ক. বিকাশ বয়কট ও ব্যবহার প্রসঙ্গ:
প্রশ্ন-১: হয়ত অবগত আছেন যে, ট্র্যান্স জেন্ডার নিয়ে প্রতিবাদ করায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ মাহতাব স্যারকে চাকরি চ্যুত করা হয়েছে। আমাদের মোটামুটি পরিসরের একটা সদকা ফান্ড আছে। খাবার বিতরণ, এতিমদের নিয়ে কাজ করা এবং অন্যান্য দরিদ্র-অসহায়দের নিয়ে কাজ করি এই ফান্ড থেকে।
ফান্ডে অনেক প্র্যাক্টিসিং নন প্র্যাক্টিসিং মুসলিম দান করেন। সবাই হয়ত বিকাশ বয়কটের বিষয়টা আমলে নিবে না। ফলে ফান্ডে টাকা আসার পরিমাণ কমে যেতে পারে। এমতাবস্থায় আমাদের করণীয় কী বুঝতে পারছি না। পার্সনালি বয়কট করেছি। কিন্তু ফান্ডের ক্ষেত্রেও বয়কট করব কিনা সে বিষয়ে আপনার থেকে উত্তর আশা করছি।
উত্তর:
বিকল্প পন্থা থাকলে তাই ব্যবহার করা উচিত। অন্যথায় প্রয়োজনে বিকাশ ব্যবহার করা যাবে ইনশাআল্লাহ। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্মিলিতভাবে ব্র্যাক এবং বিকাশ সহ ব্র্যাকের সকল অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বয়কট করা উচিত। কারণ ট্রান্সজেন্ডারের মত বিকৃত এবং শরিয়ত বিরোধী মতবাদের বিরুদ্ধে ব্যাপারে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়-এর উক্ত শিক্ষক এক সেমিনারে ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ক পাঠ্যপুস্তক থেকে দুটি পৃষ্ঠা ছিঁড়ে প্রতিবাদ করায় তাকে চাকরিচ্যুত করেছে। বিষয়টি ধৃষ্টতাপূর্ণ এবং উদ্বেগজনক। (যদিও কর্তৃপক্ষ চাকরিচ্যুত করার ভিন্ন কারণ দেখিয়েছে)।
প্রশ্ন-২: বিকাশ তো সবাই বয়কট করতে বলছে। তো বিকাশ কি বন্ধ করে দিতে হবে? বন্ধ না করলে কি গুনাহ হবে?
উত্তর:
প্রয়োজনে বিকাশ ব্যবহার করলে গুনাহ হবে না। তবে বিকল্প থাকলে বিকাশ ব্যবহার না করাই ভালো। কারণ তা ব্র্যাক সুদি ব্যাংক-এর একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। তাছাড়া ব্র্যাক ট্র্যান্সজেন্ডার নামক নিকৃষ্ট মতবাদের সমর্থক-যা প্রমাণিত হয়েছে, সম্প্রতি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়-এর এক শিক্ষক এ বিষয়ে বই ছিঁড়ে প্রতিবাদ করায় তাকে বহিষ্কার করার মাধ্যমে।
খ. বিকাশ থেকে টাকা উঠানোর পর উক্ত টাকা পুনরায় একাউন্টে জমা হয়েছে
প্রশ্ন-৩: একদিন বোন তার বিকাশ থেকে টাকা উঠানোর পর আবার দেখে যে পুনরায় সেই টাকাগুলোই যত টাকা উঠানো হয়েছে সেই টাকাগুলো তার বিকাশে পুনরায় ফিরে এসেছে। তখন তিনি দোকানদারকে বললে দোকানদার বলে এই টাকাগুলো তার না। এ অবস্থায় দ্বীনী বোনের প্রশ্ন, তিনি এই টাকাগুলা উঠিয়ে কী করবেন? তাছাড়া তিনিও অনেকদিন যাবত কিছু ঋণগ্রস্ত অবস্থায় আছেন। এখন তিনি কি টাকাগুলো ঋণ পরিশোধ করবেন না কাউকে দান করে দিবেন?
উত্তর:
বিকাশ একাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলনের পরেও পুনরায় উক্ত টাকা ফিরে আসা এটা হয়তো বিকাশের কোন টেকনিক্যাল ভুলের কারণে হতে পারে। এইজন্যে প্রথমত করণীয় হল, বিকাশ কাস্টমার কেয়ারে ফোন করে এই সমস্যার কথা জানানো এবং তাদের দিক নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করা।
কিন্তু তারা কোন সমাধান দিতে না পারলে আপনি উক্ত টাকা ক্যাশ আউট করে নিজে ব্যবহার করতে পারেন। কেননা আপনার পক্ষ থেকে কোন ধরনের দুর্নীতি ও অসৎ কলাকৌশল ব্যতিরেকে এই টাকা আপনার একাউন্টে জমা হয়েছে এবং আপনি নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তা জানিয়েছেনও। কিন্তু তারা তার কোন সমাধান দিতে পারেনি। অতএব আপনার জন্য তা ব্যবহার করা বৈধ, অথবা চাইলে কোন মাদরাসা, মসজিদ, জনকল্যাণ খাত বা গরিব মানুষকে দান করে দিতে পারেন। তবে বিকাশ কর্তৃপক্ষ থেকে যদি পরবর্তীতে এর কোন সমাধান আসে তাহলে উক্ত টাকা ফেরত দিতে হবে বা তারা কেটে নেবে তখন আপনার আপত্তি করার সুযোগ থাকবে না।
গ. বিকাশের ক্যাশব্যাক কি সুদের অন্তর্ভূক্ত?
প্রশ্ন-৪: ক্যাশ ব্যাক-এ যে টাকা টা সেটা কি সুদের অন্তর্ভুক্ত? এটা খরচ করা জায়েজ হবে?
উত্তর:
বিকাশ এবং তাদের পার্টনার (যারা বিকাশের সাথে পার্টনারশিপে চুক্তিবদ্ধ) বিভিন্ন ব্র্যান্ড, দোকান বা প্রতিষ্ঠানে বিকাশের মাধ্যমে পে করা হলে তারা তৎক্ষণাৎ নির্ধারিত মূল্য থেকে কিছু টাকা ফেরত দেয়। এটাই ক্যাশ ব্যাক।
যেমন: আপনি যদি বিকাশের সাথে চুক্তিবদ্ধ কোন দোকান বা প্রতিষ্ঠান থেকে ১০০০ টাকার পণ্য ক্রয় করেন এবং সেই টাকাটা বিকাশের মাধ্যমে পে করেন তাহলে আপনি ২০ টাকা ফেরত পাবেন। অর্থাৎ আপনি বিকাশে মাধ্যমে পে করার কারণে উক্ত পণ্যটা পেলেন ৯৮০ টাকায়। এটা মূলত বিকাশ এবং উক্ত প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত গ্রাহক আকৃষ্ট করার পদ্ধতি। এতে একদিকে বিকাশের প্রচার-প্রচারণা এবং গ্রাহক বৃদ্ধি হয়, অপরদিকে উক্ত প্রতিষ্ঠানেরও প্রচার-প্রচারণা এবং বিক্রয় বৃদ্ধি পায়।
সুতরাং আপনি যদি ন্যায্য মূল্যে কোন পণ্য ক্রয় করেন বা সেবা গ্রহণ করেন কিন্তু এতে যদি কিছু টাকা ছাড় পাওয়া যায় তাহলে তা গ্রহণ করতে কোন দোষ নেই। কারণ পণ্যের মালিক আপনাকে ছাড় দিয়েছে। এক্ষেত্রে বিকাশ এবং উক্ত প্রতিষ্ঠানের মাঝে চুক্তি থাকে এবং পরবর্তীতে তারা গ্রাহককে দেওয়া এই ছাড়টা নিজেদের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী ভাগাভাগি করে নেয়-যা তাদের উভয়ের প্রচার প্রসারের খরচ হিসেবে গণ্য করা হয়। তবে আমরা জানি, বিকাশ ব্র্যাক ব্যাংকের অঙ্গীভূত একটি সুদ ভিত্তিক আর্থিক পরিষেবা। তাই একান্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বিকাশ ব্যবহার করা উচিত নয়। কেননা এতে প্রকারান্তরে তাদেরকে সহায়তা করা হয়।
সুতরাং ক্যাশ ব্যাক পাওয়ার আশায় কোন দোকান থেকে পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিকাশ ব্যবহার না করাই ভালো। বরং সরাসরি দোকানদারকে নির্দিষ্ট মূল্য পরিশোধ করেই পণ্য ক্রয় করবেন। এটাই সবচেয়ে নিরাপদ। আল্লাহু আলম।
ঘ. বিকাশ বা নগদের মাধ্যমে জাকাতের টাকা পাঠালে খরচের টাকা কি আলাদা দিতে হবে?
প্রশ্ন-৫: বিকাশ, নগদ বা রকেট-এ জাকাতের টাকা পাঠালে টাকা উঠাতে গেলে খরচ কেটে নিবে। সেই খরচও কি জাকাতের মধ্যেই পড়বে? নাকি আলাদা করে উক্ত জাকাতের টাকার খরচ পাঠিয়ে দিতে হবে?
উত্তর:
খরচের টাকা আলাদা দিতে হবে।
ঙ. বিকাশের বার্ড গেম খেলা থেকে প্রাপ্ত পুরস্কারের টাকা কি হালাল?
প্রশ্ন-৬: বিকাশে বার্ড (পাখি) গেম খেলে পুরস্কারের টাকা কি হালাল হবে? গেমের মধ্যে তেমন কোন হারাম আমি দেখি না!
উত্তর:
ব্র্যাক ব্যাংক হল, একটি সুপরিচিত সুদি ব্যাংক। এরই একটি শাখা হল বিকাশ। সুতরাং বিকাশ সরাসরি সুদি ব্যাংকের সাথে রিলেটেড।
অতএব এতে এজেন্ট হিসেবে কাজ করা বা তার কাস্টমার কেয়ারে চাকরি করা সুদি ব্যাংকে চাকরি করার নামান্তর। এটা যেমন হারাম তেমনি তার প্রচার-প্রসার বা এ্যাড দেওয়া, এর জন্য ঘর ভাড়া দেওয়া, অ্যাপ রেফার করে অর্থ উপার্জন করা, বিকাশ ওয়াপ-এ বার্ড নামক গেম খেলে অর্থ উপার্জন ইত্যাদি জায়েজ নাই। কারণ এর মাধ্যমে তাদের সুদি কার্যক্রমকে সমৃদ্ধ ও ব্যাপ্তিতে সহায়তা করা হয়। আর এ কথা অজানা নয় যে, ইসলামের দৃষ্টিতে সুদ ভয়ানক হারাম, ধ্বংসাত্মক কবিরা গুনাহ এবং অভিশাপ যোগ্য কাজ হিসেবে পরিগণিত।
আল্লাহ তাআলা কুরআনে সুদকে হারাম ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন,
أَحَلَّ اللهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا
"আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল এবং সুদকে হারাম করেছেন।" [বাকারা: ২৭৫]
আল্লাহু আলাম।