দাড়ি লম্বা করার হুকুম:
পুরুষের জন্য দাড়ি লম্বা করা ওয়াজিব। এর কারণ নিম্নরূপ:
১। মহানবী (ﷺ) দাড়ি লম্বা করার নির্দেশ দিয়েছেন। নির্দেশটা ওয়াজিব অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। মানদূব (যা আমল করলে সাওয়াব পাওয়া যাবে আর পরিত্যাগ করলে শাস্তি হবে না) অর্থে ব্যবহৃত হওয়ার কোন ইঙ্গিত এখানে নেই।
এ ব্যাপারে মহানাবী (ﷺ)এর বাণী হলো:
خالفوا المشركين : وفروا اللحى وأحفوا الشوارب
(দাড়ি ও গোফের ব্যাপারে) তোমরা মুশরিকদের বিপরীত কর। দাড়ি লম্বা কর এবং গোঁফ ছোট কর।[1]
তিনি আরও বলেন:
جزوا الشوارب وأرخوا اللحى خالفوا المجوس
‘তোমরা গোঁফ কাট এবং দাড়ি লম্বা কর আর অগ্নি পুজকদের বিরোধিতা কর ’।[2]
২। দাড়ি মুণ্ডন করা কাফিরদের সাথে সাদৃশ্য রাখে। যেমনটি পূর্বোলেস্নখিত হাদীসদ্বয়ে বর্ণিত হয়েছে।
৩। দাড়ি কর্তন করলে আল্লাহ্র সৃষ্টির পরিবর্তন করা হয় এবং শয়তানের আনুগত্য করা হয়।
আল্লাহ্র বাণী:
﴿وَلَآمُرَنَّهُمْ فَلَيُغَيِّرُنَّ خَلْقَ اللَّهِ﴾
অবশ্যই তাদেরকে আদেশ করব, ফলে অবশ্যই তারা আল্লাহ্র সৃষ্টি বিকৃত করবে (সূরা নিসা-১১৯)।
৪। দাড়ি মুণ্ডন করলে নারীদের সাদৃশ্য হয়ে যায়। যে সব পুরুষেরা নারীর সাদৃশ্য গ্রহণ করে; আল্লাহ্র রাসূল (ﷺ) তাদের প্রতি অভিশাপ করেছেন।[3]
এজন্য শাইখুল ইসলাম বলেন: দাড়ি মুণ্ডন করা হারাম।[4] ইবনে হাযম ও অন্যান্য বিদ্বানগণ বলেন: দাড়ি মুণ্ডন করা হারাম, এ ব্যাপারে ইজমা রয়েছে।[5]
এক মুষ্টির অতিরিক্ত দাড়ি ছাটা জায়েয আছে কি?
কতিপয় বিদ্বানের মতে: এক মুষ্টি দাড়ি রেখে বাকি অংশ কেটে ফেলা জায়েয আছে। তারা ইবনে উমার (রাঃ) এর হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করে থাকেন।
كَانَ ابْنُ عُمَرَ: «إِذَا حَجَّ أَوِ اعْتَمَرَ قَبَضَ عَلَى لِحْيَتِهِ، فَمَا فَضَلَ أَخَذَهُ»
ইবনে উমার (রাঃ) যখন হাজ্জ ও উমরা করতেন তখন তার দাড়ি ধরে অতিরিক্ত অংশ ছেঁটে ফেলতেন।[6]
তারা বলেন: তিনি (উমার) দাড়ি লম্বার নির্দেশ দেয়া হাদীসের রাবী। সুতরাং তিনিই তার বর্ণনা সম্পর্কে বেশি বুঝেন।
এই আসারের মাধ্যে তাদের কোন দলীল নেই।[7] কেননা-
(১) ইবনে উমার এটা হাজ্জ ও উমরা থেকে হালাল হওয়ার পর করেছিলেন। অথচ সেটাকে তারা সর্বাবস্থার জন্য বৈধ মনে করেন।
(২) ইবনে উমার (রাঃ) এ কাজটি আল্লাহ্র বাণী- مُحَلِّقِينَ رُءُوسَكُمْ وَمُقَصِّرِينَ অর্থাৎ: তোমাদের মাথা মুণ্ডন করে এবং চুল ছেঁটে (নির্ভয়ে মাসজিদুল হারামে অবশ্যই প্রবেশ করবে) (সূরা : ফাতাহ-২৭)। এ আয়াতটির উপর তা‘বীল করে করেছেন। অর্থাৎ: হাজ্জের সময় মাথা মুণ্ডন করতে হবে, আর দাড়ি ছোট করতে হবে।[8]
(৩) সাহাবাগণ যখন তাদের বর্ণনার বিপরীত কিছু বলেন বা করেন, তখন যা বর্ণনা করেছেন তাই গ্রহণ করতে হয়। তাদের বোধগম্যতা ও কর্ম ধর্তব্য নয়। বরং মহানাবী (ﷺ) এর দিকে সম্পৃক্ত বিষয়টিই ধর্তব্য।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটাই প্রমাণিত হয় যে, বিশুদ্ধ মতামত হলো, দাড়ি ছেড়ে দেয়া ওয়াজিব। অনেক সহীহ হাদীসে দাড়ি লম্বা করার ব্যাপারে সাধারণভাবে নির্দেশ দেয়ার ফলে তা কাট-ছাট করা যাবে না। হাদীসে বিভিন্ন শব্দে এ নির্দেশগুলো বর্ণিত হয়েছে। যেমন: أعفوا তথা লম্বা হতে দাও, أرخوا তথা ছেড়ে দাও, أرجوا তথা অবকাশ দাও, وفروا তথা পূর্ণ বা বেশি হতে দাও, أوفوا সম্পূর্ণ কর। অধিকাংশ বিদ্বানগণ এ মতামত পোষণ করেছেন। আল্লাহ্ই সর্বাধিক অবগত।
[2] সহীহ; মুসলিম (২৬০)।
[3] বুখারী (৫৮৮৫), তিরমিযী (২৯৩৫)।
[4] ইখতিয়ারাতুল ফিকহিয়্যাহ (পৃ. ১০) আলাউদ্দীন আলবা’লী প্রণীত। আল-ফুরু’ (১/২৯১) ‘ইবনু মুফালিহ’ প্রণীত।
[5] মারাতীবুল ইজম’, রাদ্দুল মুহতার-(২/১১৬)।
[6] সহীহ; বুখারী (৫৮৯২), মুসলিম (২৫৯)।
[7] ইহা শাইখ আল-হাবীহ ওয়াহিদ আঃ সালাম তাঁর আল ইকলিল (১/৯৬) গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন।
[8] দেখুন! ‘শারহুল কিরমানী আলাল বুখারী (২১/১১১)।