তাশাহহুদ শেষ করে তিন বা চার রাকআত বিশিষ্ট নামাযের জন্য যখন মহানবী (ﷺ) উঠতেন, তখন ‘তকবীর’ (আল্লাহু আকবার) বলতেন। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৭৯৯নং) তিনি ওঠার পূর্বেই তকবীর দিতেন। (আবূ য়্যা’লা, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ৬০৪নং) ওঠার পর নয়।
দুই হাত দ্বারা মাটির উপর ভর করে (খমীর সানার মত উভয় হাতকে মাটিতে রেখে) উঠে খাড়া হতেন। (আবূ ইসহাকহারবী, বায়হাকী, তামামুল মিন্নাহ্, আলবানী ১৯৬পৃ:)
আযরাক বিন কাইস বলেন, আমি ইবনে উমার (রাঃ) কে দেখেছি, তিনি যখন দ্বিতীয় রাকআত থেকে (তৃতীয় রাকআতের জন্য) উঠতেন, তখন তাঁর উভয়হাত দ্বারা মাটির উপর ভর করতেন। পরে আমি তাঁর ছেলে ও তাঁর সঙ্গীদেরকে বললাম, ‘সম্ভবত: এরুপ তিনি তাঁর বাধ্যকের কারণে করে থাকেন।’ কিন্তু তাঁরা বললেন, ‘না, বরং এইরুপই হবে।’ (অর্থাৎ, এইরুপ ওঠাই সুন্নত।) (বায়হাকী ২/১৩৫, তামামুল মিন্নাহ্, আলবানী ২০০পৃ:)
এই সময় তিনি ‘রফয়ে য়্যাদাইন’ করতেন। (বুখারী, আবূদাঊদ, সুনান, মিশকাত ৭৯৪নং) খাড়া হওয়ার পর তিনি দ্বিতীয় রাকআতের মত সূরা ফাতিহা পাঠ করতেন। কিন্তু এই রাকআতে অন্য সূরা পাঠ করতেন না। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৮২৮নং)
অবশ্য কখনো কখনো যোহরের নামাযে (প্রায় ১৫) আয়াত মত অন্য সূরা পাঠ করতেন। (মুসলিম, আহমাদ, মুসনাদ, মিশকাত ৮২৯, ইবনে খুযাইমাহ্, সহীহ ৫০৯, সিফাতু স্বালাতিন নাবী (ﷺ), আলবানী ১১৩, ১৭৮পৃ:)
সুতরাং শেষ (তৃতীয় ও চতুর্থ) রাকআতে সূরা ফাতিহার পর অন্য সূরা পাঠ করা ও না করা উভয়ই বৈধ। যোহরের নামাযের উপর কিয়াস করে অন্যান্য নামাযেও পড়া বৈধ। (ইবনে খুযাইমাহ্, সহীহ ১/২৫৬, সিফাতু স্বালাতিন নাবী (ﷺ), আলবানী ১১৩পৃ:)
তাছাড়া উক্ত হাদীসে সাহাবাগণ তাঁর যোহরের প্রথম দু’ রাকআতে প্রায় ৩০ আয়াত মত, শেষ দু’ রাকআতে তার অর্ধেক প্রায় ১৫ আয়াত মত, আসরের প্রথম দু’ রাকআতে তার অর্ধেক প্রায় ৭/৮ আয়াত মত এবং শেষ দু’ রাকআতে তার অর্ধেক অর্থাৎ প্রায় ৩/৪ আয়াত মত পড়া আন্দাজ করতেন। এতে বুঝা যায় যে, আসরের শেষ দু’ রাকআতেও অন্য সূরা (অপেক্ষাকৃত ছোট ধরনের) পড়া চলবে।
এ ছাড়া আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলেন, ‘প্রত্যেক নামাযে ক্বিরাআত আছে ----। কিন্তু যে ব্যক্তি কেবল সূরা ফাতিহা পড়বে, তা তার জন্য যথেষ্ট হবে। আর যে ব্যক্তি এর বেশী পড়বে, তা তার জন্য উত্তম হবে।’ (বুখারী ৭৭২, মুসলিম, সহীহ ৩৯৬ নং) অন্য এক বর্ণনায় তিনি বলেন, ‘পুরো নামাযেই ক্বিরাআত পড়া হয়---।’ (মুসলিম, সহীহ ৩৯৬ নং) অর্থাৎ প্রত্যেক রাকআতেই। হাফেয ইবনে হাজার (রহঃ) বলেন, কেউ কেউ বলেছেন, ‘নামাযের সমস্ত রাকআতেই ক্বিরাআত মুস্তাহাব।’ অবশ্য আবূ হুরাইরার এইহাদীসের প্রকাশ্য অর্থ তাই ইঙ্গিত করে। (ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার ২/২৯৫) সুতরাং সূরা ফাতিহার পর মহানবী (ﷺ) এর অন্য এক সূরা পড়া ও না পড়ার ব্যাপারে উভয় প্রকার বর্ণনা থাকায় এ কথা বলা যায় যে, তিনি শেষ দু’ রাকআতে কখনো কখনো সূরা পড়তেন, আবার কখনো পড়তেন না।
মোট কথা, তিন বা চার রাকআত নামাযে সূরা ফাতিহার পর প্রত্যেক রাকআতেই সূরা লাগানো যায়। কোন রাকআতেই না লাগালেও চলে। আবার কেবল প্রথম দু’ রাকআতে লাগিয়ে শেষ রাকআতগুলিতে না পড়লেও চলে। সব রকমই জায়েয।
ক্বিরাআতের পর মহানবী (ﷺ) বাকী রুকূ, কওমাহ্, সিজদাহ ও বৈঠক প্রভৃতি পূর্বের রাকআতের মত করে মাটির উপর উভয়হাত দ্বারা ভর করে তকবীর বলে চতুর্থ রাকআতের জন্য উঠে খাড়া হতেন। আর এই সময় তিনি কখনো কখনো ‘রফ্য়ে ইয়াদাইন’ করতেন। (আহমাদ, মুসনাদ, নাসাঈ, সুনান)