মনি পবিত্র, না অপবিত্র এ নিয়ে আলিমগণ মতভেদ করেছেন। এ ব্যাপারে দু’টি অভিমত পাওয়া যায়।
১ম অভিমত:
মনি নাপাক। এটা ইমাম আবূ হানীফা, মালিক এবং আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) এর দুইটি অভিমতের একটি অভিমত। এ ব্যাপারে তাদের দলীল হলো, আয়িশা (রা.) এর বর্ণিত হাদীস। তাঁকে কাপড়ে মনি লাগা প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন:
كُنْتُ أَغْسِلُهُ مِنْ ثَوْبِ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ ، فَيَخْرُجُ إِلَى الصَّلاَةِ، وَأَثَرُ الغَسْلِ فِي ثَوْبِهِ بُقَعُ المَاءِ
আমি এটা রাসূল (ﷺ) এর কাপড় থেকে ধৌত করতাম। অতঃপর তিনি সালাতে বের হতেন, এমতাবস্থায় তার কাপড়ে ধৌত করার চিহ্ন লেগে থাকত।[1] আর কাপড় নাপাক না হলে তো ধৌত করার প্রশ্নই আসে না।
২য় অভিমত:
২য় অভিমত হলো মনি পবিত্র। এটা ইমাম শাফেঈ, দাউদ ও আহমাদ এর ২টি অভিমতের মধ্যে একটি সহীহ অভিমত। এ ব্যাপারে তারা আয়িশা (রা.) এর হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করেন।
عَنْ عَائِشَةَ فِي الْمَنِيِّ قَالَتْ: كُنْتُ أَفْرُكُهُ مِنْ ثَوْبِ رَسُولِ اللهِ ﷺ "
আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি মনির ব্যাপারে বলেন: আমি রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর কাপড় থেকে বীর্য রগ্ড়িয়ে ফেলতাম।[2]
আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত অপর এক হাদীস থেকেও তারা দলীল পেশ করে থাকেন:
أَنَّ رَجُلاً نَزَلَ بِعَائِشَةَ فَأَصْبَحَ يَغْسِلُ ثَوْبَهُ فَقَالَتْ عَائِشَةُ إِنَّمَا كَانَ يُجْزِئُكَ إِنْ رَأَيْتَهُ أَنْ تَغْسِلَ مَكَانَهُ فَإِنْ لَمْ تَرَ نَضَحْتَ حَوْلَهُ وَلَقَدْ رَأَيْتُنِى أَفْرُكُهُ مِنْ ثَوْبِ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ - فَرْكًا فَيُصَلِّى فِيهِ.
একদিন জনৈক ব্যক্তি আয়িশা (রা.) এর গৃহে মেহমান হলো। আয়িশা দেখলেন, ভোরে সে তার কাপড় ধুচ্ছে। (অর্থাৎ রাতে তার স্বপ্নদোষ হয়েছিল)। তা দেখে আয়িশা বললেন: মূলতঃ তোমার পক্ষে এতটুকুই যথেষ্ট হতো যে, তুমি নাপাক বস্ত্তটি দেখে থাকলে কেবলমাত্র সে স্থানটি ধুয়ে নিতে। আর যদি তা দেখে না থাক, তাহলে (সন্দেহ দূর করার নিমিত্তে) স্থানটিতে পানি ছিটিয়ে হালকাভাবে ধুয়ে নিতে পারতে। কেননা এমনও হয়েছে আমি নিজে রাসূল (ﷺ) এর কাপড় থেকে শুকনো বীর্য রগ্ড়িয়ে ফেলেছি, আর তিনি সে কাপড় পরে সালাত আদায় করেছেন।[3] ঘর্ষণ বা রগ্ড়ানোর মাধ্যমে যথেষ্ট মনে করাটাই পবিত্রতা প্রমাণ করে।
যারা এটাকে নাপাক বলেন, এ ব্যাপারে তাদের জবাব হলো: ঘর্ষণ করাটা পবিত্রতা প্রমাণ করে না, বরং তা পবিত্র করার একটি মাধ্যম মাত্র। যেমনটি জুতা পবিত্র করার মাধ্যম হলো তা মাটিতে ঘর্ষণ করা।
এর প্রতিউত্তরে বলা যায়[4] যে, আয়িশা (রা.) কখনও মনিকে ঘর্ষণ করেছেন আবার কখনও তা ধৌত করেছেন। সুতরাং তা (মনি) নাপাক হওয়ার দাবী রাখে না। যেমন কাপড়ে নাকের ময়লা, থুথু কিংবা আবজর্না লাগলে তা ধুয়ে ফেলা হয়। সা‘দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রাঃ), ইবনে আব্বাস (রাঃ) ও আরও অনেকেই এরূপ কথাই বলেছেন যে, ‘‘এটা (মনি) নাকের ময়লা এবং থুথুর সমতুল্য। ঘাস দিয়ে হলেও তা মুছে ফেল’’।
সুতরাং, একথা স্পষ্ট হলো যে, হযরত আয়িশা (রা.) এর কাজটি পরিচ্ছন্নতার এখতিয়ারের অন্তর্ভুক্ত ছিল।[5] মনি পবিত্র হওয়ার সমর্থনে আরও একটি দৃষ্টান্ত হলো, মহানাবী (ﷺ) এর যুগে অনেক সাহাবার স্বপ্নদোষ হতো। ফলে তাদের কারও শরীরে বা কাপড়ে মনি (বীর্য) লেগে যেত। এটা কারও অসুস্থতার কারণে ব্যাপকভাবে নির্গত হতো। যদি তা নাপাক হতো, তাহলে রাসুল (ﷺ) এর উপর সাহাবাদের জন্য তা দূর করার আদেশ দেয়া ওয়াজিব হতো, যেমনটি তিনি ইসতিনজার ক্ষেত্রে আদেশ দিয়েছেন। অথচ কেউ এটা বর্ণনা করেন নি। সুতরাং নিশ্চিতভাবে জানা গেল যে, তা দূর করা ওয়াজিব ছিল না। আল্লাহ্ই সর্বাধিক অবগত।[6]
[2] মুসলিম হা/ ২৮৮
[3] মুসলিম হা/ ২৮৮
[4] মাজমুউল ফাতওয়া (২১/৬০৫)
[5] শারহে মুসলিম
[6] মাজমুউল ফাতওয়া (২১/৬০৪)