জেনে রাখুন! চার ইমাম ও অন্যান্য ইমামের ব্যাপারে আমাদের অবস্থান হল, সমস্ত ন্যায়নিষ্ঠ মু’মিনের ব্যাপারে আমাদের যে অবস্থান তার মত। আর তা হল, তারা যে জ্ঞান ও তাকওয়ার অধিকারী ছিলেন এ জন্য তাদের প্রতি ভালবাসা প্রদর্শন করা, তাদেরকে সম্মান করা, তাদের মর্যাদা প্রদান করা ও তাদের প্রশংসা করা। কিতাব ও সুন্নাহ এর প্রতি আমলের ক্ষেত্রে আমরা তাদের আনুগত্য করব। কুরআন ও সুন্নাহ তাদের মতামতের উপর অগ্রাধিকার পাবে। তাদের অভিমত সম্পর্কিত জ্ঞান সঠিক পথে পরিচালিত হতে সাহায্য করবে এবং তাদের অভিমত থেকে যেগুলো কুরআন সুন্নাহ বিরোধী তা পরিত্যাগ করতে সহায়তা করবে। আর যে সব মাসআলার ক্ষেত্রে কুরআন সুন্নাহর কোন দলীল পাওয়া যায় না, সে ক্ষেত্রে সঠিক পন্থা হল, তাদের ইজতিহাদের দিকে দৃষ্টি দেয়া। এমনটি হতে পারে যে, আমাদের ইজতিহাদের চেয়ে ইমামদের ইজতিহাদ বেশি সঠিক। কেননা তারা আমাদের চেয়ে বেশি জ্ঞান ও তাকওয়ার অধিকারী। তবে আমাদেরও লক্ষ রাখতে হবে ও সতর্ক থাকতে হবে যে, আল্লাহ্র সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য আমরা যেন অধিকতর নিকটবর্তী মতামতগুলো গ্রহণ করি এবং সন্দেহযুক্ত মতামত থেকে দূরে থাকি।[1] এরূপ পদক্ষপের ক্ষেত্রে আমি কিছু দিক নির্দেশনা দিতে চাই:
১। জেনে রাখুন! যে, ইমামগণ (রাহি:) নিষ্পাপ নন। প্রত্যেক ইমামের উপর বিভিন্ন মাসআলার ব্যাপারে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। বিদ্বানগণ বলেছেন- সংশ্লিষ্ট ইমাম এক্ষেত্রে সুন্নাতের বিপরীত করেছেন।
তন্মধ্যে ইমাম আবূ হানীফা (রাহিমাহুল্লাহ) উল্লেখযোগ্য। তার ক্ষেত্রে এরূপ বেশি ঘটেছে। কেননা তিনি অধিক মতামত (রায়) গ্রহণ করতেন। তিনি সম্পদের ক্ষেত্রে শপথ ও সাক্ষ্য দ্বারা ফায়সালা করার হাদীসের উপর এবং অবিবাহিত ব্যাভিচারীকে এক বছর দেশান্তর করার হাদীসের উপর আমল করেন না। এরূপ আরও অনেক উদাহরণ দেয়া যেতে পারে।
ইমাম মালিক (রাহিমাহুল্লাহ) এর উপর অভিযোগ আনা হয়ে থাকে যে, তিনি শাওয়াল মাসের ৬ টি সিয়াম অস্বীকার করেন এবং জুম‘আর দিন সিয়াম পালন করা উত্তম বলে থাকেন। যদিও তিনি একাই এ অভিমত দিয়েছেন। কেননা এ দু‘টি ব্যাপারে তার কাছে হাদীস পৌঁছে নি। ইমাম মালিক (রাহি.) খিয়ারে মজলিস এর হাদীসের উপর আমল পরিত্যাগ করেছেন। অথচ এ ব্যাপারে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত আছে! এরূপ আরো অনেক উদাহরণ রয়েছে।
ইমাম শাফিঈ (রাহিমাহুল্লাহ) সমালোচিত হয়েছিলেন যে, পর্দা ছাড়া শুধু মহিলাকে স্পর্শ করা হলেই ওযূ নষ্ট হয়ে যাবে। অথচ হাদীসে এর বিপরীত কথা বর্ণিত হয়েছে এবং এর অনেক উত্তরও রয়েছে।
অনুরূপ ভাবে ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) সমালোচিত হয়েছিলেন- (শাবানের ২৯ তারিখে চাঁদ দেখা না গেলে) সন্দেহের দিন সাবধানতা বশতঃ রমযানের সিয়াম পালন করার কারণে। অথচ দলীল প্রমাণ করছে যে, এ দিন সিয়াম পালন করা নিষেধ। এরূপ আরও দৃষ্টান্ত রয়েছে।
এখানে ইমামগণ যে সমালোচিত হয়েছেন, এ জন্য তাদের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করা এবং তাদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করা উদ্দেশ্য নয়। কেননা তারা আল্লাহ্ ও রাসূল (ﷺ) এর পক্ষ থেকে যে বিধান এসেছে সে ব্যাপারে জ্ঞানার্জনের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। অতঃপর তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ইজতিহাদ করেছেন। সুতরাং যার ইজতিহাদ সঠিক হবে তিনি ইজতিহাদ করার জন্য ও ইজতিহাদ সঠিক হওয়ার জন্য নেকী পাবেন। আর ইজতিহাদ ভুল হলে ইজতিহাদের জন্য নেকী পাবেন। আর ভুলের কারণে ওযর রয়েছে। তাদের মহৎ মর্যাদার স্বীকারওক্তির মধ্য দিয়ে আমাদের মূল উদ্দেশ্য হল এটা বর্ণনা করা যে, আমরা যেন কিতাবুলস্নাহ ও সুন্নাতে রাসূল (ﷺ) কে তাদের মতামতের উপর প্রাধান্য দেয়াটা আমাদের উপর আবশ্যক মনে না করি। কেননা তারা গুণাহ থেকে নিষ্পাপ নন।[2]
২। জেনে রাখা ভাল যে, গ্রহণযোগ্য ইমামদের কেউ উম্মতের কাছে ব্যাপকভাবে গৃহীত হবেন না, যদি তিনি স্বেচ্ছায় রাসূল (ﷺ) এর সুন্নাত এর মধ্যে হতে সূক্ষ্ম কিংবা বড় বিষয়ে রাসূল (ﷺ) এর বিরোধিতা করেন। কেননা এ ব্যাপারে তারাই দৃঢ়ভাবে ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, রাসূল (ﷺ) এর ইত্ত্বেবা (অনুসরণ) করা ওয়াজিব। আর রাসূল (ﷺ) ব্যতীত অন্য মানুষের কথা গৃহীত হতে পারে আবার পরিত্যাজ্যও হতে পারে। কিন্তু যদি কেউ এমন মতামত পেশ করে যা সহীহ হাদীস বিরোধী, তাহলে তা অবশ্যই পরিত্যাগ করার যৌক্তিকতা রয়েছে।[3]
৩। হাদীসের বিরোধিতার ক্ষেত্রে ইমামগণ (রাহি:) এর ওযর তিন ভাগে বিভক্ত:[4]
১ম প্রকার- মহানাবী (ﷺ) এটা বলেছেন বলে বিশ্বাস না করা: এর কয়েকটি কারণ রয়েছে।
(১) তার নিকট আসলেই হাদীস পৌঁছে নি। আর যার নিকট হাদীস পৌঁছে নি তার উপর সে ব্যাপারে জ্ঞানার্জন আবশ্যক হয়ে পড়ে না। যখন হাদীস না পৌঁছে তখন সে ব্যাপারে প্রকাশ্য আয়াত দ্বারা অথবা অন্য হাদীস দ্বারা কিংবা কিয়াস বা ইসিত্মসহাব দ্বারা মতামত পেশ করা তার জন্য আবশ্যক হয়ে পড়ে। এ মতামতটি হয়ত কখনও হাদীসের অনুকূলে হয়ে যায়, আবার কখনও প্রতিকূলে চলে যায়। কিছু হাদীসের ক্ষেত্রে সালাফদের যে বিপরীত মতামত পাওয়া যায়, এটা তার অন্যতম কারণ। কেননা রাসূল (ﷺ) এর হাদীস অবগত হওয়াটা প্রত্যেকের জন্য সম্ভব ছিল না।[5]
(২) হয়ত হাদীস পৌঁছেছে। কিন্তু তার কাছে সেটা গ্রহণযোগ্য মনে হয় নি।
(৩) তার ইজতিহাদে হাদীসটি যঈফ বলে প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু অন্য পদ্ধতিতে অকাট্য দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে অন্যের কাছে তার বিপরীত মত পাওয়া যাচ্ছে। এটা কারও কাছে সঠিক হতে পারে, আবার কারও কাছে ভুল হতে পারে।
(৪) ন্যায় সঙ্গত মজবুত খবরে ওয়াহেদ এর ব্যাপারে এমন শর্তারোপ করা, যে ব্যাপারে অন্যরা বিরোধিতা করেছে। যেমন, যখন কিয়াসের মূলনীতি হাদিসটির উল্টো হবে তখন বর্ণনাকারীর জন্য ফক্বীহ হওয়ার শর্তারোপ করা ইত্যাদি।
(৫) তার নিকট হাদীস পৌঁছে এবং গৃহীতও হয়েছে। কিন্তু সে তা ভুলে গেছে।
২য় প্রকার - এ উক্তি দ্বারা এ মাসআলাটি উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে, এমন বিশ্বাস না করা: এর কয়েকটি কারণ রয়েছে। যথাঃ
(১) হাদীসটি দ্বারা কি দলীল গ্রহণ করা যেতে পারে তা বুঝতে না পারা। কেননা কখনও তার কাছে হাদীসের অর্থটি অপরিচিত হয়ে থাকে এবং বিদ্বানগণ এর ব্যাখ্যার ব্যাপারে মতানৈক্য করে। কখনও রাসূল (ﷺ) এর ভাষায় শব্দটি যে অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে তার ভাষায় ও রীতিতে অন্য অর্থে ব্যবহৃত হয়। অথবা শব্দটি কখনও বহুঅর্থবোধক (মুশতারিক) কিংবা সংক্ষিপ্ত (মুজমাল) হয়ে থাকে। আবার কখনও শব্দটি প্রকৃত অর্থ (হাকীকত) ও রূপক অর্থ (মাযায) এর মাঝে দ্বিধান্বিত হয়ে থাকে। ফলে তার নিকট যে অর্থটি বেশি নিকটবর্তী সে অর্থে তা ব্যবহার করে। যদিও এর অন্য অর্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যেমন সাহাবাদের একটি দল প্রথমে الخيط الأبياضও الخيط الأسود এর অর্থ الحبلবা রশি বলে জানতেন। এরূপ আরও উদাহরণ রয়েছে।
কখনও আবার দলীলের অর্থটা গোপন থাকে। কেননা মতামতসমূহের উদ্দেশ্যের মাঝে অনেক প্রশস্ততা রয়েছে এবং বক্তব্যের দৃষ্টিভঙ্গি বুঝার ক্ষেত্রে বিভিন্নতা রয়েছে।
(২) তার বিশ্বাস যে- হাদীস দ্বারা মূলতঃ কোন দলীল গ্রহণ করা যাবে না। এ প্রকার ও পূর্বের প্রকারটির মাঝে পার্থক্য এই যে, পূর্বেরটির মাঝে কোন দলীলটি গৃহীত হবে তা বুঝা যাবে না। আর এ প্রকারের মাঝে তা বুঝা যাবে কিন্তু বিশ্বাস করবে না যে, এটা সহীহ দলীল।
(৩) তার বিশ্বাস যে, এ অর্থের বিপরীতে আরেকটি অর্থের সম্ভাবনা রয়েছে যা প্রমাণ করছে যে- এখানে এটি উদ্দেশ্য নয়, বরং ঐটিই উদ্দেশ্য। যেমন আম-খাসের পারস্পারিক বিরোধিতা, মুতলাকের সাথে মুকাইয়াদের বিরোধিতা, আমরে মুতলাকের সাথে এমন কিছুর বিরোধিতা যা ওয়াজিব হওয়াকে বাধা দেয়, এরূপ অন্যান্য বিরোধিতা।
৩য় প্রকার: তার বিশ্বাস হলো, হাদীসের শব্দ ও ব্যাখ্যা অন্যের বিশ্বাসের বিরোধী অথবা প্রকৃতপক্ষে হাদীসটি অগ্রাধিকার প্রাপ্ত মতের বিরোধী নয়।
এ সকল কারণ ও অন্যান্য কারণের জন্য ইমামগণ হাদীসের বিরোধিতা করার ক্ষেত্রে ওযর পেশ করে থাকেন। মূলতঃ এটাই তাদের (ইমামদের) মতভেদের মূল কারণ।
৪। যখন এটা নির্ধারিত হলো, অতঃপর যে মতামতের ক্ষেত্রে সহীহ হাদীস দ্বারা দলীল স্পষ্ট হয়েছে এবং যার ব্যাপারে বিদ্বানদের একটি দলের ঐকমত্য রয়েছে, সে মত থেকে অন্য কোন আলিমের মতামতের দিকে ধাবিত হওয়া আমাদের উচিৎ নয়, যদিও সে আলিমের এ স্পষ্ট মতামতটি খণ্ডন করার যোগ্যতা রয়েছে এবং যদিও তিনি অধিক জ্ঞানী হন না কেন। কেননা শরীয়াতের দলীলের চেয়ে বিদ্বানদের মতামতে ভুলের মাত্রা বেশি। কারণ শরীয়াতের দলীল সমস্ত বান্দার উপর প্রমাণ স্বরূপ। কিন্তু আলিমের মতামত এর বিপরীত। আর শরীয়াতের দলীল যতক্ষণ না অন্য দলীলের বিরোধিতা করে ততক্ষণ পর্যন্ত তা ভুল হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু আলিমের মতামত এরূপ নয়। মূলতঃ একজন আলিম হাদীস পরিত্যাগ করার জন্য স্বয়ং ওযর প্রাপ্ত। আর আমরা এটি (হাদিস বর্জিত মতামত) প্রত্যাখ্যান করার জন্য ওযর প্রাপ্ত।
আল্লাহ্ বলেন:
﴿تِلْكَ أُمَّةٌ قَدْ خَلَتْ لَهَا مَا كَسَبَتْ وَلَكُمْ مَا كَسَبْتُمْ وَلَا تُسْأَلُونَ عَمَّا كَانُوا يَعْمَلُونَ﴾
সেটা এমন এক উম্মত যা বিগত হয়েছে। তারা যা অর্জন করেছে তা তাদের জন্যই, আর তোমরা যা অর্জন করেছ তা তোমাদের জন্যই। আর তারা যা করত সে সম্পর্কে তোমাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে না (সূরা: বাকারাহ-১৩৪)।
আল্লাহ্ বলেন:
﴿فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ﴾
অতঃপর কোন বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ কর তাহলে তা আল্লাহ্ ও রাসূলের দিকে প্রত্যাবর্তন কর- যদি তোমরা আল্লাহ্ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখ (সূরা : আন-নিসা-৫৯)।
উল্লেখিত কারণগুলোর কোন একটির জন্য যদি মতামত ত্যাগ করা হয়, অতঃপর যদি কোন সহীহ হাদীস আসে যেখানে হালাল-হারাম কিংবা কোন বিধানের কথা উল্লেখ থাকে, তাহলে আমরা ইমামের হাদীস বর্জন করার যে কারণগুলো বর্ণনা করলাম, তার কোন একটির কারণে তাদের কেউ যদি এ সহীহ হাদীসটিকে পরিত্যাগ করে, তাহলে হালালকে হারাম করার কারণে অথবা আল্লাহ্র অবতীর্ণ বিধানের উল্টো বিধান দেয়ার কারণে তাকে শাস্তি দেয়া হবে- আমাদের জন্য এ বিশ্বাস রাখা বৈধ হবে না। অনুরূপভাবে হাদীসে যদি একথাও বলা থাকে যে, যে ব্যক্তি এরূপ কাজ করবে তার জন্য অভিশাপ, গযব কিংবা শাস্তি অথবা অনুরূপ কিছু রয়েছে। তাহলেও তাকে একথা বলা বৈধ হবে না যে, যে আলিম এটি বৈধ করবে কিংবা এটা সম্পাদন করবে সে এই শাস্তিরই অন্তর্ভুক্ত। একথাটির ব্যাপারে উম্মতের মাঝে কারও মতভেদ রয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। তবে বাগদাদের কতিপয় মু‘তাযিলা এর বিরোধিতা করেছেন। সুতরাং যার কাছে হারাম হওয়ার কোন হাদীস পৌঁছে নি, এমতাবস্থায় তিনি যদি শারঈ দলীলের দিকে সম্বোধন করে এটাকে বৈধ বলে সমাধান দেন, তাহলে এ ক্ষেত্রে তিনি ওযর প্রাপ্ত হওয়ার যোগ্য। আর এ ক্ষেত্রে তিনি তার ইজতিহাদের কারণে প্রতিদান পাবেন ও প্রশংসিত হবেন। আল্লাহ্ বলেন:
﴿وَدَاوُودَ وَسُلَيْمَانَ إِذْ يَحْكُمَانِ فِي الْحَرْثِ﴾
আর স্মরণ কর দাঊদ ও সুলায়মানের কথা, যখন তারা শস্যক্ষেত সম্পর্কে বিচার করছিলেন ( আম্বিয়া-৭৮)।
﴿فَفَهَّمْنَاهَا سُلَيْمَانَ وَكُلًّا آتَيْنَا حُكْمًا وَعِلْمًا﴾
অতঃপর আমি এ বিষয়ের ফয়সালা সুলায়মানকে বুঝিয়ে দিয়েছিলাম। আর আমি তাদের প্রত্যেককেই দিয়েছিলাম প্রজ্ঞা ও জ্ঞান (সূরা: আম্বিয়া-৭৯)।
অত্র আয়াতে আল্লাহ্ সুলাইমান (ؑ) এর ‘বুঝ’ বা অনুধাবনকে বিশিষ্টতা দান করেছেন এবং উভয়ের জ্ঞান ও প্রজ্ঞার প্রশংসা করেছেন।
সহীহ বুখারী ও মুসলিমে আমর বিন আস থেকে বর্ণিত হয়েছে, মহানাবী (ﷺ) বলেন:
إِذَا حَكَمَ الحَاكِمُ فَاجْتَهَدَ ثُمَّ أَصَابَ فَلَهُ أَجْرَانِ، وَإِذَا حَكَمَ فَاجْتَهَدَ ثُمَّ أَخْطَأَ فَلَهُ أَجْرٌ
বিচারক যদি কোন ফায়সালা করতে গিয়ে প্রচেষ্টা করে সঠিক সিদ্ধান্ত দেয়, তাহলে তার জন্য দু‘টি নেকী রয়েছে। আর প্রচেষ্ট করার পর ভুল হলে একটি নেকী রয়েছে।[6]
সুতরাং এ থেকে বুঝা গেল যে, মুজতাহিদ ভুল করলে তার একটি প্রতিদান রয়েছে। আর এটা তার ইজতিহাদের কারণে। আর যে ভুলটা হয়েছে তার জন্য সে ক্ষমা প্রাপ্ত হবে। কেননা শরীয়াতের সমস্ত বিধানের ক্ষেত্রে ওযর প্রাপ্ত হওয়ার কারণে কিংবা কঠিন হওয়ার কারণেও সাওয়াব পাওয়া যায়।
আল্লাহ্ বলেন:
﴿وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِي الدِّينِ مِنْ حَرَجٍ﴾
দ্বীনের ব্যাপারে তিনি তোমাদের উপর কোন কঠোরতা আরোপ করেন নি (সূরা: হাজ্জ-৭৮)।
আল্লাহ্ আরও বলেন:
﴿يُرِيدُ اللَّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ﴾
আল্লাহ্ তোমাদের সহজ চান এবং কঠিন চান না (সূরা: বাকারাহ-১৮৫)।
৫। ইমামগণ তাদের তাক্বলীদ (দলীলবিহীন অনুসরণ) না করার ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন। অন্ধ বিশ্বাসী গোঁড়াপন্থিরা নিজেদেরকে তাদের ইমামের অনুসারী বলে দাবি করে, তাদের মাযহাব ও মতামতকেই শক্তভাবে আঁকড়ে ধরে রাখতে চায়। তারা এটাকে আসমান থেকে অবতীর্ণ ওহীর বিধানের মত বলে মনে করে।[7]
যেমন আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
﴿اتَّبِعُوا مَا أُنْزِلَ إِلَيْكُمْ مِنْ رَبِّكُمْ وَلَا تَتَّبِعُوا مِنْ دُونِهِ أَوْلِيَاءَ قَلِيلًا مَا تَذَكَّرُونَ﴾
তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের পক্ষ হতে যা নাযিল করা হয়েছে, তা অনুসরণ কর এবং তাকে ছাড়া অন্য অভিভাবকের অনুসরণ করো না। তোমরা সামান্যই উপদেশ গ্রহণ কর (সূরা আরাফ-৩)।
এ ব্যাপারে ইমামগণের (রাহিমাহুল্লাহ) পক্ষ থেকে যে সব মতামত আমরা জানতে পেরেছি, তার কিছু অংশ এখানে উল্লেখ করা হলো:[8]
(১) আবূ হানীফা (রাহিমাহুল্লাহ)
ইমামগণের মধ্যে প্রথমেই হলেন ইমাম আবূ হানীফা নু’মান বিন সাবিত (রাহিমাহুল্লাহ)। তার সাথীগণ তার অনেক কথা বিভিন্ন ভাষায় বর্ণনা করেছেন, সব কয়টি কথা একটাই বিষয়ের প্রতি নির্দেশ করে, আর তা হচ্ছে: হাদীসকে অাঁকড়ে ধরা ও তার বিপক্ষে ইমামগণের কথা পরিহার করা ওয়াজিব।
কথাগুলো হচ্ছে:
(ক) ( إذا صح الحديث فهو مذهبي )
অর্থ: হাদীস বিশুদ্ধ হলে ওটাই আমার মাযহাব বলে পরিগণিত হবে।
(খ) ( لا يحل لأحد أن يأخذ بقولنا ما لم يعلم من أين أخذناه )
অর্থ: আমরা কোথা থেকে কথাটি নিলাম এটা না জানা পর্যন্ত কারও জন্য আমাদের কথা গ্রহণ করা বৈধ নয়।
অপর বর্ণনায় রয়েছে:
( حرام على من لم يعرف دليلي أن يفتي بكلامي )
অর্থ: যে আমার কথার প্রমাণ জানে না তার পক্ষে আমার কথার দ্বারা ফাৎওয়া প্রদান করা হারাম।
অন্য বর্ণনায় আরও বাড়িয়ে বলেছেন:
( فإننا بشر نقول القول اليوم ونرجع عنه غدا )
অর্থ: কেননা আমরা মানুষ, আজ এক কথা বলি, আবার আগামীকাল তা থেকে ফিরে যাই।
অপর বর্ণনায় রয়েছে:
( ويحك يا يعقوب ( هو أبو يوسف ) لا تكتب كل ما تسمع مني فإني قد أرى الرأي اليوم وأتركه غدا وأرى الرأي غدا وأتركه بعد غد )
অর্থ: হে হতভাগা ইয়াকুব! (আবূ ইউসূফ) তুমি আমার থেকে যা শুন তা লেখ না, কেননা আমি আজ এক মত পোষণ করি এবং আগামীকাল তা পরিহার করি, আবার আগামীকাল এক মত পোষণ করি আর পরশুদিন তা পরিত্যাগ করি।
(গ) ( إذا قلت قولا يخالف كتاب الله تعالى وخبر الرسول صلى الله عليه وسلم فاتركوا قولي )
অর্থ: যখন আমি এমন কথা বলি যা আল্লাহ্ তা’আলার কিতাব ও রাসূল (ﷺ) এর হাদীস বিরোধী তা হলে তোমরা আমার কথা পরিত্যাগ করবে।
(২) মালিক বিন আনাস (রাহিমাহুল্লাহ)
ইমাম মালিক বিন আনাস (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:
( إنما أنا بشر أخطئ وأصيب فانظروا في رأيي فكل ما وافق الكتاب والسنة فخذوه وكل ما لم يوافق الكتاب والسنة فاتركوه )
(ক) আমি নিছক একজন মানুষ। আমি ভুলও করি শুদ্ধও করি। তাই তোমরা লক্ষ কর আমার অভিমতের প্রতি। এগুলোর যতটুকু কুরআন ও সুন্নাহর সাথে মিলে তা গ্রহণ কর আর যতটুকু এতদোভয়ের সাথে গরমিল হয় তা পরিত্যাগ কর।
( ليس أحد بعد النبي صلى الله عليه وسلم إلا ويؤخذ من قوله ويترك إلا النبي صلى الله عليه وسلم )
(খ) নাবী (ﷺ) ব্যতীত অন্য যে কোন লোকের কথা গ্রহণীয় এবং বর্জনীয় কিন্তু নাবী (ﷺ)এর সকল কথা গ্রহণীয়।
(গ) ইবনু অহাব বলেন: আমি মালিক (রাহিমাহুল্লাহ) কে ‘ওযূ’ তে পদযুগলের অঙ্গুলিসমূহ খিলাল সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হতে শুনেছি: তিনি (উত্তরে) বলেন: লোকদেরকে তা করতে হবে না। (ইবনু অহাব) বলেন: আমি তাকে লোকসংখ্যা কমে আসা পর্যন্ত ছেড়ে রাখলাম। অতঃপর বললাম, আমাদের কাছে এ বিষয়ে হাদীস রয়েছে, তিনি বললেন, সেটা কী? আমি বললাম: আমাদেরকে লাইস ইবনু সা’য়াদ, ইবনু লহী’য়াহ ও আমার ইবনুল হারিস ইয়াযীদ ইবনু আমর আল মু’য়াফিরী থেকে তিনি আবূ আব্দির রহমান আল হুবালী থেকে তিনি আল মুসতাউরিদ বিন শাদ্দাদ আল কুরাশী থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন: رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم يدلك بخنصره ما بين أصابع رجليه অর্থ: আমি রাসূল (ﷺ) কে দেখেছি তিনি তাঁর কনিষ্ঠাঙ্গুলি দ্বারা পদযুগলের আঙ্গুলিগুলোর মধ্যভাগ মর্দন করেছেন। এতদশ্রবণে ইমাম মালিক বলেন, এ তো সুন্দর হাদীস। আমি এ যাবৎ এটি শুনি নি। পরবর্তীতে তাকে জিজ্ঞাসিত হতে শুনেছি তাতে তিনি আঙ্গুলি মর্দনের আদেশ দিতেন।
(৩) শাফেঈ (রাহিমাহুল্লাহ)
ইমাম শাফেঈ (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে এ মর্মে অনেক চমৎকার চমৎকার কথা উদ্ধৃত হয়েছে। তার অনুসারীগণ তার এ সব কথায় অধিক সাড়া দিয়েছেন এবং উপকৃতও হয়েছেন। কথাগুলোর মধ্যে রয়েছে:
( ما من أحد إلا وتذهب عليه سنة لرسول الله صلى الله عليه وسلم وتعزب عنه فمهما قلت من قول أو أصلت من أصل فيه عن رسول الله صلى الله عليه وسلم لخلاف ما قلت فالقول ما قال رسول الله صلى الله عليه وسلم وهو قولي )
(ক) প্রত্যেক ব্যক্তি থেকেই আল্লাহ্র রাসূল (ﷺ) এর কিছু সুন্নাহ গোপন থাকবেই ও ছাড়া পড়বেই। তাই আমি যে কথাই বলেছি অথবা মূলনীতি উদ্ভাবন করেছি, সে ক্ষেত্রে রাসূল (ﷺ) থেকে আমার বক্তব্যের বিরুদ্ধে বক্তব্য পাওয়া গেলে আল্লাহ্র রাসূলের কথাই হচ্ছে চূড়ান্ত আর এটিই হবে আমার কথা।
أجمع المسلمون على أن من استبان له سنة عن رسول الله صلى الله عليه وسلم لم يحل له أن يدعها لقول أحد
(খ) মুসলমানগণ এ ব্যাপারে একমত যে, যার কাছে রাসূল (ﷺ) এর সুন্নাহ্ (হাদীস) পরিষ্কাররূপে প্রকাশ হয়ে যায় তার পক্ষে বৈধ নয় অন্য কারও কথায় তা বর্জন করা।
( إذا وجدتم في كتابي خلاف سنة رسول الله صلى الله عليه وسلم فقولوا بسنة رسول الله صلى الله عليه وسلم ودعوا ما قلت )
(গ) তোমরা যখন আমার কিতাবে রাসূল (ﷺ) এর সুন্নাহ বিরোধী কিছু পাবে তখন আল্লাহ্র রাসূলের সুন্নাত অনুসারে কথা বলবে, আর আমি যা বলেছি তা ছেড়ে দিবে।
অপর বর্ণনায় রয়েছে:
"فاتبعوها ولا تلتفتوا إلى قول أحد".
তোমরা তারই (সুন্নাতেরই) অনুসরণ কর, আর অন্য কারও কথার প্রতি ভ্রূক্ষেপ কর না।
(ঘ) ( إذا صح الحديث فهو مذهبي ) অর্থ: হাদীস বিশুদ্ধ হলে এটাই আমার গৃহীত পন্থা (মাযহাব)।
( أنتم أعلم بالحديث والرجال مني فإذا كان الحديث الصحيح فأعلموني به أي شيء يكون : كوفيا أو بصريا أو شاميا حتى أذهب إليه إذا كان صحيحا )
(ঙ) আপনারাই (এখানে আহমাদ ইবনে হাম্বালকে সম্বোধন করা হয়েছে) হাদীস বিষয়ে ও তার রিজালের (বর্ণনাকারীদের) ব্যাপারে আমার অপেক্ষা অধিক জ্ঞাত, তাই সহীহ হাদীস পেলেই আমাকে জানাবেন, চাই তা কুফাবাসীদের বর্ণনাকৃত হোক, চাই বাসরাবাসীদের হোক অথবা শাম-বাসীদের (সিরিয়ার) হোক বিশুদ্ধ হলে আমি তাই গ্রহণ করব।
كل مسألة صح فيها الخبر عن رسول الله صلى الله عليه وسلم عند أهل النقل بخلاف ما قلت فأنا راجع عنها في حياتي وبعد موتي
(চ) যে বিষয়ে আল্লাহ্র রাসূল (ﷺ) থেকে আমার কথার বিরুদ্ধে হাদীস বর্ণনাকারীদের নিকট বিশুদ্ধরূপে কোন হাদীস পাওয়া যাবে আমি আমার জীবদ্দশায় ও মৃত্যুর পর আমার বক্তব্য পরিহার করে রাসূল (ﷺ) এর হাদীসের দিকে প্রত্যাবর্তন করলাম।
( إذا رأيتموني أقول قولا وقد صح عن النبي صلى الله عليه وسلم خلافه فاعلموا أن عقلي قد ذهب )
(ছ) যখন তোমরা দেখবে যে, আমি এমন কথা বলছি যার বিরুদ্ধে নাবী (ﷺ) থেকে বিশুদ্ধ হাদীস রয়েছে তবে জেনে রাখ যে, আমার বিবেক হারিয়ে গেছে।
( كل ما قلت فكان عن النبي صلى الله عليه وسلم خلاف قولي مما يصح فحديث النبي أولى فلا تقلدوني )
(জ) আমি যা কিছুই বলেছি তার বিরুদ্ধে নাবী (ﷺ) থেকে সহীহ সূত্রে হাদীস এসে গেলে নাবী (ﷺ) এর হাদীসই হবে অগ্রাধিকারযোগ্য, অতএব আমার অন্ধ অনুসরণ করো না।
( كل حديث عن النبي صلى الله عليه وسلم فهو قولي وإن لم تسمعوه مني )
(ঝ) নাবী (ﷺ)-এর সব হাদীসই আমার বক্তব্য যদিও আমার মুখ থেকে তা না শুনে থাক।
(৪) আহমাদ বিন হাম্বাল (রাহিমাহুল্লাহ)
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল ইমামগণের মধ্যে সর্বাধিক হাদীস সংগ্রহকারী এবং তা বাসত্মবে রূপায়ণকারী ছিলেন। তাই তিনি শাখা প্রশাখামূলক কথা ও মতামত সম্বলিত কিতাব লেখা অপছন্দ করতেন। তিনি বলেন:
( لا تقلدني ولا تقلد مالكا ولا الشافعي ولا الأوزاعي ولا الثوري وخذ من حيث أخذوا )
(ক) তুমি আমার অন্ধ অনুসরণ করো না; মালিক, শাফেঈ, আওযায়ী, সাউরী এদেরও কারও অন্ধ অনুসরণ করো না বরং তাঁরা যেখান থেকে (সমাধান) গ্রহণ করেন তুমি সেখান থেকেই তা গ্রহণ কর। অপর বর্ণনায় রয়েছে:
لا تقلد دينك أحدا من هؤلاء ما جاء عن النبي صلى الله عليه وسلم وأصحابه فخذ به ثم التابعين بعد الرجل فيه مخير
তোমরা দ্বীনের ব্যাপারে এদের কারও অন্ধ অনুসরণ করবে না। নাবী (ﷺ) ও তাঁর সাহাবাদের থেকে যা কিছু আসে তা গ্রহণ কর, অতঃপর তাবেঈদের। তাদের পরবর্তীদের ব্যাপারে কোন ব্যক্তির জন্য যে কারও নিকট থেকে গ্রহণ করার স্বাধীনতা রয়েছে।
আবার কোন সময় বলেছেন:
( الاتباع أن يتبع الرجل ما جاء عن النبي صلى الله عليه وسلم وعن أصحابه ثم هو من بعد التابعين مخير )
অনুসরণ হচ্ছে এই যে, প্রত্যেক ব্যক্তি নাবী (ﷺ) ও তাঁর সাহাবাদের থেকে যা আসে তার অনুসরণ করবে অতঃপর তাবেঈদের পর থেকে সে (যে কারও অনুসরণে) স্বাধীন থাকবে।
( رأي الأوزاعي ورأي مالك ورأي أبي حنيفة كله رأي وهو عندي سواء وإنما الحجة في الآثار )
(খ) আওযায়ী, মালিক ও আবূ হানীফা প্রত্যেকের মতামত হচ্ছে মতামত মাত্র এবং আমার কাছে তা সমান (মূল্য রাখে); তবে প্রমাণ রয়েছে কেবল হাদীসের ভিতর।
( من رد حديث رسول الله صلى الله عليه وسلم فهو على شفا هلكة )
(গ) যে ব্যক্তি আল্লাহ্র রাসূল (ﷺ) এর হাদীস প্রত্যাখ্যান করলো সে ধ্বংসের তীরে উপনীত হলো।
এ সবই হলো ইমামগণ (রাহিমাহুল্লাহ) এর বক্তব্য যাতে হাদীসের উপর আমল করার ব্যাপারে নির্দেশ রয়েছে এবং অন্ধভাবে তাদের অনুসরণ করা থেকে নিষেধ করা হয়েছে। কথাগুলো এতই স্পষ্ট যে, এগুলো কোন তর্ক বা ব্যাখ্যার অপেক্ষাই রাখে না।
অতএব যে ব্যক্তি ইমামদের কিছু কথার বিরুদ্ধে গেলেন কিন্তু সকল সুস্পষ্ট হাদীস অাঁকড়ে ধরলেন তিনি ইমামদের মাযহাব বিরোধী হবেন না এবং তাদের ত্বরীকা থেকে বহিষ্কৃতও হবেন না। বরং তিনি হবেন তাদের প্রত্যেকের অনুসারী। আরও হবেন, শক্ত হাতল মজবুতভাবে ধারণকারী, যে হাতল ছিন্ন হবার নয়। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি শুধু ইমামদের মতভেদের কারণে সুস্পষ্ট হাদীস প্রত্যাখ্যান করে তার অবস্থা এমনটি নয়, বরং সে এর মাধ্যমে তাদের অবাধ্য হলো এবং তাদের পূর্বোক্ত কথাগুলোর বিরোধিতা করলো।
আল্লাহ্ বলেন:
﴿فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا﴾
তোমার প্রতিপালকের শপথ তারা ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদ নিরসনে তোমাকে বিচারক মানবে, অতঃপর তোমার মীমাংসায় নিজেদের মনে কোন সংকীর্ণতা অনুভব করবে না এবং তা হৃষ্টচিত্তে মেনে নিবে (সূরা নিসা-৬৫)।
তিনি আরও বলেন:
﴿فَلْيَحْذَرِ الَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنْ أَمْرِهِ أَنْ تُصِيبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ﴾
তাই যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচারণ করে তারা যেন ভীতিগ্রসত্ম থাকে (কুফর, শিরক বা বিদ‘আত দ্বারা) ফিৎনায় আক্র
[2] দেখুন! ‘আযওয়াউল বায়ান’ (৭/৫৫৬-৫৭৬) ।
[3] রফউল মালাম আনিল আয়িম্মাতিল আ‘লাম’ যা- ‘মাজমূউল ফাৎওয়া’ গ্রন্থ (২০/২৩২) হতে গৃহীত।
[4] দেখুন! ‘রফউল মালাম আনিল আয়িম্মাতিল আ‘লাম’ ও ‘মাজমূউল ফাৎওয়া’ (২০/২৩১-২৯০) ।
[5] সাহাবা এবং অন্যান্যদের মাঝে এটা বাসত্মবায়নের দৃষ্টামত্ম দেখুন- প্রাগুক্ত (২০/২৩৪-২৩৮)।
[6] সহীহ: বুখারী ৭৩৫২ ও মুসলিম ১৭১৬।
[7] ‘রফউল মালাম’ যা ‘মাজমূউল ফাৎওয়া’ (২০/২৫০-২৫২) হতে কিছুটা পরিবর্তনসহ গৃহীত।
[8] আলস্নামা আলবানী (রাহি.) প্রণীত ‘সিফাতু সলাতিন্নাবী’ (পৃ: ৪৬-৫৭) হতে গৃহীত।