়ের যথেষ্ট পূর্বে। নচেৎ, আযানের প্রধান উদ্দেশ্যই বাতিল হয়ে যাবে। যেমন ৫ বা ১০ মিনিট আগে হলে তাতে তেমন কিছু লাভ পরিলক্ষিত হবে না। অন্ততঃপক্ষে আধা থেকে এক ঘন্টা আগে হলে তবেই উদ্দেশ্য সফল হবে।

উল্লেখ্য যে, জুমআর দিন (খুতবার আগে দ্বিতীয়) আযান হওয়ার পর বেচা-কেনা (অনুরুপ সফর করা) হারাম হয়ে যায়। কারণ, মহান আল্লাহর আদেশ হল, “হে ঈমানদারগণ! যখন জুমআর দিন নামাযের জন্য আহবান করা হবে, তখন তোমরা সত্বর আল্লাহর স্মরণের জন্য উপস্থিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় বর্জন কর। এটিই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা উপলব্ধি কর।” (কুরআন মাজীদ ৬২/৯)

দ্বিতীয় আযান (মাইকে হলেও) দেওয়া উচিৎ মসজিদের সামনে কোন উঁচু জায়গায়। এ আযান মসজিদের ভিতরে মিম্বরের সামনে দেওয়া বিদআত। (আল-আজবিবাতুন নাফেআহ্‌, আন আসইলাতি লাজনাতি মাসজিদিল জামেআহ্‌, মুহাদ্দিস আলবানী ১৪-১৯পৃ:)