নামায ২ রাকআত বিশিষ্ট (যেমন ফজর, জুমুআহ, ঈদ প্রভৃতি) হলে দুআ মাসূরার পর সালাম ফিরলে নামায শেষ হয়ে যায়। কিন্তু ৩ বা ৪ রাকআত বিশিষ্ট (মাগরিব, এশা, যোহ্র, আসর, ইত্যাদি) হলে তাশাহহুদ পড়ে তৃতীয় রাকআতের জন্য উঠে যেতে হবে। ইবনে মাসঊদ (রাঃ) বলেন, ‘---অতঃপর নামাযের মাঝে হলে নবী (ﷺ) তাশাহহুদ পাঠ করে উঠে যেতেন। নচেৎ নামাযের শেষে হলে তাশাহহুদের পর যতক্ষণ ইচ্ছা (মাশাআল্লাহ) দুআ পড়তেন, তারপর সালাম ফিরতেন।’ (আহমাদ, মুসনাদ ১/৪৫৯, ইবনে খুযাইমাহ্, সহীহ ৭০৮নং, মাজমাউয যাওয়াইদ,হাইষামী ২/১৪২)
প্রশ্ন ওঠে, দরুদও কি তাশাহহুদের শামিল?
ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) এর মতে তাশাহহুদ ও দরুদ একই জিনিস। অর্থাৎ, সব তাশাহ্হুদেই দরুদ পড়তে হবে। (কিতাবুল উম্ম ১/১০২, সিফাতু স্বালাতিন নাবী (ﷺ), আলবানী ১৭০পৃ:) তাছাড়া উপরোক্তহাদীসে তাশাহহুদ ও দুআর কথা আছে, দরুদের কথা নেই। আর তার মানেই তাশাহ্হুদে দরুদ অবশ্যই শামিল আছে।
পরন্তু সাহাবাগণ তাশাহ্হুদে সালাম শিখার পর মহানবী (ﷺ) কে বললেন, (তাশাহ্হুদে) কেমন করে আমরা আপনার প্রতি সালাম পেশ করব তা (তাহিয়্যাত) তো শিখলাম। কিন্তু আপনার উপর দরুদ কিভাবে পাঠ করব (তা শিখিয়ে দিন)। তখন তিনি বললেন, “তোমরা বল, আল্লা-হুম্মা স্বাল্লি আলা মুহাম্মাদিঁউ---।” সুতরাং এখানেও স্পষ্টত: দরুদ তাশাহহুদেরই শামিল। তাছাড়া এখানে প্রথম না শেষ তাশাহহুদ তা নির্দিষ্ট নয়। অতএব বলা যায় যে, প্রথম তাশাহ্হুদেও দরুদ পড়তে হবে। (সিফাতু স্বালাতিন নাবী (ﷺ), আলবানী ১৬৪পৃ:)
অবশ্য মা আয়েশা رضي الله عنها এর একটিহাদীসে প্রথম তাশাহ্হুদে স্পষ্ট দরুদ পড়ার কথা উল্লেখ রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর রসূল (ﷺ) এর জন্য তাঁর মিসওয়াক ও ওযুর পানি প্রস্তুত রাখতাম। অতঃপর আল্লাহর ইচ্ছায় তিনি রাত্রের কোন অংশে জেগে উঠতেন। তারপর মিসওয়াক করে ওযু করতেন। অতঃপর ৯ রাকআত নামায পড়তেন। এতে তিনি অষ্টম রাকআত ছাড়া পূর্বে আর কোথাও (তাশাহহুদের জন্য) বসতেন না। সুতরাং (অষ্টম রাকআতে বসে) আল্লাহর নিকট দুআ করতেন এবং তাঁর নবীর উপর দরুদ পাঠ করতেন। অতঃপর সালাম না ফিরে তিনি উঠে যেতেন। তারপর নবম রাকআত পড়ে বসতেন। অতঃপর তাঁর প্রতিপালকের প্রশংসা বর্ণনা করে তাঁর নবীর উপর দরুদ পাঠ করতেন এবং দুআ করতেন। অতঃপর আমাদেরকে শুনিয়ে সালাম ফিরতেন। (আহমাদ, মুসনাদ ২/৩২৪, ভিন্ন শব্দে ঘটনাটি রয়েছে মুসলিমে ৭৪৬ নং)
উক্ত ব্যাপারটি তাহাজ্জুদ বা বিত্র নামাযের হলেও এর আমল ফরয নামাযেও চলবে। (তামামুল মিন্নাহ্, আলবানী ২২৪-২২৫পৃ:) এ জন্যই ইবনে বায (রাহিমাহুল্লাহ্)ও বলেন, নামাযী প্রথম তাশাহ্হুদে দরুদ পড়বে। (মাজমূআতু রাসাইল ফিস স্বালাহ্ ১২৯পৃ:)
আবার প্রথম তাশাহ্হুদে দুআ করার কথাও একাধিকহাদীসে উল্লেখ হয়েছে। যেমন উপরোক্ত হযরত আয়েশা رضي الله عنها এরহাদীসেও দুআর কথা স্পষ্টভাবে রয়েছে। একহাদীসে মহানবী (ﷺ) বলেন, “যখন তোমরা প্রত্যেক দু’ রাকআতে বসবে, তখন ‘আত্-তাহিয়্যাতু---’ বল। অতঃপর তোমাদের প্রত্যেকের পছন্দমত দুআ বেছে নিয়ে আল্লাহর নিকট দুআ কর।” (সহিহ,নাসাঈ, সুনান ১১১৪ নং, আহমাদ, মুসনাদ, ত্বাবারানীরানী, মু’জাম)
সুতরাং প্রথম তাশাহ্হুদেও দুআ করা বিধেয়। (সিফাতু স্বালাতিন নাবী (ﷺ), আলবানী ১৬০পৃ:)
পরন্তু গরম পাথরের উপর বসে এত কিছু পড়া কি সম্ভব? কারণ নবী (ﷺ) প্রথম বৈঠক থেকে এত তাড়াতাড়ি উঠতেন যে, মনে হত তিনি যেন গরম পাথরের উপর বসেছিলেন। কিন্তু এ হাদীসটি যয়ীফ। (যইফ আবূদাঊদ, সুনান ১৭৭, যতিরমিযী, সুনান ৫৭, যনাসাঈ, সুনান ৫৫নং, তামামুল মিন্নাহ্, আলবানী ২২৪পৃ:)