জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনের আমল এবং কুরবানির মাসায়েল

লেখক: আবদুল্লাহ আল কাফী বিন আব্দুল জলীল রাহ.


ভূমিকা: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদের জন্য ইসলাম ধর্মকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। দরূদ ও শান্তির অবিরাম ধারা বর্ষিত হোক নবীকুল শিরোমণি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর পবিত্র বংশধর ও সম্মানিত সাথীদের উপর।
রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “আমার উম্মতের বয়স ষাট থেকে সত্তর বছরের মাঝখানে”। (তিরমিজী) অন্যান্য নবীর উম্মতদের তুলনায় উম্মতে মুহাম্মাদির বয়স যদিও কম কিন্তু আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাদেরকে এমন কিছু মূল্যবান সময় দান করেছেন যাতে অল্প সময়ে অল্প আমল করেও আল্লাহর কাছে অতীতের উম্মত সমূহের চেয়ে অধিক প্রিয় বলে গণ্য হতে পারবে। আল্লাহ তাআলা উম্মতে মুহাম্মাদিকে যে সমস্ত ফজিলত পূর্ণ সময় দান করেছেন, তার মধ্যে জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিন অন্যতম।

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেন, “জিলহজ মাসের প্রথম দশকের চাইতে উত্তম এমন কোন দিন নেই, যে দিনগুলোর সৎ আমল আল্লাহর নিকট অধিক পছন্দনীয়”। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, হে আল্লাহর রসুল, (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর পথে জিহাদও নয়? রসুল (সাল্লাল্লাহি আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদও নয়। অবশ্য সেই মুজাহিদ ব্যক্তির কথা ভিন্ন, যে স্বীয় জানমাল নিয়ে জিহাদে বেড়িয়ে পড়ে। অতঃপর উহার কিছুই নিয়ে প্রত্যাবর্তন করেনা। (বুখারি)
তাই প্রতিটি মুসলিম ব্যক্তির উচিৎ, এই দশটি দিনের মধ্যে বিভিন্ন প্রকার সৎ আমল বেশি করে সম্পাদন করার মাধ্যমে এই মহান ফজিলত অর্জন করে আল্লাহর নৈকট্য লাভে সচেষ্ট হওয়া। আমরা এই প্রবন্ধে জিলহজ মাসের প্রথম দশকের কতিপয় ফজিলত পূর্ণ আমলের বর্ণনা করব ইনশাআল্লাহ।


১) হজ ও উমরা পালন করা: الحج والعمرة

হজ ইসলামের পঞ্চম রোকন। সামর্থ্যবান ব্যক্তির উপর তা জীবনে একবার আদায় করা ফরজ। হজের ফজিলতে অনেক সহিহ হাদিস বর্ণিত হয়েছে। রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি হজ করল, এবং হজ করা অবস্থায় কোন পাপের কাজে লিপ্ত হয়নি, সে এমন নিষ্পাপ অবস্থায় প্রত্যাবর্তন করল, যেমন নিষ্পাপ অবস্থায় মায়ের পেট থেকে জন্ম গ্রহণ করেছিল”। (বুখারি) আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “এক উমরা থেকে অপর উমরা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কৃত অপরাধ সমূহ উমরার মাধ্যমে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। আর মকবুল হজের পুরস্কার আল্লাহর কাছে জান্নাত ছাড়া অন্য কিছু নয়। (বুখারি)

২) রোজা পালন করা: الصيام

ইমাম নববী বলেন, “এই দিনগুলোতে রোজা পালন করা মোস্তাহাব। বিশেষ করে যে ব্যক্তি হজে যায়নি, তার জন্য আরাফার দিন অর্থাৎ জিলহজ মাসের ৯ তারিখে রোজা রাখা মোস্তাহাব”। আবু কাতাদা রা. হতে বর্ণিত রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আরাফার দিবসের রোজা বিগত এবং আগত এক বছরের গুনাহ মোচন করে দেয়। (সহিহ মুসলিম) তবে যিনি হজ করতে গিয়ে আরাফার মাঠে অবস্থান করছেন, তার জন্য রোজা রাখা বৈধ নয়।

৩) বেশি বেশি তাকবির বলা: الإكثار من التكبير

জিলহজ মাসের চাঁদ উঠার পর থেকেই উঁচু আওয়াজে বেশি বেশি তাকবির পাঠ করা সুন্নত। ফরজ নামাজের পর, মসজিদে, বাজারে এবং রাস্তায় চলার সময় এ তাকবির বেশি করে পাঠ করা। মহিলাগণ নিচু আওয়াজে তাকবির পাঠ করবে। তবে দলবদ্ধভাবে সমস্বরে তাকবির পাঠ করা সুন্নতের পরিপন্থী। কারণ সাহাবিদের থেকে দলবদ্ধভাবে তাকবির পাঠ করার কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। অথচ তারা ছিলেন সৎকাজে আমাদের চেয়ে অনেক অগ্রগামী।
এই তাকবির দু ধরণের। যথা:

(ক) অনির্দিষ্ট তাকবির: التكبير المطلق

সময় ও স্থান নির্ধারণ না করে বাড়ি, মসজিদ, রাস্তা ও বাজারে উঁচু আওয়াজে তাকবির পাঠ করা। জিলহজের প্রথম দিন থেকে ঈদের দিন পর্যন্ত এ তাকবির চলতে থাকবে। ইমাম বুখারি রহ. বলেন, ইবনে উমর ও আবু হুরায়রা রা. এই দিনগুলোতে তাকবির বলতে বলতে বাজারে যেতেন। তাদেরকে তাকবির বলতে শুনে লোকেরাও তাকবির পাঠ করত।

(খ) নির্দিষ্ট তাকবির: অর্থাৎ নির্দিষ্টভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর তাকবির পাঠ করা। এই তাকবির জিলহজ মাসের ৯ তারিখ ফজরের নামাজের পর থেকে শুরু করে আইয়ামে তাশরিক তথা জিলহজ মাসের ১৩ তারিখ সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত চলতে থাকবে।
তাকবিরের শব্দ:


الله أكبر , ألله أكبر, لاإله إلا الله, والله أكبر , الله أكبر ولله الحمد

বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লাইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।

৪) ঈদুল আজহার বিধান সমূহ: أحكام عيد الأضحى

ক) পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অবলম্বন করা: التتطهر
ঈদের দিন সকাল বেলা গোসল করা, সাধ্যানুযায়ী নতুন কাপড় পরিধান করা এবং সুগন্ধি ব্যবহার করা সুন্নত। তবে মহিলাগণ সুগন্ধি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকবে।

খ) ঈদের নামাজ আদায় করা: صلاة العيد
মুসলমানদের সাথে ঈদগাহে গিয়ে ঈদের নামাজ আদায় করা এবং ঈদের মাঠে ইমাম সাহেবের খুৎবা শ্রবণ করা। ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত, “নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুই ঈদের দিন তাকবির পাঠ করতে করতে ঈদের মাঠের দিকে বের হতেন।”
বৃষ্টি বা অন্য কোন কারণে মাঠে যেতে অসম্ভব হলে মসজিদেও ঈদের নামাজ আদায় করা যায়। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া সহ কতিপয় আলেমের মতে ঈদের নামাজ আদায় করা ওয়াজিব। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেন,


فصل لربك وانحر

“তুমি তোমার প্রভুর জন্য নামাজ আদায় কর এবং কুরবানি কর”। (আল কাউছারঃ২) তবে অধিকাংশ আলেমের মতে তা
সুন্নতে মুআক্কাদাহ; ওয়াজিব নয়। মহিলাদের জন্যও ঈদগাহে যাওয়া এবং ঈদের নামাজ আদায় করা বৈধ। তবে বেপর্দা হয়ে এবং সুগন্ধি ব্যবহার করে নয়। এমনকি ঋতুমতী মহিলাগণও ঈদের মাঠে গমন করবে। তারা নামাজ আদায় করবে না। বরং মুসলমানদের সাথে দুআয় শরিক হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, আমাদের দেশের কিছু আলেম মহিলাদের ঈদের নামাজে আসাকে হারাম ফতোয়া দিয়ে থাকেন।

গ) পায়ে হেঁটে ঈদের নামাজে গমন করা: إلى الصلاة مشيا الذهاب
সম্ভব হলে পায়ে হেটে ঈদগাহে যাওয়া। ঈদের মাঠে যাওয়ার সময় এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া এবং আসার সময় অন্য রাস্তা ফেরত আসা সুন্নত। (বুখারি)

ঘ) ঈদের নামাজ আদায়ের পদ্ধতি: كيفية أداء صلاة العيد
বিনা আজানে ও বিনা ইকামতে তাকবিরে তাহরিমা ব্যতীত বার তাকবিরে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা। প্রথম রাকাতে তাকবিরে তাহরিমার পর কিরাত পাঠের পূর্বে সাত তাকবির এবং দ্বিতীয় রাকাতে কিরাতের পূর্বে পাঁচ তাকবির পাঠ করা। সহিহ হাদিসে এভাবেই তাকবিরের সংখ্যা উল্লেখিত হয়েছে।

ঙ) ঈদের শুভেচ্ছা প্রদান করা: تبادل تهاني العيد
ঈদের আনন্দ বিনিময় করা এবং একে অপরকে শুভেচ্ছা প্রদান করা জায়েজ আছে। শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় একথা বলা যায়, (তাকাবাল্লাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম-تقبل الله منا ومنكم) অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা আমাদের ও আপনাদের সৎ আমলগুলো কবুল করুন।

চ) ঈদের দিন পানাহার করা: الأكل والشرب يوم عيد الأضحى
দুই ঈদের দিনে পানাহারের ব্যাপারে রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নত হলো, ঈদুল ফিতরের দিন ঈদের নামাজের পূর্বে কিছু খেয়ে ঈদের নামাজে গমন করা। আর ঈদুল আজহার দিন না খেয়ে ঈদের মাঠে যাওয়া। বুরায়দা রা. হতে বর্ণিত, রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদুল ফিতরের দিন না খেয়ে বের হতেন না। এবং ঈদুল আজহার দিন না খেয়ে বের হতেন এবং নামাজ থেকে এসে কুরবানি করে কুরবানির গোশত থেকে খেতেন। (আহমদ) অনেকে এটাকে রোজা বলে থাকেন। রোজা বলা ঠিক নয়। কারণ দুই ঈদের দিন রোজা রাখা হারাম।

ছ) কুরবানি করা: ذبح الأضحية
সামর্থ্য বান ব্যক্তির উপর কুরবানি করা সুন্নতে মুআক্কাদা। কুরবানি দেওয়ার ক্ষমতা রাখে এমন ব্যক্তির জন্য কুরবানি না দেওয়া মাকরূহ। অনেক আলেম আল্লাহর বাণী: (فصل لربك وانحر) “আপনার প্রতিপালকের জন্য নামাজ আদায় করুন এবং কুরবানি করুন।” এই আয়াতকে দলিল হিসাবে গ্রহণ করে কুরবানি দেওয়াকে ওয়াজিব বলেছেন।
ইবনে উমর রা. বলেন, রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদিনাতে দশ বছর অবস্থান করেছেন। তিনি প্রতি বছরই কুরবানি করেছেন। (তিরমিজী-আহমদ)
কুরবানি নিজ হাতে করা উত্তম। নিজে করতে না পারলে অন্যকে দিয়ে করা যেতে পারে। কুরবানি জবাই করার সময় ‘বিসমিল্লাহ আল্লাহ আকবার’ বলে জবাই করবে। জবাই করার সময় কুরবানি আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ার দুআ করা মোস্তাহাব।

জ) কুরবানির পশু নির্বাচন: اختيار المواشي للأضحية
উট, গরু, ছাগল, দুম্বা-ভেড়া ও মহিষ দিয়ে কুরবানি করা বৈধ। তবে কুরবানির পশুর ক্ষেত্রে শর্ত হল তা সকল প্রকার দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত হতে হবে।
ইমাম বুখারি ও মুসলিম আনাস রা. হতে বর্ণনা করেন, রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শিং বিশিষ্ট দু‘টি কাল মুখ ও কাল পা বিশিষ্ট ভেড়া দিয়ে কুরবানি করেছেন। (বুখারি)
চার প্রকার পশু দিয়ে কুরবানি করা সিদ্ধ নয়। সুস্পষ্ট অন্ধ, সুস্পষ্ট রোগ বিশিষ্ট, সুস্পষ্ট খোঁড়া এবং একেবারে দুর্বল ও গোশত হীন যা জবেহ করার স্থান পর্যন্ত হেটে যেতে অক্ষম। (তিরমিজী)
একটি ছাগল বা দুম্বা এক পরিবারের পক্ষ থেকে যথেষ্ট হবে। যদিও পরিবারের লোক সংখ্যা অনেক হয়ে থাকে। একটি উটে দশজন এবং একটি গরুতে সাত জন পর্যন্ত শরিক হয়ে কুরবানি করা বৈধ। এ ব্যাপারে সহিহ হাদিস রয়েছে। তবে ছাগল-খাসীতে শরিক হওয়া জায়েজ নাই।
আমাদের দেশে কুরবানির গরুর সাথে ভাগে আকিকা দেওয়ার নিয়ম প্রচলিত আছে। হাদিসে এর কোন প্রমাণ পাওয়া যায়না। সুতরাং ইহা আল্লাহর রাস্তায় কুরবানি করার মত একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত নিয়ে খেলাধুলার শামিল।

ঝ) কুরবানির পশুর বয়স: أعمار مواشي الأضحية
কুরবানির পশুর জন্য শর্ত হল, তার বয়স পূর্ণ হতে হবে। ভেড়া-দুম্বার ক্ষেত্রে ছয় মাস পূর্ণ হতে হবে। (নাসাঈ) ছাগল-খাসীর বয়স এক বছরের কম হলে তার দ্বারা কুরবানি চলবে না। গরুর বয়স দুই বছর পূর্ণ হতে হবে। উটের বয়স পাঁচ বছর পূর্ণ হতে হবে। (মুসলিম)

ঞ) কুরবানি করার সময়: أوقات ذبح الأضحية
ঈদের নামাজের পর থেকেই কুরবানি করার সময় শুরু হয়। ঈদের নামাজের পূর্বে জবাই করলে তা কুরবানি হিসাবে গ্রহণযোগ্য হবে না। কেউ যদি নামাজের আগেই জবাই করে ফেলে, তবে তাকে নামাজের পর তদস্থলে আর একটি পশু জবাই করতে হবে। কুরবানি করার শেষ সময় হল জিলহজ মাসের ১৩তারিখ সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। অর্থাৎ ঈদের দিন এবং ঈদের পর তিন দিন। পরের তিন দিনকে হাদিসের পরিভাষায় আইয়ামে তাশরিক বলা হয়। তাশরিক অর্থ সূর্যের আলোতে শুকানো। সাহাবিগণ এই দিনগুলোতে কুরবানির গোশত কেটে টুকরো টুকরো করে রৌদ্রে শুকাতেন বলে এই দিনগুলোকে আইয়ামে তাশরিক বলা হয়।

ট) কুরবানির গোশত খাওয়া:
কুরবানির গোশত থেকে অল্প হলেও খাওয়া সুন্নত। রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)মদিনাতে অভাবী লোক থাকার কারণে কুরবানির গোশত তিন দিনের বেশি রাখতে নিষেধ করেছিলেন।পরবর্তীতে যখন মুসলমানদের অবস্থার পরিবর্তন হল, তখন রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরবানির গোশত যতদিন ইচ্ছা রেখে দেওয়ার অনুমতি প্রদান করেছেন।

ঠ) কুরবানি দাতা যা থেকে বিরত থাকবে: الأشياء التي يبتعد عنها المضحي
যে ব্যক্তি কুরবানি দিতে ইচ্ছা করবে, তার জন্য জিলহজ মাসের চাঁদ উঠার পর থেকে কুরবানির করার পূর্ব পর্যন্ত মাথার চুল, হাত বা পায়ের নখ কাটা সম্পূর্ণ নিষেধ। উম্মে সালামা রা. হতে বর্ণিত রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেছেন, যখন তোমরা জিলহজ মাসের চাঁদ দেখবে এবং তোমাদের কেউ কুরবানি করার ইচ্ছা পোষণ করবে, সে যেন কুরবানির পশু জবাই করার পূর্বে তার মাথার চুল বা হাত-পায়ের নখ কাটা থেকে বিরত থাকে। (মুসলিম-আহমদ)
এই বিধান শুধুমাত্র পরিবারের যে কুরবানি করবে, তার জন্য স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্য এ বিধানের অন্তর্ভুক্ত নয়।

ড) কুরবানির গোশত বণ্টন করা: توزيع لحوم الأضاحي
কুরবানি দাতার জন্য সুন্নত হল নিজে পরিবারসহ কুরবানির গোশত খাবে, প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনকে উপহার দিবে এবং গরীব-মিসকিনকে সদকা করবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, “তোমরা উহার গোশত খাও এবং ফকীর ও অভাবগ্রস্তদেরকে খেতে দাও”। (সূরা হজ্জ: ২৮)
অনেক উলামায়ে দ্বীন কুরবানির গোশত তিন ভাগে বণ্টন করে একভাগ নিজে খাওয়া, একভাগ ধনী আত্মীয়দেরকে হাদিয়া দেওয়া এবং আর একভাগ ফকির-মিসকিনদেরকে দান করা পছন্দ করতেন। তবে এধরণের বণ্টন করা ওয়াজিব নয়।

ঢ) মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানি করা: الأضحية عن الميت
মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানি করা তিন ধরণের হতে পারে। যথা:

(১) নিজের কুরবানিতে পরিবারের মৃত ও জীবিত ব্যক্তিদেরকে নিয়তের মাধ্যমে শামিল করা। ইহা বৈধ। নবী (সাল্লাল্লাহি আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে এধরণের কুরবানি করার কথা প্রমাণিত আছে। এভাবে দেওয়া কুরবানির গোশত পরিবারের সবাই খেতে পারবে।

(২) মৃত ব্যক্তি জীবিত থাকা অবস্থায় তাঁর পক্ষ থেকে কুরবানি করার ওসিয়ত করে থাকলে ওসিয়ত বাস্তবায়ন করার জন্য মৃত ব্যক্তির তরফ থেকে কুরবানি করা জায়েজ আছে।

(৩) মৃত ব্যক্তির জন্য আলাদাভাবে কুরবানি করা। এব্যাপারে বিদ্বানগণ মতবিরোধ করেছেন। কারণ এ ধরণের কুরবানি করার কথা হাদিসের মাধ্যমে সরাসরি প্রমাণিত নাই। আল্লামা ইবনে উসাইমীন সদকা স্বরূপ মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানি করা বৈধ বলে মত প্রকাশ করেছেন। এভাবে কুরবানি করলে গোশত দরিদ্রদের মাঝে সদকা করে দিতে হবে। নিজে খাওয়া যাবে না।

আল্লাহর কাছে প্রার্থনা এই যে তিনি যেন আমাদের সমস্ত সৎ আমল কবুল করেন ।