সহীহ ফিক্বহুস সুন্নাহ ত্বহারাত অধ্যায় আবূ মালিক কামাল বিন আস-সাইয়্যিদ সালিম ১ টি
মহিলাদের লজ্জাস্থান থেকে নির্গত তরল জাতীয় পদার্থের বিধান কি? এবং তাদের লজ্জাস্থান থেকে নির্গত ভিজা তরল পদার্থের নাম কি রাখা যেতে পারে?

এ ব্যাপারে বিদ্বানগণের দু’টি মাযহাব পরিলক্ষিত হয়:[1]

১ম: এটা অপবিত্র:

কেননা এর দ্বারা সন্তান জন্মগ্রহণ করে না। এটা মযির সাদৃশ্য রাখে। তাদের দলীল হলো: যায়েদ বিন খালিদ উসমান বিন আফ্ফান (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করে বলেন:

أَرَأَيْتَ إِذَا جَامَعَ فَلَمْ يُمْنِ، قَالَ عُثْمَانُ «يَتَوَضَّأُ كَمَا يَتَوَضَّأُ لِلصَّلاَةِ وَيَغْسِلُ ذَكَرَهُ» قَالَ عُثْمَانُ سَمِعْتُهُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ

অর্থাৎ: স্বামী স্ত্রীর সাথে সহবাসের পর যদি তার বীর্যপাত না ঘটে তাহলে সে ব্যাপারে আপনার মতামত কি? উত্তরে উসমান (রাঃ) বলেন: সে সালাতের ন্যায় ওযূ করবে এবং তার লজ্জাস্থান ধুয়ে ফেলবে। উসমান (রাঃ) বলেন, আমি এটা রাসূল (ﷺ) এর কাছ থেকে শুনেছি।[2]

উবাই বিন কা‘ব এর হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, তিনি রাসূল (ﷺ) কে বলেন:

يَا رَسُولَ اللَّهِ: إِذَا جَامَعَ الرَّجُلُ المَرْأَةَ فَلَمْ يُنْزِلْ؟ قَالَ: «يَغْسِلُ مَا مَسَّ المَرْأَةَ مِنْهُ، ثُمَّ يَتَوَضَّأُ وَيُصَلِّي»

হে আল্লাহ্‌র রাসূল (ﷺ)! স্বামী স্ত্রীর সাথে সহবাসের পর যদি তার বীর্যপাত না ঘটে তাহলে সে ব্যাপারে আপনার মতামত কি? তিনি বললেন: স্ত্রীর অঙ্গে যতটুকু স্পর্শ করেছে ততটুকু ধুয়ে ফেলবে। অতঃপর ওযূ করে সালাত আদায় করবে।[3]

তারা বলেন: মহানাবী (ﷺ) মহিলাদের লজ্জাস্থানে যতটুকু লেগে যায় তা ধৌত করার নির্দেশ দেয়াটা প্রমাণ করছে যে, লজ্জাস্থানের ভিজা তরল পদার্থ নাপাক।

জবাব: এ হাদীস দু’টি রহিত হয়ে গেছে গোসল করার নির্দেশের হাদীসের মাধ্যমে।[4] এ ব্যাপারে আলোচনা যথাস্থানে করা হবে ইনশা আল্লাহ্‌। এটাও হতে পারে যে, মযির কারণে ধৌত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে যা স্বামীর অথবা স্ত্রীর লজ্জাস্থান থেকে নির্গত হয়। অনুরূপভাবে তারা এটাকে নাপাক হওয়ার ক্ষেত্রে দলীল হিসেবে বলেন: এ তরল পদার্থ দু’রাস্তার যে কোন একটি দিয়ে নির্গত হয়। আর নিয়ম হলো: মনি ছাড়া দু’রাস্তা দিয়ে যা নির্গত হয় তা অপবিত্র।

২য়: মহিলাদের লজ্জাস্থান থেকে নির্গত তরল জাতীয় পদার্থ পবিত্র:[5]

এ মাযহাব নিম্নোক্ত ভাবে দলীল দিয়ে থাকেন-

(১) আয়িশা (রা.) মহানাবী (ﷺ) এর কাপড় থেকে মনি উঠিয়ে ফেলতেন। এটা ছিল সহবাসের মনি। কেননা নাবীদের কখনও স্বপ্নদোষ হয় না।[6] এটা লজ্জাস্থানের ভিজা তরল পদার্থের সাথে মিলে যায়। কেননা যদি আমরা মহিলাদের লজ্জাস্থানের অপবিত্রতার হুকুম দিই তাহলে তার মনিকেও অপবিত্র বলব। কারণ সেটা মহিলার লজ্জাস্থান থেকে নির্গত হতে পারে। ফলে তার ভিজা তরল পদার্থ দ্বারা তা নাপাক হয়ে যাবে।

(২) এই ভিজা তরল পদার্থের ব্যাপারে সুস্পষ্ট কথা এই যে, এটা মহিলাদের ক্ষেত্রে অধিক লক্ষ করা যায়। এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই যে, বর্তমান যুগের মহিলাদের মতো মহানাবী (ﷺ) এর যুগের মহিলাদেরও এ তরল পদার্থ নির্গত হতো। অথচ মহানাবী (ﷺ) তাদেরকে এ কারণে গোসল বা ওযূ করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না।

(৩) এই তরল পদার্থ পেশাব নির্গত হওয়ার যে নাপাক রাস্তা রয়েছে তার অন্তর্ভুক্ত নয়।

(৪) ফক্বীহদের উক্তি ‘‘মনি ব্যতীত দু’রাস্তা দিয়ে নির্গত বস্ত্ত নাপাকীর অন্তর্ভুক্ত’’ এটা মহানাবী (ﷺ) এর কোন বাণী নয় এবং এ কথার উপর উম্মতের কোন ইজমা নেই। বরং এ ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে যে, দু’রাস্তা দিয়ে কতিপয় তরল পদার্থ নির্গত হয় যা ওযূ নষ্ট করে না। যেমন- ইসেত্মহাযার রক্ত। এ ব্যাপারে যথাস্থানে আলোচনা করা হবে ইন্শা আলস্নাহ্।

আমার বক্তব্য: আমার কাছে সঠিক কথা হলো: যদি এ তরল পদার্থ স্বামীর সাথে আদর সোহাগ, সঙ্গমের ইচ্ছা অথবা অনুরূপ কিছুর কারণে মহিলার লজ্জাস্থান থেকে নির্গত হয়। তাহলে সেটা মযির অন্তর্ভুক্ত হবে। আর এ ব্যাপারে আমরা জেনেছি যে, এটা নাপাকীর অন্তর্ভুক্ত। তা ধুয়ে ফেলা ওয়াজিব এবং এর দ্বারা ওযূ নষ্ট হবে।

আর যদি এই তরল পদার্থ অধিকাংশ সময় মহিলাদের লজ্জাস্থান থেকে নির্গত হয় এবং গর্ভধারণের সময়, কঠোর পরিশ্রমের সময় অথবা অধিক চলা-ফেরার সময় এটা বেশি নির্গত হয়, তাহলে এটা মূলত পবিত্র। কেননা এটা নাপাক হওয়ার কোন দলীল নেই। আল্লাহ্‌ই ভাল জানেন।

যে পরিমাণ নাজাসাত ধর্তব্য নয়:

কাপড়, স্থান অথবা শরীরে লাগা নাজাসাতের পরিমাণ, প্রকারভেদ ও কতটুকু নাজাসাত ধর্তব্য নয় এ ব্যাপারে ফক্বীহগণ মতভেদ করেছেন।[7] তবে এ ক্ষেত্রে নিয়ম হলো: আবশ্যকতা ও ব্যাপকতার কারণে যে সমস্ত নাপাকী থেকে দূরে থাকা অসম্ভব এবং যে সব নাপাকী দূর করা কষ্টকর সে সকল ক্ষেত্রে নাপাকী ধর্তব্য নয়।

[1] মুগনী (২/৮৮), মাজমূ (১/৫৭০)

[2] সনদ সহীহ; বুখারী (২৯২), মুসলিম (৩৪৭), কিন্তু তা মানসূখ হয়ে গেছে।

[3] সনদ সহীহ; বুখারী (২৯৩), মুসলিম (৩৪৬), কিন্তু তা মানসূখ হয়ে গেছে।

[4] ফাতহুল বারী (১/৪৭৩)

[5] মুসত্মফা বিন আদাবী (আলস্নাহ তাকে হিফাযত করুন!) প্রণীত জামিউ আহকামুন নিসা (১/৬৮)

[6] অনুরূপভাবে তিনি মুগনীর মধ্যে বলেছেন ( ২/৮৮), শায়েখ বলেন, এটা কুরআন ও সুন্নাহর দলীলের মুখাপেÿী। এরূপ কোন নাস সম্পর্কে আমি অবগত হতে পারি নি।

[7] আল ফিক্বহুল ইসলামী ওয়া আদিলস্নাতুহু (১৬৯-১৭৭)