১। আযান যেন তার শব্দবিন্যাসের বিপরীত না হয়। যার পর যে বাক্য পরস্পর সজ্জিত আছে ঠিক সেই পর্যায়ক্রমে তাই বলা জরুরী। সুতরাং -উদাহ্রণস্বরুপ- যদি কেউحيَّ عَلَى الصَّلاَة বলার আগে حيَّ عَلَى الْفَلاَح বলে ফেলে, তাহলে পুনরায় حيَّ عَلَى الصَّلاَة বলে যথা অনুক্রমে আযান শেষ করবে। (ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ১/৩৪৮)
২। একটা বাক্য বলার পর অন্য বাক্য বলতে যেন বেশী দেরী না হয়। মাইক ইত্যাদি ঠিক করতে গিয়ে বা অন্য কোন কারণে বিরতি অধিক হলে পুনরায় শুরু থেকে আযান দিতে হবে।
৩। আযান যেন নামাযের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পূর্বে না হয়। যেহেতু ওয়াক্তের পূর্বে আযান যথেষ্ট নয়। (মুগনী ১/৪৪৫) পূর্বে দিয়ে ফেললে ওয়াক্ত হলে পুনরায় আযান দেওয়া জরুরী। (আউনুল মা’বূদ ২/১৬৬) একদা হযরত বিলাল (ﷺ) (ফজরের) আযান ফজর উদয় হওয়ার আগেই দিয়ে ফেলেছিলেন। মহানবী (ﷺ) তাঁকে আদেশ করলেন যে, তিনি যেন ফিরে গিয়ে বলেন, ‘শোনো! বান্দা ঘুমিয়েছিল। শোনো! বান্দা ঘুমিয়েছিল।’ (অর্থাৎ ঘুমের ঘোরে সময় বুঝতে পারিনি।) (আবূদাঊদ, সুনান ৫৩২নং)
৪। আযানের শব্দাবলী আরবী। ভিন্ন ভাষায় (অনুবাদ করে) আযান তো শুদ্ধ নয়ই; পরন্তু ঐ আরবী শব্দগুলোর উচ্চারণে ভুল করাও বৈধ নয়। সুতরাং যদি আযানের এমন উচ্চারণ করা হয়, যাতে তার অর্থ বদলে যায়, তাহলে আযান শুদ্ধ নয়। যেমন, آللهُ أَكْبَر ‘আ-ল্লা-হু আকবার’ (প্রথমকার আলিফে টান দিয়ে) বলা। এর অর্থ হবে, ‘আল্লাহ কি সবার চেয়ে মহান?’ আল্লাহর মহানতায় সন্দেহ্ পোষণ করে এ ধরনের প্রশ্ন বোধক বাক্য বললে মানুষ কাফের হয়ে যায়। না জেনে বললে কাফের না হলেও আযান শুদ্ধ নয়।
তদনুরুপ الله أكبار ‘আল্লাহু আকবা-র’ (আকবারের শেষে টান দিয়ে) বললে এর অর্থ দাঁড়াবে, ‘আল্লাহ একমুখো তবলা!’ অথবা ‘আল্লাহ আকবা-র (এক শয়তানের নাম)! নাঊযু বিল্লাহি মিন যালিক।
অনুরুপ যেখানে টান আছে সেখানে না টানা এবং যেখানে টান নেই সেখানে টান দেওয়া, ع (আইন) কে ا (আলিফ) এর মত অথবা তার বিপরীত, ح (বড় হে বাহা) কে هـ (ছোট হে বাহা)এর মত অথবা তার বিপরীত উচ্চারণ, ‘ফালাহ্’ ও ‘স্বালাহ্’ বলার সময় ‘হ্’এর উচ্চারণ বাদ দিয়ে ‘ফালা’ ও ‘সালা’ বলা, যের-যবর প্রভৃতি উল্টাপাল্টা করা ইত্যাদি আযানের অর্থ বদলে দেয়। এতে আযান শুদ্ধ হয় না।
৫। আযানের সমস্ত শব্দাবলী গোনা- গাঁথা। এর উপর কিছু অতিরিক্ত করা বিদআত। মহানবী (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তি আমাদের এ (দ্বীনের) ব্যাপারে কোন নতুন কিছু উদ্ভাবন করবে, যা তার অন্তর্ভুক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত।” (বুখারী, মুসলিম, সহীহ)
তাই ‘হাইয়্যা আলা খাইরিল আমাল,’ ‘আশহাদু আন্না সাইয়্যিদানা---’ প্রভৃতি বাড়তি শব্দ ও বাক্য বিদআত। (ফাতাওয়া মুহিম্মাহ্ তাতাআল্লাকু বিসসলাহ্, ইবনে বায ৩৪পৃ:)
তদনুরুপ ফজর ছাড়া অন্য ওয়াক্তের আযানে ‘আসস্বলাতু খাইরুম--’ বলা বৈধ নয়। ইবনে উমার (রাঃ) এটিকে বিদআত বলেছেন এবং তা শুনে সে আযানের মসজিদ ত্যাগ করেছেন। (আবূদাঊদ, সুনান ৫৩৮নং)
অনুরুপ আযানের পর আযানের মত চিল্লিয়ে ‘নামায পড়’ ইত্যাদি বলাও বিদআত। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্, সঊদী উলামা-কমিটি ১/২৫২)
প্রকাশ যে, ফজরের আযানে ‘আসস্বলাতু খাইরুম--’ বলতে ভুলে গেলে আযানের কোন ক্ষতি হয় না। (ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ১/৩৪৯)
আযান দিতে দিতে অতি প্রয়োজনে কথা বলায় দোষ নেই। (বুখারী, ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার ২/১১৬)
কোন কারণে আযান দিতে দিতে মুআযযিন তা শেষ করতে না পারলে অন্য ব্যক্তি নতুন করে শুরু থেকে আযান দেবে।
টেপ-রেকর্ডারের মাধমে আযান শুদ্ধ নয়। কারণ, আযান এক ইবাদত। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ২/৬১-৬২)